![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২৪
বাংলাদেশের জলবায়ুতে এ বিপ্লব ছিল আসলে বাংলার প্রকৃতি ও জলবায়ু সম্পর্কে উত্তরাঞ্চলীয় সমসাময়িকদের একদিকে ধারনার পরিবর্তন, অন্যদিকে বন-জঙ্গল ক্রমশ পরিষ্কার করাতে আবহাওয়াতেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। তাছাড়া, বাংলার দুর্যোগপূর্ণ জলবায়ুর অস্তিত্ব বাস্তব অপেক্ষা বেশি ছিল বিদেশীদের মনস্তাত্ত্বিক। বাংলাদেশের বৃষ্টিপাত ও জলকাদা সম্পর্কে উত্তরাঞ্চলীয়দের ভীতি থেকে এ ধারণার জন্ম হয়েছিল। বংশানুক্রমে তারা শুষ্ক আবহাওয়ায় বসবাস করতে অভ্যস্ত ছিল, ফলে স্বভাবতই এ অঞ্চলের বৃষ্টিও আর্দ্র জলবায়ুতে বসবাস করা তাদের পক্ষে ভীতিজনক ছিল। এ কারণেই, তারা বাংলা সম্বন্ধে পূর্ব থেকেই কিছুটা মনগড়া ধারণা পোষণ করত।
তবে যারা কয়েক বছরকাল বাংলাদেশে অবস্থান করত, তারা উপলব্ধি করত যে, বাংলাদেশের জলবায়ু তারা যতটা খারাপ ভেবেছিল, প্রকৃতপক্ষে ততটা খারাপ নয়। এদেশে বসবাস করার পর বাংলার জলবায়ু সম্পর্কে তাদের মন থেকে ভয়ভীতি দূর হতো। আর্যরা এদেশের আবহাওয়া ও মানুষের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে যতই অপছন্দ করুক, কয়েক শতাব্দীর ব্যবধানে ব্রাহ্মণসহ উচ্চবর্ণের লোকেরা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকে। আরো পরে তুর্কি, আফগান, মোঘল ও ইরানিরা এদেশে বসতি করতে আসে। প্রথমদিকে তারাও আর্যদের মত বাংলাদেশে বসবাস করা পছন্দ করেনি। ভারত বিজয়ের পর সম্রাট বাবর, তাঁর আমীর ওমরাহ ও সৈনিকগণ ভারতে বসবাস করতে পছন্দ করেনি। তাঁরা এদেশের উষ্ণ আবহাওয়া সম্পর্কে অভিযোগ করেন এবং কাবুল ও মধ্য এশিয়ার মৃদু জলবায়ুর অভাব খুব বেশি অনুভব করতেন। বাবরের অন্যতম প্রধান আমীর হাসান ভারত ছেড়ে চলে যান এবং যাবার পূর্বে তিনি দিল্লির একটি প্রাচীরের গায়ে লেখে যান:
নিরাপদে সুস্থদেহে পার যদি পার হতে সিন্ধু এদেশে আনার চিন্তা করার আগে কাল কর আমার মুখ।
সম্রাট বাবরও কাবুলের কথা ভুলতে পারেননি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতে থেকে যান এবং মোঘল বংশের ভিত্তি স্থাপন করেন। ক্রমান্বয়ে মোঘল সম্রাটগণ এদেশের জলবায়ুতে অভ্যস্ত হয়ে যান। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে যুবরাজ মুরাদ বল্খ জয় করার জন্য প্রেরিত হন। যুবরাজ সেদেশের অধিকাংশ এলাকা দখল করেন। কিন্তু তিনি মধ্য এশিয়ার পার্বত্য ও অসমতল অঞ্চল পছন্দ করেননি। এজন্য তিনি ভারতে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। তিনি এদেশের সমতলভূমির প্রতি এত বেশি আকৃষ্ট ছিলেন যে, সম্রাটের বিনা অনুমতিতেই তিনি বলখ ছেড়ে চলে আসেন।
বাবর থেকে মুরাদে কি পরিবর্তন! উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্রাট বাবর ভারত পছন্দ করেননি এবং মধ্য এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের অভাব অনুভব করতেন। ভারতে বসবাসকারী তাঁর বংশধরেরা এত বেশি এদেশী হয়ে পড়েছিলেন যে, এমন কি তাঁরা সামান্য সময়ের জন্যও তাঁদের পূর্বপুরুষদের আবাসভূমিতে অবস্থান করা পছন্দ করেনি। একইভাবে বাংলাদেশেও উত্তর ভারতের লোকেরা যখন একবার বসবাস করতে আরম্ভ করে তখন তারাও এখানকার জলবায়ুতে অভ্যস্ত হয়ে এদেশীয় হয়ে পড়ে। জলবায়ু খারাপ থাকলে এবং মহামারী ব্যাধি ইত্যাদিতে নিত্য আক্রান্ত থাকলে বাংলাদেশ এ উপমহাদেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হতো না।
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২৩
©somewhere in net ltd.