নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গ বাংলা বাঙালি

বাংলার ভূমিপুত্র

দেশের সাধারন মানুষ

বাংলার ভূমিপুত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্ব১০

২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২৭

আদি বাংলার ইতিহাস

(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) ১১শ পর্ব।

কোয়াটারনারির শেষ যুগে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবঃ





গত হিমযুগের শেষে অর্থাৎ প্রায় ১৮ হাজার বছর আগে হিমক্রিয়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।১১ সমুদ্রের পানি বরফ আকারে স্থলভাগে জমা হওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ সর্বনিমড়ব অবস্থানে পৌঁছে যায়। আর এ অবস্থান বর্তমান সমুদ্রপৃষ্ঠ অপেক্ষা প্রায় ১০০ থেকে ১৩০ মিটার নিচে ছিল। ভারত উপমহাদেশে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের ইতিহাস থেকে এটাই পরিলক্ষিত হয় যে, ২২ হাজার থেকে ১৫ হাজার বছর আগে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রাধান্য লাভ করে। স্থলভাগের উপর দিয়ে এ বায়ু আসত বলে খুব কমই বৃষ্টিপাত ঘটাতো। ফলে, বাংলাদেশের উপরে প্রবাহিত নদীগুলো ছিল খুবই সংকীর্ণ এবং ঐ সকল নদী



দিয়ে শুধু বরফ গলা পানিই সাগরের দিকে প্রবাহিত হতো। তখনকার সমুদ্রপৃষ্ঠ এখনকার চেয়ে ১০০ মিটারের মতো নিচে থাকায় নদীগুলো বাংলা বেসিনে গভীর খাদ সৃষ্টি করেছিল। ১৫ হাজার বছরের পর থেকেই মৌসুমি বায়ুর গতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে এবং ১২ হাজার বছরের আগেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রাধান্য বিস্তার করে এবং প্রবল

বৃষ্টিপাত ঘটায়। সেকালের বৃষ্টিপাতের মাত্রা এখনকার তুলনায় অনেক বেশি ছিল। পৃথিবীর আবহাওয়া সে সময়ে বেশ গরম হয়ে উঠে এবং স্থলভাগের বরফ গলতে শুরু করে। হিমালয়ের বরফও দ্রুত গলতে শুরু করে। হিমালয়ের এই দ্রুত বরফ গলা পানি এবং মৌসুমি বায়ুর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পানি একযোগে প্রচণ্ড বেগে বাংলা বেসিনের ঐ সকল সংকীর্ণ নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত পানি ঐ সকল ক্ষীণ নদী ধারণ করতে পারে না; নদীগুলো কানায় কানায় ভরে উঠে এবং পার্শ্ববর্তী প্লাবনভূমিতে উপচে পড়ে। বরফ গলা পানি ও মৌসুমি বায়ুর তীব্র মাত্রার এ প্রবল ঢল বাংলা বেসিনের উপর দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হতে থাকলে লালমাটির প্লাবনভূমির নিচু এলাকা বিশাল নদীতে রূপান্তরিত হয়। উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বি ভূখণ্ডগুলো উত্তর-দক্ষিণ স্রোতধারাই নির্দেশ করে। এ সকল ভূখণ্ডের পার্শ্বে প্রবল স্রোতের আবর্ত তৈরি করে বিরাট গভীর খাদ।১২



হিমালয়ের পাদদেশে হিমযুগে জমে উঠা মোরেন ও টিল (হিমকর্দ) প্রবল স্রোতের টানে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হতে থাকে। স্রোতের প্রবল টানে দক্ষিণে বহুদূর পর্যন্ত নদীতল দিয়ে গড়াতে গড়াতে আসে। দহগ্রাম থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত বিশাল এলাকায় জমে উঠে মোটা বালি ও নুড়িপাথরের অসংখ্য বিশাল স্তর যাকে আমরা বলি পঞ্চগড় নুড়িপাথরের স্তর। ১৩

নদীর প্রবল স্রোতের টানে দু’কূল ভেঙ্গে গাছপালা নিমজ্জিত হয় নদীগর্ভে। তাই ঐ সময়ের বালি ও নুড়িপাথরের স্তরে এবং তৎকালীন অবক্ষেপের মধ্যে পাওয়া যায় বিরাট কাষ্ঠখণ্ড বা আস্ত গাছ। কার্বন-১৪ পদ্ধতিতে নির্ণীত এ সকল গাছের বয়স হলোসিন সময় নির্দেশ করে। ঠাণ্ডা থেকে উষ্ণ আবহাওয়ার এ রূপান্তরে সাগরপৃষ্ঠ দ্রুত উপরে উঠতে থাকে। ফলে বাংলা বেসিনের উপরে প্রবাহিত নদীর স্রোতের গতিতে বিরাট পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ উপরে উঠায় খরস্রোতা নদী হয়ে উঠে মন্থর বা ধীরগতিসম্পন্ন। নদী উপত্যকা ও প্লাবন ভূমির ক্ষয়িত অংশগুলো ভরে ওঠে নতুন নতুন তলানি দ্বারা। এই পরিবর্তিত আবহাওয়ায় লালমাটির ক্ষয়িত অংশে বা ক্ষয়িত তলে জমে উঠা নব অবক্ষেপই হলো হলোসিন শ্রেণী (বাসাবো, রহনপুর,চলনবিল, বোয়ালমারি সংঘসমূহ)।



সমুদ্রপৃষ্ঠ উপরে উঠতে উঠতে প্রায় ৫,৫০০ বছর আগে এখনকার সমুদ্রপৃষ্ঠ অপেক্ষা প্রায় এক থেকে দেড় মিটার উপরে উঠে। এ সময়েও মৌসুমি বায়ুর আরো একবার অতিবৃষ্টির যুগ চলতে থাকে। উত্তরের ঢলগড়া স্বাদুপানি দিয়ে ভরে উঠে নদী এবং নদীর মোহনা। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ উপরে উঠলেও বাংলা প্লাবনভূমির নিমড়ব দক্ষিণাঞ্চলে স্বাদুপানির চাপে লবণাক্ত পানি উত্তরে বেশি দূর পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারেনি। বাংলা বেসিনের ক্ষয়িত এলাকা নব তলানি দিয়ে ভরাট হলেও নব অবক্ষেপের উপরের পৃষ্ঠ লালমাটির উপরের তল পর্যন্ত সমান হতে পারেনি। ফলে বরেন্দ্র ও মধুপুর এলাকার লালমাটির ভূখণ্ডগুলো পার্শ্ববর্তী প্লাবনভূমি অপেক্ষা উঁচু থেকে যায়।



চলনবিল এলাকা বর্তমান সাগরপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১০ মিটার উপরে। হলোসিন অবক্ষেপের নিচের তল অর্থাৎ বরেন্দ্র সংঘের উপরের তলের হাজার বছর আগে সাগরপৃষ্ঠে দেড় মিটার উপরে উঠলেও ক্ষয়িত তল তৎকালীন সমুদ্রপৃষ্ঠ অপেক্ষা আড়াই মিটার উঁচুতে ছিল। তাই ৬ হাজার বছর আগেও চলনবিল এলাকায় ক্ষয়সাধন হয়েছে। সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগের

সমুদ্রপৃষ্ঠ বর্তমান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় মিটার উপরে উঠায় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত সৈকত থেকে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত সাগর জলে প্লাবিত হয়েছিল। উন্মুক্ত সাগরের প্রচণ্ড ঢেউ আঘাত করত খাড়া পাহাড়গুলোকে। কক্সবাজারের পূর্বদিকের এলাকা সে সময়ে সাগরের জলে প্লাবিত হয়েছিল। সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপগুলো সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যায়। মহেশখালি দ্বীপের পশ্চিমাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমুদ্রসৈকত পূর্বে অগ্রসর হতে থাকে।



১০ বিধানচন্দ্র মন্ডল ও আসম উবাইদ উল্লাহ-ভূগঠন বিদ্যা।

১১ মোঃ হোসেন মনসুর: কোয়াটারনারি এবং বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ক্রম বিকাশ।

১২ মোঃ হোসেন মনসুর: কোয়াটারনারি এবং বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ক্রমবিকাশ।

১৩ বকর, এম এ- Geological Survey of Bangladesh

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্ব ৯

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৪৭

বাংলার হাসান বলেছেন: ধারাবাহিক পোষ্ট দিয়ে অনেক ইতিহাস জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ২:৩১

বাংলার ভূমিপুত্র বলেছেন: একজন নিয়মিত পাঠক তাই আমি আরো উৎসাহিত বোধ করছি এই আশায় পাঠক সংখ্যা বাড়বে, আমি বিশ্বাস করি শেকড়ের খোজ সবাই জানতে চায়। আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে যাচ্ছি,,,,,,,ভীষণ দরকারী এবং সেইসাথে শিক্ষণীয়তো বটেই,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.