নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জনগণের কন্ঠ

i want to say ... .. .

জনগণের কন্ঠ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবিশ্বাস্য বেঁচে থাকার গল্প!

১২ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩

অলৌকিক বলা হলেও প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষের জন্য নতুন কিছু নয়। এরপরও অনেক বেঁচে থাকাই অবিশ্বাস্য লাগে। চারদিক অন্ধকার। আলো নেই, বাতাস নেই। খাবার তো দূরে থাকুক- অক্সিজেন আর পানিরও অভাব। এরপরও অফুরন্ত প্রাণশক্তি আর বেঁচে থাকার অদম্য বাসনা থাকলে বেঁচে থাকা যায়। এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব বেশি না ঘটলেও একেবারে বিরল নয়। সাভারে অকস্মাৎ ধসে পড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘটনার ১৭ দিনের মাথায় উদ্ধার করা রেশমা বেগম সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। এমন পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ইতিহাসে মাত্র দুইজন এমনভাবে বেঁচে ছিলেন। এরকম কিছু অবিশ্বাস্য বেঁচে থাকার গল্প।





নাকশা বিবি



দেশ: পাকিস্তান

দুর্ঘটনা: ভূমিকম্প

খাবার: পচা খাবার, পানি



ঘটনা খুব বেশিদিনের পুরনো নয়। ২০০৫ সালের ঘটনা। পাকিস্তানে আঘাত হানে ভয়াবহ ভূমিকম্প। আর এই ভূমিকম্পের আঘাতে দুমড়ে-মুচড়ে ধসে পড়ে বাড়ি-ঘরসহ নানা স্থাপনা। আর এই ভূমিকম্পের কবল থেকে রেহাই পায়নি ভূ-স্বর্গখ্যাত কাশ্মীরও। কিন্তু কে জানত ভূমিকম্পের এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর আরও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল সবার জন্য! ভূমিকম্পে নিখোঁজ নানা জনের মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া গেলেও ৪০ বছরের এক নারীর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। এতদিন পর ওই মহিলার বেঁচে থাকার কথা কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। কিন্তু সবার কল্পনাশক্তিকে ভুল প্রমাণ করে বাস্তবেই জীবিত ফিরলেন ওই মহিলা। ঘটনার ৬০ দিন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের নিচে একটি রান্নাঘরে আটকে ছিলেন তিনি। ঘরটিতে জায়গা এতই স্বল্প



যে, নড়াচড়ার কোনো উপায়ই ছিল না। এরপরও অকৃত্রিম চেষ্টা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ওই নারী বেঁচেছিলেন। তার নাম নাকশা বিবি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন প্রতিকূল পরিবেশ দীর্ঘদিন কাটানোর পর বেঁচে আসাদের তালিকায় সবার উপরে তাই তার নাম। যে রান্নাঘরটিতে নাকশা বিবি আটকে পড়েছিলেন সেখানে নড়াচড়ার মতো উপায় না থাকলেও বাইরে থেকে সামান্য অঙ্জিনে সরবরাহ হচ্ছিল। সবচেয়ে বড় বিষয় ভূমিকম্পে নাকশা বিবি কোনো আঘাত পাননি। আর ভাগ্য আরও ভালো ছিল এ জন্য যে, আটকেপড়া ঘরটি ছিল একটি রান্নাঘর। বাইরে থেকে ঢোকা সামান্য অঙ্েিজনের সহযোগিতায় কাটল কয়েক ঘণ্টা। ক্ষুধা লাগতেই ঘরে রাখা খাবারের খানিকটা খেলেন। এরপর খানিকটা পানি। অনেক চিৎকার-চেঁচামেচির পরও কেউ আসেনি তাকে উদ্ধার করতে। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। একেকটি দিনকে একেকটি মাস মনে হতো। একসময় পচে যাওয়া খাবার খেতে লাগলেন। পানিও আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছিল। তবু মনের ভেতর আশা নিয়ে চালিয়ে গেছেন যুদ্ধ। অবশেষে আবর্জনার জঞ্জাল সরাতে গিয়ে নাকশা বিবিকে অবিশ্বাস্যভাবে উদ্ধার করা হয়।





ইভানস মোনসিগনাক

দেশ: হাইতি

দুর্ঘটনা: ভূমিকম্প

খাবার: মলমূত্রমিশ্রিত পানি



এবারের ঘটনাটিও বিস্ময়কর। একনাগাড়ে ২৭ দিন ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে পড়েও জীবিত উদ্ধার হন ইভানস মোনসিগনাক। তিনি অবশ্য আমাদের এই উপমহাদেশের বাসিন্দা নন। তিনি একজন আফ্রিকান। ঘটনাটি ২০১০ সালের। সে বছর ১২ জানুয়ারি হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেশটিকে এলোমেলো করে দেয়। রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার সেই ভূমিকম্পে পোর্ট অব প্রিন্স শহরটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। স্মরণকালের ভয়াবহতম সেই ভূমিকম্পে প্রাণ হারান অন্তত দেড় লাখ মানুষ। ভূমিকম্পের ১১ দিনের মাথায় উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। এর আগেই ৫ দিনের মাথায় উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘ। কিন্তু কে জানত এমন মৃত্যুগহ্বরের মাঝখান থেকেও কেউ একজন মাথা তুলে দাঁড়াবেন প্রায় এক মাসের মাথায়। অবিশ্বাস্য সেই ঘটনাটিই ঘটেছে ইভানস মোনসিগনাকের বেলায়। হাইতি ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে ২৭ দিন পর্যন্ত আটকেছিলেন ইভানস। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা এরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে জীবিত থাকার ক্ষেত্রে এটি বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দুই সন্তানের বাবা ইভানসের এই জীবিত থাকা সারা বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের একটি ধংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে। ইভানস যে স্থানটিতে আটকে পড়েছিলেন, তার ঠিক নিচ দিয়ে বয়ে গিয়েছিল নর্দমার মলমূত্রমিশ্রিত পানি। একসময় এটিই হয়ে ওঠে ইভান্সের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ইভান্স সেই নর্দমার পানি আর ইট-পাথরের টুকরো খেয়ে বেঁচেছিলেন। পত্রিকায় দেওয়া বর্ণনায় ইভানস বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম মারা গেছি। দুই অথবা তিন দিনের মাথায় বুঝতে পারলাম যে না, এখনো বেঁচে আছি। তখন ওই নদর্মার পানি চোখে পড়ে। অনেক ক্ষুধার্ত আর তৃষ্ণার্ত লাগছিল। নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির ধারা থেকে পানি খাওয়ার চেষ্টা করলাম। সঙ্গে সঙ্গেই পেট গুলিয়ে উঠল। পরে শুধু এক আঙ্গুল চুবিয়ে ঠোঁট ভেজাতাম আর জিহ্বার ওপর দিয়ে অনেক কষ্টে গলধঃকরণ করতাম। দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম।'





পার্ক সিউইং হিউন



দেশ: দক্ষিণ কোরিয়া

দুর্ঘটনা: ভবন ধস

খাবার: বৃষ্টির পানি



ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ভবন ধসের ঘটনাটি ছিল সন্ত্রাসী হামলা। আর সাধারণভাবে ভবন ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশের সাভারে। এর আগ পর্যন্ত হতাহতের দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ায় স্যামপং স্টোর ধসে পড়ার ঘটনাটি। ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে একদিন হঠাৎ করেই ধসে পড়ে একটি বহুতল শপিং কমপ্লেঙ্। এই ঘটনায় প্রায় ৬০০ মানুষ নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে। আর সেই সঙ্গে অসংখ্য মানুষ চাপা পড়েন ভবনের ধংসস্তূপের নিচে। এই ধ্বংসস্তূপে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে চাপা পড়েন পার্ক সিউইং হিউন নামের এক কোরিয়ান নারী। সাধারণত চার-পাঁচদিন পর্যন্ত জীবিত প্রাণের সন্ধানে উদ্ধারকাজ চালানো হয়। কারণ বিজ্ঞান ও মেডিকেল শাস্ত্রমতে, এমন প্রতিকূল পরিবেশে ৭২ ঘণ্টার বেশি বেঁচে থাকা কঠিন। কিন্তু কখনো কখনো ভাগ্যের জোর, আর অদম্য প্রাণশক্তি ঠিকই পাল্টে দেয় সব ধারণা। ঠিক এমনটিই ঘটে পার্ক সিউইং হিউনের সঙ্গে। ভবনটি ধসেপড়ার ১৬ দিন পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় তাকে। ভাগ্যবান এই নারী কেবল বৃষ্টির পানি পান করে এতগুলো দিন বেঁচেছিলেন। একটা সময় বাঁচার আশা ছেড়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আর এতেই তৈরি হলো ইতিহাস।





রেশমা বেগম



দেশ : বাংলাদেশ

দুর্ঘটনা : ভবন ধস

খাবার : পানি



রাজনৈতিক অস্থিরতা-হরতাল অবরোধ আর প্রকৃতির নির্মম পরিহাসে দেশের মানুষ যখন ক্লান্ত, তখনই বেঁচে থাকার বার্তা নিয়ে মৃত্যুকে জয় করে ফিরে এলেন রেশমা বেগম। সাভারে ধসেপড়া রানা প্লাজা থেকে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর মিছিলেও রয়েছে হাজার খানেক মানুষ। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন এখনো। এত সব দুশ্চিন্তা আর দুঃসংবাদকে পেছনে ফেলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিনের মাথায় জীবিত উদ্ধার হন রেশমা। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা এরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে জীবিত থাকার ক্ষেত্রে রেশমার এই বেঁচে থাকা বর্তমানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তার চেয়ে বেশি সময় আটকে থাকার অভিজ্ঞতা কেবল দুজন মানুষেরই রয়েছে।



ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া রেশমার প্রাণ বাঁচিয়েছে পানি। ধংসস্তূপের নিচে ৪১৬ ঘণ্টা আটকে ছিলেন রেশমা। সঙ্গে থাকা যৎসামান্য শুকনা খাবার ফুরিয়ে যায় অনেক আগেই। এরপর কেবল পানি পানেই বেঁচে ছিলেন রেশমা। উদ্ধারকর্মীরা ওপর থেকে নানা সময়ে বোতলজাত পানি বিভিন্ন সময় ফুটো দিয়ে ভেতরে পাঠাতেন। সেখান থেকে কয়েক বোতল পানি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। পরে সেই পানি অল্প অল্প করে খেয়ে বেঁচেছিলেন।



চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেশমা বলেন, পানি খেয়ে বেঁচেছিলাম। ভবন ধসের পরপরই ভবনের নিচে আটকা পড়ি। সংরক্ষণ করা পানি একসময় শেষ হয়ে যায়। এরপর মাঝে মাঝে বিভিন্ন ফুটো থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ত। এসব খেয়েই বেঁচেছিলাম। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম। শেষের দুই দিন পানিও শেষ হয়ে যাওয়ায় কিছুই খাওয়া হয়নি। অনেক চেষ্টা করেছি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। কিন্তু কারও কাছেই আমার কথা পেঁৗছাতে পারিনি। সাভারে বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ার ৪১৬ ঘণ্টা পর শুক্রবার বিকালে রেশমা আক্তারকে (১৯) জীবিত উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা।



রেশমার এই বেঁচে থাকা এত বড় মর্মান্তিক ঘটনার পরও মানুষের চোখে এনে দিয়েছে আনন্দাশ্রু। কেউ ভাবেনি এমন করে ঘটনার ১৭ দিন পর কেউ জীবিত ফিরবে। রেশমার এই অলৌকিক প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্বজুড়েই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বলা হচ্ছে, মানুষের অদম্য প্রাণশক্তির কাছে অনেক প্রতিকূলতাই শেষ পর্যন্ত আর ধোপে টেকে না। আর রেশমাই তার সর্বশেষ জ্বলন্ত প্রমাণ।















তথ্যসুত্র : এখানে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.