![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের অনার্স পার্ট-১ পরীক্ষার ফলাফলে নতুন জিপিএ পদ্ধতি প্রয়োগে বিপর্যয়ের পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত ২১ জুলাই’২০১৩ একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছে। এতে প্রথম অংশে বলা হয়,
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের অনার্স পার্ট-১ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় যে, শতকরা ৪৬ ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া কি অভিভাবক কি শিক্ষক কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারো কাছে কাম্য নয়। আমরা চাই শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী ভাল ফলাফলসহ উত্তীর্ণ হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে ফলাফলে যেখানে ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে সেটিকে শুধু কাম্য নয় বলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভারকে এড়িয়ে যেতে পারে না। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হতে যাওয়া নতুন আইন অনুযায়ী প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশনে জিপিএ ১.৭৫ বা ততোধিক, দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষে প্রমোশনে জিপিএ ২.০০ বা ততোধিক এবং তৃতীয় বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশনে জিপিএ ২.২৫ বা ততোধিক পেতে হবে। প্রথমতো, নতুন এই আইনে ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীরা বলছে, আইনটি সম্পর্কে তাদের জানানোই হয়নি। দ্বিতীয়ত, যদিও বা জানানো হয়ই তথাপি এমন একটি ফলাফল বিপর্যয় কেনো এড়ানো যায়নি। এ ফলাফল বিপর্যয় নির্দেশ করে আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোটির অন্তঃসারশূণ্যতা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছুটা অভিযোগের সুরে বলছে,
শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস ও গভীর মনোনিবেশ সহকারে লেখাপড়া করলে তা অর্জন সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ তা করছে না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যারা পড়ালেখা করছেন তারা জানেন এখান আদৌ নিয়মিত ক্লাস হয় না। পরীক্ষার হলের অভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ডিগ্রী, অনার্স, মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভোগে। ক্লাস হয় না বললেই চলে। বছরে সব মিলিয়ে ৬০-৭০ দিন মাত্র ক্লাস হয়। এ কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার উপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এমন কোনো কলেজ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে শিক্ষক সংকট নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সংক্রান্ত সংশোধন রেগুলেশন ২০০০-এর ৩(১) এ বলা আছে, ‘কোনো কলেজে কোনো বিষয়ে ডিগ্রি (পাস ও অনার্স) এবং স্নাতকোত্তর কোর্স থাকলে উক্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ১২ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা কর্মরত থাকতে হবে।‘ কোনো কলেজই এ নিয়মটি মানছে না। শহরের কলেজগুলোর চাইতে গ্রাম ও মফস্বলের কলেজগুলোর দশা আরো করুন। সেখানে প্রতি বিভাগে ৩-৪ জন শিক্ষক দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। শিক্ষাবর্ষ সমাপ্ত করতে দেরি হলে অভিভাবকদের আর্থিক কষ্টের কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে,
তাদের উপলদ্ধি করতে হবে যে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি অভিভাবকদের অধিক সময় শিক্ষার ব্যয় বহন করতে হয়, যা অস্বচ্ছল পিতা-মাতার পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য। সন্তান-সন্ততিরা যাতে নিয়মিত লেখাপড়া করে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো।
শুধ অকৃতকার্য হলেই কি অভিভাবকদের অধিক সময় শিক্ষার ব্যয় বইতে হয়? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে যাদের অনার্স ফাইনাল রেজাল্ট দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের সনদ পত্রে লিখা হয়েছে যে তারা ২০০৯ সালে পাস করেছে!!! অকৃতকার্য হওয়া ছাড়াই এই তিন বছর নষ্টের দায় কার? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট একটি গুরুতর সমস্যা। এখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করতে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থীর জীবনের মূল্যবান ৭-৮টি বছর চলে যায়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর পাঠ ২০১৩ সালেও শেষ হয়নি। ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস, পরীক্ষা, ফল প্রকাশ কোনো কিছুই সময়মতো হয় না। এসবের কারণে শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে না। প্রচুর শিক্ষার্থী এসময় ঝড়ে যায়। আর যারা টিকে থাকে নিজের পড়ার খরচ যোগাতে তাদের জড়িয়ে যেতে হয় খন্ডকালিন চাকুরির মতো কোনো পেশায়। তাতে শিক্ষা জীবন হয় বিপন্ন। জিপিএ সিস্টেমের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কেউ দ্বিমত করেনি কারণ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও এইচএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ পদ্ধতিতেই পাশ করে এসেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযথা শিক্ষার্থীদের সে বিষয়ে জ্ঞান দিচ্ছে এভাবে,
শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, গ্রেডিং সিস্টেমে পরীক্ষার উত্তরপত্র মুল্যায়ন এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি। একই বিবেচনায় তাই দু’বছর পূর্বে দেশের পাবলিক-প্রাইভেট নির্বিশেষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ এ পদ্ধতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রবর্তন করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য শুধু বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি নয়, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানসম্পন্ন গ্রাজ্যুয়েট তৈরিও। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার নিয়ম-কানুন অনুসরণ তাদের কল্যাণেই আবশ্যক। শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে যে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যাবে না, এটি তাদের বুঝতে হবে।
কিন্তু জিপিএ সিস্টেম প্রবর্তনের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের বলে জাহির করাকে হাস্যকর ঠেকে। তাও শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিপিএ সিস্টেমে পরীক্ষার নিয়ম কানুন অনুসরণেই তা অর্জন হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অর্জনে যে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সেটি শিক্ষার্থীরা বেশ ভালোই বুঝে। আর তাই
• দুঃসহ সেশনজট দূর করা
• শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ-আবাসন-পরিবহন সংকট দূর করা
• ডাইনিং-ক্যান্টিন-মিনি হাসপাতাল চালু করা
• নামে বেনামে বছর বছর ফি বাড়ানো বন্ধ করা
• গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করা
• লাইব্রেরি-সেমিনারে পর্যাপ্ত নতুন সংস্করণের বই প্রদান করা
• পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির সংস্কার করা
• অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে অনার্স কলেজগুলোতে নতুন বিভাগ, প্রলিমিনারি ও মাস্টার্স চালু করা
• শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা
• সর্বোপরি গণমুখী-বিজ্ঞানভিত্তিক-অসাম্প্রদায়িক-একই ধারার শিক্ষানীতি চালু করা
ইত্যাদি দাবি পূরণের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের মৌলিক সংস্কার করা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় বলেছেন,
যা হোক, যাতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অনার্স পার্ট-২এ লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত না হয় এবং তাদের অভিভাবকদের উপর বাড়তি চাপ না পড়ে সার্বিক দিক বিবেচনায় বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে রয়েছে। যথাশীঘ্র সম্ভব এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
উপরোক্ত দাবি সমূহ মেনে নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁধ হতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তার(!) অবসান হবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরাই অভিভাবকদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
অতএব, মানব বন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানে অযথা কালক্ষেপণ না করে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথম বর্ষের ফলাফল পূনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না এবং অতি স্বত্ত্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক পরিবর্তন সাধনে উপরোল্লিখিত দাবিসমূহ মেনে নিলে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অযথা পড়ালেখা বাদ দিয়ে নিশ্চয় মানববন্ধন, মিছিল করবে না।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের অনার্স পার্ট-১ পরীক্ষার ফলাফলে নতুন জিপিএ পদ্ধতি প্রয়োগে বিপর্যয়ের পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত ২১ জুলাই’২০১৩ একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছে। এতে প্রথম অংশে বলা হয়,
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের অনার্স পার্ট-১ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় যে, শতকরা ৪৬ ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া কি অভিভাবক কি শিক্ষক কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারো কাছে কাম্য নয়। আমরা চাই শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী ভাল ফলাফলসহ উত্তীর্ণ হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে ফলাফলে যেখানে ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে সেটিকে শুধু কাম্য নয় বলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভারকে এড়িয়ে যেতে পারে না। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হতে যাওয়া নতুন আইন অনুযায়ী প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশনে জিপিএ ১.৭৫ বা ততোধিক, দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষে প্রমোশনে জিপিএ ২.০০ বা ততোধিক এবং তৃতীয় বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশনে জিপিএ ২.২৫ বা ততোধিক পেতে হবে। প্রথমতো, নতুন এই আইনে ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীরা বলছে, আইনটি সম্পর্কে তাদের জানানোই হয়নি। দ্বিতীয়ত, যদিও বা জানানো হয়ই তথাপি এমন একটি ফলাফল বিপর্যয় কেনো এড়ানো যায়নি। এ ফলাফল বিপর্যয় নির্দেশ করে আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোটির অন্তঃসারশূণ্যতা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছুটা অভিযোগের সুরে বলছে,
শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস ও গভীর মনোনিবেশ সহকারে লেখাপড়া করলে তা অর্জন সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ তা করছে না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যারা পড়ালেখা করছেন তারা জানেন এখান আদৌ নিয়মিত ক্লাস হয় না। পরীক্ষার হলের অভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ডিগ্রী, অনার্স, মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভোগে। ক্লাস হয় না বললেই চলে। বছরে সব মিলিয়ে ৬০-৭০ দিন মাত্র ক্লাস হয়। এ কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার উপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এমন কোনো কলেজ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে শিক্ষক সংকট নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সংক্রান্ত সংশোধন রেগুলেশন ২০০০-এর ৩(১) এ বলা আছে, ‘কোনো কলেজে কোনো বিষয়ে ডিগ্রি (পাস ও অনার্স) এবং স্নাতকোত্তর কোর্স থাকলে উক্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ১২ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা কর্মরত থাকতে হবে।‘ কোনো কলেজই এ নিয়মটি মানছে না। শহরের কলেজগুলোর চাইতে গ্রাম ও মফস্বলের কলেজগুলোর দশা আরো করুন। সেখানে প্রতি বিভাগে ৩-৪ জন শিক্ষক দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। শিক্ষাবর্ষ সমাপ্ত করতে দেরি হলে অভিভাবকদের আর্থিক কষ্টের কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে,
তাদের উপলদ্ধি করতে হবে যে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি অভিভাবকদের অধিক সময় শিক্ষার ব্যয় বহন করতে হয়, যা অস্বচ্ছল পিতা-মাতার পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য। সন্তান-সন্ততিরা যাতে নিয়মিত লেখাপড়া করে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো।
শুধ অকৃতকার্য হলেই কি অভিভাবকদের অধিক সময় শিক্ষার ব্যয় বইতে হয়? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে যাদের অনার্স ফাইনাল রেজাল্ট দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের সনদ পত্রে লিখা হয়েছে যে তারা ২০০৯ সালে পাস করেছে!!! অকৃতকার্য হওয়া ছাড়াই এই তিন বছর নষ্টের দায় কার? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট একটি গুরুতর সমস্যা। এখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করতে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থীর জীবনের মূল্যবান ৭-৮টি বছর চলে যায়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর পাঠ ২০১৩ সালেও শেষ হয়নি। ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস, পরীক্ষা, ফল প্রকাশ কোনো কিছুই সময়মতো হয় না। এসবের কারণে শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে না। প্রচুর শিক্ষার্থী এসময় ঝড়ে যায়। আর যারা টিকে থাকে নিজের পড়ার খরচ যোগাতে তাদের জড়িয়ে যেতে হয় খন্ডকালিন চাকুরির মতো কোনো পেশায়। তাতে শিক্ষা জীবন হয় বিপন্ন। জিপিএ সিস্টেমের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কেউ দ্বিমত করেনি কারণ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও এইচএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ পদ্ধতিতেই পাশ করে এসেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযথা শিক্ষার্থীদের সে বিষয়ে জ্ঞান দিচ্ছে এভাবে,
শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, গ্রেডিং সিস্টেমে পরীক্ষার উত্তরপত্র মুল্যায়ন এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি। একই বিবেচনায় তাই দু’বছর পূর্বে দেশের পাবলিক-প্রাইভেট নির্বিশেষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ এ পদ্ধতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রবর্তন করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য শুধু বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি নয়, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানসম্পন্ন গ্রাজ্যুয়েট তৈরিও। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার নিয়ম-কানুন অনুসরণ তাদের কল্যাণেই আবশ্যক। শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে যে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যাবে না, এটি তাদের বুঝতে হবে।
কিন্তু জিপিএ সিস্টেম প্রবর্তনের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের বলে জাহির করাকে হাস্যকর ঠেকে। তাও শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিপিএ সিস্টেমে পরীক্ষার নিয়ম কানুন অনুসরণেই তা অর্জন হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অর্জনে যে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সেটি শিক্ষার্থীরা বেশ ভালোই বুঝে। আর তাই
• দুঃসহ সেশনজট দূর করা
• শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ-আবাসন-পরিবহন সংকট দূর করা
• ডাইনিং-ক্যান্টিন-মিনি হাসপাতাল চালু করা
• নামে বেনামে বছর বছর ফি বাড়ানো বন্ধ করা
• গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করা
• লাইব্রেরি-সেমিনারে পর্যাপ্ত নতুন সংস্করণের বই প্রদান করা
• পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির সংস্কার করা
• অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে অনার্স কলেজগুলোতে নতুন বিভাগ, প্রলিমিনারি ও মাস্টার্স চালু করা
• শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা
• সর্বোপরি গণমুখী-বিজ্ঞানভিত্তিক-অসাম্প্রদায়িক-একই ধারার শিক্ষানীতি চালু করা
ইত্যাদি দাবি পূরণের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের মৌলিক সংস্কার করা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় বলেছেন,
যা হোক, যাতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অনার্স পার্ট-২এ লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত না হয় এবং তাদের অভিভাবকদের উপর বাড়তি চাপ না পড়ে সার্বিক দিক বিবেচনায় বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে রয়েছে। যথাশীঘ্র সম্ভব এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
উপরোক্ত দাবি সমূহ মেনে নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁধ হতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তার(!) অবসান হবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরাই অভিভাবকদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
অতএব, মানব বন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানে অযথা কালক্ষেপণ না করে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথম বর্ষের ফলাফল পূনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না এবং অতি স্বত্ত্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক পরিবর্তন সাধনে উপরোল্লিখিত দাবিসমূহ মেনে নিলে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অযথা পড়ালেখা বাদ দিয়ে নিশ্চয় মানববন্ধন, মিছিল করবে না।
©somewhere in net ltd.