![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালের অনার্স পার্ট-১ পরীক্ষার ফল গত ১৫ জুলাই’২০১২ প্রকাশিত হয়। এতে ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হন। মূলত ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে একটি বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে চালু করা ‘ব্যাচেলর (অনার্স) ডিগ্রি রেগুলেশন-২০১০’ নামক নতুন নিয়ম প্রয়োগ করায় এই বিপর্যয় ঘটেছে। বিজ্ঞপ্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে,
• সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সিলেবাস অনুযায়ী ৩০ সপ্তাহ (অর্থাৎ ২১০ দিন) পাঠদান, ৪ সপ্তাহ পরীক্ষা প্রস্তুতি এবং ৬ সপ্তাহ বার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে। অবশিষ্ট সময়ের (অর্থাৎ ৮৫ দিন) মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষাবর্ষ হবে জুলাই-জুন।
• তত্ত্বীয় কোর্সের ক্ষেত্রে ১০০ নম্বর কোর্সে হবে ৬০ ক্লাস ঘণ্টা (৪৫ মিনিটে ১ ক্লাস ঘণ্টা) = ৪ ক্রেডিট (১৫ ক্লাস ঘণ্টায় ১ ক্রেডিট) ধরা হবে। ৫০ নম্বর কোর্সে হবে ৩০ ক্লাস ঘণ্টা = ২ ক্রেডিট
• ব্যবহারিক কোর্সের ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের ৩০টি ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য (৩০*৩) = ৯০ ক্লাস ঘণ্টা = ৪ ক্রেডিট। ৫০ নম্বরের ১০টি ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য (১৫*৩) = ৪৫ ক্লাস ঘণ্টা = ২ ক্রেডিট।
• বিএ (অনার্স), বিএসএস (অনার্স) মোট ৩০০০ নম্বর বা ১২০ ক্রেডিট। বিবিএ (অনার্স) মোট ৩১০০ নম্বর বা ১২৪ ক্রেডিট। এবং বিএসসি (অনার্স) মোট ৩২০০ নম্বর বা ১২৮ ক্রেডিট।
• প্রথম এবং দ্বিতীয় ১৫ সপ্তাহ পর পর In Course পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এবং প্রশ্ন হবে কাঠামোবদ্ধ (Brief Question, Short Question, Broad Question) পদ্ধতিতে। ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে ২০% নম্বর অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
• নম্বর বন্টনের ক্ষেত্রে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০টি গ্রেড। সর্বনিম্ন পাশের গ্রেড ‘ডি’ (৪০%<৪৫%) এবং সর্বোচ্চ গ্রেড এ+ (৮০% বা তার অধিক)। প্রথম হতে দ্বিতীয় বর্ষে, দ্বিতীয় হতে তৃতীয় বর্ষ এবং তৃতীয় হতে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশন পেতে হলে সর্বনিম্ন যথাক্রমে ১.৭৫, ২.০০, ২.২৫ অর্জন করতে হবে। ইত্যাদি।
নতুন এ গ্রেডিং ও প্রশ্ন পদ্ধতি আধুনিক সেটি স্বীকার করতে হয়। কিন্তু এ পদ্ধতি অনুসরণের জন্য কলেজগুলোতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বা অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়নও হয়নি। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। কিন্তু এর দায়তো শুধু শিক্ষার্থীর একার নয়। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গত ২১ জুলাই’২০১২ একটি বিবৃতি দেয়া হয় তাতে ফলাফলের এই বিপর্যয় নিয়ে বলা হয়, সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের অনার্স পার্ট-১ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় যে, শতকরা ৪৬ ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া কি অভিভাবক কি শিক্ষক কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারো কাছে কাম্য নয়। আমরা চাই শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী ভাল ফলাফলসহ উত্তীর্ণ হোক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু কাম্য নয় বলেই কি নিজেদের দায় সারতে পারে? শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হবার কোনো বাস্তব পরিস্থিতি কি বিদ্যমান আছে? নাকি তার কোনো আয়োজন আছে?
অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে এভাবে, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস ও গভীর মনোনিবেশ সহকারে লেখাপড়া করলে তা অর্জন সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ তা করছে না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। অথচ ২১০ দিন ক্লাস কি নেয়া হয়েছে? সঠিক সময়ে In Course পরীক্ষা কি নেয়া হয়েছে? সাপ্তাহিক ছুটি, জাতীয় দিবস, ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে ক্লাস বন্ধ থাকে প্রায় ১৩০ দিন। উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্সের বিভিন্ন সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষায় বন্ধ থাকে আরো প্রায় ১৪০ দিন। এ সঙ্কট মোচনে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, স্বতন্ত্র পরীক্ষার হল নির্মানের কোনো উদ্যোগ কি আছে? এমতাবস্থায় ২১০ দিন ক্লাস নেবার কি কোনো বাস্তবতা আছে? অথচ শুধু ইয়ার প্রমোশনের বেলায় কেনো এ নিয়ম প্রয়োগ করা হলো?
অনুত্তীর্ণ হলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অধিক খরচ বহন করতে হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য হচ্ছে, তাদের (শিক্ষার্থীদের) উপলদ্ধি করতে হবে যে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি অভিভাবকদের অধিক সময় শিক্ষার ব্যয় বহন করতে হয়, যা অস্বচ্ছল পিতা-মাতার পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য। সন্তান-সন্ততিরা যাতে নিয়মিত লেখাপড়া করে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো। অথচ শুধু অনুত্তীর্ণ হলেই শিক্ষা ব্যয় বাড়ে? সেশনজটে কি তাদের শিক্ষাজীবন প্রলম্বিত হচ্ছে না? শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে না? দেখা যায়, যেসব শিক্ষার্থী ২০০৬ সালে এইচএসসি পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁরা এখনো চতুর্থ বর্ষ (চূড়ান্ত) পরীক্ষা দিতে পারেননি। অথচ এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালে (১১ নভেম্বর’২০১২, প্রথম আলো)। অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করতে একজন শিক্ষার্থীর সাত থেকে আট বছর পর্যন্ত সময় লাগে। প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরু হয় প্রায় ১ বছরের জট মাথায় নিয়ে। পরবর্তীতে যথাসময়ে পরীক্ষা না নেয়া, ও ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণে সেটি শেষ পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বছরে গিয়ে ঠেকে। কোনো কারণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ দু-তিনটি বছর খসে যায়। ইউজিসির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট গুরুতর পর্যায়ে এবং এটি নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ কমিশনের কাছে দৃশ্যমান নয়।
গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে বলা হয়েছে, গ্রেডিং সিস্টেমে পরীক্ষার উত্তরপত্র মুল্যায়ন এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি। একই বিবেচনায় তাই দু’বছর পূর্বে দেশের পাবলিক-প্রাইভেট নির্বিশেষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ এ পদ্ধতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রবর্তন করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য শুধু বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি নয়, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানসম্পন্ন গ্রাজ্যুয়েট তৈরিও। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার নিয়ম-কানুন অনুসরণ তাদের কল্যাণেই আবশ্যক। শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে যে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যাবে না, এটি তাদের বুঝতে হবে। অথচ গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে কারো দ্বিমত করার অবকাশ নেই। কিন্তু শুধু গ্রেডিং, ক্রেডিট, প্রশ্নপত্র ইত্যাদি দিয়েই আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত সম্ভব? কাজেই নতুন গ্রেডিং পদ্ধতি ও প্রশ্নপদ্ধতির সাথে সাথে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ও একাডেমিক দূর্বলতা দূর করা না হয় তাহলে এ পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য। গত ২২ জুলাই’২০১২ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ম শিথীল করে এবং পাঁচ বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরাও দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশন পায়। কিন্তু এতে কি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট দূর হয়েছে?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সবকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এদের অধীন অধিভুক্ত ও অঙ্গীভূত কলেজ/মাদ্রাসায় মোট শিক্ষার্থী ছিলো ২১,৭০,৪৭০ জন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২,৪২৫ টি অঙ্গীভূত ও অধিভুক্ত কলেজে মোট শিক্ষার্থী ছিলো ১৬,৫০,০৮৮ জন। এ হিসেবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রায় ৭৬ ভাগ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এবার চলুন দেখি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরটা কেমন।
ইউজিসির ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৬,৫০,০৮৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন ১,৮৫,৯১০ জন। শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত ১:১৬। কোনো কলেজে অনার্স থাকলে ৭ জন ও মাস্টার্স থাকলে ১২ জন শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও ঐতিহ্যবাহী দু’একটি কলেজ ছাড়া কোথাও মানা হচ্ছে না। মফস্বল ও গ্রামের কলেজগুলোতে তীব্র শিক্ষক সংকট বিদ্যমান। কলেজের শিক্ষক দিয়ে অনার্স মাস্টার্সের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শিক্ষক সঙ্কট ও যোগ্য শিক্ষকের অভাবের দরুন শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে আগ্রহী হয় না। আবার শিক্ষকদেরও যথাযোগ্য সম্মান ও পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। ফলে ক্লাসে পাঠদানের বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াতেই ব্যস্ত এবং শিক্ষার্থীরাও প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছে।
উচ্চশিক্ষা যেমন সমাজ প্রগতির কারিগর তৈরী করে তেমনি নতুন নতুন জ্ঞান সৃস্টি করে। জ্ঞান সৃস্টিতে দরকার শিক্ষক শিক্ষার্থীর মিলিত গবেষণা কর্ম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি পুরোপুরি অনুপস্থিত। নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে এ বিশ্ববিদ্যালয় অবদান রাখতে পারছে না। তাই উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দূর্নীতির আখড়া। পূর্বের প্রায় প্রতিটি উপাচার্যই আর্থিক কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে দায়িত্ব ছেড়েছেন। এছাড়া দলীয় নিয়োগে এ বিশ্ববিদ্যালয় সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। বিএনপি আমলে অবৈধভাবে দলীয় নিয়োগ পেছিলেন ৯৮৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি। এ সরকার আমলে এদের চাকরিচ্যুতি করা হয় এবং নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয় সরকার দলীয় লোকদের। এমনকি উপাচার্যের নিয়োগও হয় স্বচ্ছতা ছাড়া এবং দলীয় বিবেচনায়। অনেকে মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উপাচার্য হওয়ায় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত সমস্যাও উপলব্ধি করতে পারেন না। আবার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহে যেসব দূর্নীতি ও নিয়ম বহির্ভূত কাজ হয় তার হিসেবটা এখানে আজ না করি।
সম্প্রতি ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অথচ এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই দায়ী। সিলেবাস প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র তৈরী ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশাল অসঙ্গতি। পড়ান একজন, প্রশ্নপত্র তৈরী করেন আরেকজন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন অন্য আরেকজন। যার দরুন ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। সিলেবাসকে যুগোপযোগী না করায় শিক্ষার মান বাড়ছে না।
একইভাবে দেখা যায় শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট-আবাসন-পরিবহন সঙ্কট বিদ্যমান। লাইব্রেরি-সেমিনার নামে বছর বছর ফি নিলেও বইয়ের সঙ্কটে জর্জরিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এক্টের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি রাখার আইন থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক্টে ছাত্রদের সে অধিকার দেয়া হয়নি। ফলত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না এবং ছাত্ররা গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের দাবি পেশ করার সুযোগ পায় না। এরকম হাজারো সমস্যায় ডুবে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৯২ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে কলেজগুলোকে আলাদা করে মূলত সেশন জট কমানো ও শিক্ষার মান উন্নয়নে গঠন করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এতগুলো বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সে সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারেনি উল্টো আরো নতুন নতুন সমস্যার আবর্তে নিজেকে বন্দী করেছে। প্রায় ১৬ লক্ষ শিক্ষার্থীর চাপ বিশ্ববিদ্যালয়টি সইতে পারছে না। এটিকে সংস্কারের দাবি তাই ইউজিসি ও সরকার উপেক্ষা করতে পারছে না। ২০১২ সালে ইউজিসি সুপারিশ করেছে, কেবল ঢাকা বিভাগের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে। অন্য ছয়টি বিভাগীয় শহরে একটি করে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিভাগের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী কলেজগুলোকে এর আওতায় অধিভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে (২৬ ডিসেম্বর’২০১২, প্রথম আলো)। এ পরামর্শ কতদিনে বাস্তবায়ন হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়। এতে প্রশাসনিক স্থবিরতা কিছুটা কাটলেও একাডেমিক অবস্থার উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
প্রাথমিক শিক্ষা হতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় আসতে আসতে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার পরও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এ চাপ মোকাবিলায় সরকারগুলোর লোক দেখানো কিছু কর্মকান্ড ছাড়া বাস্তব কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ফলে শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অনেকে মনে করেন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করলেই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর এ চাপ কমানোর কি আর কোনো গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী উপায় নেই? উন্নত বিশ্বে দেখা যায় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের হার প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার অবস্থা বেহাল। কারিগরি শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও সম্প্রসারিত করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর থেকে চাপই কমবে না এ শিক্ষায় শিক্ষিতরা আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারবে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে মনে হয় মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকর করলে পারিবারিক আর্থিক অনটনের কারণে চাকুরি করতে বাধ্য হওয়া যেকোনো শিক্ষার্থী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিঘ্নে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারতো। সরকারের এ ব্যর্থতার পুরো সুযোগ নিচ্ছে শাসক দলগুলোর গুটিকয়েক ব্যবসায়ীরা। তারা ঢালাওভাবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ করছে, করছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য। সরকার তাদের সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা দান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিরও ব্যাপক সংস্কার ঘটাতে হবে। আর এ সবকিছুই নির্ভর করছে শাসক দলগুলোর শিক্ষা দর্শন কি তার উপর। আমাদের দূর্ভাগ্য আমাদের শাসক দলগুলো লুটপাট ও শোষনকে নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রেখেছে। অর্থাৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্কট সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্কটের সাথেই অঙ্গীভূত। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ তাদেরই হাতে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক দূর্বলতা দূর করে এটিকে সত্যিকারের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে দরকার ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন।
©somewhere in net ltd.