নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্যিকারের ডাকাত কাহিনী

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০৩


ব্যোমকেশ যাঁরা পড়েছেন, শুনেছেন বা দেখেছেন। তাদের কাছে রক্তমুখী নীলা গল্পটি অতি পরিচিত হওয়ার কথা। এই গল্পে এক ধরনের ডাকাতদের কথা বলা হয় যাদের গলার ভেতর একখানা পকেট তৈরি করা থাকতো। এরা বেশির ভাগ সময় অলংকার, রত্ন পাথর, চুরি, ছিনতাই করে থাকতো এবং সেই চুরির মাল গলার ভেতরের পকেটে চালান দিতো। যার ফলে খানা তল্লাশি করে কোন লাভ হতো না।
রক্তমুখী নীলা গল্পটি ১৯৩৬ সালে বের হয়। এই গল্পে একপর্যায়ে ব্যোমকেশ বলেন, যাঁরা জেল নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছেন বা প্রবীণ পুলিশ অফিসার তারা এই গলার পকেটের ব্যাপারে ভালো করেই জানেন।

নিচে যাঁর ছবি দেখছেন, ইনি আমার প্রো মাতামহ। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী ছাত্র, ফুলার মোহামেডান হোস্টেলের নামকরা ফুটবলার এবং ব্রিটিশ ইন্ডিয়া পুলিশের দারোগা জনাব সুরত আলী।
চাকুরির স্বার্থে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং এ থাকলেও বেশির ভাগ সময় তাঁর কেটেছে রাজশাহীতে।

এই ঘটনাটি অবশ্যই ১৯৩৬ সালের আগের ঘটনা। তখন নাটোর, পুটিয়া এবং রাজশাহীর অলকা সিনেমা হলের মোরে (তৎকালীন টাউন হল )জমজমাট দুর্গাপূজার আয়োজন হত। একবার দুর্গাপূজার সময়, জনাব সুরত আলী দারোগা খবর পেলেন পুটিয়া, নাটোরের বিখ্যাত বড় বড় পূজা মণ্ডপ গুলি থেকে মহিলাদের স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই হচ্ছে, কিন্তু তৎক্ষনাৎ খানা তল্লাশী করে কোন চোরাইমাল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার ছিলেন, বুঝলেন এরপর ঘটনা ঘটবে রাজশাহীতে। কারণ চোর একই জায়গায় বারবার চুরি করবেনা। তিনি খেচর লাগালেন। খবর পেলেন কাজটি করছে " ডোমনা ডাকাত " নামের একজন দাগি আসামি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই। রাজশাহীর টাউন হল পূজা মণ্ডপে তিনি গোপন ফাঁদ পাতলেন। একদিন সন্ধ্যায় হটাৎ এক মহিলার গলার চেইন কে যেন টান দিলো এক ঝটকায়! মহিলা চোর চোর করে চিৎকার করার সাথে সাথে মন্ডপের গেট বন্ধ করে দেয়া হল। ফলে কেউ বের হতে পারলোনা। সাধারণ পোশাকে থাকা পুলিশরা সকলেরই খানা তল্লাশী শুরু করে দিলো। ভিড়ের মধ্যে ধরা পড়লো ডোমনা ডাকাত।
ডোমনা ডাকাত কে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। অনেক মারধরের পরেও সে চুরির কথা স্বীকার করলো না। তার বাড়িতে খানা তল্লাশী করেও কিছু পাওয়া গেল না। জনাব সুরত আলী দারোগা এই গলায় পকেটের অভিনব পদ্ধতির কথা জানতেন। তখন সারা ভারতবর্ষে এই পদ্ধতির বেশ চল ছিলো। তিনি প্রায় অনুমানের ওপর নির্ভর করেই ডাক্তারকে খবর দিলেন। ডাক্তার এসে ডোমনা ডাকাতের গলা পরিক্ষা করে দেখে বললেন, দারোগা বাবুর অনুমান নির্ভূল। ডোমনার গলায় পকেট তৈরি করা আছে এবং সে সেখানে চোরাইমালও জমা করে রেখেছে। তারপর ছোট্ট একটা অপারেশন। ব্যাস্, পকেট কেটে সেলাই করে দেয়া হল। বের হয়ে এলো সোনার চেইন, আংটি ইত্যাদি। ডোমনাকে চুরির দায়ে জেলে পাঠানো হলো।

নানির কাছে শুনেছি, ডোমনা ডাকাতের একটা ছোট বোন ছিলো। আমরা যারা অলকার মোর বা সুলতানাবাদ এলাকায় বড় হয়েছি তারা এই বোনটিকে দেখেছি বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ বিক্রি করতে। একে বিশেষভাবে মনে রাখার কারণ ছিলো, শূর্পণখার মত এর এক নাক কাঁটা। তাই পাড়ায় সকালে তাকে নাক কাটি বলেই ডাকতো। ফেলুদার সোনার কেল্লা বইয়ে পড়েছি, আঁড়াবল্লীর ডাকাতরা নাকি প্রতিশোধ নিতে শত্রুর নাক কেটে দিতো। কিন্তু কোথায় আঁড়াবল্লী আর কোথায় রাজশাহী। নাক কাটির নাক কে কেটেছে তা আমরা কেউ জানি না। সে আদৌ ডোমনা ডাকাতের বোন কিনা তাও জানি না। তবে বুড়োদের বলতে শুনেছি।

দেশভাগের পরে জনাব সুরত আলী দারোগা রিটায়ারমেন্টে যান। তিনি তাঁর আদি নিবাস থেকে পর পর কয়েক টার্ম মুসলিম লীগের হয়ে এম এল এ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দেবার জন্য তাঁকে স্বাধীনতার আগে আগে পাকিস্তান আর্মি ধরে নিয়ে যায় এবং যথারীতি তাঁর আর কোন খোঁজ বা লাশ পাওয়া যায়নি।
তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের একজন দারোগা, ক্রীম অফ রাজশাহী যাকে বলে।রাজশাহীতে কাজী নজরুল ইসলাম এলেন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে।রাজশাহী মুসলিম ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে, এই রাজশাহী মুসলিম ক্লাবের অন্যতম সদস্য ছিলেন জনাব সুরত আলী দারোগা। চৌধুরী দালানে মুসলিম ক্লাবের সদস্যদের সাথে কবির যে ছবি দেখতে পাওয়া যায় তাতে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর চোর, ডাকাত ধরার আরও কিছু রোমাঞ্চকর গল্প আছে। সেগুলো অন্য কোনোদিন লিখব।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: ব্যোমকেশের শজারুর কাটা আজই পড়লাম। এছাড়া ব্যোমকেশের সব গুলোই মুভি দুই তিনবার করে দেখে ফেলেছি।

ছবিটা কি সুরত আলীর দারোগার?

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১২

মা.হাসান বলেছেন: বোমকেশের গল্পের গলার পকেটের ঘটনা গল্প হিসেবেই ধরে নিয়েছিলাম। এটা যে বাস্তবেও হতে পারে এবং বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটতে পারে ধারনাও করি নি।

অবসরের বয়স ঐ সময়ে ৫৫ বছর ছিলো। জনাব সুরত আলী দারোগা এর পরেও কয়েক টার্ম এম এল এ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কাজেই ১৯৭১ এ আপনার প্রোমাতামহের বয়স ৭০ এর উপরে, আশির কাছাকাছি হতো বলেই অনুমান করি। ঐ যুগের লোকেরা শারীরিক ভাবে তুলনামূলক শক্ত ছিলেন। দেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকেই তিনি ঐ বয়সেও মুক্তি যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

ওনার চোর-ডাকাত ধরার রোমাঞ্চকর গল্প গুলি থেকে কিছু শেয়ার করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.