নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাস্কর চৌধুরী নিরঞ্জন

ভাস্কর চৌধুরী নিরঞ্জন । ঢাকায় থাকি। জন্ম চাঁপাই নবাবাগঞ্জ।

ভাস্কর চৌধুরী নিরঞ্জন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা ভাবনা----------- প্রসঙ্গ ভাষার আদিকথা ( পর্ব-- এক )

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১৬


ভিন্নচোখের এক আড্ডায় ছোটভাই মেধাবী মুন্সি সোহাগ শাহি বলেছিলো , জীবন সৃষ্টির আগে সুরের অস্তিত্ব ছিলো । কথাটা দুমড়ালে ম্যালা কিছু হয় । সোহাগ সাদা কথাতে বলেছিলো , নদী বা সমুদ্রের , বাতাসের ধ্বনি অথবা নদীর কুলুকুলু সুরের কথা। কেউ শোনে নি সে সুর । আজো নদী বয়ে যায় এবং সেই কুলুকুলু সুর থেকে অনেক সুর , বৃষ্টির সুর থেকে মনোহর সুর মানুষের কন্ঠে এখন বাজে । অতঃপর যদি জীবনের কথা আসে? এই পৃথিবী জলবায়ূ তাপে তো জীবন মিলিয়ে যে এই চার ভূতে । এ হলো চার্বাক দর্শনের কথা । কিন্তু জীবন যখন তৈরি হয় , গুহাবাসী মানুষের ভাষাগুলো কিভাবে লিখিত হতো ? এটা ভাষাতাত্বিক বললে বুঝবো এমন কথা বলে পার পাওয়া যাবে না । তখন গুহা ও মাটি খোদাই করে তারা জীবজন্তুর ছবি আঁকতো । তাতে অস্ত্রের মতো কিছু , লাঠি , তীর কুঠার বা এমনতর অনেক বস্তুর তারা ছবি আঁকতো । এগুলো তাদের আদি শিল্পকল্পের চেয়ে ভেতরের কমুনিকেটিভ ভাষাকেই তারা মুর্ত করে তুলতো । তারা কিভাবে ভাষা তৈরি করেছিলো নিশ্চিতভাবে বলা যায় না । জীবের ছবি অস্ত্রের ছবি বা অনেক সময় কাপড়হীন নারী পুরুষের ছবি এঁকে তারা এগুলো ধারাবাহিক ভাষার একটা চিহ্নে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলো । কাম ও কৌশল জাগ্রত হয়ে তারা আদি মিলন ঘটিয়ে সন্তানের মা বাবা হয়েছিলো । তাদের ভেতর প্রেম ও মায়া জন্মেছিলো একদা । তারা হয়তো পাতার জামা পরে স্পর্শকাতর জায়গা ঢেকে , নারীর কাছে পুরুষ নতজানু হয়ে কাম প্রার্থণা করেছিলো । ক্রমাগত তাপের ভেতর থেকে রাতের চেয়ে দিনের সূর্যের তেজকে থামাতে তারা সূর্যপূজো করেছিলো । পৃথিবীতে আগুন পাবার পর ধারাবাহিতভাবে তারা হোমযজ্ঞও করেছিলো । এসবের পর সংসার ধারণার জন্ম হলে তারা পছন্দের মা নারী নিয়ে পাতায় ছাওয়া ঘরে ঢুকেছিলো । এখানে আগে আধিপত্য কার ছিলো ? নারী নাকি পুরুষের ? এটি সত্য যে মোরগ ও মানুষের কুচেতন মন ছাড়া বাকি সব জন্তুর মাঝে নারী দীক্ষা জন্মেছিলো । নারী পাখি ও অন্যান্য জন্তুর ভেতর আজো নারী দীক্ষা দেখা যায় । একটি পুরুষ হাঁস আজো নারী হাঁসকে কামে সম্মত করতে অনেক কসরত করে । এই ইশারাগুলো ভাষাভূক্ত । এভাবে প্রাচীন মানুষ জঙ্গলজীবনে থাকা অবস্থায় অবশ্যই ঐশী বানীহীন ধর্ম এবং ধর্মের দেবতাকে তুষ্ট করতে পশু ও মানুষকেও বলিদান করেছিলো । তাদের প্রতিটি স্তরের কাজে তারা হাজার বছর ব্যবহার করেছিলো এবং হাজার হাজার বছরে চিহ্নে চিহ্ন সময় কাজ রাগ দ্যোতক ও দ্যোতনা , বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে তা যৌথ আনন্দে বাজিয়ে স্বরের ধারাবাহিক সম্মেলনে তারা আনন্দ করেছিলো । এভাবে তারা আঁকা ও চিহ্ন দিয়ে একটি সংহত সমাজ গঠনও করেছিলো । এসব সুর স্বর ও চিহ্ন এলাকা ভেদে আলাদা হয়ে আলাদা আলাদা চিহ্ন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিলো । এভাবে হাজার বা লক্ষ সমাজ ধীরে ধীরে নিজেদের এলাকা বাড়িয়ে , যুদ্ধবিদ্যা হাসিল করে একে অন্যকে গ্রাস করতে করতে একদিন তারা নিজেদের রাজা বা প্রভু তৈরি করেছিলো । এভাবে বহিরাগত উন্নত অস্ত্রের হাতে পতন হতে হতে একসময় বহু সমাজকে গ্রাস করে অপেক্ষাকৃত বড় এলাকা জুড়ে তাদের একক চিহ্ন বিস্তার করে চলাচলের চিহ্ন ভাষার উন্নতি করেছিলো । এই এতো কিছু করেছিলো এর পরে দেখা যায় সভ্যতার বিকাশধারাতে কতো শত বছর লেগে গেছে । চিহ্ন দিয়েই মানুষের ভেতর যোগাযোগের সূত্রের আগেই পুরুষতন্ত্র ,নারীতন্ত্র , গৌত্র , সমাজ , সংগীত , কলাবিদ্যা , অস্ত্রিবদ্যা , যুদ্ধবিদ্যা ও অধিকতর বড় আকারে রাজত্ব কায়েম হয়েছে । ভালো ও মন্দ দেবতার উদ্ভব হয়েছে । শুভ এবং অশুভ সংকেতগুলো মানুষ আত্মস্থ করে ফেলেছে । রাজত্বও ও আধিপত্য মানুষের পূর্ণভাষা তৈরির বহু আগেই এসেছে । এরপর মানুষ তাদের কাজগুলোকে বিন্যাস করেছে এবং বিন্যাসের মাঝে অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমানের চিহ্নগুলো ব্যবহার করে বিশাল এলফাবেট তৈরি করেছে । তারা রীতিনীতি তৈরি করতে গিয়ে , ধর্মবিশ্বাস , দেবত্ব এবং রাজস্বার্থ রক্ষাকল্পে শাসনের ভাষাটিও তৈরি করেছে । কিছু মানুষ ছবি এঁকেছে । কিছু মানুষ প্রকৃতির সুর থেকে সংগীতসুর তৈরি করে গায়ক হয়েছে । এসব তো একদিনে হয়নি । জীবনের বিস্তারকে জ্যামিতিক পর্যায়ে নিতে তো হাজার হাজার বছর কেটেছে । অতএব বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশও তেমনি হারে বেড়েছে । এই ক্রমবর্দ্ধমান ধারাতে তো চাহিদা একটি শর্ত । কারা কিভাবে কি করতে চেয়েছে এগুলোকে শৃঙ্খলায় সাজাতে সাজাতে কেটে গেছে কয়েক সহস্র বছর । কিন্তু পৃথিবীতে রচিত প্রথম শাসন বিধি তৈরিতে যে শ্রেণীর হাত ছিলো তারা কিন্তু রাজার অনুকূল্যে রাজার পক্ষেই সকল নীতি ও আইন তৈরি করেছে । এইভাবে শাসিত যোদ্ধা বুদ্ধিমানুষ , ধর্মমানুষের বিকাশ ঘটে গেছে সকলের অজান্তে । জীবনযাপনের রীতি ও ভাষা এক কথা নয় । রীতিতে ছোট ছোট রাজ্যের মানুষ জীবন চালালেও লিখিত চিহ্ন ভাষার দেখা পায় নি । তারা আদি চিহ্ন ভাষাটিই রপ্ত করেছিলো মাত্র । ঠিক এভাবে বুদ্ধি ও প্রতাপের কাছে ভাষা জিম্মি থেকেছে । আর ধর্মজীবীদের পাঠ শুনে পূণ্যলাভের বিশ্বাসে সনাতন মানুষ বিভাজিত হতে হতে শ্রুতিতে ফললাভের আশায় কালক্ষেপনে ফের হাজার বছর কাটিয়ে ফলশ্রুতি শব্দে ফললাভ করেছে । এইসব সাংঘর্ষিক শ্রেণী বিন্যাসে লেখ্য ভাষা পেতে মানুষকে আবারো শতো শতো বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে । রাজা ধর্মজ্ঞানে মান্য এবং অতঃপর প্রজা রাজার তৈরি প্রতিনিধি অর্থাৎ রাজাসম প্রতিপত্তি বিধানে ধর্মকেই আশ্রয় করে প্রজাপালনের যেসব আধিপত্যবাদী জীবনধারা ও চেতনা বিকাশের ব্যবস্থা করেছে তাতে , ভাষাটি ব্যপকতা লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে । লেখ্যভাষা থেকে মৌখিক ভাষা সরে গিয়ে আলাদা আলাদা এলফাবেট তৈরি করতে হয়েছে । এভাবে রাজভাষা , ধর্মভাষা , এবং মৌখিক ভাষা সামাজিক বিন্যাসে আলাদা হয়ে গেছে । এই আলাদাকরণক্রিয়াও শত বছরের সৃষ্টি । তাই প্রজাপালনে প্রথমেই ভাষার বিকাশকেই শ্রেণীকরণের মাধ্যমে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে । আজ থেকে তিনহাজার বছর আগেই এইসব কাজ অতি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে । ভাষা তৈরি হয়েছে । ব্যাপক চিন্তা ও তার প্রকাশ রাজা ও ধর্মপতিদের হাতে রয়ে গেছে । ফলে আলী আফজাল খানের কন্ঠে শুনি , আমাদের সকল কার্যক্রমই ভাষা । আসলে আমাদের যাবতীয় কার্যক্রমকে ভাষারূপ দান করা যায় । আসলে কি তাই?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.