![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৮
বরেন্দ্র অঞ্চলঃ
এ অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত পূর্বেকার বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার প্রায় ১৩,০০০ বর্গ কিমি এলাকা। এ অঞ্চলটি একটি পুরাতন পাললিক স্তরসমষ্টিতে অন্তর্ভুক্ত, যা সাধারণত ফ্যাকাশে লালচে বাদামি রঙের সংহত মৃণ্ময় (agrillaceous) স্তর দিয়ে গঠিত এবং এসব বস্তু প্রায়ই অবক্ষয়ের ফলে হলুদাভ রঙে পরিণত হয়। সমগ্র মৃত্তিকা জুড়ে চুনের গুটি এবং কূমাণ্ডক (pisolitic) লৌহময় অনুস্তরণজাত পিণ্ড দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে মৃত্তিকা চুনসমৃদ্ধ। মৃত্তিকার পি.এইচ পরিসর ৬.০ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে। মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের অভাব রয়েছে।
তিস্তা পলিঃ
পূর্বেকার বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ অঞ্চলটি গঠিত। এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১৬,০০০ বর্গ কিমি। মৃত্তিকার গঠন প্রধানত বেলে দোআঁশ। পৃষ্ঠমৃত্তিকার পি.এইচ মানের পরিসর ৫.৫ থেকে ৬.৫। মৃত্তিকাগুলো সাধারণত উর্বর এবং পটাশ ও ফসফেট সমৃদ্ধ।
বহ্মপুত্র পললঃ
এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত এলাকা পূর্বেকার বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী ও পাহাড়ি এলাকা ব্যতীত সিলেট জেলা এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলার অংশবিশেষ। এর আওতাধীন এলাকা ৪০,০০০ বর্গ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাধান্য বিস্তারকারী মৃত্তিকা গঠন হলো বেলে দোআঁশ। মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য এসিডীয় এবং পি.এইচ মানের বিস্তার ৫.৫ থেকে ৬.৮। মৃত্তিকাগুলো প্রকৃতিগতভাবেই উর্বর এবং প্রতিবছর বন্যার পানিবাহিত নবীন পলিযুক্ত হয়ে এসব মৃত্তিকার উর্বরতাশক্তি রক্ষিত হয় বা বৃদ্ধি পায়।
গাঙ্গেয় পললঃ
এই পললে অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলো হলো পূর্বেকার বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা এবং রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ। প্রায় ২৭,০০০ বর্গ কিমি নিয়ে এ অঞ্চলটি গঠিত। এটি গাঙ্গেয় সমভূমির নদীজাত (riverine) ভূমির প্রতিনিধিত্ব করে। মৃত্তিকার গঠন এঁটেল দোআঁশ থেকে বেলে দোআঁশের মধ্যে পার্থক্য প্রদর্শন করে। মৃত্তিকার পি.এইচ মানের পরিসর ৭.০ থেকে ৮.৫। মৃত্তিকাগুলো মাঝারি মানের উর্বরতাসম্পন্ন এবং এসব মৃত্তিকাতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বিদ্যমান এবং ফসফেট ও পটাশিয়ামের পরিমাণও বেশি।
উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলঃ
পূর্বেকার বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত। এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত ভূমির পরিমাণ প্রায় ২০,০০০ বর্গ কিমি। এটি উপকূলীয় বলয় বরাবর এবং মোহনাজ দ্বীপমালার সমতল নিচু এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে। মৃত্তিকাগুলো লবণাক্ত এবং পি.এইচ মান নিরপেক্ষ থেকে মৃদুক্ষারীয়। মৃত্তিকাগুলোতে পটাশ ও ফসফেটের পরিমাণ বেশি। এই অঞ্চলেই সুন্দরবন অবস্থিত।
পাহাড় অঞ্চলঃ
এই অঞ্চলটি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পূর্বেকার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড় নিয়ে গঠিত। পাহাড় অঞ্চলে প্রায় ১৫,০০০ বর্গ কিমি এলাকা অন্তর্ভুক্ত। মৃত্তিকাগুলো শক্ত লাল এঁটেল ও সেই সঙ্গে একই রঙের মিহি বালির মিশ্রণ দিয়ে গঠিত এবং মৃত্তিকাতে বিদ্যমান গুটিগুলোতে অধিক পরিমাণে সেসকুইঅক্সাইড (sesquioxides) থাকে। মৃত্তিকাগুলো
মধ্যম থেকে তীব্র এসিডীয়। মৃত্তিকাতে অধিক ক্ষালিত এবং স্বাভাবিক উর্বরতামাত্রা কম। পাহাড়গুলো সাধারণত প্রাকৃতিক ও আবাদি বনবৃক্ষের অধীনে অবস্থিত। স্থানান্তর প্রথায় চাষও কোনো কোনো এলাকায় করা হয়।
ড. দানীর বাংলাদেশের ভূভাগঃ
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে এবং প্রাচীনত্বের ভিত্তিতে দানী বাংলাদেশকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলি হচ্ছে, (ক) লালমাটিতে গঠিত প্রাচীন ভূমি, (খ) পলিমাটিতে গঠিত মোটামুটি প্রাচীন ভূমি, ও (গ) পলিমাটিতে গঠিত নব্য নিন্মভূমি।
ক. লালমাটিতে গঠিত প্রাচীনভূমিঃ
রাজশাহী জেলার পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চল, ঠাকুরগাঁও জেলার বেশ কিছু অংশ ছাড়া বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার প্রায় সমগ্র অঞ্চল, রংপুর জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরবর্তী বগুড়ার প্রায় সমগ্র অঞ্চল ও পাবনা জেলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল লালমাটিতে গঠিত। করতোয়া ও যমুনা (ব্রহ্মপুত্র) নদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী দৃশ্যমান পলিমাটির অঞ্চল অতিক্রম করে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলাদ্বয়ের মধুপুর অঞ্চলে আবার লালমাটির অস্তিত্ব দেখা যায়। সেই লালমাটি মধুপুর থেকে শুরু করে ভাওয়াল অঞ্চল অতিক্রম করে পূর্ব ও পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহত্তর ঢাকা জেলার বেলাবো থানায় অবস্থিত উয়ারী বটেশ্বর নামক স্থান পর্যন্ত চলে গেছে। আবার তার আর একটি ধারা মধুপুর-ভাওয়াল থেকে দক্ষিণমুখী হয়ে কালিয়াকৈর-সাভার অতিμম করে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত ঢাকা নগরী পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়শ্রেণীর কথা বাদ দিলে লালমাটির অস্তিত্ব দেখা যায় অনেক দক্ষিণে কুমিল্লার লালমাই ময়মনামতি পাহাড়শ্রেণীতে এবং অনেক পূর্ব দিকে শ্রীহট্টের পাহাড়ি এলাকায়। লালমাই-ময়নামতির দক্ষিণে আবারওঅনেক বিরতির পরে লালমাটি দেখা যায় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে লালমাটিতেগঠিত বাংলাদেশের এসব অঞ্চল অত্যন্ত প্রাচীন। প্রাচীন পলিমাটিতে গঠিত এই অঞ্চলের সঙ্গে মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকার যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে বলে তাঁদের অভিমত। ভারতের ছোটনাগপুর অঞ্চলে যে অতি প্রাচীন পার্বত্য মালভূমি আছে ভূতাত্ত্বিকদের মতে তা পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) রাঢ় অঞ্চলের মধ্যে মূলত ও বাহ্যত প্রসারিত হয়েছে।
তাঁদের মতে আবার তা-ই পুরাতন পলিমাটির আবরণের নিচে প্রসারিত হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লালমাটিতে গঠিত এলাকায়।২৩
এযাবত প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের অস্তিত্ব বাংলাদেশের মাটির প্রাচীনত্ব সম্পর্কে সকল সন্দেহের অবসান ঘটিয়েছে।
২৩ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া- বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ।
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৭
©somewhere in net ltd.