নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গ বাংলা বাঙালি

বাংলার ভূমিপুত্র

দেশের সাধারন মানুষ

বাংলার ভূমিপুত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) ৬ষ্ঠ পর্ব

১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:১৩

আদি বাংলার ইতিহাস

(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) ৬ষ্ঠ পর্ব



বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ক্রমবিকাশ

টারশিয়ারি সময়কালের তৃতীয় পর্যায়ে ভূতাত্ত্বিকভাবে অপেক্ষাকৃত নবীন এবং পৃথিবীর এই বৃহত্তম বঙ্গ বদ্বীপের গঠন শুরু হয় আজ হতে প্রায় পৌনে চার কোটি বছর পূর্বে ওলিগোসিন (Oligocene) যুগে এবং সে সময় হতেই এই বদ্বীপ ক্রমাগতভাবে দক্ষিণে বেড়ে চলে এবং বর্তমানেও এই বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই বদ্বীপের উদ্ভবের পূর্বে পূর্ববর্তী ইয়োসিন (Eocene) যুগে অর্থাৎ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছর পূর্বে সমগ্র বাংলাদেশ উন্মুক্ত সাগরতলে নিমজ্জিত ছিল এবং সে সময় সাগরের তলদেশে চুনাপাথরের (Limestone) শিলাস্তর জমা হয়। সেই চুনাপাথরের স্তরই সম্ভবত বাংলাদেশ ভূখণ্ডে উন্মুক্ত সাগরের শেষ চিহ্ন বহন করে। বর্তমানে এই চুনাপাথরের স্তরটি সিলেটের উত্তর সীমান্ত এলাকায় এবং বগুড়া এলাকায় ভূগর্ভে স্বল্প গভীরতায় পাওয়া যায়। ইয়োসিন যুগ শেষ হবার পর ওলিগোসিন যুগ হতে (পৌনে চার কোটি বছর পূর্বে) বঙ্গভূমিতে যে বদ্বীপ গঠন শুরু হয় তার সাথে সাথে বদ্বীপ অঞ্চল μমাগতভাবে নিচে তলিয়ে যেতে থাকে। অবশ্য এই তলিয়ে যাবার হার বাংলাদেশের পূর্ব এবং দক্ষিণপূর্ব এলাকায় তুলনামূলকভাবে উত্তর ও উত্তরপশ্চিম এলাকা হতে অনেক বেশি ছিল এবং এই কারণে বঙ্গ বদ্বীপের প্রধান বৃদ্ধি বা প্রসার ঘটে বাংলাদেশের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা বরাবর। এই শেষোক্ত অঞ্চলের তলিয়ে যাবার হার কোনো কোনো স্থানে প্রতি বছর সর্বোচ্চ পাঁচ মিলিমিটার ছিল। এভাবে বাংলাদেশের ভূগর্ভে বিশাল পুরুত্বের পাললিক শিলার স্তর জমা হয়। ভূকম্পন জরিপ পর্যবেক্ষণে জানা যায় যে, বাংলাদেশের ভূগর্ভে সর্বোচ্চ প্রায় ২০,০০০ মিটার পুরু পাললিক শিলার স্তর রয়েছে যা মূলত বদ্বীপ পরিবেশে সৃষ্ট বেলেপাথর এবং কাদাশিলা দ্বারা গঠিত। ৬



ওয়েগনারের (Wagener) মতে, টারশিয়ারি যুগের প্র ম পর্যায়, পেলিওজোয়িক (Palaeozoic) সময়ে প্রায় তিনশ মিলিয়ন বছর পূর্বে, সারা দুনিয়া প্যানগিয়া (Pangea) নামক প্রায় অবিচ্ছিনড়ব একক মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ সময়ে বৃহত্তর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরকিা, এন্টার্কটিকা এবং আফ্রিকা একসাথে যুক্ত ছিল যা দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের গন্ডোয়ানা রাজ্যের নামানুসারে গন্ডোয়ানা (Gondwana land) ভূভাগ নামে পরিচিত। প্রায় ১৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বৃহত্তর ভারত সম্মিলিত গন্ডোয়ানা ভূভাগ হতে উত্তর দিকে সরতে আরম্ভ করে, যার ফলে বদ্বীপ বেসিন গঠনের সূত্রপাত হয়।



সে সময়ে বর্তমান হিমালয় এলাকা টেথিস সমুদ্রের (tethys sea) অংশ ছিল। ক্রিটেসাস যুগে, প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে, ভারতীয় শিল্ড আরো উত্তর দিকে সরে ইউরেশিয়া প্লেটের (Eurasia plate) সাথে থাক্কা খায়। ফলে বঙ্গোপসাগরের উত্তর সীমানায় আসাম ও বার্মা উপসাগরের সৃষ্টি হয়। সে সময়ে আসাম উপসাগর বর্তমান বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ এলাকা (বর্তমান শিলং ম্যাসিফ ও রংপুর প্লাটফরম এলাকা ব্যতিরেকে) জুড়ে বিস্তৃত ছিল। পলিওসিন সময়ের শেষভাগে (Late Paleocene) প্রায় ৫৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে ভারতীয় শিল্ড ইউরেশিয়া প্লেটের সাথে দ্বিতীয়বার ধাক্কা খাওয়ার ফলে চুনাপাথর জমার মধ্য দিয়ে সমুদ্রসীমার উত্তরদিকের বিস্তার সীমিত হয়ে আসে। প্রাথমিক মায়োসিন (Early Miocene) সময়ের প্র মভাগে, প্রায় ২৮-১৭ মিলিয়ন বছর পূবের্, তৃতীয়বার ভারতীয় প্লেট ইউরেশিয়া প্লেটের সাথে ধাক্কা খায়। যার ফলে হিমালয় পর্বতের অভ্যুদয় হয়ে টেথিস সাগরের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে এবং পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলে পলি জমার সূত্রপাত হয়। এ সময়ে চট্টগ্রাম-ত্রিপুরা-সিলেট ও আসাম এলাকায় ভাঁজের সৃষ্টি হয়। ফলে বর্তমানের আন্তঃসাগরীয় বেঙ্গল ফ্যান ও গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সূত্রপাত হয়। ভারতীয় প্লেটের ইউরেশিয়া প্লেটের সাথে আরো দুটি সংঘর্ষ হয়, যা ছিল মূলত ঊর্ধ্বগতির পরিবর্তন, যার ফলে হিমালয় পর্বতের উচ্চতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্র মোক্তটির ফল সম্ভবত শিলং মালভূমি ও মিকির পাহাড় এবং রংপুর প্লাটফরম-অবভূমির (Rangpur Saddle) সৃষ্টি। শেষ পরিবর্তন হয় প্লায়োসটোসিন (Pleistocene) সময়ে, যার ফলে মধুপুর-বরেন্দ্র চত্বর ভূমির সৃষ্টি হয়। বর্তমানেও হিমালয় পর্বতমালার উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।৭



এই পৃথিবীর ভূমিগঠন একই সময় বা একইভাবে হয়নি। আবার ভূমির পরিবর্তনও একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া যা আজও চলছে। ভূমিগঠন ও পরিবর্তনের দীর্ঘ সময়কে, বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে, দু’পদ্ধতিতে প্রকাশ করা যায়। প্রথম পদ্ধতিটি হলো শিলার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সময় নির্ণয় করা এবং দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো শিলার গঠনের প্রক্রিয়াকালের উপর নির্ভর করে সময় নির্ণয় করা। এছাড়াও ভূ-গঠনের সময়কালকে আরো অনেক পদ্ধতিতে প্রকাশ করার মতবাদ আছে; কিন্তু বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ হেবার্ট শেঙ্ক (Hebert Schenk), সিমন ম্যুলার (Siemon Muller), এইচ ডি হেডবার্গ (H.D. Hedberg) এবং রবার্ট ক্লাইনপেল (Robert Kleinpell) নিন্মে বর্ণিত সময়-ছকে সময়কালকে বিন্যস্ত করেছেন।

৫ B.C. Mandal: The structural and tectonic analysis of Eastern Fold Belt (Bengal Besin).

৬ বিধানচন্দ্র মন্ডল ও আসম উবাইদ উল্লাহ-ভূগঠন বিদ্যা।

7 J.R. Curry and D.G. Moor: Sedimentary Tectonic Process in the Bengal Deep

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) ৫ম পর্ব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.