নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পদসঞ্চার

তুষার আহাসান

ফেসবুকে পদসঞ্চার নামে দুটি গ্রুপ চালাই। সম্পাদক পদসঞ্চার পত্রিকা ও ব্লগজিন।

তুষার আহাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘের কোলে রোদ—১৩ (ধারাবাহিক উপন্যাস)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫

মেঘের কোলে রোদ-১২

কিছুই ভাল লাগছে না রোমিলার।ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যেতে।এই গ্রামের

বাতাসে দমবন্ধ হয়ে আসছে তার।ঠান্ডা মাথায়,শান্ত ভাবে নিজের ব্যগপত্র

গুছিয়ে নিল সে। চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে তলায় নামল। বারান্দা পার হল।

আঙিনায় পা রেখে বুক ভরে গেল সতেজ বাতাসে।

দু-দিন ধরে রোমিলার ভাব পরিবর্তন লক্ষ্য করছে অতসী। কিছু যেন ভাবছে।

দেখেও যেন অনেককিছু দেখছে না।অল্পতেই রেগে যাচ্ছে।সব কথার বাঁকা

উত্তর দিচ্ছে। খেতে বসে অন্যমনস্ক।আগে অল্প খেত,এখন খায় নামমাত্র।

বিরক্তিকর।

রোমিলাকে আঙিনায় নেমে দাঁড়াতে দেখে কলতলা থেকে ছুটে এল অতসী।

বলল,কি-রে ব্যগপত্র গুছিয়ে দাঁড়ালি যে?

---আমি চলি যাচ্ছি।

---চলে যাচ্ছিস মানে?কাউকে কিছু বলা নাই,কওয়া নাই,চলে যাবি বললেই

হল?

---আমি তোকে খবর দিয়ে এখানে আসিনি,তাই বলে যাওয়ার কোন কথা

নাই।

---তবে যে এতদিন বলছিলি,এই গ্রামের মানুষদের জন্যে তোর এন-জি-ও

অনেক কাজ করবে?

---তখন কি আর জানতাম আমার জন্যে এতগুলো দূর্ঘটনা ঘটবে?

---তোর জন্যে বলছিস কেন,তুই এখানে না এলেও ওই ঘটনাগুলো ঘটতো।

---না-রে আমার ভাগ্যটাই খারাপ,আমি যেখানেই যাই,সেখানেই দূর্ঘটনা

ঘটে।

---তোর মত বাস্তববাদী মেয়ের মুখে এমন অদৃষ্টবাদের কথা মানায় না।

---পরিস্থিতি আমাকে নিজের কাছেই বেমানান করে তুলেছে।বলতে-বলতে

চোখের পাতা ভিজে গেল রোমিলার। চোখ ভরে উঠছে অতসীরও।

দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেল। শাড়ির আঁচলে চোখ

মুছল।দেখল,তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অতসীর বাবা-মা।শিবু বলল,যাবেই

যখন যাও,তোমাকে আটকাবো না মা,তবে গনেশকে সঙ্গে নাও।

পেয়ারাগাছে বসে থাকা একটা কাক ডেকে উঠল কা-কা শব্দে।সেই

শব্দের অনুসরণ করে যেন এসে দাঁড়াল এক পাগলিনী।সে রোমিলার পায়ের

কাছে উপুড় হয়ে বলল,আমার ছেলেকে তুমি বাঁচাও মা।আমি জানি,তুমিই তাকে

বাঁচাতে পারো।

---পা ছাড়ুন,পা ছাড়ুন, ছি:,ছি: কি করছেন।কে আপনি,আপনার ছেলেই-বা কে?

---আমি এক রাক্ষুসি মা,আমি এক ডাইনি,তাই আল্লাহপাক আমার পেটে কোন

কাঁটা দেয়নি।পরের ছেলেকে নিজের ছেলে ভেবে কুকুর দিয়ে খাওয়ালাম।

বিলাপের সুরে বলল রাবেয়া।

---কি সব আবোল-তাবোল বলছেন,আপনার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝছি,দয়া

করে পা ছাড়ুন,প্লিজ।

---উনি ওয়াশিমের মাসীমা।শিবু বলল।

---তাতে কি হয়েছে,আমি তো দারোগা-পুলিশ নই,জজ-ব্যরিস্টারও নই।দয়া করে

পা ছাড়ুন।

---মা,মা আমার,আমি ঠিক জানি,তুমিই আমার মা হবে,আমার কাছে খবর আছে

তুমিই আমার ছেলেকে বাঁচাবে।তাই তো তোমার কাছে ছুটে এলাম মা,যেমন করেই

হোক ওকে বাঁচাও।

---আপনি ভুল করছেন মাসীমা,আপনার কাছে যে খবরই থাক না কেন সেটা ভুল।

আপনার ছেলে মার্ডার করে ফেরার হবে আর আমি তাকে বাঁচাব,সেই শিক্ষা আমার

বাবা আমাকে দেয়নি।বরং শুনে রাখুন,আপনার ছেলের সন্ধান পেলে আমিই তাকে

পুলিশে দেব।মানবাধিকার কর্মী হিসেবে,তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেব,তাকে ফাঁসিতে

ঝুলিয়ে তবেই আমার শান্তি।

বলতে-বলতে নাকের পাটা কাঁপতে থাকল রোমিলার,ফরসা মুখে রাগে আগুন-আভা।



হি-হি হাসি ছড়িয়ে উঠে দাঁড়াল রাবেয়া।শান্ত স্বরে বলল,রাবেয়া বেওয়া আজ অব্দি

যা-যা বলেছে,কোনটাই মিথ্যে হয়নি,এটাও হবে না।

---আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে,আপনি অলৌকিক কোন ক্ষমতার অধিকারী।

অতসী বোধহয় আপনার কথাই বলছিল সেদিন,ওসব আমি বিশ্বাস করি না,

তাই আপনাকে আমার চ্যালেঞ্জ রইল।

শিবু,অতসী আর তার মা বিভিন্ন রকম ইশারা করে রোমিলাকে চুপ থাকার অনুরোধ

করল।রোমিলা সে সব দেখেও দেখল না।

---ঠিক আছে দেখে নেব কতদিন তোর চ্যালেনজ থাকে।

ক্ষণিকের মধ্যে গলার স্বর পাল্টে গেল রাবেয়ার।চোখেমুখে ফুটে উঠল অহংকারের

তেজ।দ্বীপ্ত ভঙ্গিতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল রাবেয়া।স্বচ্ছ দিঘির জলে রাজহাঁস

যেমন সাঁতার কাটে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে,তেমনই তার নির্বিকার যাওয়া।

রোমিলা সেদিকে তাকিয়ে বলল,কই কাকু গনেশকে ডাকুন,আমাকে বাসস্ট্যান্ড

অব্দি দিয়ে আসুক।

(পরের কথা আগামী পর্বে।)







মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪০

তুষার আহাসান বলেছেন: খান মেহেদী ইমাম, ভাই,আপনি এই লেখাটি প্রিয়তে নিয়েছেন দেখলাম,ধন্যবাদ।

২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০

ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন:
আগের পর্ব গুলোও পড়েছি , এই পর্বটাও ভালো লেগেছে।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৭

তুষার আহাসান বলেছেন: ধন্যবাদ পাইলট ভাই,আপনিই নিয়মিত দেখছি, আর তো কেউ পড়ে না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.