নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন...

স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি...দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমরা আমাদের স্বপ্নের সমান বড়...

সৈয়দ রাকিব

জাতীয় দৈনিকে কাজ করার সময়, নিজেকে আমি লেখক ভাবতাম,হয়ত ছিলাম।(এখনো লিখি, কিন্তু বেশির ভাগই ব্যাংক এর ভাউচার)জীবিকার জন্য আমি যে এখন ব্যাংকার

সৈয়দ রাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার বাংলাদেশে এসে ভিআইপি দের খপ্পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (রম্য)- সৈয়দ রাকিব

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৯

কফির মগ হাতে বারান্দায় পায়চারি করিতে করিতে হৃদয় আমার নাচেরে স্বরচিত এই গানটিই গুন গুন করে গাইছিল ভানুসিংহ। হাতে সদ্য কিনিয়া আনা ছয় জিবি র‌্যামের অতি আধুনিক স্মার্ট ফোন, ফেসবুক নামক নতুন এক সামগ্রী তৈয়ার করিয়াছে দূর সম্পর্কীয় এক ভক্ত, সে এক আজব বস্তু। নেশা ধরাইয়া দেয়। এই কারনেই তো এত্তগুলো টাকা দিয়া নতুন স্মার্টফোন কিনিতে হইল। যাহাই হউক ফেসবুকে লগইন করাই ছিল। আচমকা মেসেঞ্জার শব্দ করিয়া উঠিল, আর সেই মেসেজ দেখিয়াই কিছুটা শংকিত হইয়া উঠিল ভানুসিংহ। তাহাকে বাংলাদেশের জমকালো এক রিয়েলিটি শোর প্রধান বিচারপতি করা হইয়াছে। এফডিসি আর কক্সবাজারে শুটিং হইবে। তাহার মানে তাহাকে শিগগিরই বাংলাদেশে যাইতে হইবে। একবার চেষ্টা করিল ভানু যদি পাশ কাটিয়া যাওয়া যায়। কিন্তু না, সেই অনুষ্ঠানের বড় কর্তা তাহার পাড় ভক্ত, গুরুজি আসিতে চাহিতেসেনা বা আসিবেনা শুনিয়া ফোনেই ভেউ ভেউ করিয়া কাঁদিয়া দিল। ভানু বলার চেষ্টা করিল আরে বোকা আমি রান্না বান্নার কি বুঝি? সাহিত্য বা সংগীত হইলে না হয় কথা থাকিত, আমাকে যে বিচারক করেছিস তোরা কি আর কাউকে খুজে পাসনি ?
বলেন কি গুরুজি আপনি হলেন সর্ব বিষয়ের পরিক্ষিত “ব্র্যান্ড”। দেখেননি আপনার ছবি দিয়ে টিশার্ট থেকে মগ, শার্ট থেকে পাঞ্জাবী, শাল বা চাদর কত কিছু তৈয়ার হয়! যদিও আপনি রান্না বান্না করেন নি কিন্তু ভেবে দেখুন আপনার উপস্থিতি এই শেফ ছেলে-মেয়েদের জন্য কতটা আশার সঞ্চার করবে?

অনুরোধে ঢেঁকি গেলা আর কাহাকে বলে এ যেন অনুরোধে আস্ত রাইস্ মিল গিলিয়া ফেলা। এই ভক্তকে কোনরুপেই নিরাশ করা গেলনা। তো কি আর করা, বাংলাদেশে আসার জন্য বাক্স পেট্রা গোছানো শুরু করল ভানু সিংহ।

গাবতলী বাস টার্মিনাল। একটু আগেই বাস হইতে নামিয়াছে ভানু। সময়ের চেয়ে প্রায় চার ঘন্টা দেরিতে পৌছেছে, বাসের ঝাকুনিতে কোমর ব্যাথাটা আবার এল বলে। নামিয়া দেখে ভক্তকুল কেহই নাই, পকেট থেকে ফোন বাহির করিয়া দেখে ফোনের চার্জও শেষের পথে, নতুন স্মার্ট ফোনের হইয়াছে এই জ্বালা কখন যে ফুরাইয়া যাইবে কেহই বলিতে পারিবেনা। তখনি মনে হইল বিদেশী সিম তো এইখানে ভাল মত চলিবার কথাও না, উপরন্তু অনেক টাকা রোমিং বিল হইবে। যাই একখানা স্থানীয় সিম কিনিয়া লই। ডাবল সীমের সেট, আরেকটা সিম ব্যবহারে সমস্যা হইবেনা। এই দেশে কয়েকদিন থাকিতে হইলে মোবাইলতো লাগবেই উপরন্তু ফেসবুক,ওয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার আরো কত কি আছে সব সময় তো আর ওয়াইফাই পাওয়া যাইবেনা আর সব ওয়াইফাইকে তো বিশ্বাস করাও যাইবেনা। এই ভাবিয়া পাশের একটি দোকানের দিকে আগাইল ভানু। একগাদা কাগজে অনেক কিছু লিখিবার পর বায়োমেট্রিক ছাপ নেয়ার এক যন্ত্র আগাইয়া দিল দোকানদার, আঙ্গুলের ছাপ দিল ভানু কিন্তু কিছুই আসেনা। দোকানদার ভানু দুইজনেই চিন্তিত! তবে কি সীম কেনা হইবেনা? দোকানদার বলিল আপনি তো বিদেশি তাই আঙ্গুলের ছাপ মিলিতেসেনা, কিন্তু চিন্তা করিয়েননা গুরুজি, আগে থেকে ভেরিফাই করা কিছু সীম আছে তবে পয়সা একটু বেশিই দিতে হইবে। অনেক কষ্টে এক চিলতে হাসি আনিয়া গুরুজি বলিলেন তোরা পারিসও বটে, আঙ্গুলের ছাপও আগে থেকে নিয়ে নিয়েচিস। যা হোক বেশি দাম দিয়ে সিম কিনেই সামনের দিকে এগুতে থাকল কবি। দোকানদার বলিয়া দিল ৪৮ ঘন্টা পর সীম চালু হইবে গুরুজি...

অনেকদিন পর এসেছে, রাস্তাঘাট অচেনা মনে হইতেছে। তথাপি যে ভক্তের আমন্ত্রনে বাংলাদেশে আসিয়াছে তাহাকে মোবাইলে কল দিয়াছিল কিন্তু নাম্বার বন্ধ পাইয়াছে, ফোনে ভক্তকে পাইয়া গেলে ভাল হইত, যতদুর ভানু জানে এই মুহুর্তে তাহাকে এফডিসিতেই পাওয়া যাইবে, যেহেতু মোবাইলে পায়নি অতএব এফডিসির দিকেই যাওয়া হোক সিএঞ্জি বলে বার কয়েক হাক ছাড়লেও কেহই দাড়াইতেসেনা ! দুই একজন যাও দাড়াইলো, এত টাকা চাহিল মনে হইল ভাড়া নয় গাড়িখানার দাম চাহিতেসে ! ভানু বলিল ওহে বাছা, আমি গীতাঞ্জলি লিখিয়াও তো এত টাকা রয়ালিটি পাই নাই তুমি এত টাকা চাহিতেছ কেন?

ড্রাইভার নিরুত্তর! সিএঞ্জি চালকের ভাব দেখিয়া মনে হইল সে অটোচালক নয় অটোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি সুলতান সুলেমান! কি আর করা ভানু অবশেষে মিটার অতিরিক্ত ৫০ টাকা চুক্তিতেই সিএঞ্জিতে চড়িয়া বসিল। গন্তব্য এফডিসি। সিএঞ্জির দুলুনীতে একটু তন্দ্রা ভাব আসিয়াছিল ভানুর, আচমকা চোখ খুলিয়া দেখে চারিদিকে নানা কিসিমের দামী দামী গাড়ী, হেন কোন কোম্পানীর গাড়ী নাই যা আশেপাশে নাই ! আর সকল বাহন স্থির দাঁড়িয়ে আছে কি ভেপু বাজাইতেছে। সামনেও যায়না, পিছনেও যায়না। অটোচালককে জিজ্ঞাসা করিল বাছা এইটা কোন জায়গা? অটোচালক তো আর গুরুজীকে চেনেনা সে বলিলঃ
চাচা মিয়া আপ্নে ঘুম পাড়েন, আমরা এখন মিরপুর রোডে, সামনে রাস্তা কাটসে তারপর আবার একটু পরে ভিআইপি যাইব, রাস্তার সানডে মানডে কোলজ হইয়া গেসে।

গুরুজি আস্তে আস্তে বলিল ওরে আমিও তো তোদের দেশে ভিআইপি ছিলুম রে...তোরা পারলি আমাকেও জ্যামে আটকে রাখতে? এদিকে ঘন্টাখানিক কাটিয়া গেল রাস্তার জ্যাম আর ছোটেনা। দুই কদম এগোলে তিন কদম পেছোয়! গুরুজি আপনমনে ভাবিল, কত দেশেই তো গেলুম এই দেশের মত এত বড় ভিআইপি তো আর পেলুম না! প্রধান সড়ক এইভাবে বন্ধ করিয়া দেয়! যদিও শীতকাল তবুও ভানুর গরম লাগা শুরু হইয়াছে, গায়ের জোব্বাটা খোলা প্রয়োজন।
আচমকা অটোচালক বলিল চাচা মিয়া নামেন, আমার গ্যাস শেষ হইয়া আইছে আমি আপনারে এফডিসি পর্যন্ত নিতে পারুমনা আর যেই গিট্টূ লাগসে হাটা লন, গাড়ীর আগে পৌচাইতে পারবেন।

এই কথা শুনিয়া ভানু পুরাই তব্দা খেয়ে গেল! এখন সে কি করিবে? কোথায় যাইবে? মোবাইল চালু থাকিলে না হয় ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দিয়ে সাহায্য চাওয়া যাইত! এখন উপায় !

গুরুজি পড়েছে মহাবিপদে। একেতো রাস্তাঘাট ভাল চিনেনা তার উপর কোন বাসে ওঠার জো নাই, বাসের বাম্পার, রড ধরিয়াও তিন/চারজন ঝুলিতেসে! আবার যে ভক্তের আমন্ত্রনে এই দেশে আসিয়াছে তাহার সাথেই যোগাযোগ করিতে পারিতেসেনা... ভানু মনে মনে ভাবিতে লাগিল বাংলা সাহিত্যের লোককে রান্নার অনুষ্ঠানের প্রধান বিচারপতি যে করিতে পারে সে যত বড় ক্ষমতাবান ভক্তই হোক তাহাকে ভক্তকুল হইতে বহিস্কার করিতে হইবে। এই সব চিন্তা করিতে করিতেই লম্বা জোব্বা সামলাইয়া ভানু হাটিতে লাগিল, হাটিবে কোথায় ? ফুটপাথ বলিয়া তো আর কিছু অবশিষ্ট নাই, ৯০ ভাগ দখল, তার উপর আচমকা ভো ভো করিয়া কোথা হইতে যেন যান্ত্রিক দ্বি-চক্রযান ফুটপাথে আসিয়া পরে। মনে মনে ভানু আরো ভাবিতে লাগিল জরিপকারীরা এম্নিতেই তো ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায় রাখে নাই, তাহার যথেষ্ট কারন আছে বৈকি! ভালোয় ভালোয় এইবার বাড়ী ফিরিতে পারিলে এই নিয়া অতি অবশ্য একটি গান বাধিতে হইবে। ততক্ষনে দিনের আলো নিভিয়া আসিয়াছে, বারোরকম মানুষকে জিজ্ঞাসা করিতে করিতে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা আর গলিপথ ধরিয়া নিয়ন বাতির আলো আধারিতে এফডিসির উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে ভানুসিংহ...

ভিআইপি দের খপ্পর থেকে মুক্ত হয়ে ভানুসিংহ আদৌ সেদিন এফডিসিতে পৌছাইতে পারিয়াছিল কিনা, রান্নার অনুষ্ঠানে বিচারক হইয়াছিল কিনা, আমরা আর জানিতে পারিনাই।পরবর্তীতে আবার কোনদিন বাংলাদেশে তাঁহাকে কেউ আনিলে হয়তো জানা যাইবে...
০৮/০১/২০১৭ যুগান্তরের বিচ্ছুতে প্রকাশিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.