![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২৮
ধর্মীয় চিন্তাচেতনাঃ
বাংলা ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত প্রদেশ; সুতরাং এই অঞ্চল আর্যসভ্যতা ও সংস্কৃতির বাইরে ছিল বহু শতাব্দী। আর্যসভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রবাহ বহুদিন পর্যন্ত বাংলাভূমিকে স্পর্শ করতে পারেনি এবং যখন সেই প্রবাহ বাংলায় পৌঁছল, তখন তার বেগ অনেকখানি স্তিমিত হয়ে এসেছিল। সমাজের উচ্চস্তরেই আর্য-ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতি সীমাবদ্ধ ছিল। একমাত্র বৌদ্ধধর্ম এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতিই উচ্চবর্ণ ছাড়াও বাংলার সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে বিস্তারলাভ করেছিল। আর্য-ব্রাহ্মণ্য ধর্ম গঙ্গার পশ্চিমতীরে পশ্চিমবাংলায় আংশিক প্রসার লাভ করলেও গঙ্গার পূর্ব ও উত্তর তীরে সেই প্রবাহ তেমন প্রভাব বিস্তার লাভ করতে পারে নি। এর অন্য কারণও আছে। আর্যগণ বিজেতার উন্নাসিকতা নিয়েই আর্যাবর্তের এই প্রত্যন্ত প্রদেশের অধিবাসীদেরকে অত্যন্ত ঘৃণা ও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেছে- ফলে, বাংলার মানুষ এই আর্য-ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতিকে স্বচ্ছন্দমনে গ্রহণ করতে পারে নি। উত্তর ও মধ্যভারতের অধিবাসী যেভাবে এবং যতখানি রক্ষণশীলতা নিয়ে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছিল, বাংলাদেশের অধিবাসীরা তা করেনি। কারণ, অতি অল্পসংখ্যক বৈশ্য ছাড়া বাংলার অধিবাসীদের সাধারণ বর্ণ ছিল শূদ্র বা দাস। ব্রাহ্মণ এদেশে বহিরাগত। এজন্যই বোধ হয় সেনযুগের পূর্ব পর্যন্ত ব্রাহ্মণ্য সমাজ বাংলার সাধারণ মানুষের নেতৃত্ব দিতে পারেনি। যখন থেকে বৈশ্য ও শূদ্রের দূরত্ব কমতে থাকে এবং বর্ণের বাঁধন কিছুটা শিথিল হয়, তখন থেকে ব্রাহ্মণরাও সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য হতে থাকে। বাংলায় ব্রাহ্মণ ও উচ্চতর দুটি শ্রেণীর বাইরে এই ধর্ম- সংস্কৃতির বন্ধনও ছিল অতি শিথিল। উত্তরে গাঙ্গেয় অঞ্চল এবং বাংলার মনোভাবের এই পার্থক্যের মূলেও রয়েছে বাংলার ভূপ্রকৃতি এবং ভৌগোলিক সংস্থান। আর্য-সংস্কৃতির কেন্দ্র হতে দূরে অবস্থিত বলেই উত্তর ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যধর্ম ও সংস্কৃতির কঠোর রক্ষণশীলতা বাঙালি চরিত্রকে প্রভাবান্বিত করতে পারে নি।
বেদোত্তর কালে এক ভারতীয় সভ্যতার এক নতুন স্তরে এবং নতুন আঙ্গিকে ব্রাহ্মণ্যতত্ত্বের ভিত্তিইে মহাভারতের নির্যাতিত দলের সারথী হিসেবে ভগবান কৃষ্ণের আবির্ভাবে যে তত্ত্ব কথা শুনতে পাই তা-ই গীতা নামে সংকলিত। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা দিতে গীতায় বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের বক্তব্য ও কঠোর কঠিন চরিত্র বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য হল না। তরবারীর পরিবর্তে তারা শ্রীকৃষ্ণের হাতে তুলে দিল বাঙালির হৃদয়ের কথা স্পন্দিত হওয়ার জন্য বাশরী আর তাকে সাজিয়ে দিল প্রেমের অবতার রূপে। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আর্যদের যোদ্ধংদেহী দেবতা শ্রীকৃষ্ণ, অস্ট্রিকদের উত্তরসূরীরা তৈরি করলো গোপীনীদের মনোমুগ্ধকর প্রেমের দেবতারূপে।
বাঙালিদের কাছে তাদের দেবতা তাদের উপলব্ধি ও অনুভূতির এক তাত্ত্বিক রূপায়ন যা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম অনুসরণ করে সৃষ্ট হলেও বাঙালিদের কাছে আদিরূপে গ্রহণযোগ্য হলো না। এখানেও আমরা দেখতে পাই, ধর্মের মাঝেও আর্য চরিত্র ও বাঙালি চরিত্রের স্বভাবগত পার্থক্য। আর্যদের যা ঐতিহ্য ছিল তা দিয়েই সাজিয়ে ছিল তাদের সারথী দেবতাকে আর বাঙালিরা তাদের অন্তরের অনুভূতি দিয়ে সাজিয়েছে তাদের মত করে একই দেবতাকে তাদের নিজস্ব আঙ্গিকে। এখানে শ্রীকৃষ্ণের মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে বাঙালির স্বভাবজাত চরিত্রের অভিব্যক্তি। বাঙালির রক্তে রক্ষণশীলতা যে বদ্ধমূল হয়নি, তার আরও একটি কারণ রয়েছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক। এই সকল নদীপ্রবাহের দিক নিয়তই পরিবর্তিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সুতরাং পরিবর্তন ও বিবর্তনকে গ্রহণই বাঙালি চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ফলে বাংলাদেশে আর্য, আর্যেতর, বৌদ্ধ, ব্রাহ্মণ্য, পৌরাণিক ও অপৌরাণিক ধর্ম এবং সংস্কৃতির এক বৃহৎ সমন্বয় ও সাঙ্গীকরণ সাধিত হয়েছিল। বাংলাদেশ সকল ধর্ম ও সংস্কৃতিকেই আপন করে নিয়েছিল। যুগ যুগ ধরে পরিবর্তন-বিবর্তনে অভ্যস্ত হয়েছিল।
খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ ও আবাসগৃহঃ
প্রকৃতিই বাংলার অধিবাসীদের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ ও গৃহনির্মাণ ইত্যাদির বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী। বাংলার সমতলভূমি উৎপন্ন করে চাল, আর এর নদ-নদীগুলো ও জলাভূমি জোগান দেয় প্রচুর মাছ। ফলে ভাত আর মাছ হয়েছে বাঙালির প্রধান খাদ্য।
খাদ্য হিসেবে ধানের উৎপাদন এদেশের আদিম অধিবাসী অস্ট্রিক ভাষাভাষীদেরই অবদান বলে পণ্ডিতব্যক্তিদের ধারণা। এ বইতে অস্ট্রিক ভাষাভাষীদের জীবনাচার আলোচনা প্রসঙ্গে তাদের ধান চাষের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পাণ্ডু রাজার ঢিবি উৎখননের ফলে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সালের ধানের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। মহাস্থানগড়ে ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ধান মজুদ করার খবর পাওয়া যায়। তার আরও ২০০০ বছর খ্রিষ্ট পূর্ব থেকে এদেশে জুম পদ্ধতিতে ধানচাষের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। অর্থাৎ আদিকাল থেকেই এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ধানচাষের প্রচলন ছিল।
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২৭
২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯
সিদ্ধার্থ. বলেছেন: "এখানে শ্রীকৃষ্ণের মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে বাঙালির স্বভাবজাত চরিত্রের অভিব্যক্তি" -অসাধারণ লিখেছেন ।বলা যেতে পারে যুদ্ধপ্রেমী কৃষ্ণ কে রাখল বালক এ রূপান্তর করাটা বাঙালী দেরই অবদান ।
"আর্যগণ বিজেতার উন্নাসিকতা "-কে কাকে কবে বিজয় করলো ?ইতিহাস নিয়ে লেখার সময় আপডেটেড থাকাটা জরুরী ।
আপনার অন্য লেখা গুলো পড়ে দেখতে হবে ।+
৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:০৮
বাংলার ভূমিপুত্র বলেছেন: জনাব সিদ্ধার্থ, আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি প্রথম থেকে শুরু করুন সামনের দিকে চলুন সব আপডেট পাবেন আশাকরি। আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
banglar_hasan আপনাকেও ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:০৭
বাংলার হাসান বলেছেন: আপনার এই ধারাবাহিক লেখাটি থেকে অনেক অনেক কিছু জানতে পারছি।