![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- হোঁচট খেয়েছি ঠিকই, কিন্তু থেমে যাইনি , হেরে যাব বলে তো, আর স্বপ্ন দেখিনি।
রোদ মাথায় লাগলেই মাথা ব্যাথা করে। এই কারনে আমি অনেক জায়গাতেই জীবনে দাঁড়াইতে পারি নাই। এর মাঝে প্রধান আফসোসের হেতু হচ্ছে, গার্লস স্কুল। জি, হ্যা। গল্পটা স্কুলের। পরে কলেজে উঠে এই কান ওই কান হয়ে যখন মাথা ব্যাথার বিষয়টা আমাদের জিনিয়াস আরিফ স্যারের কানে যায় তখন তিনি আমার সাইনাস আছে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেন। বিষয়টা পরে সত্য হয়। দুনিয়াটা আজব! কিছু রোগের উপসর্গ আর চিকিৎসা ডাক্তাররা ছাড়াও 'মিথের' মাধ্যমে করা সম্ভব। এই যেমন, আপনার চোখে ঘন ঘন অঞ্জলি হচ্ছে? তাহলে, মুত্র বিসর্জনের সময় প্রবাহিত জলধারার দিকে না তাকিয়ে জলাঞ্জলি দিন। দেখবেন আর কখনও চোখে অঞ্জলি উঠবে না। আলমের কসম, বিফলে মূল্য ফেরত!।
যাই হোক দিনটি'র কথা মনে আছে। দিনটি হল আট'ই মে। সাধারনত পুরুষ মানুষকে উপস্থাপন করা হয় দিন-তারিখ ভুলোমন হিসেবে। কথাটা সত্য না। কারন আমার খুব ভাল মতো দিন তারিখ মনে থাকে। এই দিনটা মনে রাখার আরও একটা কারন হচ্ছে, দিনটা আমার জন্মদিন । সালটা ২০০২, তখন মাত্র ক্লাস এইটে পড়ি। বাবা'র একটা নীল রঙের শার্ট পড়ে, মগবাজার কাজি অফিসের গলি'র সামনে দাঁড়ানো। বন্ধুর সাথে দেখা করব। কিন্তু নার্ভাস। মানুষের এই বিষয়টা বড়ই বিচিত্র! দীর্ঘ দেড় বছর যাবত প্রতিনিয়ত ফোনালাপ চলে যার সাথে, তার সাথে দেখা করতে গেলে নার্ভাস লাগবে কেন? পৃথিবীর এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে আমরা কথা না বলি! কথা বলা শুরু করার ২ দিনের মাথায় আমি ফোনে বললাম, এই তুমি কি FANTA এর মানে জান?
ফোনের ওপাশ থেকেঃ না তো?
আমি বললামঃ Fuck And Never Try Again
এই শুনে দু'জনে হাসতে হাসতে হেঁচকি তোলা শুরু করলাম। এখন বিষয়টা এতটা মজার মনে না হলেও, ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলে এবং ক্লাস এইটে পড়া মেয়ের কাছে তখনকার সময়ে এর চেয়ে ভয়াবয় কোন হাসির কথা হতে পারে না।
ও বলতে ভুলে গেছিলাম। আমার বন্ধু, আমার থেকে এক বছর বড়। এক্সাকটলি বলতে গেলে, ১৩ মাসের বড়। বন্ধুত্ব তো আর বয়স দেখে হয় না। আমি একটা মানুষের সাথে কতটা কমফোরট সব বিষয় শেয়ার করতে সেটা বড় ব্যাপার। ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব চিঠি লিখে। আহা! সোনালি সে যুগ! আমার তো এখনও চিঠি লিখে প্রেম করতে মন চায়। একটা চিঠিতে যে কতটা আবেগ, সময় আর ভালবাসা মিশে থাকে, তা আসলে এখনকার ফেসবুকের ইনবক্সড মেসেজে থাকে না। ও ছিল আমার বন্ধুর কলিগের মেয়ে। বন্ধুর সুত্রে পরিচয়। বয়েজ স্কুলে পড়তাম তাই মেয়েদের সাথে কথা বলার ফ্যানটাসি ছিল অনেক। আমিই চিঠি দিতাম প্রথমে। ও আমাকে কখনও চিঠি পাঠাত না। আমার বাসায় অনেক কঠোর নিয়ম কানুন ছিল। সেই কঠোর নিয়মের মাঝে যদি আবার একটা মেয়ে আমাকে চিঠি পাঠায়! বাবা তাহলে যে কি ভাববেন বা বলবেন, সেই ভয়েই আমি সব সময় আমাকে চিঠি পাঠাতে মানা করতাম। একটা, দুইটা চিঠি তারপর একটা দু'টা দুই তিন মিনিটের ফোন কল। আস্তে আস্তে আমরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে যাই। তখন দুই তিন মিনিটে আর ফোন কল শেষ হত না। দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা হয়ে যেত। নিয়মিত বাসায় ফোন এনগেজ রাখার জন্য বকা খেতাম। একদিন তো বাবা বাসার সবাইকে ডাকলেন।
বললেন, একটা কথা তোমাদের বলা উচিৎ। এবার আমার মোবাইলে এসএমএস এর বিল এসেছে ৩৪১ টাকা। সেটা বিষয় না, মোবাইল ইউজ করলে বিল আসবেই। বিষয়টা হল আমি এসএমএস ই পাঠাতে পারি না!!
বলাই বাহুল্য সব কয়টা এসএমএস ই আমার পাঠানো ছিল, তাও আবার একই নাম্বারে। যাই হোক এই রকম একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে আর যাই লাগুক নিশ্চিত নার্ভাস লাগার কথা না। কিন্তু লাগছিল। যাই হোক ম্যাডাম বের হলেন। কাজি অফিস গলিতে ছিল তার স্যারের বাসা। স্যারের নাম ও অনেক অদ্ভুত, অপরেশ! ম্যাডামের আমার সাথে প্রথম কথা ছিল,
ম্যাডামঃ এইখানে কোন কথা বইল না!
বলেই তিনি হাটা শুরু করলেন। আমি ও পিছে পিছে হাটতে লাগলাম। প্রথম যে কথাটা মনে হল, সেটা হল মাথায় তো পুরা কাকের বাসা! নো অফেন্স! তখন কোঁকড়া চুল আমার একদমই পছন্দ ছিল না। তখন শীতকাল ছিল কিনা আমার মনে নেই। কিন্ত ম্যাডামের ফুল স্লিভ জামা, ভ্যাসলিন দেয়া ঠোঁট আর গোল গোল চশমার কথা মনে আছে। গাড়ির কাছে গিয়ে ম্যাডাম ঘুরলেন। হাত নাড়লেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ঠিক সামনা সামনি প্রথম কথা কি বলেছিলাম। খুব ই হাস্যকর। ম্যাডামের সাথে আমার প্রথম সামনা সামনি বলা কথা হল 'আসসালামু আলাইকুম'!! ম্যাডাম ঠোঁট বাঁকা করে সালামের জবাব দিলেন। বাহ! ঠোঁট বাঁকা করে কথা বলা মানুষকে তো বেশ ভাল লাগে। এরপর আর কোন কথা হয়নি।ম্যাডাম গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। আমি রিকশা নিয়ে বাসায় আসলাম।
©somewhere in net ltd.