![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেঘের কোলে রোদ-১৩
মুখভার করে হাঁটছে গনেশ।তার প্রতিটি পদক্ষেপে জড়তা।চোখে বিষাদ।
মনে ক্লান্তি।পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া অটো রিকশো,মটোর সাইকেল,
ট্যাক্সিগুলো সে দেখেও দেখছে না।নিজেকে বড় অভিশপ্ত মনে হচ্ছে
তার।
গনেশ যেদিকে তাকায়,তাই যেন ছাই হয়ে যায়।যাত্রাপালার একটি
মেয়েকে চোখে ধরল,বাড়ির লোকের মাথা ধরল।আগুন লেগে গেল
দিনরাতের সব অংশে।
একজন নিঃস্বার্থ,পরোপকারী তরুণকে অন্য সকলের মত গনেশও
শ্রদ্ধা,সমীহ করে।রক্তের সম্পর্ক না হলেও গ্রামের প্রায় সব কিশোর,
তরুণ তাকে ‘দাদা’ বলে। তার হাতে হাত মিলিয়ে জনসেবামূলক কাজ
করে আনন্দ পায়।তাতে কার যেন ‘শনির দৃষ্টি’ পড়ল,নির্বিবাদী তরুণটি
হয়ে গেল খুনের আসামী।পলাতক।
এখন গনেশ যার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে সে একজন আধুনিক তরুণী।শিক্ষিত।
সুন্দরী।প্রচলিত ভাবনা ছেড়ে বের হতে এবার।হলই-বা দিদির বন্ধু।ওর সঙ্গে
প্রেম করলে কেমন হয়? এই সমাজে ভালমানুষের,ভালমানুষীর কোন ঠাঁই
নাই।
পাশাপাশি হাঁটছে দুজনে।গনেশের আড়চোখের চাউনি টের পায় রোমিলা।
মনে মনে হাসে।এন জি ওর কাজ করতে এরচেয়ে অনেক বিষাক্ত চাউনি
সহ্য করতে হয় তাকে।ফুল সুন্দর,তাই তাকে সকলেই দেখে মুগ্ধ নয়নে,
তাতে তো ফুল রাগ করে না।পাগল ছেলে কোথাকার,প্রেমে একবার ঘা
খেয়েছে,তাই হয়ে উঠেছে ‘বিশ্বপ্রেমিক’। সামনে যাকে দেখে তাকেই প্রেম
করতে ইচ্ছে করে এদের।তাই বলে দিদির বন্ধু!বোকা ছেলে,চোরা-চাউনি
দিয়ে কি কাউকে ঘায়েল করা যায়।মেয়েরা নিজের বাঁকা চাউনিতে পছন্দ
করে তীরের মত সরল দৃষ্টি।
আর মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই রেল-স্টেশন।যেকোন একটা লোকাল ট্রেন
ধরে কলকাতা রওনা দেবে রোমিলা।মনে মনে বলবে,বাই-বাই আশাপুর,
আমি আর আসব না।কখনই আসব না এই অভিশপ্ত গ্রামে।
গ্রামের নাম আশাপুর।কত রোমাঞ্চই না ছিল নামটিতে।বহরমপুর স্টেশনে
ট্রেন থেকে সঙ্গীসাথীদের ছেড়ে হঠাৎই নেমে পড়েছিল সে। আরে এখানেই
কোথায় যেন অতসীদের বাড়ি।ভেবেছিল আশেপাশেই হবে।হাঁটতে-হাঁটতে
চলে গেছিল বাসস্ট্যান্ড।বিন্দুবাটি-আশাপুর-সোনারমাটি ডাক ছাড়ছিল
বাসের হেল্পার ছেলেটি।তার কাছে পথ-নির্দেশ জেনে কাউন্টারে টিকিট
কেটেছিল।উঠে বসেছিল বাসে।পাশের সিটে বসেছিল একটা গোমড়ামুখো
ছেলে।তখন কে জানতো,ওই ছেলের কারণেই তচনছ হবে রোমিলার
অনেক ভাবনা!ওই দুস্কৃতির জন্যে আশাপুর ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।
সঙ্গীসাথীরা উত্তরবঙ্গের একটি গ্রাম থেকে ফোন করছে।তবু সেখানে
যেতে ইচ্ছে করছে না।কলকাতার নিরাপদ ফ্ল্যাটটিই এখন যেন হাতছানি
দিয়ে ডাকছে তাকে।
এক পাগলী,যার নাকি মাঝেমধ্যে ‘ভর’ ওঠে,মতান্তরে যার কাছে ‘জিন’
আছে,সে বলেছে,সেই দুস্কৃতিকে বাঁচাবে রোমিলা।তাই কখনও হয়?
রোমিলাকে যে চেনে না তার পক্ষেই অমন ‘অলৌকিক’ দাবী করা সম্ভব।
রোমিলার ইস্পাত-কঠিন মানসিকতার সাথে যারা পরিচিত তার জানে,
শত চেষ্টাতেও তাকে ভাঙা যায় না।পাহাড়ের মত অনড় তার সিদ্ধান্ত।
---শিউলি,এই শিউলি,কোথায় যাচ্ছো।
গনেশের ডাক শুনে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া মেয়েটি পেছন ফিরল।
ফ্যালফ্যাল করে দেখল তাদের দুজনকে। বলল,গনেশদা,আপনি
এখনে?
---এই দিদিকে ট্রেনে তুলে দিতে যাচ্ছি,কিন্তু তোমার মুখচোখ এত শুকনো
কেন?
---বড় বিপদে পড়েছি,হাসপাতালের আউটডোর থেকে ওয়াশিমদাকে পুলিশ
ধরে নিয়ে গেল।
---ওয়াশিম মানে,সেই খুন করে পালানো লোকটা?রোমিলার জিজ্ঞাসা।
---না,দিদি,আপনাকে আমি চিনি না তবু বলছি,দাদা মানুষ মার্ডার করা
দূরের কথা,কুকুরকেও মারতে পারে না।কি বলছো গনেশদা?
---কি জানি,আমার সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমতা আমতা করে
বলল গনেশ।
---তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখো তো গনেশদা,সেই বিশ্বাসের জোরে
বলছি,দাদা মার্ডার করতেই পারে না।
---তুমিই বুঝি সেই শিউলি পালাগান কর?
---হ্যাঁ দিদি যাত্রাপালায় আমার নাম শিউলি,আসল নাম ঈষা।
---দিদি বলে যখন ডাকছো তখন একটা সত্যি কথা বলি ঈষা,তুমি যেমন
দুটো নাম নিয়ে ঘুরছো,একটা পালাগানের নাম,অন্যটা বাস্তবের,তোমাদের
ওয়াশিমদাও তেমনই মুখোশ পরে ঘোরে,একটা ভালমানুষীর,একটা
ঘাতকের।
---দাদাকে আপনি কতটুকু জানেন? সাপের মত ফণা তুলে দাঁড়াল যেন
ঈষা।
---যতটুকু জেনেছি তাতেই বুঝি,অপরাধীরা সবসময় সমাজসেবীর মুখোশ
পরে থাকে।
---দিদি আপনি কে তা জানি না,কি করেন তা-ও জানি না,হয়ত ছোট মুখে
বড় কথা হয়ে যাচ্ছে তবুও বলছি,এই বয়সে মানুষ আমিও কম দেখিনি,সেই
সুবাদে বলছি,অমন মানুষ কোটিতে একটা জন্মায়।
---হাসালে মোরে বালিকা,তোমরা সবাই দেখছি আমাকে চ্যালেঞ্জে ফেলে
দিলে। ভাবছিলাম সবকিছু ছেড়ে কলকাতায় নিরুপদ্রব দিন কাটাব কয়েকটা,
তা দেখছি হবে না।ঠিক আছে চল,তোমাদের ‘মহাপুরুষ’ দাদাকে অপরাধী
প্রমাণ না করা পর্যন্ত আমি কলকাতা যাচ্ছি না।
গনেশ মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলল, সত্য-মিথ্যার একটা ফয়সালা হয়েই যাক।
ঈষা তাতেই খুশি।এতক্ষণ নিজেকে খুব একা আর অসহায় মনে হচ্ছিল
তার। বলল,চলুন, থানায় যাওয়ার শর্টকাট একটা রাস্তা আছে ওই গলি দিয়ে।
গনেশ ও রোমিলা তাকে অনুসরণ করল।
(পরের কথা আগামী পর্বে)
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩০
ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন:
পেলাচ দিয়া ফাকি দিছে । আমি কিন্তু সব গুলান পড়তাছি ।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৯
তুষার আহাসান বলেছেন: ধন্যবাদ পাইলট ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩১
তুষার আহাসান বলেছেন: ২ টা + আথচ একটা মন্তব্য নাই,হায় কপাল!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!