![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২০
ভূ-পরিচয়, জলবায়ু ও তার প্রভাব
ভৌগোলিক অবস্থান
বাংলাদেশ উত্তর অক্ষাংশ ২০০- ৩৪র্ হতে ২৬০-৩৮র্ এবং পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ৮৮০-০১র্ হতে ৯০০-৪১র্ এর মধ্যে অবস্থিত। এর মাঝ বরাবর চলে গেছে ২৩০৩র্০ অক্ষাংশের কর্কট ক্রান্তি। দেশের উত্তর প্রান্তে ভারতের মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তর-পূর্বাংশে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও মিজোরাম এবং দক্ষিণ-পূর্বাংশে
মায়ানমার। বাংলাদেশ প্রায় ১,৪৪,০০০ বর্গ কি.মি. এলাকা নিয়ে গঠিত। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা টেকনাফ হতে রামগড় পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণ হতে সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে উর্ধ্বভাঁজ সমন্বয়ে গঠিত যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৮০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১২৪৩ মিটার পর্যন্ত। এ পাহাড়ি অঞ্চল ভারতের ত্রিপুরার মধ্য দিয়ে ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে প্রসারিত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের নিকট চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৩৫১ মিটার উঁচু এবং সিলেটের হারারগজ পাহাড়ের চূড়া ৩৩৫ মিটার উঁচু। এছাড়া রয়েছে বৃহত্তর সিলেটের জাফলং হতে শেরপুর জেলার উত্তরাংশে যমুনা নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় পূর্ব-পশ্চিমে প্রলম্বিত বিচ্ছিন্ন টিলাসমূহ। এ টিলাগুলোর মধ্যে সিলেটের জাফলং এলাকায় টিলার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৬১ মিটার। কক্সবাজার হতে টেকনাফ পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকার পাদদেশে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এটি লম্বায় প্রায় ১৫০ কি.মি. এবং চওড়ায় ১ হতে ৪ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত।২৪ ভূমিরূপের দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এর উত্তর-পশ্চিমাংশ হিমালয় পর্বতশ্রেণীর পাদদেশে অবস্থিত। এ এলাকার পরেই বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ সমভূমির ঢাল প্রতি কিলোমিটারে ০.৫ হতে ০.০২৫ মিটার এবং গড়ে ০.১৪ মিটার। এছাড়া দেশের উত্তরাংশে মেঘালয়ের খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে অসংখ্য হাওড়-বাওড়। এছাড়া রয়েছে লালমাটি আবৃত স্বল্প উঁচু বরেন্দ্র মধুপুরের চত্বরভূমি। দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্রপাড়ে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গরান জলাভূমির বনাঞ্চল সুন্দরবন। দেশের উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাংশে রয়েছে বনাঞ্চল ঘেরা পাহাড়ি এলাকা।
বাংলাদেশের তাপমাত্রাঃ
১,৪৪,০০০ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ডের বাংলাদেশের এই অঞ্চলের বর্তমানে বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ২৭০ সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে ৪০০ সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। শীত মৌসুমে তাপমাত্রা ১০০ সেলসিয়াসে নেমে আসে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৩০০ সেন্টিমিটার, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে শতকরা ৮০ ভাগ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ২৫ আজ থেকে ২০০০ বৎসর আগেও দেশের গড় তাপমাত্রা কিছুটা কম ছিল বলেই পণ্ডিত ব্যক্তিদের ধারণা। প্রথমত গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া ছিল না। সারাদেশে আচ্ছাদিত বনভূমি থাকায় তাপমাত্রা কিছুটা হলেও বর্তমানের চেয়ে কম থাকাই স্বাভাবিক ছিল। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছু বেশি ছিল। তবে কত বেশি ছিল তা এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা হয়নি। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বর্তমানের মতই বেশি ছিল।
বাংলাদেশের জলবায়ুঃ
আমাদের আলোচ্য সময়ে অবশ্য বঙ্গভূমি এক নামে পরিচিত ছিল না। আদিকালে বঙ্গ, পুণ্ড্র, সুহ্ম, তাম্রলিপ্ত এবং পরবর্তীকালে গৌড়, সমতট, হরিকেল, বরেন্দ্র, রাঢ় প্রভৃতিও বঙ্গভূমির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমাদের আলোচ্য সময়ে বঙ্গ ছিল বর্তমান বাংলাদেশের একটি অংশমাত্র। পাল ও সেন রাজাদের আমলেও সমগ্র বাংলাদেশ এক নামে পরিচিত ছিল না। লক্ষণ সেনের আমলে বাংলাদেশ রাঢ়, বরেন্দ্র, গৌড় ও বঙ্গ নামের চারটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। ২৬ এই চারটি প্রদেশের সম্মিলিত ভূখণ্ড বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের জলবায়ু সম্পর্কে আলোচনা করা হল।বাংলাদেশের বর্তমান ভূমি আয়তন ৫৫,০০০ বর্গমাইল (১,৪৪,০০০ বর্গ কিলোমিটার) এবং পশ্চিম বাংলাসহ মোট আয়তন ২,৩১,৬১৬ বর্গকিলোমিটার।ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাঁচ হাজার বছর পূর্বে শুধু বাংলাদেশের আয়তন ৪০/৪২ হাজার বর্গমাইল বলে অনুমান করা যায়। অর্থাৎ টারশিয়ারি (Tertiary) যুগের উচ্চভূমি, প্লাইওষ্টোসিন (Pleistocene) যুগের নদীতীরবর্তী উচ্চ সমভূমি, ত্রিপুরা জেলার পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার প্রাচীন ভূমি, বরেন্দ্রভূমি এবং নবসৃষ্ট প্লাবিত ভূমির কিয়দংশ ছিল এই প্রাচীন বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল। পশ্চিম বাংলার পশ্চিম অঞ্চল অর্থাৎ গঙ্গা-ভাগীরথী নদীর পশ্চিমাংশ এবং রাজমহলের পূর্বাঞ্চলে বীরভূম, বাকুড়া, মেদিনীপুর এবং নদীবাহিত প্লাবনভূমির কিছু অঞ্চল তখন আদি বাংলার অংশ ছিল। আদি বাংলাদেশের বাকি অঞ্চল ৫ হাজার বছর পূর্বে অগভীর সমুদ্রে বোধহয় তখনো নিমজ্জিত। আর প্লাবিত সমভূমির যে অঞ্চল ছিল পানির উপরে, তাও ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। উচ্চভূমিও তখন জঙ্গল ছাড়া কিছ্ইু ছিল না।২৭
২৪ বিধান চন্দ্র মন্ডল; আ.স.ম. উবাইদ উল্লাহ: ভূগঠন বিদ্যা।
২৫ নুরুন নাহার খানম: বাংলাদেশের গাছপালা।
২৬ H. Blockman: Contribution to the Geography & History of Bengal.
২৭ মোঃ সদরুল আমিন: পরিবেশ বিজ্ঞান।
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৯
©somewhere in net ltd.