![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২৬
জীবনযাত্রার উপর জলবায়ুর প্রভাব মানসিক গঠনঃ
প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে জীবন গঠিত হয় না। কারণ, জীবনও প্রকৃতির একটি অংশ। মানুষের জীবন, জীবিকা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গঠনে প্রকৃতির দান অনবদ্য। দেশের মৃদু ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু প্রকৃতিগতভাবে বাঙালি অধিবাসীদেরকে করেছে শান্ত প্রকৃতির এবং অমায়িক। স্নিগ্ধ কোমল অন্তকরণের চমৎকার আবেগময়তা তাদের পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ককে করেছে মধুময়। স্বজনদের জন্য তাদের অপরিমিত স্নেহ-মমতা ও প্রেম বাংলাদেশে ব্যাপক পরিমাণে একানড়ববর্তী পরিবার প্রথার অস্তিত্বের মূল কারণ। আত্মীয়-কুটুম্ব ও প্রতিবেশীদের প্রতি তাদের দরদ তাদেরকে করেছে সামাজিক, অন্তরঙ্গ ও সাহচর্যপ্রিয়। হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণীতে বাংলার বিভিন্ন জনপদবাসীদের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তারা পার্বত্য অঞ্চল ও মরু অঞ্চলের অধিবাসীদের মত কষ্টসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে নি। তাছাড়া বাংলার জলবায়ুর উষ্ণ আর্দ্রতা বহু ক্ষেত্রে অধিবাসীর চরিত্রকে স্থানবিশেষে ক্লান্তি ও অবসাদে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। এটা তাদের মাঝে সাধারণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সহায়তা করেছে।, দেশের সর্বত্র বিরাজমান সবুজ শ্যামলিমা, নদ-নদী, বন-বনানী, নিয়ত পরিবর্তনশীল মেঘরাজি, ছয় ঋতুর বৈচিত্র্য দেশের মানুষের চরিত্র, মন-মানসিকতা গড়ে তুলেছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের রূপ-মনোহর বিচিত্রতা নিয়ে।
ভৌগোলিক পরিবেশ, ইতিহাস এবং ঐতিহ্য এ দেশের কবিতা আর গানে রূপায়িত হয়েছে। মাটি আর আবহাওয়া উৎস হয়ে সমৃদ্ধ করে তুলেছে সঙ্গীত আর সংস্কৃতিকে। বলা যায়, সুন্দরী প্রকৃতি তাদরেকে প্রদান করেছে একটি সুন্দর শিল্পীমন এবং জীবনে এনে দিয়েছে উদার দৃষ্টিভঙ্গি। অসংখ্য নদ-নদী অধিবাসীদের জীবনে তাদের ভাঙ্গাগড়ার লীলা-বৈচিত্র্যে লোকের মনের উপর এরূপ গভীর ছাপ রেখে গেছে যে, তা তাদের মধ্যে জন্ম দিয়েছে মরমী মনোভাব এবং পার্থিব জগতের প্রতি তাদেরকে করেছে খানিকটা উদাসীন। আজও স্থানীয় লোকসঙ্গীতে প্রতিফলিত হয় বাংলার সাধারণ মানুষের মরমী মনোভাব। সুন্দরী প্রকৃতি অনুপ্রাণিত করেছে কাব্য-কবিতা আর স্থানীয় সাহিত্যকে করেছে ঐশ্বর্যমণ্ডিত।
বাংলা ষড়ঋতুর দেশ। দীর্ঘস্থায়ী গ্রীষ্মের প্রারম্ভে প্রকৃতিতে থাকে কালবৈশাখীর উদাসতা ও অস্থিতিশীলতা। ফল-ফুলের প্রাচুর্য বাঙালির জীবনে চিরস্থায়ী ছাপ রেখেছে। বাঙালির স্বভাব গঠনে বর্ষা ঋতুর প্রভাব বর্ণনা কবির ভাষায়:
বাইরে যায়না বেশী কিষাণ কিষাণী
গোয়ালে আবদ্ধ গরু, মাঠে আছে পানি,
প্রকৃতি খেলার সাথী; দেশের মানুষ
কেউ হয় কবিয়াল, কেউ খোঁজে দোষ,
উদার-অসীম চিন্তা, আত্মপরিচয়-
খুঁজতে নিজের মাঝে আত্মমগড়ব হয়।
ধর্ম-চিন্তা, ধর্মভাব, স্রষ্টাকে জানার
ঘোর রহস্যপূর্ণ তত্ত্ব কথা তাঁর
জানার আগ্রহ জাগে এই পরিবেশে
সাহিত্য, দর্শন, কৃষ্টি, গড়ে তার পাশে।
৪১ James J. Novak Bangladesh Reflections on the Water, p- 44.
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২৫
©somewhere in net ltd.