![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লোকটা বললো , চোদনা । লোকটা ফের বললো , তুই শালা চোতনা । একটা কাম করতে কয়টা কথা কওয়া লাগে বটে ? রাখালটা তখন গরুগুলো লাইন করে বেঁধে সামনের দাওনে খড় ছিটিয়ে দিচ্ছিলো । এটিই করেই তাকে যেতে হবে নদী । এক বাউঙ্কায় দু কলস জল আনতে হবে । মালিকের বাড়ির ঝি ডাল সিদ্ধ করবে আগামী কাল । তারপর তার আরো একটা কাজ আছে । গাই কে চোনাডানা দিয়ে কাটা খড় মাখিয়ে দিতে হবে । গাঢ় দুধের জন্যে চোনা দানা জরুরী । তখন তো মাগরীব পার হয়েও যাবে । ফের তাকে মালিকের বেটির বাড়িতে সজনেগুলো দিয়ে আসতে হবে । আগেই রাঁধুনী ভুলুর রঙ্গিনী বৌটা তাকে বলেছে । সজনের এক পোটলা শাকও বাছা আছে । আর ফির এক ভাঁড় দুধও দিয়ে আসতে হবে । গাঁ এ আরেক মালিকের বিশ বছরের ছেলের সাথে তেরো বছরের ফাতিমার বিয়ে হয়ে গেছে ।
তারও আগে ফাতিমা গোয়ালঘরে এই রাখালের সাথে একবার খুসুমুসু করতে গিয়ে , আরে কিইবা তাদের বয়েস , ভুলুর বৌটা গোবরের ডালি আনতে গিয়ে দেখে ফেলেছিলো । পরে ফাতিমাকে টেনে হেঁচড়ে তুলতেই ফাতিমা গালি দিয়েছিলো , এইঠে দাদার সাতে খুসুমুসু করতে গেছো । আমি পাহারা দিয়াছি । এখন তুই দে রঙিলা বু । এই বলে থু থু ছিটিয়ে ফাতিমা বলেছিলো , ফের এইঠে আসিস , কেটে লেবো । বাপ রে ! এ যে গুই সাপ । বেশি খুসুমুসু হবার আগেই ফাতিমার বড় মা বুদ্ধি করে মালিক কে রাজী করিয়ে তাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিলো । তখন ফের ঐ ভুলুর বৌ এর সাথে কয়েকটা রাত শুয়ে জেগে জেগে ফাতিমা সংসার শিখে নিলো । বুঝলি রে সোনা ফাতিমা , পরখম রাইতে বাপ মায়ের লাগি কাঁন্দবি । পরের রাইতে ধরলে নয় ছয় । তারপর ফের কাঁন্দবি । পরে আস্তে আস্তে ধরা দিবি । রাখালের মনটা ভারি চঞ্চলতায় কয়েকটা দিন ভুল কাজে কামে ধরা পড়ে গেলে , মালিক তাকে বলে ছিলো , ওরে চোদনা , আগেই গাই ছাড়বি নাকি বাছুর বাঁধবি সেই জ্ঞান হারাইলে ডুবিবি রে ছোঁড়া । হুশ কর । তোর মা এমন বেহুঁশই ছিলো রে । তোকে ফেইলা ফের ভাতার ধরার আগে একবার বেহুঁশ হইছিলো ফের । এখন তোকে আর কুথা ফেলি ক ? কাজে মন দে । এইভাবে রাখাল বালক আতিয়ারের দিন যায় । তার মায়ের আগের স্বামী হিসাবে তার বাপ । নিচ্ছে না । বলে , তোর মা এর লাঙ ছিলো । তুই তার বাচ্চা । পরের স্বামীর কাছে গেলে , ধান কাটা হাসুয়া এনে বলে , এইঠে আইলে কাইটা ফ্যালাবো । তোর বাপে তোর মাকে ম্যালা মাইরছে বটে । তার মা তাই মাঝে মাঝে নদী বা গোয়াল ঘরে তার সাথে দেখা করে বলে যায় , কষ্ট লিস নে বাবা । দুনিয়া বড় খারাব জায়গা রে । আতিয়ার বলে , হামার দোষ কোনঠে সেইটা ক দেহি ? ক । দোষ কি হইতেই হইবে রে ? জনমেই হামাদের দোষ রে বাপ । বুঝিবি । তুই ও যে খুসুমুসু কইরছিলি একটু . রঙিলা আমারে সেকথা কইছে বাপো । আর কি শুনিবার চাইস ? আতিয়ার এই চৌদ্দতে এসে মহা ফাঁপরে পড়ে । তো বাপ বুলবো কাকে রে মা ? সেই কথা ক । একটা তীব্র আত্মপরিচয় জানার আর্তিতে বাছুরটার মতো হাম্বা ডাকে আতিয়ার । মালিক জানে বাপো । ঐ কালে যে স্বামী ছিলো , তাকেই বাপ কইস । সে যে কাটতে আছে মাও । সে না মানলে , সমাজ মানে বাপো । ঐটাই তোর বাপ । আতিয়ার রাতে তার দুটো আঙ্গুল থাড়া করে আরেক হাতে একটা আঙ্গুল ধরে নিজে নিজে বলে , হইতে পারে । আরেক আঙ্গুল ধরে ফের বলে , হইতে না ও পারে । তবু সমাধান হয় না । একরাতে রঙিলা , আতিয়ারকে নিয়ে রান্না ঘরেই শুয়ে যায় । কাঁদে ।
রাতে অনেক কাঁদা আর হিক্কার মাঝে কিশোর আতিয়ার কথন যে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় , সে নিজেই বোঝার আগেই সে নিজেকে অপরাধী দেখতে পায় । ভেতরটা শামুকের মতো খোলের ভেতরে মুখ লুকায় । তখন রঙিলা বলে , হামার প্যাটে বাচ্চা । হামি একবার স্বামীর কাছে একবার মালিকের কাছে ফের একবার তার দু ব্যাটার কাছে । এখন কি মালিক আর থুইবে রে ? তোর মা কেও তো রাখে নাই । নয়া রাঁন্ধনী আসিবে । তো ভুলু যুদি না নেয় তো হামি কোনঠে যাবো ক দেহি ? তোর মা তো আগেই ভাতারের ব্যবস্থা কইরছিলো । তুই বিয়োবার পর তুই হামার কাছে ম্যালাদিন বড় হলি । ফাতিমাকে পাইস নি । হামি তার দন্ড দিলাম । এখন ক তো , ফাতিমা বাপ কে ? ফের আতিয়ারের বিভ্রান্তি বাড়ে । ক্যানে , মালিকের । মালিকের ত্যাজ কম রে । ফাতিমা তবরেজ কামলার বেটি বটে । আতিয়ারের মাথাটা পৃথিবীর মতো ঘুরতেই থাকে । ভোর দুপুর রাইত । ফের ভোর দুপুর রাইত । ফের ভোর দুপুর আর রাইত । এক বৃষ্টিঘনরাতে মালিকের বুকে ব্যথা বাড়ে । আতিয়ার জোয়ান তখন । সে এখন অনেক কিছু জানে । মালিকটা ভালো । শত অপরাধে তাকে ছাড়ে নি । মাঝরাত্তিরে বৃষ্টির রাতে মালিক তাকে ডাকে । তিনদিন বৃষ্টি চলছে । চারদিকে জলে ভাসা । চাষবাসে এ জল দরকার । গতকালই বৃষ্টিতে জমি কাদা করা শেষ । বৃষ্টি থামলেই রোয়া গেড়ে দেবে সে । এসব সে মালিককে বলে । মালিক বলে , বুঝলি রে আতিয়ার , দুনিয়াদারীটা অদ্ভুত । আইজ রাইতে হামি মরিবো বটে । বৌ গুলান কাঁন্দিবে । ব্যাটাগুলান জমির স্বাদ পাইবে । বেটিগুলান জমি গহনা নিয়া যাইবে । কিন্তু গোরস্থানে যে হামাকে নামাবি , এই বৃষ্টিতে তো কবরই ধ্বসিবে বটে । কথন হামার বুকে মাটি আর পানি । মাটি পানিতে হামি হেলিবো , দুলিবো , ডুবিবো , ভাসিবো । তুই একটু ভরসা দে । হামি আইজও জানি না , তুই হামার ব্যাটা নাকি হামার ব্যাটার ব্যাটা । আর হামিও জানি না , হামি কার ব্যাটা । মরিবার পর আর কেহ কারো লয় রে । হামাকে একটু ধর ।
©somewhere in net ltd.