![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Click This Link
ঘরে ফেরা
@ তুষার আহাসান
খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন হাসিব।
দিল্লী-আগ্রা-আজমের ঘুরে১৫ দিন পরে ঘরে ফেরা
যে কত আনন্দের তা
বাড়ির দরজায় পা রেখে টের পাচ্ছেন তিনি।
ট্রেন লেট ছিল নইলে কাল দুপুরের মধ্যে বাসায়
পৌঁছে যেতেন তিনি।
মোবাইলে চার্জ দিতে ভুলে গেছেন। তাই সেটা
সুইচ অফ হয়ে আছে। বাড়ির খবর নেওয়া হয়নি।
বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছেন, তা জানানোও
হয়নি।
খুশি মনে কলিংবেলে হাত রাখলেন হাসিব।সবে
সন্ধের আধাঁর ঘনিয়েছে শহরতলীর আকাশে।বড়
মেয়েটা একটু অন্যমনস্ক, সে হয়ত কলিংবেলের
শব্দ শুনতে পাবে না। শুনবে ছোটটি। ছুটে আসবে।
ঝাঁপিয়ে পড়বে বুকে।
ট্রেনের সহযাত্রী ভদ্রলোককে এই মেয়ের খুব গল্প
শুনিয়েছেন হাসিব।
ভদ্রলোকের নাম বিপ্লব পাল। ব্যাঙ্কে চাকরী করতেন।
তাঁর জামাই এয়ারফোর্সে চাকরী করে।আগ্রায় পোস্টিং।
তার দুমাসের ট্রেনিং গোয়ালিয়রে। মেয়ে বারবার ফোন
করেছে, চলে এসো বাবা, মাকে নিয়ে, আমি একা থাকতে
পারব না।
স্বামী-স্ত্রীতে দুমাস পর ফিরছেন।মুখে-চোখে তৃপ্তি।সেই
আবেশ হাসিবের মনে ছড়িয়ে দিতে আলাপ শুরু করলেন।
ক্রিকেট ইনিংসের প্রথম বল যদি নো-বল হয়, তাতে
ব্যাটসম্যান আউট হয়ে বেঁচে গেলে, সে তখন বেপরোয়া
ভাবে ব্যাট চালাতে থাকে।হাসিবের আলাপটা ছিল তেমনই।
--- বুঝলেন, আমার বয়স পঁয়ষট্টি হয়ে গেল, এখনও আমি
বালতি ভরে জল বইতে পারি। তা আপনার কত হল?
হাসিব বললেন, আপনার কত মনে হয়?
---পঁয়ষট্টি!
শুনে হাসিব বাউন্সারের ধাক্কা খেলেন যেন।বাস্তবে তাঁর বয়স
পঁয়তাল্লিশ। মাথায় টাঁক পড়ে গেছে, তাতে একটু বেশী মনে
হয়। তাই বলে বিশ বছর! হাসিব হেসে বললেন, ঠিকই
অনুমান করেছেন।
চিন্তা করলেন কলকাতা অব্দি বিশ বছর বয়স বেশী নিয়েই
যাওয়া যাক, তাতে অসম আলাপের দায় থাকবে না।
---ছেলেমেয়ে কটি?
---দুটি মেয়ে।
--- তারা কি চাকরী করে?
--- না পড়ছে, বড়টি ক্লাশ এইটে, ছোটটি ফাইভে।
---ছেলে-টেলে নেই? সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছেন বিপ্লব।
--- আছে আগের পক্ষের।
---হা, হা,হা, আমিও তাই ভাবছিলাম। আপনাদের মানে
মুসলিমদের তো কেউ দেরীতে বিয়ে করে না, আবার অল্প
ছেলেমেয়ে এটাও যেন বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বিপ্লবের স্ত্রীও হাসছেন।স্বামীর সন্ধানী কৌতুহলে তৃপ্ত তিনি।
কিন্তু হাসিব হাসবেন নাকি কাঁদবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
তাঁর পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স এটা এই ভদ্রলোক বিশ্বাস করবেন
না। ঠিক তেমনই বিশ্বাস করবেন না, তাঁর তিরিশ বছর বয়সে
বিয়ের কথা। তারচেয়ে কিছু মিথ্যা বলা যাক।দেশকালের
বর্তমান পরিস্থিতি, বাজারদর প্রভৃতি নিয়ে অনেক সত্য আলাপ
করা গেছে। এখন ব্যক্তিগত বিষয়ে দু-একটা মিথ্যা বলা যেতেই
পারে।
---প্রথম স্ত্রী কি বর্তমান?
বিপ্লব ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার ছিলেন। কাউন্টারে বসে নিশ্চয় নোট
বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করতেন। এখন তাঁ পরীক্ষার বিষয় একটি
জলজ্যান্ত মানুষ।হাসিব এখন নিজেকে গিনিপিগ ভাবছেন।
বললেন,তিনি সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান।
---ওহ স্যাড। তা ছেলে কি করে?
কলেজ জীবনে হাসিবের এক বান্ধবী ছিল।তাকে প্রথম
স্ত্রী ধরে নিয়ে না হয় একটা মিথ্যা বলা গেছে। বাবার
বদলীর চাকরী। তাই তার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।
সে এখন কোথায়, কিভাবে আছে কে জানে। তার মৃত্যুর
সংবাদে পরিচ্ছেদের সমাপ্তি হবে ভেবেছিলেন হাসিব। হল
না। অগত্যা বললেন, স্কুল-মাস্টার।
---প্রাইমারী না হাইস্কুল?
--- হাইস্কুল, এস-এস-সি পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছে।
---বিয়েশাদী দিয়েছেন।
--- না, এক ব্রাহ্মনের মেয়েকে লাভ ম্যারেজ করেছে।
--- ওহ লাভ ম্যারেজ। তা আপনাদের সাথে যোগাযোগ
রাখে?
---না। বলে স্বস্থি পেলেন হাসিব। এই পর্বটির ইতি
টানার জন্য উদগ্রীব ছিলেন তিনি।
তারপরেও বিপ্লববাবু অনেক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছেন
হাসিবকে। তিনি তার দায়সারা উত্তর দিয়েছেন। বর্ধমানে
স্টেশনে বিপ্লববাবু স্বস্ত্রীক নেমে গেলেন। হাঁফ ছেড়ে
বাঁচলেন হাসিব।
কলিংবেল বাজানোর পর কেন সব পুরোন কথা মনে
ভেসে এল কে জানে। ছোট মেয়ে তো এত দেরী করে
না। সে কি কোকিলের ডাক শুনতে পায়নি।
দরজা খুলল সুন্দর এক তরুণী। স্মিত হেসে বলল, আসুন
বাবা ভেতরে আসুন।
ভুল বাড়িতে চলে এসেছেন ভেবে চোখ রগড়ালেন হাসিব।
মেয়েটি তাকে প্রণাম করে বলল, আমি সায়ন্তনী মুখোপাধ্যায়,
আপনার পুত্রবধূ।
মাথাটা কেমন ঘুরে গেল হাসিবের দরজার চৌকাঠ ধরে বসে
পড়লেন তিনি।
আশেপাশে কয়েকজন ফিসফিস করছে।চোখে ঝাপসা দেখছেন
হাসিব। তাতেও মরিয়মকে দেখতে পেলেন।অস্ফুট স্বরে বললেন,
এসব আমি কি শুনছি?
ডিউটিরত নার্স কয়েকজনকে বাইরে যেতে বলল। তারপর বলল,
এই ঘরে শুধু উনার স্ত্রী থাকবে।
মরিয়ম কাছে এল। বলল, এখন কেমন বোধ করছো?
--- ভাল, কেন কি হয়েছিল আমার?
--- বৌমাকে দেখে তুমি মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলে, ছেলেই
তো তোমাকে নারসিং হোমে নিয়ে এল।
--- আচ্ছা মরিয়ম, আমি একটা জিনিষ কিছুতেই বুঝতে
পারছি না। আমাদের তো দুটি মেয়ে, তা এই ছেল আর বৌমা
এল কোথা থেকে?
--- ছেলেটি তোমার প্রেমিকা সুলেখার। সে তার মৃত্যুর আগে
সব বলে গেছে ছেলেকে।বেচারা কত খুঁজতে খুঁজতে শেষে
আমাদের বাড়ি আসতে পেরেছে।
সুলেখার ছেলে, কই ডাকো তো দেখি।
ছেলে এল। অবিকল সুলেখার মুখ। বলল, কেমন আছেন আব্বু?
তার মাথায় হাত রাখলেন হাসিব। চোখ রাখলেন মরিয়মের চোখে।
বললেন, এটা আমার সুলেখার স্মৃতি।
@
২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৪৫
অদৃশ্য বলেছেন:
আহাসান ভাই
গল্পটা খুবই চমৎকার হয়েছে... বেশ মজা পাচ্ছিলাম লিখাটি পড়তে... কলিংবেল বাজানোর পর থেকে দৃশ্যগুলোও দারুন...
তবে... এই সুলেখা কি তার কলেজ জীবনের বান্ধবী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী... ছেলেটি তারই... এতোদিন এমন একটি ঘটনা চাপা পড়ে থাকলো!
আর এতো দ্রুতই হাসিব বা তার স্ত্রী সব মেনে নিলো... এখানেই খটকা তৈরী হয়...
শুভকামনা...
৩০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৯
তুষার আহাসান বলেছেন: মেনে নেওয়ার বিষয়টি হয়ত পরে জটিলতার সৃষ্টি করবে,তবে
হাসিব যেহেতু অসুস্থ ,তাই কেউ কোন বির্তক করে নি!
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ অদৃশ্য ভাই।
৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
হৃদয় রিয়াজ বলেছেন: ভাল লাগলো লেখা
৩০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:২০
তুষার আহাসান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ রিয়াজ ভাই।
৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:২৩
তুষার আহাসান বলেছেন: দুজন মন্তব্য করেছেন, + দিয়েছেন ৪ জন,বেশ মজার!!!!!!!!!!!
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৪০
তুষার আহাসান বলেছেন: কোন মন্তব্য নাই,তবু ১টি +
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!