নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবীণ ভাবনা

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৫১

শৈশব আর বার্ধক্য পরস্পর দু’মেরুর বাসিন্দা হলেও আচরণগত আর শারিরীকভাবে সময় দু’টি বড্ড কাছাকাছি। শৈশব ক্রমবর্ধমান শুক্লপক্ষ আর বার্ধক্য ক্রমহৃাসমান কৃঞ্চপক্ষ। মুসলিম সম্প্রদায়ে সুর্যোদয় আর সুর্যাস্ত উভয় সময়ই নামাজ পড়া হারাম। স্রষ্টার এই নীতি দিয়েও অনেকটা অনুমান করা যায় যে, শুরু এবং শেষ কিংবা সৃষ্টি এবং ধ্বংসের সাদৃশ্যতা। মানুষের জীবনে শৈশব আর বার্ধক্যের সাদৃশ্যতা হলো অবুঝ, অক্ষমতা সর্বোপরি ভালবাসার কাঙালীপনা। একটা অবুঝ বাচ্চা ভাবে পৃথিবীর সব ভালবাসাটুকুন তার হোক তেমনি একজন বৃদ্ধাও চায় তার সন্তান, তার প্রতিবেশী তাকে ভালবাসুক, সম্মান করুক। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সমৃদ্ধির ভিত্তি প্রবীণেরা আজ ভালবাসা আর সম্মান বঞ্চিত, পরিত্যক্ত। আজও দেশের হাজার হাজার শিশু, বৃদ্ধ ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর। দিকেদিকে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের ক্ষুধার আর্তনাদ। ভুলে গেছে তারা প্রাপ্য ভালবাসার কথা, সম্মানের কথা। শিশুদের প্রয়োজন নির্ভরতা, তেমনি বৃদ্ধেরও প্রয়োজন হয় নির্ভরতা। দু’জনই অক্ষম, দু’জনই দুর্বল, যদিও দু’জন ভিন্ন পথের পথিক। শিশুর চোখে অনাগত স্বপ্ন, অনাগত যৌবনের হাতছানি আর প্রবীনের চোখে কালোত্তীর্ণ স্বপ্ন, বিগত দিনের দৃশ্যমালা, ফেলে আসা ধুসর প্রান্তর।

ইংরেজীতে একটি কথা আছে Old is Gold । বস্তুত সৃষ্টির আদি থেকে এপর্যন্ত সভ্যতা যে স্তরে উপনীত হয়েছে তা যুগ যুগ ধরে রেখে যাওয়া পৃথিবীর পূর্বপুরুষেরই অবদান। তীর যেমন বিপুলবেগে ছুটার আগে পেছনে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে তেমনি সৃজনশীল মানুষেরাও সম্মুখ গতি সূসংহত করতে পেছনের ইতিহাস, সমৃদ্ধি থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। আমাদের প্রবীণগোষ্টী তেমনি একটি শক্তির উৎস, সম্ভবনাময় অধ্যায়। প্রবীণগোষ্ঠী আলাদা কোন গ্রহের মানুষ নয়, এই সম্মানিত মানুষগুলো হলো আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার মা, জন্মান্তরের বটবৃক্ষ বাবা কিংবা আমাদেরই স্বজন, যাদের রক্তে-রক্তে হেঁটে চলেছে মনুষ্য সম্প্রদায় অজানা গন্তব্যে কিংবা সপ্তআসমান ভেঙে আরশ্-মহল্লার পথে । জীবনের সোনালী দিনগুলো ছেলে-সন্তান গড়া, পৃথিবী গড়ার কাজে ব্যয় করে বৃদ্ধ বয়সে নবাগত শিশুর মতো অবলা অসহায় দিনযাপনে বাধ্য হয়। মাতৃজরায়ু থেকে নেমে মানবপথিক যেমন অসহায় অবলা পরিস্থিতিতে শুরু করেছিলেন পৃথিবীর পথচলা তেমনি সেই অলংঘনীয় পরিণতি মাথা পেতে বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। এই এক বিষ্ময়কর সৃষ্টির রহস্যঘেরা আয়োজন। জন্মের পর যেমন অসহায় মৃত্যুর পথেও তেমনি অসহায়। এ যেন নদীর দু’পাশে ধু-ধু বালুচর / মাঝখানে কুলভাঙা স্রোতস্বিনী জল / মন্থর গতির বালুচর ফেলে নিকষ অন্ধকার / হায় অন্ধকারচ্ছন্ন ভুবন! / কাউকে দেয়নি জানতে / কাউকে দেয়নি ফিরতে / যেথা অশ্র“ ঝরায় স্বজন / বসিয়া নিরঞ্জন।

পৃথিবীর বিষ্ময়কর গ্রন্থ পবিত্র কোরআনুল করীমে আল্লাহপাক বলেছেন, “এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্থ, নিকট প্রতিবেশী ও দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসদাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ভালোবাসেন না আত্মম্ভরী ও দাম্ভিককে। (সূরা আন নিসা, আয়াত-৩৬)
বার্ধক্য মানব জীবনের এক চিরন্তন বিষয়। মানবশিশুর জন্ম যেমন স্বাভাবিক, তেমনি শিশুকাল, কৈশোর আর যৌবনের দিনগুলো পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হওয়াও একান্ত স্বাভাবিক বিষয়। অসময়ে, অপরিণত বয়সে মারা না গেলে প্রতিটি মানুষকে পরিণত বয়সের স্বাদ নিতে হয়। কিন্তু এই পরিণত বয়সটা কেমন? এই বয়সের কি সমস্যা, সুবিধাই বা কি কি? প্রবীণ পুরুষ আর নারীর জীবন-যাপনে কোনো পার্থক্য আছে কি? সে পার্থক্য কি খুবই প্রকট? উন্নত বিশ্বের প্রবীণদের চেয়ে আমাদের প্রবীণরা কি ভালো আছেনÑইত্যাদি নানা প্রশ্নের জবাব খোঁজার একটা প্রয়াস এই নিবন্ধে লক্ষ্য করা যাবে।

আফ্রিকায় বলা হয়, যখন একজন প্রবীণ লোক মারা যান তখন একটি গ্রন্থাগার শেষ হয়ে যায়। এই বাক্যটি অনেকটা প্রবাদ বাক্যের মতই এবং একটু ভাবলেই এর মর্মার্থ উপলব্ধি করা যায়। যে কোনো দেশেই প্রবীণরা বর্তমানের সাথে অতীত এবং ভবিষ্যতের সংযোগ সাধন করেন। তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়ে একটি জীবন প্রবাহ তৈরী করে।


বয়ষ্কদের বসবাসের দিক থেকে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। উন্নত দেশগুলোতে আজকাল যখন প্রায় সকল প্রবীণ শহর এলাকায় বসবাস করেন সেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশ প্রবীণই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন। তাই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে, বৃদ্ধ বয়স হবে স্বাস্থ্যকর, আত্মনির্ভরশীল, সক্ষম ও সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

বয়ষ্কদের বয়স আরো যত বাড়ছে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা তত কমছে। সবক্ষেত্রে কর্মনীতি গ্রহণ করার বেলায় বয়ষ্ক নারীদের অবস্থা সবসময় অগ্রাধিকার পাবে বলে এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে বলা হয়, নারী ও পুরুষের উপর বয়স আলাদা আলাদা প্রভাব বিস্তার করে এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নারী পুরুষের পূর্ণ সমতা নিশ্চিত করা এবং এই ইস্যুকে কার্যকর ও দক্ষতার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

মানবজাতির একটি বড় অগ্রগতি হলো, সামাজিক অগ্রগতির কারণে অনেক ভালো পরিবেশে মানুষ এখন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকছে। ফলে, বয়ষ্কদের সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে। সকল বয়সীদের জন্য একটি সমাজ অর্জন করার জন্য আমাদের সমাজকে একটি বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার করতে হবে এবং সমাজে বিভিন্ন প্রজন্ম যে ভূমিকা রাখে তা উঁচুতে তুলে ধরতে হবে। সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করার জন্য পরিবার, সমাজ, কমিউনিটি ও জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রজন্মগুলোর মধ্যে সংহতি আনতে হবে।

ধীরে ধীরে আমরা উপলব্ধি করছি যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রবীণ জনগোষ্ঠী একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আর এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকা দরকার। প্রবীণদের ভেতর যে সক্ষমতা রয়েছে আমাদেরকে তা কাজে লাগাতে হবে এবং তার জন্য সে রকম পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাও তৈরী করতে হবে। প্রবীণ বয়সকে জীবনের এমন একটি স্তর হিসেবে বিবেচনা করতে হবে যখন নারী পুরুষ তাদের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে এবং তখনও তারা সমাজের একজন সক্রিয় লোক হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায়ও তারা পূর্ণ নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং সামাজিকভাবে পূর্ণ স্বীকৃতি পাবে।

বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে ওল্ড হোম প্রবীণদের ঠিকানা হিসেবে গড়ে উঠলেও আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশসমূহে প্রবীণরা পরিবারের সান্নিধ্যেই থাকছে। এই বিপরীত অবস্থানের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ফলই রয়েছে। ওল্ড হোমে প্রবীণদের জন্য নানা সুযোগের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে পারিবারিক বা আত্মিক বন্ধন নেই। আবার উন্নয়নশীল দেশসমুহের প্রবীণরা নিজেদের পারিবারিক মন্ডলে বৃদ্ধ বয়সটা প্রায় ক্ষেত্রে ভালোবাসার বন্ধনে কাটাতে পারলেও ওল্ড হোমের নিয়মতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার বন্ধনে প্রায় বলার কারণ আমাদের অনেক প্রবীণই বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক ও অন্যান্য কারণে অযতœ-অবহেলার শিকার হন।

প্রবীণদের নিয়ে ভাবনা-চিন্তাও আমাদের দেশে বেশী দিনের পুরনো নয়। আমাদের প্রবীণদের নিয়ে এখন সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী কিছু কিছু সংস্থাও কাজ শুরু করেছে। এটা অবশ্য আশার কথা। আশা করা যায়, আমাদের নানান উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রবীণদের নিয়ে কর্মসূচি আসবে, তারাও উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকবেন এবং পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো পার করবেন। প্রবীণদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা তাদেরকে আমাদের সম্ভাবনা হিসেবে কাজে লাগাতে পারি; নতুবা ক্রমে তারা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলো আজ যেমন প্রবীণদের নিয়ে উঠে-পড়ে লেগেছে, জাতিসংঘকে যেখানে প্রবীণদের নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে সেখানে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহেরও যথাসময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন দরকার।

এ জন্য আমরা সরকারসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইÑপ্রবীণদের মানবিক ও নাগরিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, পেনশন ও বয়ষ্ক ভাতা, বিনোদন, স্বেচ্ছামূলক কর্মসংস্থান তৈরী, অসহায় প্রবীণদের পুনর্বাসন এবং বিশেষভাবে প্রবীণ নারীদের মানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৬

মুহাম্মদ তাজরিয়ান আলম আয়াজ বলেছেন: ধন্যবা.।.। ভালো লিখেছেন

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১৭

করুণাধারা বলেছেন:

আমরা ফেলে আসা শৈশবের অসহায়ত্বের কথা যেমন ভুলে যাই তেমনি ভুলে যাই বার্ধক্যর অসহায়ত্বর কথা। ধন্যবাদ আপনাকে, মনে করিয়ে দেবার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.