নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গাদ্দার

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

গাদ্দার

গাদ্দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট্ট একটা কাজ তুমি করে দেখাও আজ জেগে উঠবে সবাই- এর বাণিজ্যিক মনস্তত্ব

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৩৩

বিজ্ঞাপনগুলো ইদানিং আমাকে খুব জ্বালাতন করছে। নারীর পণ্যায়নে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হবার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতেও তারা বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে। এই চিপস/ক্যান্ডি/পেস্ট বা ঐ দুধ খেলে বাচ্চারা বিজ্ঞানসম্মতভাবে কিভাবে মেধাবী হয়ে দেশের প্রতিটি পরিবারকে মেধার বন্যায় ভাসিয়ে দেবে সেসব কাহিনী প্রচারের মাধ্যমে পণ্যের প্রতি কোমলমতি বাচ্চার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরীর মাধ্যমে বাবা মাকে ব্ল্যাকমেল করছে প্রতিনিয়ত পণ্যটি ক্রয়ে। কি করলে দেশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে ইদানিং এ শিক্ষা দানে বিজ্ঞাপনগুলোর দারুন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। গায়ে শিহরণ ধরিয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে আপনার মনে হবে এরা আমাদের দেশে ব্যবসা করছে না মানবসেবা করছে মাত্র। আমাদের তরুন প্রজন্ম বিজ্ঞাপনের অভিনবত্ব, স্ক্রিপ্ট, পিকচার দেখে আবেগাপ্লুত। কেউ কেউ বিজ্ঞাপনের ভিডিওগুলো শেয়ার করে দেশ ও সমাজের উপকারে বিজ্ঞাপনগুলোকে ছড়িয়ে দেয়াটাকে পূণ্যের কাজ জ্ঞান করছে।



বিজ্ঞাপনগুলো একাধারে মানুষের ডাক্তার, শিক্ষক, সহযোগি সেজে বসে আছে। এর আগে নারীকে শুধুমাত্র সম্ভোগের বস্তুরুপে উপস্থাপন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে বাচ্চাদের মনোজগতকে বিকৃত করার বিরুদ্ধে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণের কোন কাজটা করতে হবে সে শিক্ষাদানে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে খুব একটা প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে না। আসুন একটা বিজ্ঞাপনকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও বিজ্ঞাপিত পণ্যের মালিকদের বাণিজ্যিক মনস্তত্ব উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করি। একটেলের 'ছোট্ট একটা কাজ যদি করে দেখাও আজ জেগে উঠবে সবাই' বিজ্ঞাপনটাকেই এখানে স্যাম্পল হিসেবে নিতে পারি।



বিজ্ঞাপনটির প্রথম ভাগে দেখা যায় একটি বিড়ালের বাচ্চাকে একটি শিশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়, খুচরা দোকানদার সততার সাথে ফেলে যাওয়া মোবাইল তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়, মোবাইল ফেরত পাওয়া যুবকটি একজন গর্ভধারিনী মাকে গাড়ি ছেড়ে দেয়। বিষয়গুলো উপস্থাপনের মাধ্যমে বুঝানো হচ্ছে আমাদের সমাজে এধরনের সততা, মানবিকতা ও পরোপকারী মানসিকতার ঘাটতি আছে। তাতে আমার দ্বিমত নাই। যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা অথবা অস্থিরতার কারণে এধরনের মহৎ কাজগুলো অনুপস্থিত সেই অস্থিরতা দূর না করলে কি মানুষ পরিবর্তিত হবে? সেটি দূর না করলে দুই দিনের বৈরাগীর মতো হয়তো দু'একটা ভালো কাজ করতে মন চাইবে তারপর ঠিকই বাস্তবতার কষাঘাতে আবার অসৎ হতে মানুষ বাধ্যই হবে। কাজেই অসৎ অথবা অমানবিক হবার সকল সামাজিক বাস্তবতা টিকিয়ে রেখে কখনোই মানুষকে সৎ হবার শিক্ষা দিয়ে খুব একটা লাভ হবে কি? তাহলে কি করতে হবে?



নিশ্চিতভাবেই লুটেরা রাজনীতি আমাদের অর্থনীতিকে করেছে লুটপাটের অর্থনীতি। আর লুটপাটের অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোই আমাদের টিকে থাকার তীব্র প্রতিযোগিতায় কিছু সামাজিক বাস্তবতা তৈরী করে অর্থাৎ অসৎ হতে বাধ্য করে। কাজেই লুটেরা রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ছাড়া আমাদের উপায় নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সে মহান দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু সে কাজে উৎসাহিত করা কি একটেল/গ্রামীণ/বাংলালিংক/অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব। না। কারণ যে লুটেরা রাজনীতির সুবিধা নিয়ে হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে এরা ব্যবসা চালাচ্ছে সে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ঘটানোর প্রচার চালানো মানে নিজের পায়ে কুড়োল মারা। কাজেই এরা পারলে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের কাজকে অনুৎসাহিত করতে যত কায়দা কানুন করা দরকার তার সবই করবে।



সেদিন ফেসবুকে একটি পেজে একটা পোস্ট দেখলাম এরকম, "ছোট্ট একটা কাজ , যদি করে দেখাও আজ" টিভি খুললেই দেখা যায় রবির এই এ্যডটি । আমাদের শর্ত তো একটাই , ৫০ টাকায় এক জিবি নেট কানেকশন একবার দিয়া দেখা । বাংলাদেশের সব হসপিটাল আর গার্লস কলেজের সামনে আমরা সিএনজি আর রিকশা নিয়া দাড়ায়া থাকবো এবং সব সুন্দরীদের আগে যেতে দেব !!! আমওয়ালা , কাঁঠালওয়ালা , মাছওয়ালা এমন কি ফরমালিন ওয়ালার সাথেও আমরা ছবি তুইলা ফেসবুকে শেয়ার দিমু !!! তোরা ভাই খালি একবার ৫০ টাকায় ১ জিবি দিয়া দেখ ভাই, এইসব ছোটখাট কাজ আমরা ডেইলি কইরা দেখামু !!



এক জিবি ইন্টারনেট সরকার থেকে ২০ টাকা দরে কিনে আমাদের কাছে এরা বিক্রী করছে প্রায় ২১ হাজার টাকায়!! তাহলে বুঝে দেখুন এরা কত্ত বড় মুনাফাখোর। অথচ এরাই মানুষকে সৎ হবার উপদেশ দিয়ে বেড়াচ্ছে।



বিজ্ঞাপনটির দ্বিতীয় ভাগে দেখা যায়, একটি গ্রামে সেতু তৈয়ার করতে একদল তরুণের উদ্যোগ ও তাতে গ্রামের সাধারণের কৃতজ্ঞতা প্রদানের দৃশ্য। তারপরই দেখা যায় সকলে মিলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ত্রাণ দিয়ে দুর্গতদের সহায়তা প্রদানের দৃশ্য। তরুণদের উদ্যোগে গ্রামের সেতু বানানো বা দূর্যোগে সহায়তা একদমই নতুন না আমাদের দেশে। একাজগুলো আমাদের দেশের তরুণরা হরহামেশাই করে। কিন্তু বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে এসব সামাজিক উদ্যোগে নিজেকে ইনিশিয়েটরের ভূমিকায় অবতীর্ণ করতে চাইছে একটেল। আমার আপত্তির জায়গা অন্য জায়গায়। এ বিজ্ঞাপনে বা এধরনের কাজে একটি অসুবিধা হচ্ছে, মনে হতে পারে যেসব অঞ্চলে এ ধরনের সেতু নাই সেটা সেখানকার তরুণদের সমস্যা অথবা দূর্যোগ কবলিতরা যদি যথেষ্ট খাবার না পায় তাহলে মনে হতে পারে তরুনদের উদ্যোগের অভাবই মূল কারণ। অথচ এ দায়িত্বতো তরুণদের না। এখানেও খেয়াল করে দেখেন, খুব সুন্দর করে রাষ্ট্রের ভূমিকাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। হ্যাঁ, তরুণদের উদ্যোগ রাষ্ট্রের সহায়ক হতে পারে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রকেই সেতু তৈরী ও দূর্যোগ কবলিতদের খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। ছাত্র সমাজ বা তরুণরা অবশ্যই সামাজিক দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দায়মোচনে নিজের প্রধান দায়িত্ব পড়ালেখা ছেড়ে সারাদিন সামাজিক দায়িত্বই পালন করে যাবে। কিন্তু এ বিজ্ঞাপনগুলো ব্যর্থ রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার সম্ভাবনাকে নষ্ট করার সকল চেষ্টাই করছে। বারবার আঙ্গুল দিয়ে এরা দেখিয়ে দিচ্ছে তুমি করছো না বলেই হচ্ছে না। তাতো তারা করবেই কারণ লুটেরা এ রাষ্ট্রকে কাজে লাগিয়েইতো এসকল মোবাইল অপারেটর অথবা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে অসৎ ও অমানবিকভাবে মুনাফা তৈরী করে নিচ্ছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০

অজানাবন্ধু বলেছেন: ভাল লেখা

++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.