নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাহিদমধু

জাহিদমধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরব যন্ত্রণা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

রসূলপুর গ্রামে রমমো নামে এক ছেলে হত-দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করে। সে যেমনটা ছিল নম্র, ভদ্র তেমনী সৎ। নম্র, ভদ্র ছিল বলে এলাকার লোকজন তাকে ভাল দৃষ্টিতে দেখত। বাবার টানাপুড়া সংসার তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনী। রমমো পাশ্ব পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে বন্ধু মারডিন ও বান্ধবী ডিবিয়ার দেওয়া অর্থনৈিতক সহযোগিতায় এম.এ পাশ করে। এম.এ পাশ করার পর একটা চাকরির জন্য মানুষের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরেছে কিন্তু রমমো চাকরি পাইনী। মামা-খালু এবং টাকার (ঘুষের) জোর না থাকিলে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে চাকরি পাওয়া কঠিন। কয়েকটি ভাইভা পরীক্ষা দেওয়ার পরও যখন ঘুষের জন্য রমমোর চাকরি হয় না, তখন রমমোর মতো লোকদের দুঃখের শেষ নেই। অভাব অনটনের সংসারে রমমোর বাবার পক্ষে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া সম্ভব না। সোনার হরিণ নামে সরকারী চাকরি পাওয়ার আশায় রমমো ভাবনা নামে এক ধার্মিক মেয়েকে বিয়ে করেন। ভাবনা যেমনটা ছিল নামাজি তেমনি ছিল ভদ্র। ভাবনার জীবনে একটা বড় ধরনের সমস্যা আছে। সমস্যা টা জেনেও আমি ভাবনাকে বিয়ে করি এবং আল্লাহর বান্দা হিসাবে আমি তাকে কখনও ছোট করে দেখি নাই। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল তার বাবা-মা ও ভাই (বিয়ের পর রমমো ভাবনার পরিবার সম্পর্কে জানতে পারে)। যেহেতু রমমোর বাবার কোন জমি-জমা এবং বাড়ীর ভিটে ছাড়া কিছুই ছিল না। তখন ভাবনার বাবা-মা ও ভাইয়ের কথার রসে ডুবে পড়ে রমমো ভাবনাকে বিয়ে করতে সম্মত হয়। চাকরির জন্য যেহেতু রমমো বিয়ে করেছে সেহেতু চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। চাকরির রিটেন্ট পরীক্ষার জন্য যখন রিটেন্ট কার্ড বের হতে দেরি হচ্ছে তখন শ্বশুর আব্বাকে রমমো বলে আব্বু আমার সরকারী চাকরি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে ভাল একটা পদে ডুকিয়ে দেন। রমমোর কথার প্রেক্ষিতে ভাবনার বাবা আমাকে বলে-তোমাকে যদি উক্ত পদে (মাষ্টার রোল) ডুকিয়ে দেই তাহলে কিন্তু আমি সরকারী চাকরি নিয়ে দিমু না। রমমো এ কথা শুনার পর বলল-আব্বু ঐ চাকরি আমার লাগবে না। আমার সরকারী চাকরি লাগবে। রমমো মনে মনে বলে তারা কি তাদের মেয়ের উন্নতি চায় নাকি আমাকে জিম্মি করে রাখতে চায়। তবুও আনন্দের মাঝে চলতে থাকে টুনাটুনির ছোট সংসার। বিয়ের সময়সীমা কয়েক মাস চলার পর রমমো জানতে পারে যে, ভাবনার বাবা-মা ও ভাই অর্থাৎ ভাবনার পরিবার এক নম্বর চিটিংবাজ, ধাপ্পাবাজ, চাঁপাবাজ। ভাবনার বাবা-মা ও ভাই এরা ছিল মুখোশধারী শয়তান। তাই তো রমমো সবসময় শতর্ক থেকেছে। এদের মুখের কথা শুনলে আপনি নিজেও নিজেকে ভুলে যাবেন। ১০০% গ্যারান্টি । রমমো অনুধাবন করতে পারে যে, ভাবনার বাবা, মা ও ভাই ইন্টারন্যাশনাল ধান্দাবাজ লোক। তারা মানুষকে ঠকিয়েই যেন শান্তি পায়। মানুষকে ঠকানোই তাদের কর্ম। এখানে একটা উদাহরণ থাকে যে, রমমো একটি প্রাইভেট অফিসে চাকরি করতঃ এবং অন্য অফিসে চাকরি করতঃ ভাবনার বাবা ও ভাই। তারা কি যেন তাদের কর্মরত অফিসে অকারেন্স করে। এমন কি অকারেন্স করার সময় ভাবনার ভাই সরাসরি কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পড়ে। যেহেতু ভাবনার বাবা থানা পর্যায়ের একজন নেতা ছিল তাই উক্ত অকারেন্সে ভাবনার বাবা ও ভাইয়ের শাস্তি হল না। ভাবনার বাবার কর্তৃপক্ষকে মেনেজ করে রমমোর উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে ভাবনার ভাইকে বাঁচিয়ে নেয়। অথচ এই অকারেন্স সম্পর্কে রমমো কিছুই জানেনা। সুতরাং রমমোকে অপরাধী বানালো। তাই অপরাধীর শাস্তি গিয়ে পড়ল হত দরিদ্র গরীব ঘরের ছেলে রমমোর উপর। অফিস কর্তৃপক্ষ রমমোকে এক সপ্তাহ সাসপেন্ড করে রাখে। সাসপেন্ড সপ্তাহ না পেরোতেই রমমোকে ডিমুশন করে দুরে একটি অফিসে বদলী করে দেয়। তবুও রমমো সবকিছু মেনে নিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় চলার চেষ্টা করে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রমমোর এ শাস্তির জন্য আসল অপরাধী ভাবনার ভাই নিরবকে শুধু Sorry বলে। ভাবনার ভাই আরও বলে যে এটা আমার জন্যই হয়েছে। তবু্ও রমমো ভাবনার ভাইকে কিছুই বলেনী। বদলীকৃত অফিসে ভাল ভাবেই অফিস করতে থাকে রমমোর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাস্তি পাওয়া রমমোর আচার ব্যবহার দেখে কর্তৃপক্ষ প্রশংসিত করে। একদিন রমমোকে তার কর্তৃপক্ষরা ডেকে নিয়ে বলে তুমি আসলেই পরিস্থিতির স্বীকার। রমমো কর্তৃপক্ষের কথা শুনে নিজেকে হালকা মনে করে। কারণ যারা রমমোকে শাস্তি দিয়ে ছিল তারাই আজ বলে রমমোর কোন দোষ নাই। ভাবনার বাবা রমমোকে যা যা দেওয়ার কথা ছিল যেমন-চাকরি, বাড়ী করে দেওয়া, সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া, বিভিন্ন ভাবে আর্থিক এবং অন্যান্য ভাবে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। তা তো ভাবনার বাবা রমমো কে দেয়ীনী শুধু তাই নয় ভাবনার বাবার বক্তব্য সম্প্রতি চাকরির রিটেন্ট পরীক্ষায় প্রকাশিত রেজাল্ট ভাল করা এটা ভাবনার বাবার অবদান। ভাবনার বাবার মুখ থেকে এ কথা শুনার পর রমমো খুব কষ্ট পায়। কষ্টের মাঝে রমমো মনে মনে বলে আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা চাকরি হলেই OK। রমমো ভাবনার(বাবা, মা ও ভাই) পরিবার মানুষের সাথে প্রতারণা করার প্রমাণ পায়। মানুষকে ঠকিয়ে চলাই তাদের অভ্যাস। তাদের এমন আচরণে রমমো ভাবনার পরিবার থেকে ভাবনাকে নিয়ে আলাদা ভাবে থাকার চিন্তা করে। রমমো ভাবনাকে বলে-ভাবনা আমার চাকরি টা হলেই তোমাকে নিয়ে আমি আলাদা বাসায় থাকব। রিটেন্ট পরীক্ষার দু'মাস পর কম্পিউটার টেষ্টিং পরীক্ষার তারিখ পড়ে। রমমো যেহেতু কম্পিউটার পদে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতঃ সুতরাং কম্পিউটার টেস্টিং পরীক্ষায় রমমো ভাল করল। বাসায় এসে রমমো শ্বশুর মশায়কে আনন্দের সাথে বলে যে-আব্বু আমার টেস্টিং পরীক্ষা ভাল হয়েছে। প্রতি উত্তরে শ্বশুর আব্বা রমমোকে বলে ভাল পরীক্ষা দিয়েও লাভ নেই। তোমার চাকরি হবে। প্রথমে মনটা খারাপ হইলেও চাকরি হবে শুনে রমমো খুশি হল। ভাবনা রমমো কে বলে তুমি আজ এতো খুশি কেন? রমমো বলে আব্বু বলেছে আমার চাকরি হবে। ভাবনা ও রমমোর ছোট সংসার ভাল ভাবেই চলতে লাগল। চাকরি হলে রমমো ভাবনাকে কি উপহার দিবে ভাবতে থাকে। চাকরি হইলে রমমো মা-বাবাকে ঢাকায় নিয়ে আসবে ঠিক করে। এর পর রমমো উভয় রিটেন্ট পরীক্ষার ভাইভা পরীক্ষা দিল। ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে রমমো তার শ্বশুর আব্বাকে জানালো। শ্বশুর মশায় রমমোকে বলে চিন্তা করো না তোমার চাকরি হইবে। তেমার চাকরির জন্য আমি ১০,০০,০০০/- (দশ) লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছি। ভাইভা পরীক্ষার এক মাস পর চাকরির এপোয়েন্টম্যান্ট (Appointment Letter) লেটার সবার বের হলো কিন্তু হত দরিদ্র গরীবের ছেলে রমমো যে কিনা চাকরির জন্য ভাবনাকে বিয়ে করল সেই ছেলেটার চাকরির এপোয়েন্টম্যান্ট লেটার বের হল না। অর্থাৎ রমমোর চাকরি হলো না। চাকরি না হওয়াতে রমমো খুব কষ্ট পেল। কেন চাকরি হলো না রমমো তা বের করে ফেলে। অর্থাৎ ভাবনার বাবা টাকা না দিয়েই রমমো কে বলেছে ১০,০০,০০০/- টাকা ঘুষ দিয়েছে। গোপন সূত্রে অফিসারগন বলেন যে, তোমার শ্বশুর কাউকে টাকা দেই নাই মিথ্যা কথা বলেছে তোমাকে। তারা আরও বলেন যে, তোমার শ্বশুর একটা চিটার, ফাজিল লোক। ভাবনার বাবা এক নাম্বার চিটার, প্রতারক, বেঈমান ও মুখোশধারী শয়তান লোক। ভাবনার বাবার মিথ্যার কথার জন্য রমমোর সরকারী চাকরি হলো না। রমমোর জীবন আজ বিপন্ন খুব অসহায়। রমমোর চাকরির বয়সও শেষ। মানুষ সুখের জন্য কত কি করে। রমমো মা-বাবাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকার জন্য ভাবনাকে বিয়া করেছিল। এটা কি ছিল রমমোর অপরাধ-সবার কাছে প্রশ্ন?




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.