![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভারত-পাকিস্তানের ৩য় যুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম হয় নতুন একটি রাষ্ট্র। যার নাম বাংলাদেশ। ভারতের গুন্ডে নামের এক সিনেমার প্রারম্ভ লাইন ছিল এটি। ইতিহাস বিকৃতি বলে বাংলাদেশিরা চিল্লাইলেও ভারতের একটা চুল ও বাঁকা করতে পারে নাই। ভারত এই সিনেমা নিষিদ্ধ করে নাই। এমনকি বাংলাদেশ সরকার ও এই দেশে নিষিদ্ধ করে নাই। বাংলাদেশিরা চিল্লিয়ে লাভ তো কিছু হয় ই নাই বরং বিশ্ব ব্যপি অনেক পাবলিসিটি পেয়েছে এই সিনেমা। যাক সে কথা। আজকে আমেরিকার চ্যানেল ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখতেছিলাম। বাংলাদেশে যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখা যায় সেটা হল ন্যাশনাল জিওগ্রাফি (ইন্ডিয়া)। তাদের নতুন একটা শোঃ “ইনসাইড ইন্ডিয়ান আর্মি।” শো টা শুরু হয় ইন্ডিয়ান আর্মির বীরত্ব গাথা নিয়ে। সেখানে ১৯৪৭ সালে এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানকে তারা কিভাবে যুদ্ধে হারায় সেটা বলা হয়। তবে ভারতীয় সৈনিক দের সবচেয়ে বড় বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১৯৭১ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকে। হুবুহু এই লিখার প্রথম লাইন টাই বলে বীরত্ব দেওয়া হয় তাদের।
এই লিখাটা লিখার কারণ কিছু ফ্যাক্ট অনুসন্ধান করা। বিগত এক বছর আমি ইন্টারনেট এ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতীয় মনোভাব সম্পর্কে পড়ছি। এর আগে পাকিস্তানি মনোভাব সম্পর্কে আর বাংলাদেশী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতাম। ১৯৭১ সালে যে যুদ্ধ হয় সেটার ৩ টা নাম ৩ টি দেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। বাংলাদেশে যা মুক্তিযুদ্ধ, ভারতে তা “পাক-ভারত ৩য় যুদ্ধ”, পাকিস্তানে তা “ভারতের চক্রান্তে গৃহযুদ্ধ”। ইতিহাস কি বিচিত্র!! যার যেমন খুশি সেভাবে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে নিয়েছে। ভারতের ও পাকিস্তানের পাঠ্য বইয়ে এই যুদ্ধ সম্পর্কে পড়ানো হয়। পাকিস্তানি পাঠ্য বই গুলা এমন ভাবে লিখা যেন পাকিস্তানিরা ভারতকে অনেক অনেক ঘৃণা করে। ১৯৪৭ এ ভারত কিভাবে কাশ্মীর দখল করলো; তারপর ১৯৬৫ সালে সেই কাশ্মীরকে স্বাধীন করার জন্য পাকিস্তানি সৈন্যরা কিভাবে বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করেছিলো এবং জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে সেই যুদ্ধ না থামলে পাকিস্তানই সেই যুদ্ধে জয়ী হত। এমনটাই লিখা পাকিস্তানী ইতিহাসে।
পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করে ইয়াহিয়া খানকে। পাকিস্তানী ইতিহাসে ইয়াহিয়া একটা নর পিচাশ। ইয়াহিয়া কে ঘৃণা করার অবশ্য আরও কিছু কারণ আছে। পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। “মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র”। এই শ্লোগানের ফলাফল ছিল, পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের জন্মের মূল কারণ। আর ইয়াহিয়া ছিল একজন কম্যুনিস্ট। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান যে অত্যাচার করেছে বাংলাদেশীদের উপর, তার জন্য একমাত্র দায়ী ব্যক্তি হল ইয়াহিয়া। সে ছিল চরম জাতীয়তাবাদী মানুষ। আর ধর্মকে বাদ দিয়ে এলাকা কেন্দ্রিক জাতীয়তা ছিল পাকিস্তান জন্মের পরিপন্থী। তাই সমগ্র পাকিস্তানের ইতিহাসে ইয়াহিয়া ঘৃণ্য ব্যক্তি। এরপর তারা ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিব সবাইকেই দায়ী করে।
অন্যদিকে ভারতের ইতিহাস পুরাই বিপরীত। শুধু দুটি ভূখণ্ডের আলাদা নাম হওয়ার কারনেই পাল্টে গেছে পুরা ইতিহাস। ১৯৪৭ সালের অক্টবরে যে যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল কাশ্মীর নিয়ে তা ছিল ভারতের জন্য তাদের নিজ ভুমি ফিরে পাবার যুদ্ধ। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ভারত কাশ্মীরের সিংহভাগের অধিকার পায়। আর কিছু অংশের অধিকার পায় পাকিস্তান। অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে ১৩,০০০ বর্গ কিমির মত জায়গা পাকিস্তানের কাছে হারালেও ভারত সেই যুদ্ধে জয়ী দাবী করে। কারণ আনসেটেল ২৩৫০০০ বর্গ কিমি মত জম্মু কাশ্মীরের ২২২০০০ বর্গ কিমি জায়গার অধিকার পায় ভারত। সে যাই হোক; এবার ভারতীয়দের মতে ১৯৭১ প্রসঙ্গে আসা যাক। এইটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ; কারণ ভারতের মতে ১৯৭১ এর ইতিহাস যেভাবে লিখা আছে, পুরা বিশ্বের কাছেও ইতিহাস তেমন ই। সমগ্র বিশ্ব ভারতের লিখা ইতিহাসকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারতের মতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এবং শেষ হয় ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে। ১৬ ডিসেম্বর পাকি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে। তাদের মতে; এই দেশে কোন গৃহযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। ৬ ডিসেম্বরের আগে যা হয়েছে তা হল, পাকিরা নির্যাতন করেছে আর বাঙ্গালিরা নির্যাতিত হয়েছে। কিছু বাংলাদেশী, এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন করার জন্য ভারতে গিয়ে সমর প্রস্তুতি নিয়েছে এবং দেশে হালকা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তেমন কোন কাজ হয় নাই। ৬ ডিসেম্বর ভুট্টু সাহেব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে সামরিক আগ্রাসন বিরতির কাগজ যা ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় তা ছিঁড়ে ফেলার পর উভয় দেশের সম্পর্কের অবনতি হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে ভারত পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করে। ৯ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ভারত পাকিস্তানকে পরাজিত করে আর জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
সমগ্র বিশ্বের ভারতের ইতিহাস টা আদর্শ হিসেবে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। বিশ্ব ইমশন দেখেনি। বরং প্রমান দেখেছে। ভারত জাতিসংঘ এবং পুরা বিশ্বকে দেখাতে সমর্থ হয়েছে যে, তাদের ইতিহাসই সঠিক। আমরা যতই চিল্লাই না কেন কোন লাভ নাই। ৯ মাসে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু আর ১১ সেক্টরে ভাগ হয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সেই ইতিহাস ১৪৭৫৭০ বর্গ কিমি জায়গার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর এরকম হওয়ার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিল ভারতের জাদুঘরে। এইটা কি বিশ্ববাসীর দোষ? বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলে সাইন আছে ভারত আর পাকিস্তানের। যত বিশ্বাসযোগ্য ভিডিও ফুটেজ আছে মুক্তিযুদ্ধের, সেখানে আছে কেবল কয়েকটা জিনিস। বাংলাদেশিরা ভারতে সমর প্রশিক্ষণরত; মানুষ ভয়ে দৌড়াচ্ছে; ভারতীয় ও রাশিয়ার বিমান থেকে গোলা বারুদ পড়ছে; ভারতীয় সৈন্যরা ঢাকার রাস্তায় মানুষকে অভিবাদন জানাচ্ছে আর ভারত ও পাকিস্তানী সেনা প্রধানদয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিল সই করছে। তাই বিশ্ববাসীকে দোষ দিয়ে কি লাভ? এইটা থেকে অবশ্য একটা শিক্ষা পাওয়া যায়ঃ There are no authentic histories in the world. Believing any history is foolishness.
©somewhere in net ltd.