![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১১
সে সময়ের পর সমুদ্রপৃষ্ঠ নিচে নেমে বর্তমান অবস্থানে এলে পুরানো সৈকতরেখা ও নতুন সৈকত রেখার মাঝে একটি লবণবিল বোকাবিলের খাড়া পাহাড়ের সামনে বেশি প্রশস্ত। কারণ বোকাবিল পাহাড় ক্ষয় হয়ে যে বিরাট কংকর বা গোল পাথর রেখে যেত তা’ সমুদ্রপৃষ্ঠ নিচে নামার সময় সৈকতকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করত। ইনানী এলাকার সৈকত তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
টিপামের পাহাড়ি সৈকতে এমন গোল পাথর বা বিরাট কংকর না থাকায় হিমছড়িতে এখনও ঢেউয়ের ফলে পাহাড় ক্ষয় হয়ে সমুদ্রগর্ভে চলে যাচ্ছে। এ সকল বিরাট কংকর আধিক্য অবশ্য পুরা নদীতল নির্দেশ করে। দুপাড় থেকে গড়িয়ে পড়া বিরাট কংকর নদীতলে জমা হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে সাগরের ক্ষয়সাধনে সকল বালিকণা সাগরগর্ভে চলে যাওয়ায় শুধু
কংকরগুলোই রয়ে গেছে। হলোসিন সাগরপৃষ্ঠ নিচে নামায় মহেশখালি দ্বীপের পশ্চিমাংশে তৈরি হয়েছে বিশাল লবণবিল। পুরা সৈকত লাইনের পূর্বাংশে আগের পাহাড়িয়া ভূমিরূপ রয়েই গেছে।১৪
হলোসিন কালে সাগরপৃষ্ঠ বর্তমানের চেয়ে উপরে উঠায় বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠেছে অনেক দ্বীপপুঞ্জ যাদের উপরের তল তখনও উচ্চ জোয়ারের নিচে ছিল। হলোসিন সময়ে অর্থাৎ প্রায় ৫,৫০০ বছর পূর্ব থেকে সাগরপৃষ্ঠ নিচে নেমে বর্তমান অবস্থানে আসায় ঐ সকল নিমজ্জিত দ্বীপ জেগে উঠে। হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ ইত্যাদি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।১৫
গত পাঁচ হাজার বছরে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনঃ
গত ৫ হাজার বছরে বাংলাদেশের আয়তন শুধু বৃদ্ধি হয়নি, ভূমিস্তরের অনেক পরিবর্তনও হয়েছে। তাছাড়া, নদ-নদীর অবস্থান ও স্থলভাগের গঠন মাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। ৫ হাজার বছর পূর্বে বাংলাদেশের আয়তন কত বড় ছিল এ বিষয়ে ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা থেকে আমরা কিছু ইঙ্গিত পেতে পারি। ভূ-জরিপ থেকে জানা যায় যে, ১২ হাজার বছর পূর্বের মতো অত্যোধিক পলিবাহিত স্রোত না থাকলেও পলিবাহিত স্রোত এখনও আছে এবং কোনো কোনো অংশ পললায়নের ফলে একদিকে যেমন নিত্য নতুন ভূ-পৃষ্ঠ জেগে উঠছে তেমনি নদীনালা খালবিল হাওড়-বাওড়গুলিও ক্রমাগত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে পললায়নের গভীরতা প্রায় ২০,০০০ মিটার পর্যন্ত পাওয়া যায়। কাজেই এ কথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, ৫ হাজার বছর পূর্বে নিশ্চয়
বাংলাদেশের বর্তমান আকার আয়তন ছিল না। প্রতি বছর নদীর মাধ্যমে প্রায় ১৩৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে যাচ্ছে এবং এই পানির সঙ্গে ২.৫ মিলিয়ন টন পলি যাচ্ছে।১৬ এই পলির আয়তন প্রায় ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট অর্থাৎ এই পরিমাণ স্থান সাগরে এবং লোকালয়ে ভরাট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করেন যে, গত ৫ হাজার বছরে কম করে হলেও ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা এই পলির দ্বারা ভরাট হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে এসে গেছে এবং কিছু কিছু জায়গা, যেমন, নোয়াখালি, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি জেলার দক্ষিণ অঞ্চল ইতোমধ্যে এই সময়ে জেগে উঠে মানব বসতির স্থান করে দিয়েছে। তবে, সম্ভবত সুন্দরবন অঞ্চল এই পলির ভাগ তেমন পায়নি। তাছাড়া এই অঞ্চলের অবনমন এখনও বন্ধ হয়নি। এক কথায় হলোসিন যুগের প্রাকৃতিক ক্রিয়াকাণ্ড এবং বাংলাদেশের ভূ-গঠন একইভাবে সমানে চলছে।
সম্ভবত তখন সমুদ্র সমতলের উপর ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু ভূমি সবই বর্ষায় তলিয়ে যেতো। মাত্র ৫০০ বছর পূর্বেও বাংলাদেশে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩০০-৩৫০ ইঞ্চি এবং বর্তমানেও গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০-২৫০ ইঞ্চি। এ কারণেই বোধ হয় হলোসিন যুগে গঠিত ভূমির উপর চাষবাস হলেও ৫০০০ বছর পূর্বেও সেখানে স্থায়ী মানব
বসতি গড়ে উঠেনি। তাছাড়া ভূমিস্তরের বিন্যাস এবং গঠন প্রকৃতি অনুসারে বাংলাদেশের ভূ-ভাগকে তিনটি প্রাকৃতিক ভূ-ভাগ হিসেবে দেখতে পাই। দেশের লালমাটি অঞ্চল সর্বপ্র ম গঠিত ভূভাগ যা মাইয়োপ্লাইয়োসিন যুগের সৃষ্টি বলে ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা। পরবর্তীকালে দেশের উচ্চভূমি প্লাইওস্টোসিন যুগে গঠিত বলে মনে করা হয়। এর পরে ভূমিস্তর, অর্থাৎ পলিগঠিত নিন্মভূমি হলোসিন যুগের শেষ দিকে গঠিত। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পৃথিবীর এই সর্ববৃহৎ ৬৫,০০০ বর্গমাইল বিস্তৃত বাংলা গত ১৩০০০ বছরে বর্তমান আকৃতি ধারণ করেছে। তবে ৫০০০ বছর পূর্বেই মানব বসতির ঐতিহাসিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
১৪ মোঃ হোসেন মনসুর: কোয়াটারনারি এবং বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ক্রমবিকাশ।
১৫ Hossain Mansoor: Holcene Sea-Level Changes Along the Maiskhali & Cox’s Bazar.
আগামী পর্বেঃ বাংলার ভূ—প্রকৃতি।
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্ব১০
©somewhere in net ltd.