নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছিলাম... "

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:৫২


[ সত্য ঘটনা অবলম্বনে। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ফেমিনিস্টরা পড়বেন না। ]
ছেলেটা বসে আছে বাংলাদেশ রাইফেলস এর স্পীড বোট ঘাটে, বিশাল বটবৃক্ষটার ছায়ায়। বৈশাখের রোদ, হালকা বাতাস দিচ্ছে। বাঁধের পেছনে ছোট মসজিদটা থেকে বৃদ্ধ মোয়াজ্জেমের কাঁপানো খালি গলায় আজান ভেসে আসছে। ছেলেটির হাতে ঘড়ি নেই, কিছুদিন আগে চড়ে গিয়ে কাট্টি (একধরনের নিম্নস্তরের জুয়া) খেলায় হারিয়েছে। এখানে সে কতক্ষণ ধরে বসে আছে সেটা আন্দাজ করার চেষ্টা করছে। তার চোখের সামনে বড় নদীটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় বাঁধের ওপর দিয়ে কালো একটা ছাতা ধরে এগিয়ে আসছে পাতলা ছিপছিপে গড়নের ৫' ৬" লম্বা মেয়েটা। গায়ে একটা লাল মলিন জামা, পায়ে চটি স্যান্ডেল। দেখে বোঝা যাচ্ছে বাসা থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তার কোমড় দুলিয়ে হাঁটার স্লো-মোশন কল্পনা করলো ছেলেটা। মনটা খুশিতে নেচে উঠলো, নাহ্ মন এত নাচাতে হবেনা। এবারে একটা দফারফা করতে হবে। এত ঝুলে থাকা যাবেনা। ঝুলতে ঝুলতে হাত ব্যাথা করছে। আর ৩ মাস পরে এইচ এস পরীক্ষা।
মেয়েটা এসে ছেলেটার গায়ে গা লাগিয়ে, ঠিক ছেলেটার মত করেই, চটিটা পাছার তলায় নিয়ে খালি পা জোড়া নদীর পানিতে ডুবিয়ে বসে। নদীর পানির উপরে হালকা গরম, নিচে ঠান্ডা। মেয়েটা এক পায়ে রুপার নুপুর পরেছে। গুনগুন করে একটা হিন্দি গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে সে পানিতে পা দোলাচ্ছে। ছেলেটা মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছে। ফর্সা ধবধবে গায়ের রং। মাথার সামনের চুল কিছুটা কম হলেও, পেছনে কোমড় পর্যন্ত ঘন ঢেউ খেলানো নাগিন চুল। লম্বা টানা টানা ভুরু, বড় টানা টানা ভ্রমরের মত চোখ, লম্বা নাক ( ইহুদিদের মত), চিকন পাতলা গোলাপি ঠোঁট, ত্রিকোণ চোয়াল, লম্বা গলার নিচে বিউটি বোনের মাঝে একটা সোনার চেইন লটরপটর করছে। শুধু বুকটা একটু চাপা। তাছাড়া পুরোটাই যেন "মেলেনা" সিনেমার মনিকা বেলুচ্চির মত দেখতে। রুপের আগুনে ঝলসানো এক রুপা। ধরে নিলাম মেয়েটার নাম রুপা। তাহলে হুমায়ূন স্যারের সূত্রমতে ছেলেটার নাম কম করে হলেও হিমু হতে হয়। হিমুর বুক দুরদুর করে। রুপা হিমুর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা ছেলে ভুলানো হাসি দেয়।
" কী? ডাকছো ক্যান? এখানে কতক্ষণ ধরে বসে আসো?"
" না মানে, অনেকক্ষণ।"
" ক্ষিদা লাগসে? বাদাম খাবা?"
হিমু প্রথমে একটু আহ্লাদীত বোধ করে। পরে চমকে আসে পাশে তাকায়। একটা বাদামওয়ালার আবির্ভাব ঘটেছে।হিমু এতক্ষণ কিন্তু খেয়াল করেনি, যে তাদের আসেপাশে দিয়ে একটা বাদামওয়ালা মাছির মতো ভনভন করছে। এখন করছে। এই বাদামওয়ালাগুলোর এই এক বিচক্ষণতা, শালারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে। হিমু খুবই গোপনে তার 'সিগারেট অ্যাশ' কালারের বেগী জিন্সের পকেটে হাত দেয়। পকেটে কিছু খুচরো পাথর ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। বাড়িও যেতে হবে হেঁটে। এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে আমাদের হিমু খুবই গরিব ঘরের ছেলে। সে এই শহরের সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে। একটা বীট জ্যাড়া ( হারামি নাম্বার ১)। যে ছেলে বাসায় হাত বোমা বানাতে গিয়ে হাতেনাতে কাজের লোকের হাতে ধরা পড়ে, সেই বিটকেল পিস কে বাবা-মা আর যাইহোক হাত খরচ দেবে না। সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে হিমুর টাকার অভাব হয়না, ইলেক্ট্রিক বিল, পানির বিল, মুদিখানার বাজার হাট থেকে কায়দা করে ঠিক নিজের হাত খরচটা ঝেড়ে নেয়। কিন্তু সেগুলো তো উদ্বায়ী পদার্থ, সরাসরি ধোঁয়ায় রুপান্তরিত হয়। যাকগে সেইসব কথা। হিমু কথার মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য একটু আঁতেল ভাব করে বলে,
" আমি কি বানর যে বাদাম খাবো?" রুপা খিলখিল করে হেসে ওঠে।
" আমার ক্ষিদা লাগছে, আমি বাদাম খাবো! এই বাদামওয়ালা বাদাম দাও। "
রুপা আর ছোট্ট পার্স থেকে টাকা আর নতুন কেনা ছোট্ট প্যানাসনিক মোবাইল ফোনটা বের করে। বাদামওয়ালা বাদাম দিয়ে কেটে পড়ে। এরপর বাদামের ঠোঙাটা রুপা হিমুর দিকে আগিয়ে দেয়। হিমু বাদাম না নিয়ে, সরাসরি পয়েন্টে আসে।
" রুপা আর তিনমাস পরে পরীক্ষা। আজকে তুমি একটা কিছু ফাইনাল কর। এভাবে আর চলে না।"
" দেখ হিমু, তোমাকে আমি আমাদের পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে বলে যাচ্ছি, আমার অনেক আগে থেকে প্রেম হয়ে আছে আনিসের সাথে। মাঝখানে তুমি জানো যে আমাদের বন্ধুবান্ধবদের সামনে একটা এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। পরীক্ষার পরে আমি বিয়ে করে কানাডা চলে যাবো। নতুন করে আর কি বা বলার আছে তোমাকে।"
" তোমার যে এনগেজমেন্ট হয়েছে কিছুদিন আগে সেটা আমি জানবো কিভাবে? তুমিতো আমার সাথে দেখাও করনি, কথাও বলনি।"
" তুমি জানো হিমু!এটা ফেব্রুয়ারীর ১৪ তারিখের ঘটনা। তুমি খবর পেয়ে তোমার গ্যাংয়ের ছেলেদের নিয়ে আনিসকে ওইদিন মারধরের প্ল্যান করসিলা। এটা আমি খবর পাইসি।"
" আর ওই সকালে আমি তোমার জন্য পার্কে অপেক্ষা করছিলাম। দোকান থেকে ফোন দিয়েছিলাম তুমি বললা বাড়ি থেকে বের হতে পারবানা! "
" হিমু তোমার সাথে আমার এইরকম কোন কমিটমেন্ট হয়নি। আমার আর আনিসের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। এখন এইসব কথা বলে লাভ নাই। আনিস আমার জন্য কত কষ্ট করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়সে তুমি জানো না! "
" এনগেজমেন্ট হইছে তো কি হইছে বাল্! বিয়ে তো হয়নি! "
" হিমু সাবধান! আমি কিন্তু উঠে চলে যাবো! "
" সরি সরি সরি! আর এই রকম বলবো না, প্লীজ।"
হিমু চেক শার্টের বুক পকেট থেকে একটা নীল পলমলের প্যাকেট বের করে। আর মাত্র তিনটি সিগারেট আছে। হঠাৎ Für Elise বাজিয়ে লাইটারটা একটা সিগারেটে প্রাণ সঞ্চার করলো। হিমু মনে মনে ভাবছে, এই শালা মহিন হারামজাদা রেকি করে এসে বেইমানী করে মিথ্যা কথা বলেছে, যে এনগেজমেন্ট আজকে হচ্ছেনা। খামোখা ছেলেপেলে বসিয়ে রেখে লাভ নাই, তারচেয়ে চ' নদীর ধারে তাস পিটাই। কারণ মহিনের গার্লফ্রেন্ড, রুপার বান্ধবী। এছাড়া আর কোন কমন লিংক নাই। হিমুর ধারণা মহিন হারামজাদা এনগেজমেন্টের দাওয়াতও খেয়ে এসেছে ওইদিন। যার কারণে ওর রেকি করতে এত সময় লেগেছে। যাক, মহিনের হিসাব হিমু পরে করবে। হঠাৎ করে রুপা হিমুর ঠোঁট থেকে সিগারেটটা নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। আর হাতের সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার কেড়ে নিয়ে নিজের ছোট্ট পার্সে ঢুকিয়ে রাখে। হিমু কিছু বলে না।
" আর কিছু বলবা? "
" তাহলে এই প্রায় দুবছর কি আমার সাথে টাইম পাস ছিল? "
" দেখ হিমু টাইম পাস করার মত ছেলে আমার হাতে প্রচুর আছে, আমি ইচ্ছে করলেই ছেলেদের লাইন লাগাতে পারি। কিন্তু তোমাকে আমার ভালো লাগে। কি করে বুঝাই তোমাকে যে সব সময় মানুষ যা চায় তা হয় না। আনিসের সাথে আমার ক্লাস সেভেন থেকে সম্পর্ক ও আমার বড় বোনের ক্লাসমেট। একটু বোঝার চেষ্টা কর লক্ষীটি! "
" বুঝছি, কিন্তু তুমি চাইলে এখনো অনেক কিছুই হতে পারে। "
" আমি চাইনা, হল। "
" আচ্ছা আমার সিগারেট ফেরত দাও। "
" যাওয়ার সময় দিবো। আর কিছু বলবা? আজকে বড় দুলাভাই আসবে, বাসায় মুরগী মাখায়ে দিয়ে আসছি যেয়ে রান্না করতে হবে। " রুপা আদর করে হিমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। হিমুর চোখের সামনে এত বড় নদীটা ঝাপসা দেখায়। না হিমু কাঁদছে না। এখানে আসার আগে হুকেন দার চায়ের দোকানে চা - সিঙারা খেয়েছে। সম্ভবত সেখানেই সে তাঁর চশমা ফেলে এসেছে। হিমুর চশমার পাওয়ার -3.00। চশমা ছাড়া সে দূরের জিনিস ঝাপসা দেখে। হিমু কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। রুপা ঠোঙায়ভরা অবশিষ্ট বাদাম হিমুর দিকে আগিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
" বানর কে তাহলে? "
হিমু জিভে অনেকক্ষন ধরে একটা পয়মাল স্বাধ পাচ্ছিল, যেটা সিগারেট আর চিনাবাদাম একসাথে খেলে হয়। তারমানে আনমনে এতক্ষণ সে ক্ষিধের জ্বালায় বাদাম খাচ্ছিলো খেয়াল করেনি। হিমু সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা ফেরত নিয়ে পকেটে ঢোকায়। তারপর বাদামের ঠোঙাটা হাতের মুঠোয় নেয়।তারা চুপচাপ একে অন্যের হাত ধরে, বাঁধের ওপর দিয়ে রাস্তার দিকে হাটতে থাকে। রিক্সার কাছে এসে রুপা চোখ ছলছল করে বলে,
" ভালো থাকো হিমু। ছাইপাঁশ খাওয়া বন্ধ কর। পড়াশোনা কর মন দিয়ে।" হিমু দাঁড়িয়ে থেকে আরেকটা সিগারেট ধরায়। রুপা রিক্সার হুড তুলে দিয়ে রিক্সায় উঠে বসে। রিক্সা এগিয়ে যায়, হিমু দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুদূর গিয়ে রিক্সা একটা চায়ের দোকানে থামে। চায়ের দোকান থেকে একটা ছেলে ওই রিক্সায় উঠে। হুডের পেছনের ফাঁকা দিয়ে দেখা যায় ছেলেটার হাত রুপার কোমড়ে জরিয়ে আছে। ছেলেটা আর যেইহোক না কেন আনিস না।আনিসকে হিমু চেনে। আনিস এত লম্বা আর কালো না। চোখে চশমাও পরেনা। হিমু ঝাপসা চোখে সবটা দেখলো। তারপর বাঁধের ওপর দিয়ে আবার হাটা শুরু করল।
নদীর ধারে পুরান ভাঙা বাঁধের ওপর বসে হিমু প্যাকেটের শেষ সিগারেটটা ধারালো। প্রচন্ড জোরে বাতাস হচ্ছে। রোদে উত্তপ্ত বাতাস। ঈশান কোনে কালো মেঘের দামামা বাজছে। আজ বছরের প্রথম বৃষ্টি হবে। ভিজে যাওয়ার আগেই সিগারেটটা শেষ করতে হবে, হিমু ভাবে।১৪ই ফেব্রুয়ারিতে সকাল বেলা এইরকমই ঝোড়ো বাতাস হয়েছিল,কারণ আগের দিন রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। সে একটা কার্ড, এক প্যাকেট চকলেট আর একটা নিজ হাতে বানানো ছোট্ট পাখির নীড় নিয়ে এসেছিল রুপার সাথে দেখা করতে। ওইদিন রুপা বাড়ি থেকে পালিয়ে আনিসের সাথে এনগেজমেন্ট করতে গিয়েছিল। হিমু জানতো। তারপরও সে ফোন করেছিল। ফোন ছাড়ার পর কার্ড, চকলেট সব নদীতে ছুঁড়ে ফেলেছিল সে।যেগুলো বাতাসের তোড়ে নদীর পাড়ে এসে আছড়ে পড়েছিল। হিমু শুধু নিজ হাতে বানানো পাখির নীড়টা রেখে দিয়েছে যত্ন করে। কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে, নদীর পানিও কালো দেখাচ্ছে। প্রকৃতির এই বিশালতার সামনে হিমুর নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। হিমুর চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটের পাছাটার দিকে তাকিয়ে সে বলে, " you kiss me every time, but never complain! "। প্রচন্ড ঝড়ের সাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির তোড়ে হিমুকে আর দেখা যায় না। হিমু বছরের প্রথম বৃষ্টি হয়ে যায় অথবা হিমুরা বৃষ্টিই হয়ে যায়।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৩১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফাগুনের শুভেচ্ছা।

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.