নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাক সেন্টার / গরীবের গাভীঃ প্রাকৃতিক উপায়ে ছাগল প্রজননে কার্যকর উদ্যোগ

২৬ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮

ছাগল আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পশুসম্পদ। ছাগল আমাদের দেশে পল্লী অঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎসও বটে। বাংলাদেশে বেকার সমস্যা ও দারিদ্র্য হ্রাস, মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও ছাগলপালন বিশেষ ভূমিকা রাখে। এদেশের ছাগলের অধিকাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের হলেও যমুনাপরি, তেলিচোরি, বোয়ারসহ নানা জাতের ছাগল দেখা যায়। ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয়। কারণ গাভী পালনের জন্য যে পরিমাণের প্রাথমিক মূলধন, বাসস্থান ও খাদ্য বেশি লাগে তার কোনটাই গরীবের থাকে না। প্রচলিত পদ্ধতিতে গ্রামে মাঠে, বাগানে, রাস্তার পাশে বেঁধে বা ছেড়ে দিয়ে ছাগল পালন করা হয়। সাধারণত ছাগলকে বাড়ি থেকে কোনো বাড়তি খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। কৃষক বর্ষাকালে বিভিন্ন গাছের পাতা কেটে ছাগলকে খেতে দেয়। রাতে ছাগলকে নিজেদের থাকার ঘর বা অন্য কোনো ঘরে আশ্রয় দেয়। আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে মাঠে-ঘাটে ছাগলের প্রজনন প্রাকৃতিকভাবে আপন গতিতে হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক এরকম প্রজনন ব্যবস্থায় প্রধানত: অজ্ঞাত জাতের বীজ কিংবা অসুস্থ, দুর্বল বা ক্ষীণজাতের পুরুষ ছাগলের সাথে ক্রস হওয়া অথবা প্রজনন প্রক্রিয়া অপরিপূর্ণ রয়ে যেতে পারে। তাছাড়াও একই পুরুষ ছাগলের সাথে দ্বিতীয় প্রজন্মের স্ত্রী ছাগলের ক্রস হওয়া ইত্যাদি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এমনকি কৃত্রিম উপায়ে ছাগল প্রজননের ক্ষেত্রেও অজ্ঞাত জাতের বীজ গ্রহণ করা হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে ছাগল প্রজননে সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ পদ্ধতির মাধ্যমে সংগঠিত একটি ব্যবস্থার নাম বাক সেন্টার। বাক বলতে সাধারণত পুরুষ ছাগল বা পাঁঠাকে বুঝায়। মুলত: বাক সেন্টার হলো ছাগলের বীজ বিপণন কেন্দ্র। বাক সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজ উপায়ে সুস্থ, সবল এবং উন্নতজাতের পুরুষ ছাগল সংরক্ষণ করা হয় এবং স্থানীয়ভাবে আশেপাশের স্ত্রী ছাগলের সাথে প্রজনন প্রক্রিয়া সংঘটনের মাধ্যমে ওই বীজ বিক্রি করা হয়। ধারণা করা যায় এপদ্ধতিতে স্থানীয়ভাবে আশ-পাশ এলাকায় ভাল জাতের সুস্থ এবং নিরাপদ ছাগল প্রজননে যেমন ইতিবাচক ভুমিকা রাখা সম্ভব তেমনি তৃণমূল কৃষক পর্যায়ে আয়-রোজগারের একটি পথ হিসেবেও প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব। সাধারণত গ্রামে যারা পুরুষ ছাগল (পাঁঠা) পালন করে তারা একটি বিশেষ মৌসুমকে লক্ষ্য করে ছাগল মোটাতাজাকরণ করে থাকে। সাধারণত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্সা পুজায় পুরুষ ছাগল চড়া দামে বিক্রি হয়। সুতরাং কৃষকেরা একদিকে যেমন মনসা পুজায় পুরুষ ছাগল বিক্রি করে একসাথে একটি বড় অংকের টাকা পেয়ে থাকে তেমনি যদি পুরো বৎসর আশ-পাশ এলাকায় বীজ বিক্রি করা যায় তাহলে ছাগল পালনের সকল ব্যয় নির্বাহ করেও পরিবারের নিত্যদিনের খরচে যোগান দেয়া সম্ভব। এধরণের ছাগল প্রজনন ব্যবস্থা সম্পর্কে পটিয়া উপজেলার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ রাজীব চক্রবর্তী বলেন, এই ব্যবস্থায় অবশ্যই পুরুষ ছাগলটি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। প্রজননে ব্যবহৃত পুরুষ ছাগলটি সাইজে বড়, রোগমুক্ত, সপ্রতিভ হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর ছাগলটি অবশ্যই অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা মন্সাপুজায় বিক্রি করে দিতে হবে। কারণ যে এলাকায় বাক সেন্টারের মাধ্যমে পুরুষ ছাগলটি প্রজননে ব্যবহৃত হয়েছে ওই বীজের দ্বিতীয় প্রজন্মের কোন স্ত্রী ছাগল যদি বীজ নিতে আসে সেক্ষেত্রে প্রসবকৃত বাচ্চার গুণগত মান ভাল হয় না, নানা জটিল রোগব্যধিতে আক্রান্ত হয়। ডাঃ রাজীব আরো বলেন, বাক সেন্টারের মাধ্যমে যে পুরুষ ছাগলটি ব্যবহৃত হবে যত ঘন ঘন সম্ভব ছাগলটির শারিরীক চেক-আপ করা বাঞ্চনীয়। কারণ পুরো এলাকায় যদি একটি স্ত্রী ছাগলেরও কোন রোগ থাকে তা পুরুষ ছাগলটির মাধ্যমে দ্রুত অন্যান্য ছাগলের মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়ন ও কারিগরী সহায়তায় সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাক সেন্টার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। আশা করা যায় এসকল বাক সেন্টারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সুস্থ, সবল এবং ভাল গুণগত মানের ছাগলের বাচ্চা উৎপাদন যেমন সম্ভব তেমনি সঠিক উপায়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন জাতের ছাগলের বীজ সংরক্ষণও সম্ভব। বাক সেন্টারের মাধ্যমে ছাগলের বীজ বা প্রজাতি সংরক্ষণে অবশ্যই ওই জাতের ভাল প্রজননক্ষম পুরুষ ছাগল প্রয়োজন তেমনি কিন্তু ভাল স্ত্রী ছাগলও প্রয়োজন। সুতরাং এক্ষেত্রে কোন কোন ছাগল থেকে ভাল বাচ্চা তৈরি করা যেতে পারে এসব চিন্তা মাথায় রেখে ভাল স্ত্রী ছাগল বাছাই খুব দরকার। সাধারণত: মাংসের জন্য ছাগল খাসি করা, পুরুষ ছাগল পালনে অতিশ্রম ইত্যাদি কারণে দেখা যায় এলাকায় স্ত্রী ছাগলের তুলনায় পুরুষ ছাগল কম। স্ত্রী ও পুরুষ ছাগলের তিন বছর বয়স হওয়ার আগেই প্রজননের জন্যে বাছাই করে রেখে দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বাছাই করা পুরুষ ছাগলের চেহারা হবে সবল, সুগঠিত ও স্বাস্থ্যবান, বেশ শক্তিশালী ও পুরুষালি ভাব থাকবে চরিত্রে, ঘাড়ে কেশর থাকবে । স্ত্রী ছাগল প্রতি দুই বছরে তিনবার বাচ্চা দেবে। ১৬ থেক ১৮ মাসের মধ্যে প্রথম বাচ্চা দেবে। পা হবে শক্ত ও সোজা। ছাগলের আকারের সঙ্গে পা মানানসই আছে কিনা দেখেই স্ত্রী ছাগল বাছাই করতে হবে। স্ত্রী ছাগল ছয়বার বাচ্চা দেওয়ার পর প্রজননকার্য থেকে বাতিল করে দিতে হবে। পাঠাঁর বয়স ১২ মাসের মধ্যে হতে হবে, অন্ডকোষের আকার বড় এবং সুগঠিত হতে হবে। পিছনের পা সুঠাম ও শক্তিশালী হতে হবে। পাঠাঁর মা, দাদী বা নানীর বিস্তরিত তথ্যাদি (অর্থাৎ তারা বছরে ২ বার বাচ্চা দিত কীনা, প্রতিবারে একটির বেশি বাচ্চা হতো কীনা, দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ইত্যাদি গুণাবলী) সন্তোষজনক বিবেচিত হলেই বাক সেন্টারে প্রজননে ব্যবহার করা উচিত। এবটি বাক সেন্টারে একাধিক পুরুষ ছাগলও ব্যবহার করা যায়। গ্রহণযোগ্য ছাগল অবশ্যই সকল ধরনের সংক্রামক ব্যাধি, চর্মরোগ, চক্ষুরোগ, যৌনরোগ ও বংশগত রোগমুক্ত হতে হবে। পিপিআর খুবই মারাত্মক রোগ বিধায় কোনো এলাকা থেকে ছাগল সংগ্রহ করার আগে উক্ত এলাকায় পিপিআর রোগ ছিল কীনা তা জানতে হবে। সুতরাং লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ঠিক রেখে সকল নিয়ম. পদ্ধতি যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করে বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ‘বাক সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা, পরিচর্চা এবং সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করলে নিশ্চয় একটি ইতিবাচক অর্জন সম্ভব। পিকেএসএফ এর এই উদ্যোগে সহযোগী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি সার্জনদেরকেও সম্পৃক্ত করা জরুরী। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে এখনও মুমলিম পরিবারে ‘বাক সেন্টার’ পরিচালনায় একধরণের লজ্জা ও গ্লানি কাজ করে। এলাকায় দেখা যায় এটি সাধারণত: নিন্মবর্ণের হিন্দুরা করতে আগ্রহী। আশা করা যায় এলাকায় বিষয়টির গুরুত্ব এবং এই কার্যক্রমের ফলে দেশ উন্নয়ণে অবদান ইত্যাদি যদি সঠিকভাবে সকলের কাছে তুলে ধরা যায় তাহলে অবশ্যই অনেকেই খুশী মনে এগিয়ে আসবে। সুতরাং এই কার্যকর কর্মসূচীর সফলতা অর্জনে প্রযুক্তির পাশাপাশি জনসচেতনতায় প্রচারণাও অত্যন্ত জরুরী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.