নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গ বাংলা বাঙালি

বাংলার ভূমিপুত্র

দেশের সাধারন মানুষ

বাংলার ভূমিপুত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৫

১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ৩:১০

আদি বাংলার ইতিহাস

(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৫



যমুনা (নবীন ব্রহ্মপুত্র) প্লাবনভূমিঃ

১৭৮৭ সালে ব্রহ্মপুত্রে প্রবল বন্যায় নদীটি তার পুরাতন গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণমুখী ঝিনাই ও কোনাই নদী বরাবর প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং প্রশস্ত ও বিনুনি (braided) বৈশিষ্ট্যসম্পনড়ব যমুনা নামে পরিচিত হয়। ব্রহ্মপুত্রের এই গতি পরিবর্তন প্রক্রিয়া ১৮৩০ সাল নাগাদ সম্পন্ন হয়। বরেন্দ্রভূমি ও মধুপুর গড় এই দুটি প্লাইস্টোসিন চত্বরের উত্থানের ফলে মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে প্রশস্ত উপত্যকার (rift valley) সৃষ্টি হয়েছিল তার মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের নতুন প্রবাহ সংলগ্ন ভূ- প্রাকৃতিক অঞ্চলকে যমুনা প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত করেছে। যমুনা ও ধলেশ্বরী মিলিতভাবে যমুনা ধলেশ্বরী প্লাবনভূমি নামে একটি উপশ্রেণী গঠন করেছে। এই উপশ্রেণীর দক্ষিণাংশ একসময় গাঙ্গের প্লাবনভূমির অংশ ছিল। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং গঙ্গার প্রবাহ বরাবর বহু সংখ্যক দিয়ারা ও চর গড়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের অন্য যে কোনো নদীর চেয়ে যমুনা নদীতে চরের সংখ্যা অত্যধিক এবং বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত উভয় তীর প্রচুর সংখ্যক দিয়ারার উপস্থিতি দ্বারা বিভক্ত। চর এবং দিয়ারার মৃত্তিকা ও ভূমিরূপে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এ সকল পরিবৃদ্ধির সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম উত্থানের মধ্যকার পার্থক্য প্রায় ৫ কিলোমিটারের মতো। কিছু কিছু শৈলশিরা অগভীরভাবে প্লাবিত হলেও অধিকাংশ শৈলশিরা এবং প্লাবনভূমি অববাহিকাসমূহ বর্ষা মৌসুমে প্রায় চার মাসাধিককাল (মধ্য জুন থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত) ০.৯১ মিটারেরও অধিক গভীরতায় প্লাবিত হয়ে প্রচুর পলি সঞ্চয় করে। এই অঞ্চলটিও পুণ্ড্রভুক্তির অন্তর্গত ছিল বলে জানা যায়।



হাওড় অববাহিকাঃ

এই নিমড়বভূমির পশ্চিমে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, উত্তরে মেঘালয় মালভূমির পাদদেশ, পূর্বে সিলেটের উঁচু সমভূমি এবং দক্ষিণে পুরাতন মেঘনা মোহনায় প্লাবনভূমি দ্বারা বেষ্টিত। এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলটিকে সিলেট অববাহিকা নামেও অভিহিত করা হয়। অসংখ্য হ্রদ (বিল) ও বৃহদাকৃতির জলাশয় (হাওর) দ্বারা ৫,০২৫ বর্গকিলোমিটারের এই হাওড় এলাকা গঠিত। এই অবাহিকা অবনমনশীল এবং ভূতত্ত্ববিদের মতে এই অবনমন প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠভাবে মধুপুর গড়ের উত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিগত ২০০ বছরে এই এলাকা ৯ থেকে ১২ মিটার অবনমিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয় এবং বর্তমানেও তা সক্রিয় রয়েছে। এই অববাহিকা বর্ষাকালে গভীরভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। হাওড় অঞ্চলের পূর্বদিকের উচ্চভূমিকে স্থানীয়ভাবে টিলা বলা হয়ে থাকে, যথা-কৈলাস টিলা, ডুপি টিলা, এবং বিয়ানীবাজারের টিলাসমূহ সহ সিলেটের টিলাসমুহ সাধারণত প্লাইস্টোসিন যুগের কর্করীয় পলল (elastic sediments) দ্বারা গঠিত এবং এদের সর্বোচ্চ উচ্চতা গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০ মিটারের মতো। এ অঞ্চলে লোকবসতির ইতিহাস খুব প্রাচীন নয়। বিস্তীর্ণ নিন্মভূমির এলাকা হিসেবে এখানে চাষাবাদ প্রাচীনকালে হতো বলে জানা যায় না।



সুরমা-কুশিয়ারা প্লাবনভূমিঃ

সিলেট অববাহিকার পূর্ব অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীসমূহ দ্বারা গঠিত প্লাবনভূমি। মোট আয়তন প্রায় ৪,৮৬৫ বর্গকিলোমিটার। সিলেট অঞ্চলের নিকটবর্তী কিছু ক্ষুদ্র পাহাড় এবং পাদদেশীয় এলাকাসমূহ এই প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত। সাধারণভাবে সুপ্রশস্ত শৈলশিরা ও অববাহিকা দ্বারা গঠিত একটি সুষম গঠনবিশিষ্ট ভূমিরূপ। শৈলশিরা এলাকায় প্রধানত

ভারি পলিগঠিত এবং অববাহিকা এলাকায় কর্দমগঠিত। প্রাক-মৌসুমি বায়ু, মৌসুমি বায়ু এবং মৌসুমি বায়ু উত্তর- এই তিন সময়কালেই এই প্লাবনভূমিতে আকস্মিক বন্যা সংঘঠিত হয়ে থাকে এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে প্লাবন গভীরতার ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। স্বাভাবিক প্লাবনমাত্রা শৈলশিরাসমূহে প্রধানত অগভীর এবং অববাহিকা এলাকায় গভীর হলেও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।



মেঘনা প্লাবনভূমিঃ

জাবেদ কলিম ভূ-প্রকৃতির এই এককটিকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন: (ক) মধ্য মেঘনা প্লাবনভূমি, (খ) নন্মি মেঘনা প্লাবনভূমি, (গ) প্রাচীন মেঘনা প্লাবনভূমি, এবং (ঘ) নবীন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি।

মধ্য মেঘনা প্লাবনভূমি: মেঘনার মূল প্রবাহ থেকে ভৈরব বাজারের নিমড়বাঞ্চলে গঙ্গা ও ধলেশ্বরীর প্রবাহের সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত নদীখাত মধ্য মেঘনা নামে অভিহিত। মধ্য মেঘনা গঠিত প্লাবনভূমি একাধিক বিস্তৃত চর ও বহু প্রশস্ত সর্পিলাকার প্রবাহবিশিষ্ট নিু ভূ-প্রকৃতি। দুই শতাব্দী পূর্বে ব্রহ্মপুত্র তার গতিপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনার গতিপথ বরাবর প্রবাহিত হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত গঠিত প্লাবনভূমির অংশবিশেষ এই প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত। এই প্লাবনভূমির পলল প্রধানত পলিকণা ও কর্দম সমৃদ্ধ। উত্তরের কিছু শৈলশিরার ঊর্ধ্বভাগে বালুকাময় ব্রহ্মপুত্র পলল বিদ্যমান। এই ভূমিতে মেঘনাসৃষ্ট মৌসুমি বন্যার মাত্রা প্রধানত গভীর। অববাহিকা এলাকাসমূহ শুরুতেই জলমগড়ব হয়ে পড়ে এবং পানি নিষ্কাশিতও হয় বিলম্বে। মধ্য মেঘনা প্লাবনভূমির মোট আয়তন প্রায় ৯৭২ বর্গ কিলোমিটারের অধিক নহে। নন্মিমেঘনা প্লাবনভূমি: পদ্মা ও মেঘনার সঙ্গমস্থল থেকে দক্ষিণমুখী মোহনার পূর্ব পর্যন্ত অংশকে নিমড়ব মেঘনা হিসেবে চিহ্নিত করা ভূমির আয়তন প্রায় ৭৯৭ বর্গকিলোমিটার। এখানে মেঘনা নদীর বাম তীরের পলি গঙ্গা, যমুনা এবং মেঘনাবাহিত মিশ্র পলল দ্বারা গঠিত। নদীতীরের নিকটবর্তী প্লাবনভূমিতে গঙ্গার পলি অনুপ্রবেশের কারণে সামান্য পরিমাণে চুনযুক্ত। স্থলভাগের অভ্যন্তরে পলল চুনবিহীন এবং এদের বেশিরভাগই পদ্মা নদী আড়িয়াল খাঁ নদী বরাবর গতিপথ থেকে ১৮৪০ সাল নাগাদ বর্তমানের নিুতর মেঘনা বরাবর প্রবাহিত হওয়ার পূর্বেই সঞ্চিত হয়েছে। এই প্লাবনভূমিতে অল্পসংখ্যক অনিয়মিত শৈলশিরা এবং অববাহিকা ধরনের ভূমিরূপ বিদ্যমান, কিন্তু অধিকাংশ এলাকাই ঢিবি আকৃতির এবং বসতি ও চাষাবাদে ব্যবহৃত। পূর্বে মৌসুমি প্লাবনমাত্রা ছিল পরিমিত পরিমাণে গভীর এবং দক্ষিণ অংশে দৈনিক দুবার জোয়ারভাটার কারণে এই গভীরতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটত। বর্তমানে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সুরক্ষিত ও নিষ্কাশিত এলাকাসমূহে বন্যার মাত্রা প্রধানত অগভীর এবং প্রধানত বৃষ্টির পানি দ্বারাই তা সংঘটিত হয়।



আদি মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি: অববাহিকা এলাকা এবং শৈলশিরা এলাকার মধ্যে উচ্চতার সামান্য পার্থক্য ছাড়া আদি মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি প্রায় সমতল। এই ভূ-প্রকৃতির দক্ষিণাংশে প্রাকৃতিক নদনদী এবং জলধারার উপস্থিতি না থাকায় খাল খনন করে নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রধানত গভীর এবং পলিকণাসমৃদ্ধ, তবে কিছু কিছু অববাহিকার কেন্দ্রে মৃত্তিকা অগভীর কর্দমস্তর দ্বারা আবৃত থাকে। দক্ষিণ-পূর্বাংশে ব্যতীত সর্বত্র মৌসুমি বন্যার মাত্রা প্রধানত গভীর। অববাহিকার কেন্দ্রগুলোতে শুষ্ক ঋতু জুড়ে আর্দ্র অবস্থা বিরাজ করে। বাইরের নদীসমূহ যখন উচ্চমাত্রায় প্রবাহিত হতে থাকে সে সময়ে মূলত বৃষ্টিপাতের ফলে ভূভাগে সঞ্চিত পানি দ্বারা এই এলাকায় বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদ-নদীর (যেমন, গোমতী) আশপাশের প্লাবনভূমিসমূহ নদীর পানি দ্বারা প্লাবিত হয়। এই ক্ষুদ্র নদীগুলোই প্রায় ৭,৩৮৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আদি মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমিকে সংলগড়ব পাহাড় এবং পাদদেশীয় এলাকাসমূহ থেকে বিছিন্ন করেছে।



মেঘনা মোহনাজ নবীন প্লাবনভূমি: মেঘনা নদীর মোহনা এবং তৎসংলগ্ন এলাকা জুড়ে বিস্তৃত সমতলপ্রায় ভূমি। মোহনা সংলগ্ন দ্বীপসমূহ এবং মূল ভূখণ্ড এলাকা এই প্লাবনভূমির অন্তর্গত। প্লাবনভূমির প্রান্তীয় এলাকায় বিরামহীন নব নব পলিসঞ্চয় ও ক্ষয়কার্যের ফলে ভূমির আকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই প্লাবনভূমির বহু স্থানে মৃত্তিকার ঊর্ধ্বভাগ শুষ্ক মৌসুমে বিভিনড়ব মাত্রায় লবণাক্ত হয়ে পড়ে, তবে সকল অংশে এই ঘটনা ঘটে না। মৌসুমি প্লাবনমাত্রা প্রধানত অগভীর, তবে জোয়ার-ভাটার কারণে গভীরতা ওঠানামা করে। বৃষ্টিপাত অথবা নদ-নদীর স্বাদুপানির দ্বারাই মূলত এই বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। মৌসুমি ঋতুতে অপ্রত্যাশিত উচ্চ জোয়ার-ভাটা অথবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানি এই অঞ্চলে বন্যার কারণ হয়ে থাকে। মেঘনা প্লাবনভূমির অধিকাংশ অঞ্চল, বিশেষ করে মোহনাজ ও নিন্ম মেঘনা প্লাবনভূমি ও তার আশে-পাশের ভূখণ্ডগুলি অনেকাংশে নবীন। প্রাচীন যুগের পরবর্তী সময়কালেও চাষবাসের উপযোগী ছিল না। গত ১০০০ বৎসরের মধ্যে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত মেঘনা ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে সরে আসায় মেঘনার পশ্চিম তীরে একটি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চরাভূমি গঠিত হয়েছে এবং পলি পড়ে পড়ে ভরাট হয়েছে। প্রাচীন যুগের মানুষের পদচারণার কোনো স্বাক্ষর এখানে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।



আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.