![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেঘের কোলে রোদ-১৬
রিকশোয় পাশাপাশি বসে আছে গনেশ আর ঈষা।দুজনেরই মুখভার।
অন্য একটা রিকশোয় বসে রোমিলা আর সুচেতা।কথার খই ফুটছে
সেখানে।পিচরাস্তার খানাখন্দ ডিঙিয়ে গড়িয়ে চলেছে রিকশো দুটো।
মাথার উপরে ঝিলিক মারছে সূর্য।কিছুক্ষণ আগেও
কুয়াশায় ঢাকা ছিল চারিদিক।এখনকার রোদের ঝিকিমিকি যেন
বলছে,আমি ছিলাম,আমি আছি,আমি থাকব।
মানুষের জীবনে দুঃখ যেমন চলে গিয়েও থেকে যায়।আনন্দ-সন্ধানীরাই
হয়ত জীবনের প্রতি বাঁকে দেখা পায় দুঃখের,ঈষার জীবন যেমন।জীবন
তার চোখে নিত্য-নতুন নির্মমতা নিয়ে দেখা দেয়।
আজ ওয়াশিমকে দেখে আরো একবার সেই উপলব্ধি হল ঈষার।চোখ
ভিজে গেল তার।বিড়বিড় করে বলল,তুমি নিজের বড় ডিগ্রি পায়ে
দলেছো তাই পুলিশ তোমাকে রগড়াচ্ছে।তুমি গ্রামের ছেলেমেয়েরা যাতে
লেখাপড়ার কষ্ট না পায়,তাই দুয়ারে-দুয়ারে ভিক্ষে করে স্কুল গড়েছো,
তাই পুলিশ তোমাকে উচিৎ শিক্ষা দিচ্ছে।তুমি কার মেয়ের বিয়ে হয় না,
কার সৎকাজ হয় না,দেখে নিজের আংটি-বোতাম বন্ধক দাও।আজ তাই
তোমার বিপদে একজনও শুভান্যুধায়ী নাই।গ্রামে ক্লাব গড়ে তুমি তরুণ
ছেলেদের রাত-পাহারা দিতে শিখিয়ে চোরদের ভাত মেরেছো,আজ তাই
তুমি চোরের মত মার খাচ্ছো।জানি না ভগবান বলে কেউ আছে কিনা,
থাকলে তিনিই জানেন,কার পাপে তুমি অপরাধী।কে দেবে তোমাকে
মুক্তির আলো।
বাচ্চা ছেলের মত কেঁদে উঠেছিল গনেশ।সে কোনরকমে বলতে পেরেছিল,
ওকে আর মারবেন না,মারতে হয় আমাকে মারুন।
একজন পুলিশ অফিসার হেসে বলেছিল,উপরওলার হুকুমে আমাদের
মারতে হয়রে ভাই,এটাই আমাদের ডিউটি,মেরেধরেই মাইনে পাই
আমরা।
ঈষা ছুটে গেছিল রোমিলার কাছে।বলেছিল,দিদি,আপনি একটু দেখুন,
দাদাকে ওরা প্রচুর মারছে।
---স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পুলিশকে ওসব করতে হয়,ওদের সব
কাজে কি বাধা দিলে চলে? মাছি তাড়ানোর মত অবলীলায় বলেছিল
রোমিলা।
---আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকব না,আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে।
বলে অফিসঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল ঈষা।বিড়বিড় করেছিল,কত
নাটকে তুমি নায়কের রোল করেছো দাদা,সেখানে অপরাধীরাই শুধু সাজা
পায়,আজ জীবন নাটকে তুমি এমন অপরাধী যে তোমাকে বাঁচানোর কেউ
নাই।
একটু পরে থানা থেকে বেরিয়েছে রোমিলা আর সুচেতা।দুজনের মুখে হাসি।
তাদের পেছনে চোখ মুছতে-মুছতে গনেশ।বলেছে,ঈষা আমি এক্ষুণি একজন
উকিলের কাছে যাব।
---দিদি পুলিশের কাছে স্বাক্ষী দিয়ে যাকে ধরিয়েছে ভাই যাচ্ছে তাকে বাঁচাতে
উকিলের সন্ধানে।বলে হেসেছিল রোমিলা।
গনেশ উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল,ঈষা চোখের ইশারায় তাকে
নিষেধ করল।গনেশ তার কোঁকড়া মাথার ঝাঁকড়া চুল ধরে মাথা ঝাঁকাল
একবার।
---বেশ বাবা আগে আমার বাড়ি চল,দুটো ডাল-ভাত খেয়ে যেখানে খুশি
যেও।বলল সুচেতা।
রোমিলার কথা এবং আচরণে ঈষাও খুব বিরক্ত।কিন্তু সে এই মুহূর্তে কিছু
বলতে পারছে না ‘রোমিলা’ নামের মেয়েটিকে।পুলিশ-মহল ওকে সম্ভ্রম করে।
নইলে তার মাকে হয়ত আজও লক-আপে থাকতে হত।
---মা,তোমরা রিকশো করে চলে যাও,আমি গনেশদকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।
---ধেৎ, তাই কখনও হয়,আজ আমরা সবাই রিকশো করে তোমাদের
বাসা যাব,সেখানে মাসীমার হাতের ভাত খেয়ে আমি কলকাতার ট্রেন ধরব।
এই রিকশো দাঁড়াও।
সুচেতা আর অতসী যখন রিকশো-চালকদের সাথে দরদাম করছে তখন
গনেশ বলল,আমি ওই দিদির রিকশোয় যাব না।
---বেশ,তুমি আমার সঙ্গে যাবে।
পাশাপাশি বসে আছে দুজনে। রিকশো চলছে।গনেশের কানে বাজছে,
ওয়াশিমের কথা,কেমন আছিস গনেশ।
গনেশ বিড়বিড় করল,ভাল আছি দাদা,তোমার চেয়ে ঢের ভাল আছি।
তার চোখ দুটি কেন যে এমন তরলিত হয়ে গেছে বুঝতে পারছে না
সে।পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে গিয়ে দেখল,ঈষাও
কাঁদছে।
ফের পকেটে রুমাল রেখে দিল গনেশ।
(পরের কথা আগামী পর্বে )
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫০
ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: ছিরায়াল ঠিক রাখতাছি , জবর জিনিস ভাই চালায়া যান।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১০
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++++++ কিছু মনে হয় মিস করে ফেলেছি , পড়তে হবে ।
ভালো থাকবেন