নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন যুদ্ধে কোমলমতি শিশু; শিবলু দাশ / ----সৈয়দ মামুনূর রশীদ

১০ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৩


দশ বছরের শিশু শিবলু দাশ। তার জীবন কাহিনী একটু ব্যতিক্রম। আমরা কম-বেশী সকলেই জানি সেবক কলোনীর বাসিন্দারা শিক্ষিত হয়ে সীমিত গন্ডি থেকে বেরিয়ে ভিন্ন পেশায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এখানে হতভাগা শিবলুর ভাগ্য বাইরের জগত থেকে নিয়ে এসেছে সেবক কলানীর চার দেয়ালে। সে এখন চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ী সেবক কলোনীতে প্রতিষ্ঠিত ঘাসফুল শিশু বিকাশ কেন্দের ছাত্র। শিবলুর বাবা স্বর্গীয় ইরেন্দ্র সেন দাশ আর মায়ের নাম ছবি দাশ। ছেলেটা ভারী দুষ্ট। পড়াশুনায় মন নাই তার, স্কুলে পড়তেও মন চায় না। শিবলু দাশের পৈতৃক বাড়ী ছিল; চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হানুহাজীর হাট গ্রামে। শিবলু দাশ যখন বড় হয়ে বুঝতে শেখে তখন সে জানতে পারে তার বাবা পৃথিবীতে বেঁচে নেই। অভাবের সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চলে যাওয়াতে শিবলুর মা চার ছেলে ও এক মেয়ের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। তারপর এ এলাকার পূর্ব পরিচিত হরিজন সম্প্রদায়ের একজনের সাথে কথা বলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সুইপার হিসেবে চাকুরী পান। শুরু হয় তাদের ভিন্ন সমাজের অন্যরকম এক পথ চলা। গ্রামীণ তৃণমূল জনপদে বলা যায় এটিও একধরণের ট্র্যাজেডি।
শিশু শিবলুর জীবনে রয়েছে আরো এক ভয়ানক ট্র্যাজেডি। কথা প্রসঙ্গে জানা যায় শিবলুর পিতা মারা যান নিজ গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে। সেবক কলোনীর ভিন্ন জগতে এসে ভিন্ন জীবনযাপনে পিতৃহারা গ্রামীণ দুরন্ত ছেলেটা সর্বদা এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করে। দুরন্তপনার এক পর্যায়ে হিং¯্রাত্মক হয়ে উঠে। একবার তার মা তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। শিবলু সেখানে স্কুলের অন্যান্য ছেলে মেয়েদের সাথে দুষ্টামি আর মারপিঠ করার কারণে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। একদিন ছেলেটি চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি সেবক কলোনীতে প্রতিষ্ঠিত ‘ঘাসফুল শিশু বিকাশ কেšদ্র” এর শিক্ষক নিলুফার এর দৃষ্টিতে আসে। তিনি ছেলেটিকে কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে নেন। শিবলু প্রসঙ্গে শিক্ষিকা নিলুফার আক্তার বলেন, আমি ছেলেটাকে একমাস ফলোআপ করলাম, দেখলাম সে সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে অন্য মানুষদের জন্য রাস্তার ওপার থেকে নাস্তা এনে দেয়। বিনিময়ে তাকে ছিটেফোটা বা উচ্ছিস্ট কিছু খেতে দেয়-এতেই সে খুশি। শিবলু দাশকে কোনদিন একই প্যান্ট - শার্ট ছাড়া আর কোন নতুন জামাকাপড় পড়তে দেখিনি। তার জামা-কাপড় বলতে ওই একটি ছেঁড়া প্যান্ট আর একটি ছেড়া শার্ট। ঝড় বর্ষা, শীত সবসময় সে ওই জামা পড়েই ঘুরে বেড়ায়। শিবলুর মা ছবি দাশ দারিদ্রতার কষাঘাতে জীবন-যাপন করলেও তার রয়েছে একটি সুন্দর ধারণা। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেকের ধারনা নিচু কাজ করলে আত্মসম্মানের হানি ঘটে। কায়িক শ্রমকে অনেকে ঘৃণার চোখে দেখে, ছোটলোকের কাজ মনে করে। ছবি দাশ মনে করেন, কোন কাজ ছোট নয় বরং এটাকে ঘৃণা না করে সকল বৈধ কাজকে শ্রদ্ধা করা উচিত। ঘাসফুল বিকাশ কেন্দ্রের শিক্ষিকা বেশ কিছুদিন ছেলেটির চলাফেরায় নজরদারি শেষে একদিন শিবলুর মা এর সাথে আলাপ করেন। শিক্ষিকা বলেন, শিবলুকে আমি ডেকে বুঝিয়ে ওর মায়ের সাথে কথা বলে পড়াশুনার জন্য ঘাসফুল শিশু বিকাশ কেন্দ্রে পাঠাতে বললাম। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম দুরুন্ত ছেলেটি আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনে প্রতিদিন শিশু বিকাশ কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। শিবলু এখন এখন লিখতে পারে এবং পড়তেও পারে। কাছাকাছি এস. কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর চেষ্টা করি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে শিবলুর’ মা অল্পকিছু টাকার জন্য ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি করাল না। সময় চলে যাওয়াতে চেষ্টা করেও এবছর আর তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। কন্টাকীর্ণ শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত শিক্ষিকা নিলুফার দৃঢ়ভাবে আশা প্রকাশ করে বলেন, ছেলেটাকে আমি নিজেই সামনের বছর স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিব। তথাকথিক অচ্ছুৎ সম্প্রদায়ের বসতি পূর্ব মাদারবাড়ির এ সেবক কলোনীর বাসিন্দাদের জীবন-মান উন্নয়নে ঘাসফুল কাজ শুরু করে আশির দশকে। ঘাসফুল-প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত পরাণ রহমান দেখলেন, এখানে জীবন অন্যরকম। পড়ালেখা নেই, জীবনের স্বপ্ন নেই, দম নেই ভিন্ন কোন ভবিষ্যত নেই। এখানে আছে দিনভর নগরীর নালা-নর্দমার ময়লা-আর্বজনা সরানোর ক্লান্তি আর দিনশেষে মদ খেয়ে মাতলামি- এইটুকুই তাদের জীবন, এর বাইরে তাদের আর কোন জীবন ছিল না, স্বপ্ন ছিল না। প্রয়াত পরাণ রহমান অনগ্রসর এই সম্প্রদায়ের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার কথা ভেবে সেবক কলোনীতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন- যা এখন ‘ঘাসফুল শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ নামে শিক্ষার প্রদীপ জ্বালানোর কাজটি অব্যাহত রেখেছে। প্রয়াত পরাণ রহমানের অদম্য ইচ্ছা, আন্তরিক প্রচেষ্টা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল বৃথা যায়নি। এখন সেবক কলোনীর বাসিন্দারা বাইরের জগত সম্পর্কে জানতে শিখেছে। তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে ভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে। এলাকায় সুনাম নিয়ে শুরু থেকে অদ্যবধি অনেক সাফল্য রয়েছে স্কুলটির। সেবক কলোনীতে স্কুলটির কারণেই এ সম্প্রদায় থেকে বর্তমানে একজন সফল প্রকৌশলীসহ বহু শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে তৈরি হয়েছে। নগরীর বহু প্রতিষ্ঠিত স্কুলে বর্তমানে এ কলোনীর ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করছে। সকাল-দুপুর ও বিকালে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে কলোনীর প্রাঙ্গণ। আশির দশকে পূর্ব মাদাবাড়ি সেবক কলোনীতে প্রতিষ্ঠিত এই প্রাচীন বিদ্যাপিঠের বর্তমান শিক্ষিকা মনে করেন দরিদ্রপীড়িত এ জনপদের ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যবোধ তথা সৌন্দর্যবোধ, প্রেম ও আনন্দ সম্বন্ধে চেতনা জাগিয়ে তুলে এদের প্রত্যেককে সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। ।
শিবলু দাশকে নিয়ে ঘাসফুল বিকাশ কেন্দ্রের শিক্ষিকা আশাবাদী। তিনি যোগ করেন, ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখাতে চাই। তার ভাল খাবার খুব পছন্দ। ছেলেটার সাদামাটা মন, অন্তর সরল। প্রত্যেক মানুষের যে রকম স্বপ্ন থাকে, শিবলুর অনেক রঙিন স্বপ্ন রয়েছে। বড় হয়ে শিবলু মা, ভাই-বোনের দায়িত্ব নিতে চায়। তিনি বলেন, শিবলুর লক্ষ্যে ঁেপৗছাতে আমার যতটুকু সাহায্য দরকার সহায়িকা হিসেবে আমি তার সাথে আছি।
----সৈয়দ মামুনূর রশীদ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:২৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: পোষ্টটি কনভার্ট করা মনে হয়।

২২ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:০১

সৈয়দ মামুনূর রশীদ বলেছেন: বিষয়টি বুঝি নাই। ওয়ার্ডে লিখে ইউনিকোডে কনভার্ট করেছে।

২| ১০ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: আহারে----

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.