![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
আমার না বাংলাটা ঠিকমতো আসে না
কতদিন ধরে বাংলা পড়া নেই, ভুলেই যাচ্চি ক্ষণ..
-কথাগুলো আক্ষেপ করে নয়, রীতিমত গর্ব করেই বলেন নব্য বাঙালীরা। আর কলকাতায় একবার তো এক দিদির কাছে এমন বলতেও শুনেছি- "আরে আরে আমার মেয়েটা তো বাংলা পারেই না, তবে যেমন হিন্দী, তেমনই ইংলিশ- একেবারে ফাটিয়ে দেয়! পড়ে তো ইংলিশ মিডিয়ামে...অক্সফোর্ড এডুকেশান বোর্ডের আন্ডারে হুম!"
মনে মনে কই, হায়রে বঙ্গ মাতার ইংগো সন্তান!
(২)
বিদ্যাপতি থেকে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র থেকে হুমায়ুন আজাদ কিংবা কবি নজরুল থেকে তারাশঙ্কর -একে একে মহামানব সমৃদ্ধ করলেন বাংলাভাষাকে, ঋদ্ধ করলেন বঙ্গভূমি। বাংলা ভাষার রূপ রস ছন্দে গন্ধে তাঁরা তাঁদের সমস্ত চিন্তা চেতনা ঢেলে, ধ্যান জ্ঞান দিয়ে করলেন অপূর্ব সৃষ্টি। এলেন কত মহাকবি, সভাকবি , কবিয়াল, দিগ্বিজয়ী তর্করত্ন, তর্কালঙ্কার, কালজয়ী কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার, সুরকার, গদ্যপদ্য রচয়ীতা, কিংবা বজ্রকণ্ঠী বক্তা- আরো এলেন কিছু অপূর্ব চলচিত্র নির্মাতা, সঙ্গীতজ্ঞ- সৃজনশীলতা দিয়ে জগৎজয় করলেন তাঁরা, এই ভাষাতেই। সারাবিশ্বে প্রায় দুই হাজার কথিত ভাষা আছে, তার মধ্যে মহত্মপূর্ণ অবস্থান করে নিয়েছে বাংলা।
(৩)
শুধু বাঙালী নয়, বাংলা ভাষা হয়েছে অনেক বিদেশীদেরও সাধনার ধন। এই বাংলাকে বুকে ধারণ করে যে অনেক অবাঙালীও তাঁদের সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতেছিলেন, তার সংখ্যাও কম নয়।
তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন এন্টনিও ফিরিঙ্গী। আসল নাম হেনসম্যান এন্টনি (Hensman Anthony). জাতিতে পর্তুগীজ, ধর্মে খ্রিস্টান। নিজেই প্রচুর কবিগান রচনা করেছেন, আর তখনকার বাঘা বাঘা কবিয়াল ভোলা ময়রা, রাম বসু, ঠাকুর সিংহ সকলকে হারিয়েও দিয়েছিলেন!
বাংলার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেছেন ন্যাথানিয়েল (Nathaniel Brassey Halhed). সেটা অবশ্য তাদের দরকারে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকার্যে বিশেষ দরকার ছিলো।
আর , কিছুদিন আগের কথা, একবার জনকণ্ঠ পত্রিকায় পড়ছিলাম সম্পাদক সমীপে কলামে, কে যেন লিখেছে এক পরিহাসের কথা। এক জাপানী গবেষক তাঁর জীবনের সমস্ত সাধনা দিয়ে তিনি বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক মূল্যবান গবেষণা করেছিলেন, আর সেইসব তথ্য তিনি এক পেনড্রাইভে সংরক্ষণ করেছিলেন। ঢাকায় এক কফিশপে বসে আবিষ্কার করেন কোনো এক দূর্বোক সেটা পকেটমেরে দিয়েছে।
তাঁর সর্বশেষ একটাই আবেদন ছিলো যে যে নিয়েছে, সে যদি দামী পেনড্রাইভের বদলে একটা বিশটাকা দামের ডিস্কেও তথ্যগুলো স্টোর করে ফেরত দেয় কোনো ভাবে, তার বদলেও তিনি টাকা পুরষ্কার দেবেন।
ছি! কি লজ্জা! হায় বাঙালী!
(৪)
দিনাজপুরে আর.কে.মিশণ রোডে এক বিদেশীর সাথে কথা হয়েছিলো, নাম ফ্রান্সিস। পুরোটুকুই পরিষ্কার বাংলায় কথা বললেন মাঝে প্রায় কোনো ইংরেজীও মেশান নি, খুব ভালো লেগেছিলো। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তিনি বাংলা শিখলেন কি করে, উত্তর এলো- "বাংলাকে ভালবেসে"!
এরকম আরো অনেকেই আছেন, আপনারা দেখেও থাকবেন হয়তো।
(৫)
বিদেশীরা যতটা বাংলাকে গ্রহণ করেছে, আমরা তার থেকেও অনেক বেশি হুমড়ি খেয়ে পড়ছি তাদের ভাষায়, বিশেষ করে ইংরেজীতে। আমাদের অবশ্য দায়ে পড়ে নিতেই হয়, তাছাড়া উপায় নেই। নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞান, যোগাযোগ, সবই অসম্ভব ইংরেজী ছাড়া। বৃটিশরা শাসণ করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে ইংরেজী, ফিল্মের জগতও প্রায় শাসন করছে বলিউড, বাংলাদেশীরাও হিন্দি বলে! কি যে জাদু করেছে তারা!
(৬)
বুকের পাটা বাঙালী একবারই দেখিয়েছিলো, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, আর তারপর? সব বোধহয় স্তিমিত! মায়ের ভাষার মধ্যে প্রায় যতটা পারছি ইংরেজী ঢোকাচ্ছি। অবস্থা এমন হয়েছে, যে শুদ্ধ বাংলায় বলা আর কারো পক্ষেই সম্ভব না, চাইলেও না। অজান্তেই বেরোবে। আর তার মধ্যে আমাদের ভাব নেওয়ার মানসিকতা তো আছেই, সেটা এ জীবনে ঘুচবে না।
ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি আমরা, আবার এই ভাষাকেই এখন ঘৃণা করছি আমরাই, আমাদের লোকেরাই। মাতৃভাষাকে কি করে ভালবাসতে হয়, তা শিখতে হবে জাপানী-জার্মান, রাশান কিংবা চৈনিক-স্প্যানিশদের কাছে। তাদের ভাষা শিখলেই তারা অর্ধ বা পূর্ণ স্কলারশীপ দেয় পড়াশোনার জন্য। ফাটাফাটি ইংরেজী জেনেও মাতৃভাষা ছাড়া কথাই বলে না। আর আমরা? শাদা চামড়া দেখলেই হইছে! বাকিটা আর বললাম না!
(৭)
ঘটনাটা উল্টোও হতে পারতো-
সারাবিশ্বের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার, এবং স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল যৌথ উদ্যোগে- প্রধান যোগ্যতাঃ বাংলা একাডেমীর কোর্স কম্প্লিট করে বাংলায় দক্ষ হতে হবে। যার নম্বর বেশি, সে পাবে অগ্রাধিকার, হুম! 8|
কিংবা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে দেখা যাচ্ছে লোকজন বাংলা বলতে না পারলেও বুঝতে পারে। কেউ কেউ বলতেও পারে! আরে! কি করে পারেন? হয়তো উত্তর দিলো যে তারা অনন্ত জলিলের চরম ভক্ত, মুভি ইউটিউবে রিলিজ পেলেই ডাউনলোড করে দেখে!
মনে হয়, খুব বেশি বড় না স্বপ্নটা। বাঙালীর অনেক মেধা আছে, অনেক ভালো লেখক, সাহিত্যিক, চলচিত্র নির্মাতা আর সৃজনশীল মানুষ আছেন। যে যার জায়গা থেকেই করতে পারেন অনেক কিছু। লিখুন, পড়ুন, গবেষণা করুন, কাজ করুন, যেটা পারেন, সেটাই করুন। আপনার মেধাকে দেশের কাজে লাগিয়ে দেখুন, সারা বিশ্ব তখন বাংলায় আসবে তার জন্য, আমরা জায়গা দিতে পারবো না।
এই লেখাটি এতো বড় হয়েছে যে কারো পড়ার ধৈর্য্য হবার সম্ভাবনা নেই, তারপরও যে ক'জনের চোখে পড়ে, তারা একটু একটু করে বাংলায় অনুবাদ লিখেন, আর সাথে অন্যকেও উৎসাহিত করেন, একদিন স্বপ্ন সত্যি হবেই।
আনন্দের কথা হলো, এই কাজ কিন্তু অনেকে শুরু করেও দিয়েছেন, যাঁদের অনেককে আমি চিনিও! তাঁদেরকে প্রণাম!
জয় বাংলা!
****
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৫:৩১
রায়ান ঋদ্ধ বলেছেন: আমার কিবোরডেও দেখি বাংলাটা ঠিক আসছে না!
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৫:৪৭
উত্তম কুমার ঘোষ বলেছেন: হা হা।
তোর কীবোর্ড টা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:৪৫
উত্তম কুমার ঘোষ বলেছেন: শিরোনাম সৌজন্যঃ
ভবানীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা "বাংলাটা ঠিক আসে না" কবিতার নাম থেকে।
নীচে তুলে দিলাম-
------
ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস’ বলে
‘ডিবেট’ করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজেটিভ’ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
বাংলা আবার ভাষা নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’
বেঙ্গলিতে
সহজ-সরল এই কথাটা লজ্জা কীসের মেনে নিতে?
ইংলিশ ভেরি ফ্যান্টাসটিক
হিন্দি সুইট সায়েন্টিফিক
বেঙ্গলি ইজ গ্ল্যামারলেস, ওর ‘প্লেস’ এদের পাশে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
বাংলা যেন কেমন-কেমন, খুউব দুর্বল প্যানপ্যানে
শুনলে বেশি গা জ্ব’লে যায়, একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।
কীসের গরব? কীসের আশা?
আর চলে না বাংলা ভাষা
কবে যেন হয় ‘বেঙ্গলি ডে’, ফেব্রুয়ারি মাসে না?
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
ইংলিশ বেশ বোমবাস্টিং শব্দে ঠাসা দারুণ ভাষা
বেঙ্গলি ইজ ডিসগাস্টিং, ডিসগাস্টিং সর্বনাশা।
এই ভাষাতে দিবানিশি
হয় শুধু ভাই ‘পি.এন.পি.সি’
এই ভাষা তাই হলেও দিশি, সবাই ভালোবাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
বাংলা ভাষা নিয়েই নাকি এংলা-প্যাংলা সবাই মুগ্ধ
বাংলা যাদের মাতৃভাষা, বাংলা যাদের মাতৃদুগ্ধ
মায়ের দুধের বড়ই অভাব
কৌটোর দুধ খাওয়াই স্বভাব
ওই দুধে তেজ-তাকত হয় না, বাংলাও তাই হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
বিদেশে কী বাংলা চলে? কেউ বোঝে না বাংলা কথা
বাংলা নিয়ে বড়াই করার চেয়েও ভালো নিরবতা।
আজ ইংলিশ বিশ্বভাষা
বাংলা ফিনিশ, নিঃস্ব আশা
বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা।
_____
বাংলাটা ঠিক আসে না!
– ভবানীপ্রসাদ মজুমদার