![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতীয় দৈনিকে কাজ করার সময়, নিজেকে আমি লেখক ভাবতাম,হয়ত ছিলাম।(এখনো লিখি, কিন্তু বেশির ভাগই ব্যাংক এর ভাউচার)জীবিকার জন্য আমি যে এখন ব্যাংকার
তখন ফেসবুক ছিল না, ছিল শুধু টেক্সট বুক আর আউট বুক। ২০০৩ সাল, সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছি। ছোটবেলা থেকেই গল্পের বইয়ের পোকা (বড়দের চোখে যেগুলো আউট বুক)। যখন সব বন্ধুবান্ধব টিউশনি করছে, তখন আমরা কিছু পাগল ঘরের খেয়ে বনের মেষ তাড়ানোর মতো যুগান্তরের স্বজন সমাবেশ করে বেড়াই। দূর থেকে উঁকিঝুঁকি মারি সেই সময়ের সাড়াজাগানো রম্য ম্যাগাজিন বিচ্ছুর ডেস্কে। কিন্তু কখনও পাত্তা না দেয়া ক্রাশের মতো সেই ডেস্কও আমাকে হতাশ করে বারবার। সকাল, দুপুর কিংবা বিকালে, যখনই যুগান্তরে আসি না কেন, বিচ্ছুর ডেস্কে আমি কাউকেই দেখি না। ভাবতাম, বিভাগীয় সম্পাদক আশীফ এন্তাজ রবি তো এক ভয়ানক রহস্য পুরুষ! না হলে সম্পূর্ণ গায়েবি অবস্থায় এমন সাড়াজাগানো রম্য ম্যাগাজিন বের করা তো চাট্টিখানি কথা না!
বিচ্ছুতে আইডিয়াবাজি করার চূড়ান্ত লোভেই সম্পাদককে যেকোনো মূল্যে খুঁজে বের করার পণ করলাম। ইচ্ছে হলেই কী, এই পাতার বিভাগীয় সম্পাদককে খুঁজে পাওয়া তো সহজ কিছু না! খেয়াল করলাম, শুধু আমিই না, রবি ভাইকে অনেক মানুষই টর্চলাইট দিয়ে খোঁজে! মনে মনে ভাবি, এরা কি আসলেই লেখক, নাকি পাওনাদার? অনেকে আমাকে জিজ্ঞেসও করে, এই রবিকে দেখেছ? সেই সময় পর্যন্ত সুয্যি মামা আর রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আমি আর কোনো রবিকে চিনি না! এদিকে পাঠকের চিঠির খামে বিচ্ছুর ডেস্ক উপচে পড়ার মতো অবস্থা। কয়েকদিনের মধ্যে আবিষ্কার করলাম, রবি ভাই অফিসে এলে আসেন দুপুরের দিকে, স্বাক্ষর করেন, তারপর চলে যান মেকাপ রুমে অথবা তুলি ভাইয়ের (কার্টুনিস্ট নিয়াজ চৌধুরী তুলি) ডেস্কে। কিংবা তাকে পাওয়া যায় চায়ের দোকানে, সেখানেই চলে বিচ্ছুর আসল মিটিং, অর্থাৎ দেশের যাবতীয় রম্য লেখক, আইডিয়াবাজ, কার্টুনিস্টদের সঙ্গে চলতো তার ‘জ্ঞানী এবং ফানি’ আড্ডা, লেখা, কার্টুন দেয়া-নেয়া।
ততদিনে বিচ্ছু সম্পাদককে ধরতে পেরেছি, ধরামাত্রই সরাসরি বিচ্ছুতে লেখার তুমুল আগ্রহের কথা জানালাম। সম্পাদক সাহেব তা শুনে মনোযোগটা চায়ের কাপে আরও বেশি দেন। একসময় বললেন, ‘যা, পাঠকের লেখা থেকে ১০টা মজার লেখা বেছে নিয়ে আয়।’ আমার হাতে আকাশের চাঁদ! নিজেই তখনও বিচ্ছুর পাঠক, আর আমি করব পাঠকের লেখা বাছাই! বিচ্ছুর ডেস্কে বসে খাম ছিঁড়ে লেখা পড়তে শুরু করলাম, আমারও মন খারাপ হওয়া শুরু হল! মজার লেখা কোথায়, বেশিরভাগ চিঠির সারমর্মই এমন- ‘আমার লেখা ছাপান না ক্যারে? এইবার লেখা না ছাপাইলে সুইসাইড খায়া আত্মহত্যা করুম...’ কিংবা ‘আপনি লেখা ছাপাচ্ছেন না দেখে আমার বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে, আপনি এত্তগুলা পচা’...
এভাবেই লেখা বাছাইয়ে সাহায্য করা, টুকটাক আইডিয়া দিতে দিতে আমিও হয়ে গেলাম বিচ্ছু বাহিনীর একজন, আমারও লেখা ছাপা হতে লাগল নিয়মিত। সেই সূত্র ধরেই কাজ করা হয়েছে দেশের প্রথমসারির বিভিন্ন দৈনিকে। পরিচিত হতে পেরেছি একঝাঁক আলোকিত মানুষের সঙ্গে। কত স্মৃতি কত হাসি আনন্দের মুহূর্ত এই বিচ্ছুর সঙ্গে!
বিচ্ছু নতুন করে আবার প্রকাশিত হল আজ থেকে। এই প্রকাশনা চলুক অনন্তকাল! বিচ্ছুর জন্য রইল বুকভরা ভালোবাসা! বিচ্ছু ই-পেপার
©somewhere in net ltd.