![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এখনো মনে পড়ে-___ জুয়েল মিয়াজি'এখনো মনে পড়ে'
~~~
নাভির নিচে প্যান্ট,চুলে এক্সেপশনাল কাটিং আর গায়ে সেন্ট মেখে স্টাইল করে হেটে স্কুলে আসার সে বয়সটা অনেক আনন্দের ছিল।আমরা যৌবনে পদার্পণ করার বয়সটি তাই সহজে ভুলি না,ভুলতে পারি না।মনে পড়ে তাই এখনো সেই মুখগুলি , সময়ের পরিবর্তে যারা অনেক বদলে গেছে।তাই এখনো বিগত স্মৃতি মনে পড়লে কষ্ট পাই মনে ঢের বেদনায়।বিশেষ করে যখন মনে পড়ে রাবেয়ার কথা। রাবেয়া, যে ষোড়শী ছিল,কলমিলতার মত ঠোট।মূলত সমস্ত শরীর জুড়েই তার অসাধারণ শিল্প । মাঝেমাঝে এলোমেলো বাতাসে রসুন রঙের ঘাড়ের উপর খোলাচুল উড়তে থাকতো। ফলে দুষ্ট বালকেরা সেদিক তাকিয়ে রাতের ঘুম হারাম করতো।পরিণামে পরদিন দিনের বেলায় ক্লাসে একলা এক কিশোরীর উপর রোমান্টিক প্রতিশোধে মেতে উঠতো সকলে । অকারণে ওকে কথার মাধ্যমে খোঁচা দিয়ে বন্ধুরা পৈশাচিক সুখ পেতো। রাবেয়া লজ্জায় লাল হতো,নাকের উপর ছোট ছোট ঘামের ফোটা দেখা যেত। ফলে ওর বেহাল অবস্থা বন্ধুদের স্বস্তি দিতো দারুণ ভাবে। ও কে এভাবে নাস্তানাবুদ করে তাই সফলকাম হওয়ার পর ছুটির সময় হৈ হৈ রৈ রৈ আওয়াজ তুলে স্কুল আঙিনা ত্যাগ করতো বন্ধুরা । এভাবেই রাগ অভিমান ভালোবাসা আর ফাজলামির মাধ্যমে তার সাথে বন্ধুত্ব হয় আমাদের, বিশেভাবে আমার।
ক্লাস নাইনে পড়ি তখন।বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়াদের মধ্যে আমি রাবেয়া একই গ্রামের ছিলাম,সে সুবাদে সখ্যতা ভালোভাবে গড়ে উঠেছিল। সে সময় আমাদের এলাকার মেয়েরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইতো না।যদিও তারা গণিত বিজ্ঞান ভালোই বুঝত,কিন্তু তারপরও তাদের বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইন্টারেস্টিং থাকতো না।কারণ এলাকায় এই নিয়ে একটা ট্যাবু ছিল। উপরের ক্লাসের অাপুরা জুনিয়রদের বুঝাতো যে বিজ্ঞানে পড়লে অনেক টাকা লাগে, অনেক কঠিন পড়া,জীববিজ্ঞান বইয়ে যত্তসব খারাপ খারাপ কথা,ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে না পড়াই ভালো কারণ মেয়েরা কি আর ব্যবসা করবে? সুতরাং মানবিকে পড়,গার্হস্থ্য অর্থনীতি পড়,ভালো করতে পারবে,এই ব্যতিরেকে উপায় নেই।কিন্তু রাবেয়ার বোধ হয় উপায় ছিল। সে বড়দের পরামর্শ মানে নি।কারণ রাবেয়ার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। বড় ফ্রেমের চশমা দিয়ে, কাঁধে কাঁধ ব্যাগ নিয়ে আমাদের এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী বিউটি মুন্সীর মত রাবেয়া স্বাস্থ্যসেবা দিবে। দুমিনিটের জন্য রাবেয়াকে ডাক্তার কল্পনা করে মনে মনে হাসি জাগে আমাদের ।কিন্তু ঠাট্টাতামাসা আর মনে মনে হয় না ।অতিরিক্ত প্রশংসার বাণী বলার ছলে, টিটকিরি করতো বন্ধুরা ।সম্ভবত এই কারণেই অন্যমেয়েরা এই ঝুঁকিটি নিল না। তাই পুরো বিজ্ঞান বিভাগে রাবেয়া একজন মাত্র মেয়ে ছিল। এই সুযোগ পেয়ে তাকে পঁচাতে একটুও কৃপণতা করা হয়নি।জীববিজ্ঞান ব্যাবহারিক ক্লাসে বারবার মুখ মুছতে মুছতে চেহারা লাল হয়ে যেতো , ঠোটের কৃত্রিম লালরঙ লেপ্টে যেতো। তবুও মন্ধ লাগতো না। রাবেয়া নিজেকে সামলে নিত, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতো, কিন্তু শনিবার এলে একটু বেশিই হেনস্থ হতে হয় ।কারণ শনিবার জীববিজ্ঞান ব্যাবহারিক ক্লাস হতো । জীববিজ্ঞান বইয়ের সব অধ্যায় বুঝা যেতো , শুধু বুঝা কঠিন জীববিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় কোষ বিভাজন টপিকস।তাই একই অধ্যায় স্যার বারবার পড়াতে পড়াতে বিরক্ত হতো।ক্লাসে জুনায়েদ জানতে চাইতো স্যার ক্রোমোসোম কাকে বলে? রমিজের প্রশ্ন স্যার সেক্স ক্রোমোসোম কি? সালাউদ্দিনের কোন ভাই নাই এর জন্য কে দায়ী ওর মা নাকি বাপ?স্যার এক্স ওয়াই দ্বারা কি বুঝায়? এভাবে বুলেটের মত চারদিক থেকে প্রশ্ন আসতো স্যারের কাণে। ফলে একসাথে এতগুলি প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে স্যার হয়রান হতো,এত বেশি যে বারবার ঢোক গিলতে হয় তাই মাঝেমাঝে সামনের দাঁতহীন চোয়ালের ফাঁক দিয়ে জিহ্বা বের হতো স্বাভাবিক নিয়মে,কিন্তু বিষয়টা মোটেই স্বাভাবিক ভাবে নিতো না কেহই।এই নিয়ে গল্প হতো ছুটির পর, রাস্তায় রাস্তায়।কেন স্যার জিহ্বা বের করলো? লুচ্চা কাশেমের নজর খারাপ, এটা মন্ধের ভালো গালি ছিল, রেগে গেলে এরচেয়েও নিকৃষ্ট গালিগালাজ করতো বন্ধুরা।এভাবে স্কুল ছুটি হওয়ার পর বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার গল্প করেই একঘন্টার পথ পাড়ি দিতাম আমরা।আড্ডার গল্পগুলি ছিল দুই টাইফের ।রাবেয়ার সাথে যখন হাটতাম তখন গল্প ছিল ছেলেমির আবার তাকে ছেড়ে বন্ধুদের কাছে আসলে ছেলেমি গল্পগুলি পূর্ণ বয়স্ক হয়ে যেতো। একেরপর এক গল্পের বাণী, মজার মজার বয়স্কা কবিতা ছড়া, জ্ঞানগর্ভ বক্তব্যে কাণ ঝালাপালা হয়ে যেতো আমাদের।একটি শেষ হলে আরেকটি টপিকস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।সাধারণত আমাদের সে সময়ের গল্পগুলি অন্যকারো কাছে বলা যেতো না,এ কারণেই আমাদের সকল গল্প শেয়ার করা হতো বন্ধুদের কাছে।ছোটবেলায় রাতে মধুর স্বপ্ন দেখে বড়দের কাছে বললে তারা খুশি হতো।স্বপ্নে দেখা চাঁদের মা বুড়ির গল্প বলার মাঝে অসাধারণ মজা ছিল,তাই বড়রা আগ্রহের সাথে শুনতেন,মজা পেতেন ।কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালের স্বপ্নে দেখা গল্প গুলি কেউ শোনে না।।ছোটবেলায় স্বপ্নে দেখা চাঁদের বুড়ি বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছুড়ি হয়ে যায়,সারা শরীরে তার যৌবন থাকে।টলমলে যৌবন নিয়ে সে পনেরো ষোল বছর বয়সী ছেলেদের স্বপ্নে এসে ধরা দেয়,ঘুম নষ্ট করে দেয় শেষ রাতের। গরমে পোশাক গায়ের সাথে আঠার মত মিশে থাকে, প্রচুর ভয় লাগতো কেউ যদি দেখে ফেলে!এসময় বড় ভাই বোনদের সাথে মিশলে অকালপক্ব আবার ছোটদের সাথে চললে ব্যক্তিত্ব কমে যায়।তাই আমাদের সকল গল্প, সকল সুখ দুখের গল্প শেয়ার করতাম নিজেদের সাথে।প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর নিজেদের সুখ দুখ চাওয়া পাওয়া না পাওয়ার গল্প নিয়ে গল্প করতাম । একবার আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সাজ্জাদের একটা বেহায়া অসুখ হয়েছিল।প্রতিদিন ঘুমের মধ্যে সে বিদেশী নায়িকাদের নিয়ে স্বপ্নে দেখে।এই নিয়ে প্রতিদিন দুঃখ প্রকাশ করে,সে কেন বাস্তবে দেখা দেয় না।সাজ্জাদ সমাধান চায়।আমরা সবাই সমাধান দিতাম বিজ্ঞের মত করে। আড্ডায় জুনায়েদও তার সমস্যার কথা জানায়, জুনায়েদ এর সুপারি রোগ হয়েছে!কিন্তু কি এই সুপারি রোগ। সেটা প্রথমে আমরা কেউই বুঝেনি।অবশ্য এক্ষেত্রে রমিজ তার পান্ডিত্য প্রকাশের সুযোগ পেয়েছিল, ষোল সতের বছর বয়সের ছেলেদের ব্রেস্ট একটু স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি প্রশমিত হয়।এটাকে সুপারি রোগ বলা হয়।আর এই রোগের প্রতিষেধক হলো সুপারি গাছ। প্রতিদিন সকালে সুপারি গাছের সাথে কোলাকুলি করলে এই হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।তাই রমিজ জুনায়েদ কে উপদেশ দেয় কোলাকোলি করার, কিন্তু এতে রাজি হলে রমিজ জুনায়েদ এর ওস্তাদ হয়ে যাবে ।তাই জুনায়েদ বলল,ধুর কি সব কচুুর কথা বলস! এগুলি নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যায়।সুতরাং তুমি চুপ মার! রমিজ চুপ মারে!এভাবে গল্পে গল্পে সময় কেটে যায়,রাস্তা ফুরিয়ে যায়।গত হয়ে যায় স্কুলজীবনের সোনালী দিনগুলি।
আমার স্কুল লাইফ যতটুকু আনন্দের ছিল, কলেজ লাইফ ততটুকু বেদনার। কলেজ জীবন আগের বন্ধুহীন নিঃসঙ্গতায় কাটে। নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল বেশ।সব দোষ ছিল ঐ প্রফেসরটার। প্রফেসরের সাথে বড় ভাইয়ের ভালো সম্পর্ক ছিল।তাই তিনি তার পরামর্শে পাশের উপজেলার কলেজে ভর্তি করান ।সেখানে কেউ চেনাশোনা ছিল না।তাই নতুনদের সাথে মিশতে লাগলাম , পুরাতনদের ভোলার জন্য।কিন্তু কারো কারো জন্য ভুলে যাওয়া কঠিন।সময়ের নিঠুরতার জন্য নতুন মানুষ, নতুন নতুন বইপুস্তক, শিক্ষক পেয়ে সাবেকদের ভুলতে চাইলেও, পারতাম না।বিশেষ করে কখনো রাবেয়ার কথা ভুলতে পারি নি।প্রতি শুক্রবারে ছাত্রাবাস থেকে না বলে চলে আসতাম।ওদের বাড়ির পুকুরেরপাড়ে বসে গল্প করতাম।রাবেয়া তখন মিশুকে হয়েছিল।বন্ধু তো বন্ধুই,মূলত সেটাই বুঝতো সে। প্রথমে সাজ্জাদ জুনায়েদ এর সাথে যে গল্প করতাম কলেজে উঠে সে গল্প করা হতো ওর সাথে।রাবেয়া কিছু মনে করে না,উল্টো বিনোদন পেতো ।হাসির ছলে!সিনেমার কথা, গল্পের কথা, উপন্যাসের কথা, প্রেমের কথা, জীবনের কথাসহ নানান কথা নিয়ে আড্ডা জমে।একদিন আড্ডায় নানা কথার মধ্যে রাবেয়া জানতে চাইলো, আমার কলেজের মেয়েগুলি দেখতে কেমন? কাউকে আমি ভালোবাসি কি না।আমি একটু লজ্জিত হলাম,লজ্জায় প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম,কিন্তু রাবেয়া চালাক!আবারো প্রশ্ন করলো,পরে লজ্জিত কন্ঠে বললাম।নাহ।তুই? তুই কারো সাথে প্রেম করস রাবেয়া? রাবেয়া হাসে! হো হো করে হাসে।তারপর দৌড় দিয়ে বাড়িতে চলে যায়।সেদিনের মত অাড্ডার সমাপ্তি হয়,গোধূলি লগণ চলে আসে।এরপর লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে প্রতি শুক্রবারের আড্ডায় রাবেয়াকে জিঙ্গেস করতাম সে একই প্রশ্ন,রাবেয়া তোমার কলেজের কাউকে ভালোবাস কি না?রাবেয়া বলতো না শুধু হাসতো।আমিও শেষমেশ ধমে যাই।
এরপর ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারের উঠে পড়ার চাপ বেড়ে যায় আমাদের।তাই দুজনার মধ্যে যথেষ্ট ফারাক দেখা যায়।রাবেয়াকে খবর পাঠালেও দেখা করতো না।বড় ভাইয়ের মোবাইলে লুকিয়ে রাবেয়াকে মেসেজ দিতাম, রিপ্লাই দিত না।কেন রাবেয়া রিপ্লাই দেয়না,চিন্তিত হতাম অসুখ বিসুখ হলো কিনা কে জানে!তাই তৎক্ষনাৎ পঞ্চাশ টাকা মানত করে ফেলি!অনেক বিশ্বাসের সাথে। কথিত আছে আমাদের বাড়ির পাশের দরগাহটি অনেক গরম,পূর্বে পীর আউলিয়াদের বসবাস ছিল এখানে।তাই বটগাছের পাশের দানবাক্সে টাকা দিলে আশাপূরণ হয়।এই নিয়ে অনেক নজির আছে, এছাড়া আমি নিজেও প্রমান পেয়েছি।স্কুল পড়াকালীন একবার স্বদেশ স্যার অনেক বাড়ির কাজ দিয়েছিল। অনেকদিন পর বাসায় মেহমান এসেছিল,তাই খামখেয়ালি করে কিছুই পড়িনি,অন্য বন্ধুরাও পড়েনি। কিন্তু পড়া না পড়লে তো রক্ষে নেই!।তাই আমরা ছেলেরা তৎক্ষনাৎ মানত করে ফেললাম,স্বদেশ স্যার যদি স্কুলে না যায়,তবে দরগায় পাঁচটাকা দিব।আমরা অবাক সবাই সত্যি! সত্যিই সেদিন স্বদেশ স্যার স্কুলে যেতে পারে নি,মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্যার হাতভেঙে ফেলেন।ফলে একমাস আমরা স্বদেশ স্যারের হাত থেকে নিরাপদ ছিলাম।সে থেকে দরগাহ ' র প্রতি আমার/ আমাদের অগাধ বিশ্বাস। তাই অাশা এবারো দরগাহ ' মানত আমার বৃথা যাবে না। ভাবী টাকা দিলেন।সিলেবাস কেনার কথা বলে , ভাবীর কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা নিতে গেলে ভাবী রেগে যান। গৃহিণীদের কাছে অতিরিক্ত টাকা থাকে না,আমি কেন এই সহজ কথাটি বুঝিনা তাই ভাবী শাসালেন। কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। ছোটভাইকে দিয়ে গল্প সাজালাম। ভাবী! ভাবী! একটা হেল্প করবে প্লিজ! ভাবী বুঝতে পারলেন যে আবদারটা অর্থ বিষয়ক।তাই তিনি আগেই বলে বসলেন টাকা ছাড়া অন্য যেকোন হেল্প করতে রাজি আছি।কি বলবে বল।ছোট ভাই রাহিম, অনুনয় করলো।ভাবীর ছেলেপুলে ছিলনা তাই মাতৃত্বেরর অভাবে ভাবীর দিলদরিয়া একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু ভালোবাসা দিলে তো মরুভূমিতেও ফসল ফলে, ছোট ভাই রাহিম ভাবীর কোলে শুয়ে পড়লো, দুহাত দিয়ে ভাবীকে জড়ায়ে ধরে আদো আদো আবদারে, ভাবীর মনে ভালোবাসা জাগে।সেদিন ভাবীর কাছ থেকে আনা রাহিমের টাকা নিয়ে দরগাহ যাওয়ার পথেই রাবেয়ার ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হয়।কি ব্যাপার মনজু।কেমন আছ?মনজু ভালো আছে এবং তার বোনও ভালো আছে। তবে তার বোন কেন ঘরের বাহির হয় না, জানতে চাইলে মনজু জানায় তার বোন মেধাবী ছাত্রী, সে সারাদিনরাত পড়ে, কারণ যেভাবেই হোক মেডিকেলে চান্স পেতে হবে ।অামিও চাই যাতে রাবেয়া মেডিকেলে চান্স পায়।তাই আবারো পঞ্চাশ টাকা মানত করলাম।সৌভাগ্যজনক আমার পরের মানতটিও পূরণ হয়।আমাদের বন্ধুমহলের মধ্যে রাবেয়া, জুনায়েদ চট্টগ্রাম মেডিকেলে চান্স পায়,রমিজ চান্স পায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ময়মনসিংহ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকীরা ভর্তি হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজে ।
ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর আগের মত পুরাতন বন্ধুদের কথা খুব বেশি মনে পড়তো না।নতুন বন্ধুরা নিঠুর ভাবে পুরাতন বন্ধুদের ভুলিয়ে দিয়েছে।কিন্তু রাবেয়া সব বন্ধুর মত নয়।বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শ্যামবর্ণ মেয়ের লাল লিপিস্টিক মাখা মুখ দেখে থমকে উঠেছি,কলিজায় ধাক্কা দিয়েছে।শ্যামবর্ণের মাঝারি গড়নের মেয়ে দেখলে রাবেয়ার কথা মনে আসতো। তাই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ওর সাথে অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করি । ফেসবুকে ওর নাম নাম্বার লিখে অনেক চার্চ করেছি,ফলাফল শূন্য। ওর ঠিকানা হয়তো জুনায়েদ জানবে, তাই অভিমান ভুলে জুনায়েদ এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম।কারো সাথে অভিমান করে নিজ থেকে সন্ধির চেষ্টা কিংবা আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয়,কিন্তু তাতে কি! এছাড়া জুনায়েদ এর সাথে আমার মনোমালিন্য রাবেয়াকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।একদিন স্কুল ছুটির পর হাসির ছলে জুনায়েদ রাবেয়াকে অশ্লীল কথা বলে, এতে রাবেয়া রেগে গিয়ে বাকবিতণ্ডা বাধায়,আমি নিরপেক্ষ ছিলাম না, রাবেয়ার পক্ষ হয়ে একটু বেশিই বলে ফেলেছিলাম ছেলেটাকে।সে থেকে মনোমালিন্য, সে থেকে আমাদের কথা হয় নি ।সেসময় মাঝেমাঝে বিকেলের আড্ডায় রাবেয়াই ওর কথা বলতো, প্রশংসার সুরেই বলতো।জানিস ফাহিম, জুনায়েদ অনেক পড়ে, বিজ্ঞান বিভাগে ফার্স্ট বয় সে। আমি কোন কথা বলিনি, কারণ ওতে আমার ইন্টারেস্ট ছিল না।কিন্তু স্বার্থের জন্য ওর সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়ে যায়, জুনায়েদের ফোন নাম্বার কালেক্ট করে ওকে ফোন দেই কিন্তু জুনায়েদ ফোন রিসিভড করে নি। ভাগ্য নিদারুণ খারাপ!দরগাহে মানত করেও উপকার পাওয়া যায় না।তাই সর্বধা মন খারাপ থাকতো কবে তার সাথে দেখা করবো।প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি।এভাবে অপেক্ষায় অপেক্ষায় কেটে গেলো অনার্স লাইফ।
মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারে একশুক্রবারের সকাল অামার জীবনের অন্যরকম একটা সকাল ছিল।সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি একটা অপরিচিত আইডি থেকে রিকোয়েস্ট মেসেজ এসেছে।রিকোয়েস্ট একচেপ্ট করে এন্জেল নীলিমা টাইমলাইনে ঢুকে দেখলাম এই সেই রাবেয়া যাকে আমি খুজি মনে মনে, আনমনে।কেমন আছ রাবেয়া? রাবেয়া মেসেজ সিন করে, কিন্তু জবাব দেয় না।কি হলো রাবেয়া কথা বলছ না কেন? রাবেয়া কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই দেয়।
: আজ আমার মন ভালো নেই।ব্রেকআফ হওয়ার পথে!
ওহ! ছেলেটা কে?
রাবেয়া ব্যথাতুর কন্ঠে জবাব দেয়,ছেলেটার নাম জুনায়েদ। মেডিকেলে পড়াকালীন তাদের প্রেম হয়। কদিন ধরে জুনায়েদকে বাড়ি থেকে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু রাবেয়ার মা বাবা মেয়েকে এখন বিয়ে দিবে না।তাই আমার কাছে রাবেয়ার আবদার আমি যেনো তার হয়ে কথা বল,তাদের মা বাবাকে বুঝাই।আমি কিছু বললাম না,ওপাশ থেকে আসা চাপাকান্না আমাকে চুপ করে দিল।তারপর সেদিন রাতই চাঁদপুর রওনা হই।শ্রাবনের বৃষ্টি তখনো থামেনি।সারাবেলা রিমঝিম বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে প্রথমে ওদের বাসা গেলাম।জুনায়েদের মা বাবাকেও বুঝালাম।এলাকার পরিচিতদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকদের রাজি করালাম। তারপর....।তারপর সানাইয়ের সুর বাজতে লাগলে,বাড়ির উঠোন থেকে রাস্তা থেকে লাল নীল বাতি জ্বলতে লাগলো। বৃষ্টিস্নাত শ্রাবণ সন্ধ্যায় রাবেয়া জুনায়েদকে নিয়ে ব্যস্ত যখন সবাই তখন আমি বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম।সে থেকে এখনো শ্রাবণের সন্ধ্যায় এলে বৃষ্টিতে ভিজি। লোক মারফত একথা শুনতে পেয়ে রাবেয়া এখন মস্কারা করে আমার সাথে । পাগল বলে ক্ষ্যাপায়। কিন্তু মন খারাপ হয় না। উল্টো হাসি পায়।হাসতে হাসতে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকি।একবৃষ্টির সাথে মিশে একাকার হয়ে যায় তখন আরেক বৃষ্টি। সেটা রাবেয়া জানে না,হয়তো কখনো সে জানবেও না।
লেখক
জুয়েল মিয়াজি।
©somewhere in net ltd.