![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইনিই আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিব , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান , যিনি ২৩ শে মার্চ একাত্তরে তাঁর নিজ বাসভবনে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেবার সম্মতি দেন । এর আগে সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহুত পল্টন ময়দানে এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে সারা জাতির পক্ষ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয় । এই দিনই চট্টগ্রামে পাকিস্তানী অস্ত্রবাহী জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসে অস্বীকার করে ডক শ্রমিক । তারপর পাকিস্তানীরা জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে নামিয়ে অবাঙালীদের নিয়ে অতি দ্রুত পাকিস্তানের পথে ফিরে যায় । কিন্তু অস্ত্র বন্দর থেকে ২৫ শে মার্চের আগে পাকিস্তানীরা ভেতরে নিতে পারে নি । টেলিভিশনের কর্মীরাও সেন্সরশীপ মানতে অস্বীকার করে বসে । এইদিনই শেখ মুজিব তাঁর ৩২ নম্বর বাড়ির ব্যালকনী দাঁড়িয়ে বিভিন্ন শোভাযাত্রার মিছিলের অভিবাদন গ্রহণ করে বলেন , বাংলার মানুষকে অস্ত্র দিয়ে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না । এই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কার্যতঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায় । ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া সারা বাংলাদেশে কোথাও আর পাকিস্তানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি । যদিও ইয়াহিয়া খান বা ভূট্টো তখনো আরেক দফা আলোচনার জন্যে খামাখা বসে থাকেন , কিন্তু তখন পাকিস্তান থেকে আসা সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে থাকেন । ২৩ তারিখ ইয়াহিয়া খান তার পাকিস্তান ক্যান্টনমেন্টে মিটিং করেন । সেদিন পঁচিশ তারিখ রাতের গনহত্যার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে যায় । এটা ছিলো একটি ব্যাকরণগত প্রক্রিয়া , অবসম্ভাবী অবস্থা যা আনা ছাড়া পাকিস্তানের আর গতি ছিলো না । যেহেতু এতো বড় পেশাদার সেনাবাহিনী পূর্ণ রণসজ্জায় তৈরি এবং শেখ মুজিব সেটা জানেন সেহেতু ২৪ তারিখ প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের সাথে আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলাম ,তাজউদ্দীন আহমেদ , ড . কামাল হোসেনের ১৬৫ মিনিট বৈঠকের পর , তাজউদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন , অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা চলে না । বিলম্বে অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে পারে । আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমস্ত বক্তব্য সম্পন্ন করা হয়েছে । এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তার ঘোষণা প্রদান করা । কারণ আলোচনা দীর্ঘদিন চলতে পারে না । আওয়ামী লীগ আর আলোচনা দীর্ঘায়িত করতে প্রস্তুত নয় , তাদের আর বলারও কিছু নেই এবং কোন আলোচনাসভারও প্রয়োজন নেই । তবে কাগজে প্রকাশিত হয় যে , যদি তাদের কথার ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় তবে সে বিষয়ে বসা যেতে পারে । এইসবের পরেও প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে কোন ঘোষণা আসে নি । শেখ মুজিব হুশিয়ারী উচ্চারণ করে তাঁর বাড়ির সামনে জমায়েত জনতার উদ্দ্যেশে বলেন , বাংলাদেশের মানুষের উপর জোর করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা বরদাস্ত করা হবে না । যদি কেউ আমাদের রক্তচক্ষু দেখায় , জনগন তা সহ্য করবে না ।
তেইশ তারিখের ভেতরই রেডিও বা টিভিতে পাকিস্তান কতৃপক্ষের কতৃত্ব লোপ পায় । সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে থাকে । সেনাবাহিনী কর্মীদের উপর বলপ্রয়োগ করে পাকিস্তানের জাতীয় বাজাতে বাধ্য করতে গেলে , টিভি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় । কার্যতঃ তেইশ তারিখেই শেখ মুজিব ও তাঁর দলের সাথে ইয়াহিয়া খানের সম্পর্ক খতম হয়ে যায় । ২৪ তারিখে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা ও ভূট্টোর রাজনৈতিক সফর সংঙ্গীরা ঢাকা ত্যাগ করে । ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা শোনার অপেক্ষায় বুকে আশা জিইয়ে রাখে । আমাদের আশা ছিলো মতৈক্যের জন্যে ইয়াহিয়া খান হয়তো রাজনৈতিক সমাধানই করবেন । কিন্তু পরবর্তী কালে জানা যায় , তিনি ও ভূট্টো পঁচিশ তারিখ কথা বলেছেন । আসলে তারা সামরিক সমাধানের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন । কারণ ২৩ তারিখেই কার্যতঃ তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পতাকা ও জাতীয় সংগীত পেয়ে বুঝতে পেরেছিলেন এখানে আর পাকিস্তানের অস্তিত্ব এবং কর্তৃত্ব বহাল নেই । সেটি পুনরুদ্ধারের জন্যে ঢাকা ও বড় বড় শহরে পর্যায়ক্রমে গনহত্যার পথকেই ভূট্টো ইয়াহিয়া পঁচিশ তারিখেই বেছে নেন । ঠিক এই দুটি দিন শেখ মুজিব ও তার দলের কার্যক্রম কি ছিলো ? এটা জানাও জরুরী ।
শেখ মুজিবের আশীর্বাদ নিয়ে দুজন প্রাক্তন সামরিক অফিসার ক্যাপ্টেন নওয়াব হোসেন ও আশরাফ আহমেদ , পদাতিক , নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রাক্তন সৈনিকদের একটি যৌথ কমান্ডের অধীনে ট্রেনিং গ্রহণের আহবান জানান । এ ব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী জেনারেল এম আই মজিদকে অনুরোধ জানানো হয় বলে এক বিবৃতি বলা হয় । ২৩ মার্চ বাইতুল মূকাররম প্রাঙ্গলে সকলে উপস্থিত থাকতে বলা হয় । মিটিং তারা আসন্ন স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়ার শপথ নিয়ে অবঃ কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান । শেখ মুজিব তাদের সামনে বলেন , আমরা জয়ী হবোই ইনশাল্লাহ । এসব খবর কাগজেই পাওয়া যায় । ২৫ মার্চ শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে কেবলি মানুষের ঢল ।সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ মুজিব তাদের সামনে কথা বলেন । তিনি শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান । সন্ধ্যার পরপরই রাস্তায় রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যরিকেড দেয়া আরম্ভ হয় । এ কে খন্দকারের ভাষ্য মতে জানা যায় সন্ধ্যার পরপরই অনি গোপনে একটি বিমানে সতর্ক পাহারার ভেতর দিয়ে দুজনযাত্রী সহ ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেছেন । এখবর তিনি আওয়ামী লীগ অফিসে জানিয়ে দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে সকলকে তাদের পরিবার সরিয়ে নেয়ার জন্যে বলেন । সন্ধ্যার পর তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সকলকে নিরাপদে সরে যাবার আদেশ দেন । তার আগে জেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের নিজ এলাকায় চলে যেতে বলেন । সকলে রাত ৯ টার মধ্যে একে একে বিদায় নিয়ে যেতে থাকেন । কিন্তু শেখ মুজিব শান্ত ও অনড় । সকলের অনুরোধের জবাবে তিনি বললেন , এখানে ওরা আমাকে খুঁজতে আসবে । আমাকে না পেলে তারা গোটা দেশ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে । জনগনের জীবনের স্বার্থেই আমি থেকে গেলাম । সকলেই চলে যেতে থাকলো । শেখ মুজিব একা হয়ে গেলেন । তিনি ঠিক জানেন না , ওদের গোলাগুলির মাঝে তাঁর কি হবে । তিনি বসে থাকতে থাকতেই রাত ১১টা ৪০ শে পাকিস্তানে পা দেয়া ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাবার পরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদল বলে ইপিআর হেডকোয়ার্টার , রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাত হল ও ইকবাল হলে আঘাত হানতে থাকলো । তারা শ্রমিক এলাকা আদমজী জুট মিল , লতিফ বাওয়ানী জুট মিল এবং টংগীতে আঘাত হানতে থাকলো । এসব গোলাগুলির কিছু শব্দ শেখ মুজিবের কানে এলো । তিনি অকুতোভয় এবং নিচেষ্ট । নিস্পৃহ ।
"আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়
আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি পথে যেজন ভাসায় "
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
২৫ শে মার্চ ভয়াল রাতে সকলকে বিদায় দিয়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা , সর্বকালের সেরা বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিচেষ্ট নির্বিকার তাঁর ঘরে বসে আছেন । তিনি জানেন , তাঁকে না পেলে পাকিস্তানীরা তাঁর প্রিয় দেশকে আজকের ভেতরই পুড়িয়ে দেবে । প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের লোক থাকবে না । তিনি যে বাঁচবেন এটা তিনি জানেন না । তিনি মৃত্যুকেই বেছে নিলেন । ইতিমধ্যে কয়েকজন এসে তার সাথে দেখা করে প্রয়োজনীয় উপদেশ নিয়ে গেলেন । ফোনেও কিছু নির্দেশ দিলেন । তারপর তিনি ওয়ারলেস যোগে তার শেষ কাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বার্তা চট্টগ্রামে পাঠালেন । বার্তাটি চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙ্গর করা একটি জাহাজে গৃহীত হয়েছিলো । পরের দিন ছাব্বিশে মার্চ চট্টগ্রামের মানুষ এই বার্তার মুদ্রিত রূপ দেখতে পেলেন ।
TO THE PEOPLE OF BANGLADESH ALSO OF THE WORLD
Pakistan Arm Forces suddenly attacked the E. P .R Base at Peelkhana and police line at Rajarbagh at O . C . O . Hrs of 26 . 3 . 71. killing lots of people. Still battle is going on with the E.P.R & Police forces in the streets of dacca. People are fighting gallantly with the Enemy forces for the cause of freedom of BANGLADESH. Every sector of Bangladesh is asked to resist the enemy forces at any cost in every corners of Bangladesh. May , Allah bless you and help you in your struggle for freedom.
Joy Bangla . sd/Sk. Mujibur Rahman.
(লিখাটি আবার বই '' স্মৃতিকথা - মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ'' থেকে নেয়া )
শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ একাত্তুর ।
©somewhere in net ltd.