নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিজেন্দ্র নাথ ব্যানার্জি স্যারের শেষ আবেদন!

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪৪




তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। রচনা আমি কোনদিন মুখস্থ করিনি, করতে হয়নি। একটা নির্দিষ্ট ফরম্যাট শিখেছিলাম রচনা এবং আবেদন পত্রের আমাদের স্কুলের স্বনামধন্য বাংলা শিক্ষক ব্যানার্জি স্যারের কাছে। তাই যে রচনা বা আবেদন পত্রই হোক খুব সহজেই গুছিয়ে লিখে ফেলতে পারতাম। একবার পরিক্ষায় সেই রকম ভালো একটা রচনা লিখলাম। ভাবলাম আমার হাইয়েস্ট নাম্বার পাওয়া ঠেকায় কে? যখন পরিক্ষার খাতা দেখানো হলো, দেখলাম হাইয়েস্ট নাম্বার থেকে এক নম্বর কম পেয়েছি। খাতা দেখেছেন স্বয়ং ব্যানার্জি স্যার। যাকে বাংলার গুরু মানি। খাতা নিয়ে গেলাম স্যারের কাছে, মনের ভেতরে একটা অভিমান, চোখে পানি চলে এসেছে প্রায়। জিগ্যেস করলাম স্যার আমার এক নম্বর কম কেন? স্যার বললেন " রোল নাম্বার কত?" বললাম। উনি খাতাটি হাতে নিয়ে দেখলেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে খাতাটি দেখি বললেন, " এই ছেলেটি রচনাটি খুবই ভালো লেখেছে, এত ভালো যে হাইয়েস্ট নাম্বার সেই পায়। কিন্তু মর্নিং শিফটের একজন ছাত্র একই রচনা এতটা প্রাঞ্জল ভাষায় লিখেছে যে, যদি আমি দুইজন কেই হাইয়েস্ট নাম্বার দেই তবে ঐ ছেলেটির সাথে অন্যায় করা হবে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তা করতে পারিনা। তাই এই ছেলেটিকে এক নম্বর কম দিয়েছি। তোমরা সবাই আমার কাছে সন্তানের মত, সবাই সমান। " এই বলে স্যার আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন।
দ্বিজেন্দ্র নাথ ব্যানার্জি স্যার। রাজশাহীর গর্ব। একাধারে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। দুইবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে স্বর্ন পদক পেয়েছেন। অন্যদিকে একজন অসামান্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব। তিনি নাট্যকার, লেখক, গবেষক, সংগঠক এবং সমাজসেবক। স্কুলের সামান্য বেতনে তিনি ছোট্ট একটা ভাড়া বাড়িতে দুই সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। বসার ঘরে একটা চৌকি, একটা বড় টেবিল, দুইটা বেঞ্চ আর বড় বড় আলমারি ঠাসা বই। এই তাঁর জগৎ। তাঁর ছোটদের একটা নাট্যদল আছে। সেই দলটি তিনি চালান সম্পূর্ণ নিজের খরচে। এই টাকা তিনি রোজগার করতেন টিউশনি করে। তাঁর ছোটদের নাট্যদল ঢাকার বাংলা আকাদেমি সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জিতেছে বহু পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর সবচেয়ে বড় নাটকটি ক্যান্টনমেন্ট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এবং একই দিনে এটি এত জনপ্রিয় হয় যে নাটকটি পাঁচবার অনুষ্ঠিত হয়।এছাড়াও তাঁর অসংখ্য নাটক নানান টিভি চ্যানেল, রেডিওতে বিভিন্ন সময়ে প্রচারিত হয়েছে।দেশের বাইরেও কলকাতায় তাঁর নাটক অনুষ্ঠিত এবং সমান জনপ্রিয়তা পায়। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের পর একমাত্র তিনি মহাকাব্য লিখেছেন, যেটা এখনও সংশোধনের পর্যায়ে আছে, শীগ্রই তা প্রকাশিত হবে।

এখন তাঁর বয়স ৭১ বছর। দেশের বাড়ি দিনাজপুর। ২০১৩ সালে, তাঁর ৫ শতাংশ পৈতৃক ভিটাতে তিনি তাঁর পিতা শশী মোহন ব্যানার্জির নামে একটি অবৈতনিক গ্রন্থাগার নির্মাণ করেন। যেখানে শতাধিক ছাত্র ছাত্রী নানান বিষয় পড়ার সুযোগ পায়। ২০১১ সালে তার রিটায়ারমেন্টের পর, সামান্য পেনশনের টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর শেষ সম্বল সকল স্বর্ণালংকার বিক্রি করে, মোট ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে দিনাজপুর জেলার রাজবাড়ীর নিকটে গুঞ্জবাড়ি এলাকায় ৪ শতক জমি তাঁর স্ত্রীর নামে ক্র‍য় করেন। নিজেস্ব শেকড়ের কাছে, নিজেস্ব মাথা গোঁজার একটা ঠাঁইয়ের আশায়। জমি বিক্রেতা শ্যামল কুমার ঘোষ, প্রোপাইটার পাবনা সুইটস্, স্টেশন রোড, বাহাদুর বাজার, দিনাজপুর। কিছুদিন পরে স্যার জানতে পারেন ঐ জমি দেবোত্তর সম্পত্তি। ভূমিদস্যু, ঠগ শ্যামল কুমার ঘোষ একই ভাবে ১৮ জন হিন্দুর নিকট দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
দীর্ঘ ১০ বছর বিভিন্ন সরকারি এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের দ্বারেদ্বারে ঘুরে, শালিশের মাধ্যমে টাকা ফেরত নিয়ে ব্যাপারটা মিমাংসা করার চেষ্টা করে যখন স্যার ব্যার্থ, ক্লান্ত। তখন তিনি দুদক সহ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যথাক্রমে চারবার এবং সাতবার আবেদন করেন। ফলাফল শুন্য। গত ২৪ /০৭/২০১৯ এই অন্যায়ের কাছে একজন আদর্শ শিক্ষকের হেরে যাওয়ার গ্লানি, নিজের শেষ সম্বলটুকু ফিরে না পাওয়ার শোক সহ্য করতে না পেরে স্যারের স্ত্রী হার্ট এট্যাকে মারা যান। ব্যানার্জি স্যার এখন শয্যাশায়ী। এর মধ্যে বেশ কয়েক বার তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। স্যার জিডি করেছেন।
আপনাদের অনেক হয়তো বলবেন স্যার কেস করছেন না কেন? একজন ৭১ বছরের বৃদ্ধ শিক্ষকের পক্ষে রাজশাহী থেকে দিনাজপুর গিয়ে কি কেস চালানো সম্ভব?
তাই শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন্দ্র নাথ ব্যানার্জি স্যার এখন আর টাকা ফেরত চাননা। তিনি শুধু শেষবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন এইযে, একজন স্বাধীন নাগরিকের অধিকার হিসাবে তিনি মৃত্যুর আগে একজন ভূমিদস্যু, ঠগ শ্যামল কুমার ঘোষের বিচার দেখে যেতে চান। এটা কি অসম্ভব?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে দেশে একজন তরকারি বিক্রেতা পর্যন্ত একজন স্কুল শিক্ষক কে প্রতারিত করেন না, সে দেশে ভূমিদস্যু, ঠগ শ্যামল কুমার ঘোষের মতো লোকেরা অসহায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের সর্বস্ব লুটে নিয়ে পার পেয়ে যাবে? এটা কি প্রমান করেনা আজ আমাদের দেশে কলমের চেয়ে তরবারি শক্তিশালী?

এদেশে শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন্দ্র নাথ ব্যানার্জি স্যারের সুপ্রতিষ্ঠিত হাজার সন্তান রয়েছে, তাঁরা কি পারে না এই শেষ মূহুর্তে স্যারের পাশে দাঁড়াতে?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খুবই দুঃখজনক। উনি সুবিচার পাবে কি না জানি না। অন্য কোনও দেশে হলে পেতেন।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: খুবই দুঃখজনক।

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৪

মা.হাসান বলেছেন: সারের জন্য অনেক শ্রদ্ধা ।

বিচারের কথা বললে পোস্টের মর্যাদা হানি হতে পারে বলে ঐ বিষয়ে কথা বললাম না।

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ইস! পড়ে ভীষণ খারাপ লাগছে।৭১ বছরের এক জন জাতীয় শিক্ষকের এমন পরিণতি লজ্জা শুধু ওনার একার নয়,একটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চপেটাঘাত বৈকি।

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: ব্যানার্জি স্যারের জন্য শ্রদ্ধা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.