নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আমি ঘুরতে চাই! আমি ট্রাভেলার মাসুদ।

ট্রাভেলার মাসুদ

ভ্রমন পাগল মানুষ

ট্রাভেলার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহজেই ঘুরে আসুন আরিচা ঘাট ও তেঁওতা জমিদার বাড়ি

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩১



ভ্রমন; এই বিষয়টা আমার মনে প্রাণে, সমরে-সমীরণে, হৃদয়ের অচীন কোণে আষ্টে পিষ্টে লেগে আছে। বিষয়টি আমি অনেক উপভোগ করি। সময় পেলেই নতুন জায়গা নতুন সবুজের সমারোহ দেখতে ছুটে চলি দিক-দিগন্তে। কাজী আসমা আজমেরী হতে মনে চায়। কিন্তু সাধ আছে সাধ্য নাই। তবে, পণ করেছি বাংলার সবুজ জমিনের প্রতিটি অঞ্চল ঘুরবো।

আমার এই ব্লগে একে একে পাবেন দেশ-বিদেশের নানান এলাকার ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত। আজ আপনাদের জানাবো মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি ও আরিচা ঘাট নিয়ে। চলুন ঘুরে আসি আরিচা ঘাট ও তেওতা জমিদার বাড়ি...

আরিচা ঘাটঃ
আরিচা ঘাট বাংলাদেশের একটি অন্যতম নৌবন্দর। এটি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত। নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিন এবং পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এই আরিচা ঘাট। যমুনা নদীর কোল ঘেঁসে এই কোলাহল মুক্ত একটি ঘাট বর্তমান। আগে বেশ সরগোল ছিল। এখন আর নেই। এখন ঐ ঘাট সরিয়ে পাটুরিয়া নিয়ে গছে। বর্তমানে স্পীড বোড ও ট্রলার চলে।

ভারত-পাকিস্তান বিভাগের আগেই যমুনা নদীর পাড়ে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এই আরিচা ঘাট দেশের অন্যতম বড় নৌ-বন্দর। কলকাতা-আসাম রুটের জাহাজ-স্টিমার এই ঘাটে ভিড়তো, এখানে ছিল বড় বড় পাটের গুদাম এবং আরিচায় গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র। ১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর আরিচা থেকে যমুনা পাড় হয়ে নগরবাড়ী এবং আরিচা থেকে যমুনা-পদ্মা পাড় হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের সঙ্গে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। সেই সঙ্গে আরিচা-নগরবাড়ী হয়ে উঠে উত্তরবঙ্গ এবং আরিচা-দৌলতদিয়া হয়ে উঠে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান প্রবেশ পথ। জানা যায়, ১৯৬৩ সালে ৩১ মার্চ কর্নফুলি নামে একটি ফেরী সার্ভিস দিয়ে আরিচা-দৌলতদিয়া নৌঘাটের যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর আরিচা ঘাট দেশের অন্যতম গুরত্বপুর্ন নৌযোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠে এবং নৌবন্দরের স্বীকৃতি পায়। গড়ে তিন হাজার যানবাহন এবং পঞ্চাশ হাজার মানুষ পারাপার হোত এই ঘাট দিয়ে।

১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধনের এবং একি সাথে যমুনা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার মাধ্যমে মাধ্যমে আরিচা ঘাটের ব্যস্ততা অনেকখানি কমে যায়। সর্বশেষ ২০০২ এর ১৫ নভেম্বর শেষ দুইটা প্লাটুন টাগবোটের মাধ্যমে টেনে ৯ কিলোমিটার ভাটিতে পাটুরিয়া নৌঘাটে নিয়ে যাবার সাথে সাথে আরিচা নৌ ঘাট এর বাণিজ্যিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।

ছবিঃ ০১ (তেওতা জমিদার বাড়ি যাবার পথে যমুনা নদীর কোলে, নাহালপুর মোর)


ছবিঃ ০২ (আরিচা ঘাটে নৌকা বাধা, পাশে স্পিড বোট, আগে বড় বড় লঞ্চ ভিড়তো, এখন নাই)


ছবিঃ ০৩ (নাহালপুর মোর, দুরে দেখা যায় যমুনার বুকে বিদ্যুতিক লাইন, ওপারে চলে গেছে)



তেওতা জমিদার বাড়িঃ
তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন একটি জমিদার বাড়ি ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার তেওতা নামক গ্রামে অবস্থিত।

ইতিহাসবিদদের মতে, সতেরশ' শতকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি নির্মাণ করেছিলেন পঞ্চানন সেন নামক একজন জমিদার। জনশ্রুতি অনুসারে, পঞ্চানন সেন এক সময় খুবই দরিদ্র ছিলেন ও দিনাজপুর অঞ্চলে তিনি তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধসম্পত্তির মালিক হওয়ার পর এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তিতে এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠিত করে জয়শংকর ও হেমশংকর নাম দুজন ব্যক্তি। ভারত বিভক্তির পর তারা দুজনেই ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

এছাড়াও এখানে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিচিহ্ন। এ প্রসাদেই নজরুল, প্রমীলা দেবীর প্রেমে পড়েন ও লিখেছিলেন,
(তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়/সেকি মোর অপরাধ)

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তেওতা জমিদার বাড়িটির বয়স ৩০০ বছর ছাড়িয়েছে।জেলার ইতিহাস থেকে জানা গেছে, সপ্তদশ শতকের শুরুতে পাচুসেন নামের পিতৃহীন দরিদ্র এক কিশোর তার সততা আর চেষ্টায় তামাকের ব্যবসা করে বিপুল ধন সম্পদ অর্জন করেন । দরিদ্র পাচুসেন দিনাজপুরের জয়গঞ্জে জমিদারী কিনে হয়ে যান পঞ্চানন সেন।তারপর শিবালয়ের তেওতায় তিনি এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেন। জমিদার বাড়ির মূল ভবনের উত্তর দিকের ভবনগুলো নিয়ে হেমশংকর এস্টেট এবং দক্ষিন দিকের ভবনগুলো নিয়েছিল জয়শংকর এস্টেট। প্রতিটি এস্টেটের সামনে বর্গাকৃতির অট্টালিকার মাঝখানে আছে নাটমন্দির। পুবদিকের লালদিঘী বাড়িটি ছিল জমিদারদের অন্দর মহল।

মূল ভবনের সামনে বিশাল মাঠ। মাঠের পাশে মন্দির। মন্দির-এর পর সান বাধানো পুকুর ঘাট। বিশাল সুরোম্ম পুকুর। স্বচ্ছ জলের সমারোহ। এদেখে আপানার হৃদয় মন পুলকিত হয়ে উঠবে। মূল ভবন টি এখন অযত্ন অবহেলায় পরে আছে। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

দক্ষিন পাশের ভবনের নীচে রয়েছে চোরা কুঠুরী যাকে এলাকার মানুষেরা বলে অন্ধকুপ। উত্তর ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ৪ তলা বিশিষ্ট ৭৫ ফুট উচ্চতার নবরত্ন মঠ। এর ১ম ও ২য় তলার চারদিকে আছে ৪টি মঠ। তেওতা জমিদার বাড়িটি ৭.৩৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই জমিদার বাড়িটি নজরুল-প্রমীলার স্মৃতিধন্য একটি স্থান। এখানে নজরুলের বেশ কিছু স্মৃতি খুঁজে পাওয়া গেছে। তাই বাড়িটিকে সংরক্ষণ করে এর হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা দরকার।


ছবিঃ ০১ (সান বাধানো পুকুর ঘাট, সবুজের সমারোহ। জলকেলি করে অনেকে। স্বচ্ছ পানি)


ছবিঃ ০২ (১৯১৪ সনের একটি শিলালিপি দেখতে পেলাম)


ছবিঃ ০৩ (মূল ভবনের উপর থেকে সাদা শুভ্র মঠ)


ছবিঃ ০৪ (মূল ভবনের একাংশ)


ছবিঃ ০৫ (দৃষ্টিনন্দন মন্দির)


ছবিঃ ০৬ (পুকুর সহ মন্দির)


ছবিঃ ০৭ (মূল ভবন থেকে অন্য আরেকটি বিল্ডিং)


ছবিঃ ০৮ (মূল ভবনের ভিতরের অংশ, অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে, ভেতরে গবাদিপশুর গন্ধ)



কিভাবে যাবেনঃ
বাড়িটি দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসে আরিচার শিবালয়ে এর অবস্থান। ঢাকা থেকে আরিচার দূরত্ব ৯০ কিঃ মিঃ। ৩ ঘন্টায় বাসে যেতে ভাড়া দিতে হবে ৬০-৮০ টাকা। গাবতলী থেকে যাত্রীসেবা, বিআরটিসি, পদ্মা লাইন,ইত্যাদি বাসে আরিচা ঘাট যেতে হবে।আরিচা ঘাট থেকে রিকশায় ১৫-২০টাকা ভাড়ায় যাওয়া যাবে তেওতা জমিদার বাড়ি।


ঢাকা থেকে মটর সাইকেলে যেভাবে যাবেনঃ
মূলত আমি গিয়েছিলাম মটর সাইকেলে। গুগলম্যাপ আমার সফর সংগী, সবসময়। তেজগাঁও থেকে গাবতলী, পরে হেমায়েতপুর, হেমায়েতপুর থেকে বামে সাভার-মানিকগঞ্জ হাইওয়ে,তারপর শিংঙ্গাইর থেকে মানিকগঞ্জ শহর হয়ে সোজা পশ্চিম দিকে আরিচা ঘাট। তারপর ডানে সোজা রাস্তা তেওতা জমিদার বাড়ি।


*** তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া
*** ছবিঃ ট্রাভেলার মাসুদ নিজে
*** ডিভাইসঃ আইফোন ৬
*** ভ্রমনের তাংঃ ০৭.০৭.২০১৮

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১১

কালীদাস বলেছেন: ছবিগুলোতে ক্যাপশন দেয়া দরকার ছিল। ৪, ৫ এর কোনটা কি ধরতে পারছিনা শুরুর যৎসামাণ্য বর্ণনা থেকে। ৮ নাম্বারের ছবিটা কি বৃষ্টির পানি জমা ভেতরের প্রাঙ্গন নাকি পুল টাইপের কিছু? পানির রিফ্লেকশনে বুঝতে সমস্যা হচ্ছে।

আরিচা ঘাট থেকে যাওয়ার মাধ্যম কি?

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:০১

ট্রাভেলার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ কালীদাস।

ছবিতে ক্যপাশন দিয়েছি।
৮ নং ছবিতে বৃষ্টি পানি জমা। ময়লা ও পর্যটক যারা যায় তারা কেউ কেয়ার করে না। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কোন খোজ রাখে না। ওটা পুল না আধ হাটু পানি জমেছে। মুড়ির ঠোঙ্গা, চিপসের পেকেট ইত্যাদি ময়লা আর্বজনা ফেলে রাখছে।

আরিচা ঘাট থেকে কিভাবে যাবেন উপরে এডিট করে দেওয়া হয়েছে।

সবশেষে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি ভালো কিন্তু আরও বিস্তারিত দরকার ছিল।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:০৫

ট্রাভেলার মাসুদ বলেছেন:

মানিকগঞ্জ যাবার পথে এই মাদ্রাসা। চমৎকার লাগলো। ওখানে আপ হলো না। লিমিট এজিস্ট তাই।

রাজীব নুর, আমার ব্লগে স্বাগতম। সময় ম্যনেজ করে পোস্ট টা এডিট করলাম। আপনার সুন্দর মন্তব্যে ও পরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সবসময় পাশে থাকবেন আশাবাদী।

ধন্যবাদ, হ্যাপি ব্লগিং।

৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৫৫

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:
অনেক সুন্দর জায়গা তো।

নতুন ব্লগার হিসেবে পোস্ট অনেক ভাল হয়েছে।


প্লাস+++

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩০

ট্রাভেলার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ সৈয়দ তাজুল ইসলাম। পাশে থাকবেন।

শুভকামনা।

৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২০

রাজীব নুর বলেছেন: মানিকগঞ্জ গিয়েছি কিন্তু এখানে যাওয়া হয় নাই।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫০

ট্রাভেলার মাসুদ বলেছেন: তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে ৩০ কিমি দূরে। যমুনা নদীর কোল ঘেঁসে, সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেড়া সুনিবিড় পরিবেশ। সময় করে ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.