নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয়পর্ব পরে সেরে নেবো।

উল্টা দূরবীন

কেন এক অচিন মানুষের বাস মানুষের ভিতর? জর্জরিত বোধ তবু অভিনয় যেন সুখের সাঁতার!!

উল্টা দূরবীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিরতি (এক)

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬

চার বছর হোস্টেলে থেকেছি। হোস্টেল লাইফের মজার কিছু ঘটনা তাই লিখেই ফেললাম। চার অধ্যায়ের মধ্যে আজকে থাকছে প্রথম অধ্যায়। ভালো লাগলে মন্তব্য করবেন, বিশ্রী লাগলেও করবেন।







এক





'বিরতি'। যেদিন প্রথম ওই বাসায় উঠেছিলাম তা আজো খুব স্পষ্ট মনে আছে। চোখ না বুজেই দেখতে পাই, একেবারে ধবধবে স্মৃতি। নেত্রনালীতে সে সুখ আজো লেপ্টে আছে। ইচ্ছে করলেই স্বাদ পাওয়া যায়।



তারিখ মনে নেই। তবে ২০১০ সালের কুরবানীর ঈদের পর ওই বাসায় উঠেছিলাম। ওটাকে ঠিক বাসা বলা যাবে না। বাসার চাইতেও বেশি কিছু ছিলো। স্বর্গ বলার স্পর্ধা নেই, তবে ওটা ছিল স্বর্গের মতই। হোস্টেল লাইফ কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি সব কিছু উদাহরন সহ ব্যাখা পেয়েছিলাম ওই বাড়িতে। আহা! কি মধুর দিন ছিলো!! কত মিষ্টি সময়!! সবকিছু আজো রসমালাইয়ের রসের মত আত্মায় লেগে আছে।



যেদিন প্রথম ওখানে উঠেছিলাম সেদিন বিদ্যুত, পানি কিছুই ছিলো না। জানালার গ্রিল ছিলো, থাই গ্লাস ছিলো না। মোটামুটি বিরক্তি আর অনীহা নিয়ে কিছুক্ষন থাকার পর ঠিক সন্ধ্যার আগেই সে বাসা ত্যাগ করেছিলাম। সেদিনের মত সেই বাসা ছিলো বসবাসের অযোগ্য। দিন দুয়েক এক আত্মীয়ের বাসায় কাটানোর পর আবার ফিরে গেলাম। তখন সব ঠিকঠাক ছিলো। নতুন নির্মিত বাড়ির একটা ইট পাথুরে গন্ধ নাকে লাগতো। নেশার মত, মাথায় চিনচিন করতো। একেবারে খালি বাসা। পুরো ৬ তলা বাড়িতে আমরা মাত্র সাত জন। সকাল সন্ধ্যা একটা কেমন জানি ভুতুড়ে ভাব ছিলো। সিড়িতে রেলিং নেই, শ্যাওড়া জমা ছাদেও নেই। প্রথমবার ছাদে গিয়ে ধাক্কার মত ভিমড়ী খেয়েছিলাম। এ যেনো কোন ঝুলন্ত সুইমিংপুল। বর্ষার পানি জমে ছাদে একাকার। মশাগুলিও একেবারে বংশ বিস্তারের জন্য রেসে লেগে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত ডিম, মশার লাভায় সে কি অবস্থা। স্বচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে হাটাহাটি করার একটা নির্দোশ ইচ্ছা জাগলেও সেটা বিসর্জন দিয়েছিলাম। মশার জীবনচক্রে হানা দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিলো না। মশা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ছড়ায়। কিন্তু সেগুলো স্ত্রি মশা। ওই ডিম্ব মশাগুলোর কোনটা পুং আর কোনটা স্ত্রি তা না জেনেই তাদের হত্যা করা উচিত হতো না। পানিতে না নেমেই মশার জীবনচক্র ইয়াদ করার চেষ্টা করলাম। কোন ক্লাসে যেন পড়েছিলাম। কোন ক্লাসে যেন পড়েছিলাম। ইয়াদ নাই।



মাঝেমাঝেই ছাদে যেতাম। ডিম্ব-মশাগুলোর শিশুকাল দেখতে। এই মশাগুলোর একাংশ অদূর ভবিষ্যতে আমাদের শরীর থেকে ড্রাকুলার মত গরম তাজা রক্ত শুষে খাবে, দুইটা একসাথে বসে খেতে খেতে চিয়ার্স বলবে সেটা ভাবতেই গা চুলকাতো।



প্রথম দিকে কারো কোন নির্ধারিত রুম বা সিট ছিল না। তিন তলায় সামনের অংশের একটা ফ্লাটে সাত জন থাকতাম। ৬ তলা বাড়ির বাকি অংশ পুরোটাই খালি। যে যেখানে পারে সেখানে ঘুমায়। এমনও রাত গেছে, একটা বালিশের দ্বি-মুখী ব্যবহার করে দুই জন একসাথে ঘুমিয়েছি। এক বালিশ, দুই মাথা সিস্টেম। তখনো জানালায় গ্লাস লাগেনি। রুমে ফ্যান ছিলো না। খোলা জানালা দারুন বাতাস দিতো। জানালায় পর্দাও ছিলো না। পর্দা থাকলে ভালো হতো। বাতাসে পর্দার কাঁপুনি নাকি ছন্দের মত। মাঝেমাঝে নাকি পর্দার আড়ালে ভুত টুত এসে আশ্রিত হয়। পর্দাহীন জানালায় সে ছন্দ আর ভুত কখনো দেখা হয় নাই। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, পরের লাইন মনে নাই।



ভুত টুত আছে কিনা জানি না। অনেকের মুখেই শুনি আছে, আবার অনেকে বলে সব মিথ্যা। বর্তমানের রিলেশান ফিলেশানের মত ভুতও নাকি ভুয়া। আসল বলে কিছুই নেই। সবই মনগড়া কারবার। ভৌতিকতা আর প্রেম দুইটাই এখন এক মনে হয়। যদিও ভৌতিক ব্যাপারে অনেক অভিজ্ঞতা আছে, আমার না। অন্যদের কাছ থেকে শুনা অভিজ্ঞতা। প্রেমের গল্প আর ভুতের গল্প অন্যদের কাছ থেকেই বেশি শুনেছি। নিজের অভিজ্ঞতার পারদ জিরো লেভেলে। থাক সে কথা।



'বিরতি'র গল্পে আসি। বিরতির চার তলায় একবার একজন নাকি ভুত দেখেছিলো। তখন আমিও চার তলায় থাকি। আগে তিন তলায় থাকতাম। কিন্তু হোস্টেল সুপার এসে সে রুম দখল করার পর চার তলায় স্থায়ী হই। এক রুমে তিন জন থাকি। আর সামনের দিকের পার্টিশন দেওয়া একটা রুমে একজন থাকে। সেই একজনই ভুত দেখেছিলো। ভুত দর্শনের পর বেচারা পুরো মাত্রায় বেহুঁশ, মুখ দিয়ে লালা পড়তেছিলো। চিল্লাফাল্লা শুনে আমিও দেখতে গেলাম। ওকে দেখার আগেই চোখ গেছে জানালায়। ততদিনে জানালায় পর্দা লাগানো হয়েছে। জানালার সাইজ ছোট। পর্দাও ছোট। ওই জানালা দিয়ে ছাদে জন্মানো বাচ্চা মশাগুলো অনায়াসেই ঢুকতে পারবে। কয়দিন পরে নিশ্চই ওরা চিয়ার্স ধ্বনিতে মুখোরিত করবে আমাদের হোস্টেল লাইফ। বারান্দার সাথে লাগোয়া রুম। জানালাও বারান্দার দিকে। ভুতটা নাকি সেদিকেই ছিলো। বারান্দায় দাড়িয়ে জানালা দিয়ে রুমের ভিতরে তাকিয়ে ছিলো। ভুতের আগ্রহী টাইপের চেহারা দেখেই ওই ব্যাটা জিভে কামড় দিয়া বেহুঁশ হইছে। ভুত যদি জানালার পর্দার নিচে এসে ভেচকি দিতো তাইলে কি হইতো সেটা ওই ব্যাটার মুখ দেখেই টের পেয়েছিলুম।



ভুতের ভয় আমারো ছিলো। এটাচড বাথরুম থাকার পরও শুক্রবার রাতে ভুত এফএম শুনার পর ছোটটা করতে বাথরুমে যেতে ভয় লাগতো। মাঝে মাঝে সাহস করে যেতাম। বেশিরভাগই যাওয়া হতো না। তখন একটা কথাই ভাবতাম। পৃথিবীতে ছোটটা করার কোন জায়গা নাই। কেউ ছোটটা করে না। সেই রাতে ওই ছেলেটা ভুত দেখার পর আমি বাকি রাতে একবারের জন্যেও আয়না দেখিনি। ভুলেও না। যদি আয়নায় নিজের চেহারা অপরিচিত মনে হয় বা পিছনে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখি সেই ভয়ে কাতর ছিলাম। কিন্তু সারা রাত সাহসী একটা ভাব নিয়ে চিলেছি। সবাইকে বুঝাতে চেয়েছি, ভুত নেহি হ্যায়!! কিন্তু অদ্ভুত ভৌতিক ভয়ে নিজেই চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিলাম ভিতরে ভিতরে।



এরকম অনেক রাত গিয়েছে। ভুত এফএম শুনে ছোটটা না করেই ঘুমাতে গিয়েছি। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নেও দেখেছি। জঙ্গলে একা দাড়িয়ে আছি। প্রচন্ড ইয়ে পেয়েছে। খোলাখুলি ভাবে বললে, মুতে মাতাল অবস্থা। মুতে মাতাল হলেও তালে ঠিক ছিলাম। ঘুমের ঘোরে জঙ্গলে মুতে দিলেই কারবার খতম হইতো। ভিজা বিছানা, খ্যাতা, বালিশ নিয়া  জঙ্গলেই মহাবিড়ম্বনা সহ্য করা লাগতো। একরাতে স্বপ্নে দেখলাম আমাজন জঙ্গলে ইয়ে ধরেছে। সামনে আবার এনাকোন্ডা জাতীয় সরিসৃপ। ভুল করে তখন মুতে দিলেই বিশাল আমাজন নিশ্চিত পটল ক্ষেত হয়ে যেত। ভিজা বিছানা, খ্যাতা, বালিশ নিয়া পটল তোলার ইচ্ছা কারো নাই। আচ্ছা, পটল ক্ষেতে কি এনাকোন্ডা থাকে?

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৩৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহাহাহা
সকাল বেলায় কি দিয়ে শুরু হল..
আপনার লেখার ধাচ অনেক ভাল
রসিকতা বোধ লেখাকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে, তাই বলে সেটা ভাড়ামি বা ভালগার লাগছে না।
আজকাল অনেকই ফান করতে যেয়ে মাত্রা ভুলে জান, আবার অনেকেই বেশ নিন্মরুচির পরিচয় দেন বরর্ননা তে।

ব্লগে স্বাগতম
অনেক অনেক শুভ কামনা

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

উল্টা দূরবীন বলেছেন: ধন্যবাদ দিদি। আপনার প্রতিটি সকাল সুন্দর আর আনন্দময় হোক।

আমার সামনের লেখাগুলা পড়ার আমন্ত্রন রইলো।

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: স্মৃতিচারণ পড়তে ভালো লাগলো।


লিখতে থাকুন। শুভ ব্লগিং :)

১২ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৯

উল্টা দূরবীন বলেছেন: জ্বি, ধন্যবাদ

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: বেশ রসাত্মক বর্ণনা!
চালিয়ে যাবেন।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪০

উল্টা দূরবীন বলেছেন: দুইটা কিস্তি লিখেছি। পরেরগুলো আর ঠিক হয়ে উঠছে না।

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: আপনি একজন ভীতু টাইপ পোলাপান। এতো ডরায়? কেউ? তয় বর্ণনা ভাল্লাগছে। চালায়া যান ভাউ! :)

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৩

উল্টা দূরবীন বলেছেন: আমি ভীতু লোক না। শীতের সকালেও ঠান্ডা পানিতে গোসল করার সাহস আছে আমার। আপনার আছে? মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৭

গেম চেঞ্জার বলেছেন: ওঃ বাবারে........... এই সাহস নাই। তবে ভুতের বাড়িতে যাওয়ার সাহস আছে রাত ১২.০০ টায়..... ;) ;)

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬

উল্টা দূরবীন বলেছেন: মারহাবা মারহাবা। :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.