নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্মাণ ব্যবস্থাপনা: বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণে টেকসই, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ অপরিহার্য

৩০ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪

আধুনিক নাগরিক জীবনে নির্মাণ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সভ্যতার উৎকর্ষতায় নির্মাণের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পিত আবাসন বা বাড়ী নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট, সেতু, বিপনি বিতান, উড়াল সেতুসহ নানাধরণের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরীতে রাষ্ট্রিয় ও আর্ন্তজাতিক মান বজায় রেখে প্রকল্পের কাজ সূ-সম্পন্ন করতে একটি আধুনিক নির্মাণ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী।
কারণ পুরকৌশল ও স্থাপত্যবিদ্যায় নির্মাণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে কোন একটি কাঠামো তৈরী বা জোড়া লাগানো হয়। নির্মাণ মূলত কোন একক কাজ নয় বরং অনেকগুলো কাজের সমষ্টি। সাধারণত একজন প্রকল্প পরিচালক কাজটি পরিচালনা করেন। এবং নির্মাণ ব্যবস্থাপক / নকশা বা ডিজাইন ব্যবস্থাপক / প্রকৌশলী, নির্মাণ প্রকৌশলী এবং প্রকল্প প্রকৌশলী এর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন অংশের কাজ সম্পাদন করা হয়।
বাংলাদেশের মতো জনবহুল ঘনবসতিপূর্ণ দেশে নির্মাণ কর্মকান্ড পরিচালনা অত্যন্ত দুস্কর ও কষ্টসাধ্য। তবুও সচেতনতার সাথে সর্বোচ্চ সর্তকতা ও উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে টেকসই, নিরাপদ ও উন্নত নির্মাণ নিশ্চিত করা সম্ভব। নির্মাণে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোর বাইরে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচ্যবিষয় হলো পরিবেশ সম্মত ও জন-দুর্ভোগ লাঘব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আবাসিক এলাকায় বসবসকারীদের জন্য উপদ্রুপ বিহীন নিরাপদ জীবন-যাপন যেমন জরুরী তেমনি বাড়তি জনসংখ্যার বসতি নিশ্চিত করতে আধুনিক নির্মাণ নিশ্চিত করাও জরুরী। একারণেই দেখা যায় পুরোনো আবাসিক এলাকাগুলোতে বছরের পুরো সময়টাতে কোথাও না কোথাও নির্মাণ কাজ লেগে থাকে। আবার এলাকায় নাগরিকের যাতায়াতে ছোটবড় যে কোনধরণের রাস্তা মেরামত, কালভার্ট, সেতু বা উড়ালসড়ক নির্মাণ ও পুন:নির্মাণ কাজও সারাবছর লেগে থাকে। এরকম অব্যাহত বহুতল ভবন নির্মাণ, মেরামত, কালভার্ট, সেতু বা উড়ালসড়ক নির্মাণ ও পুন:নির্মাণ কাজের জন্য এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি, যাতায়াত ও চলাচলে অনিরাপদবোধ, শব্দধুষণ, শুস্ক মৌসুমে ধুলাধুষণসহ পরিবেশ ক্ষতিকর বিভিন্ন বিষয় থাকে। এধরণের নির্মাণ কর্মকান্ডে চলাচলের রাস্তায় ইট, কংক্রিট স্তুপ করে রাখা, বাউন্ডারি ঘেরাও ও সেফটি-নেট ছাড়া কাজ করা, নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ছাড়া রাতদিন উচ্চশব্দ সম্পন্ন নির্মাণ যন্ত্রপাতি চালানো, ধুলা নিয়ন্ত্রণ না করে নির্মাণ কাজে সারাক্ষণ ধুলাবালি উড়ানোসহ আরো বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সংঘটিত হয় - যা জননিরাপত্তা বিঘœসহ পরিবেশ দুষণের জন্য দায়ী। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কে উড়ালসড়ক নির্মাণ ও সেতু নির্মাণে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে নির্মাণকালীন তৈরীকৃত বিকল্প সড়কে নানাধরণের সমস্যার উদ্ভব হয়। বিকল্প সড়কটি সাধারণত সরু ও অস্থায়ী হওয়ায় যানজট লেগে থাকে, ঘনঘন খানাখন্দ সৃষ্টি হয়, নির্মাণ স্পটের ধুলা এবং রাস্তার ধুলা মিশে পুরো এলাকায় একটি ভয়াবহ ধুলার আস্তরণ সৃষ্টি করে রাখে-যা স্থানীয় অধিবাসী ও পথচারীদের জন্য স্বাস্থ্যহানিকর। পথচারীদের মধ্যে বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু, গর্ভবতী মা ও হাসপাতালগামী রোগীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে সৃষ্ট অস্থায়ী বিকল্প সড়কে বিশেষ ব্যবস্থায় রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। সড়কটিতে ঘনঘন মেরামত, যানজট নিরসনে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু রাখা, ঝুঁকিপূর্ণ স্পটে সেফটি-নেট, অস্থায়ী ঘেরাও তৈরী এবং রাস্তার দু’পাশে ও প্রকল্প এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটানোসহ একটি কার্যকর ও সূ-সংঘটিত উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরী। প্রকল্প বান্তবায়নে সময়সীমাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে অত্যাধিক হারে ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। এধরণের পরিস্থিতিতে অনেক সময় দেখা যায় বরাদ্দ পুনরায় বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত অথবা অনির্দ্দিষ্টকাল পর্যন্ত প্রকল্পটি নির্মাণাধীনাবস্থায় পড়ে থাকে। এক্ষত্রে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্ভূল প্রকল্প-পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা বাঞ্চনীয়।
নাগরিক চাহিদার অত্যন্ত জরুরী অধ্যায় নির্মাণ শিল্প। সবকিছু বিবেচনায় রেখে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়; বৈচিত্রময় ঝুঁকিপূর্ণ, উন্নয়নে অত্যাবশ্যকীয় নির্মাণ কার্যক্রম নিরাপদ ও পরিবেশসম্মত রাখতে আধুনিক নির্মাণ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। আধুনিক নির্মাণ ব্যবস্থাপনা সফল বাস্তবায়নে নির্মাণের প্রতিটি স্তরে মানসম্পন্ন কাজ নিশ্চিতকরণে দক্ষ জনশক্তি ও নির্মাণশিল্পে আরো বেশী চৌকষ প্রকল্প ব্যবস্থাপক তৈরী করাও অত্যন্ত জরুরী। নির্মাণশিল্পে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বাংলাদেশে যে সকল ইনষ্টিটিউট রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বাংলাদেশের নির্মাণ সেক্টরে যে সকল বৃহৎ কোম্পানী বা সংগঠন রয়েছে তারা সামাজিক দায়বদ্ধতা বরাদ্দ থেকে এধরণের আধুনিক ইনষ্টিটিউট গড়ে তুলতে পারেন। এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবশ্যই শ্রমিক, সুপাভাইজার, প্রকৌশলীসহ নানাস্তরের নিবিড় প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। একজন দক্ষ প্রকৌশলী ভাল ব্যবস্থাপকও বটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রযুক্তিগত বিষয় ছাড়াও জনসংযোগ, জনস্বার্থ, মানবিকতা, পরিবেশ-প্রতিবেশসহ ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর সমন্বয়ে একটি সমন্বিত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে আরো বেশী দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য প্রকল্প ব্যবস্থাপক গড়ে তুলতে পারলে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো বেশী সময় ও খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব। নির্মাণশিল্পে আধুনিকতার পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জননিরাপত্তার কথাও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ উন্নয়নের পাশাপাশি পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখাও আমাদের দায়িত্ব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.