নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চৈমনি রাজ্যের রাজপুত্র।ভিজিট করুন http://zazafee.com/

জাজাফী

চৈমনি রাজ্যের রাজপুত্র। ভিজিট করুন http://www.zazafee.com/

জাজাফী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মায়াবতী (নতুন অংশ)

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৩৯


যখন সূর্যগ্রহণ লাগে তখন সূর্যের দিকে তাকাতে নেই।তাকালেই চোখ নষ্ট হয়ে যায়।তখন সারা পৃথিবীটাই অন্ধকারে তলিয়ে যায়।কে আর স্বাধ করে সুন্দর এই পৃথিবী দেখার আনন্দকে মাটি করে আজীবনের মত অন্ধ হতে চায়।তাই ভুল করেও কেউ কখনো সূর্যগ্রহণের সময় আকাশে সূর্যের দিকে তাকায়না।আমিও কিন্তু কখনো তাকাইনা।

আকাশের কথা বাদ দিয়ে এই মাটির পৃথিবীতে ফিরে আসি।আমাদের নরেন কাকার বউয়ের দিকেও কিন্তু তাকানো যায়না।গ্রহণলাগা সূর্যের দিকে যেমন তাকানো বারণ তেমনি নরেন কাকার বউয়ের দিকেও তাকানো বারণ।কে বারণ করেছে?নরেন কাকা কিন্তু বারণ করেনি,পাড়ার অন্য কেউও নিষেধ করেনি তার পরও এটা ওই সূর্যগ্রহণের মত নিয়ম হয়ে গেছে।কেউ যদি ভুল করেও তাঁর দিকে তাকায় তাহলেই সবর্নাশ হয়ে যাবে।মনে হতে পারে আমি হয়তো গুলগাপ্পি মারছি।আসলে তা নয়।আমি কিন্তু বলছিনা সূর্যগ্রহনের সময় তাকালে যেমন অন্ধ হয়ে যেতে হয় তেমনি নরেন কাকার বউয়ের দিকে তাকালেও অন্ধ হয়ে যাবে। আসলে সমস্যা অন্যখানে।তাঁর দিকে তাকানো মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা।

একবার আমাদের সমীর কাকার ছেলে বিধান তাঁর দিকে তাকিয়েছিল তার পর সে টানা পঁচানব্বই দিন কী যে যন্ত্রনার মধ্যে ছিল তা বলে বোঝানো যাবেনা।স্কুলে গেলে বিধান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতো পড়ায় আর মন বসতো না।স্যার ওকে কান ধরে উঠবস করাতেন,ক্লাস থেকে বের করে দিতেন তার পরও তার কোন ভাবান্তর হতনা।লোকে বলতে শুরু করলো বিধানকে ভূতে ধরেছে।তা না হলে একটা শান্তশিষ্ট ছেলে ওরকম হয়ে যাবে কেন?আমাদের দুষ্টু বন্ধুরা বললো আরে ভূতে কি আর ভূতকে ধরতে পারে ওকে আসলে ম্যাওতে ধরেছে।বিধানের কানে ওসব ঢুকতো কিনা বলতে পারবো না।যে যত কথাই বলুক তাতে যেন তার কিছুই যায় আসে না। সে আপন মনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।কী দেখে সে খোলা জানালা দিয়ে?

আমরা বাইরে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি ওদিকে কোন দোয়েল কিংবা শালিক কিংবা মাছরাঙ্গা পাখি কোন ডুমুর কিংবা কদম অথবা আমগাছের ডালে এসে বসেছে কিনা যা দেখার জন্য বিধান অপলক তাকিয়ে থাকে।
প্রথম দিন হেড স্যার কিছু বুঝতে পারলেন না।দ্বিতীয় দিনও দেখা গেল বিধান খুব অন্যমনস্ক। স্যার তাকে ডেকে সামনে নিয়ে গেলেন তার পর কি কি যেন প্রশ্ন করলেন।বিধান তখন স্যারের দিকেই তাকানো অথচ স্যার তাকে আচ্ছামত ধমক দিয়ে বললেন বেয়াদব ছেলে আমি কথা বলছি তার পরও চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।আমরা পুরো ক্লাস হতভম্ব। আরে বিধানতো ঠিকই স্যারের দিকেই তাকিয়ে আছে তাহলে সে চোখ অন্যদিকে রাখবে কেমন করে?স্যার ওর পিঠে দু ঘা বেতের বাড়ি বসিয়ে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন।

আমাদের ক্লাসের মিজান বেশ দুরন্ত টাইপের ছেলে।সে বিধানের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলো বিধান সত্যি সত্যিই অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। মিজানের খুব মাইরপিটের স্বভাব।সে কষে একটা কিল বাসিয়ে দিয়ে বললো শালা হারামি তুই আমার লগেও বিটলামি করোস?আমার দিকে না তাকাইয়া তুই কার দিকে তাকাইছোস?বিধান আহত স্বরে বললো আমিতো তোর দিকেই তাকায় আছি এমনকি একটু আগে হেডস্যারের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম তার পরও হেডস্যার বললো আমি নাকি তাঁর দিকে তাকাইনি আর তুইও বলছিস তোর দিকে তাকাইনি। কি আশ্চর্য কথা বলছিস সবাই।বিধানের কথা শুনে পুরো ক্লাস ভীষন ভাবে অবাক হয়ে গেল।

বানরের খেলা দেখার জন্য সবাই যেমন বানরওয়ালাকে ঘিরে ধরে ঠিক তেমনি ভাবে সেদিন আমরাও পুরো ক্লাস বিধানকে ঘিরে দাড়ালাম। একজন একজন করে সবাই বিধানের চোখের দিকে তাকিয়ে ওকেও তাকাতে বললাম এবং ও তাকালেও মনে হলো ওর চোখ অন্যদিকে।বিধানতো কখনো ট্যারা ছিলনা তাহলে এমন হলো কি করে? পরে জানা গেল এই সমস্যা সেদিন থেকে হয়েছে যেদিন সে নরেন কাকার বউকে দেখেছিল! তার মানে হলো নরেন কাকার বউয়ের দিকে তাকালেই চোখ ট্যারা হয়ে যাবে।আমরা বললাম ধুরো কি বলিস এসব। একটা মানুষের দিকে তাকালে কি কখনো আরেকটা মানুষের চোখ ট্যারা হয়?সেই লোকটাতো আর যাদুটোনা করেনি যে কারো চোখ ট্যারা হয়ে যাবে।আমাদের কথা শুনে বিধান একটু সাহস নিয়ে বললো এই তোরা সব এখনো বাচ্চাই আছিস।

আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ে অথচ বিধান কিনা আমাদের সবাইকে বলছে আমরা বাচ্চাই আছি। তারেক ওর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো আমরা বাচ্চাই আছি মানে?বাচ্চারাতো বাচ্চাই থাকে আর তুই কি এমন বড় হয়েছিস শুনি? ওর কথা শুনে বিধান বললো দেখ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ একটু একটু গোফ হয়েছে কিন্তু তোদের কারো হয়নি। আর হ্যা আমার আরো অনেক কিছু হয়েছে যা তোদের হতে আরো বছর দুই লাগবে। তার মানে তোরাতো বাচ্চাকাচ্চাই আর একটা মানুষের দিকে তাকালে চোখ ট্যারা যে কেন হয় সে কারণেই তোরা বুঝতে পারছিস না। এটা বাচ্চাকাচ্চারা বুঝবেনা।

আমার মত বড় হলে তখন বুঝবি।বিধানের এমন আজগুবি কথা শুনে সবাই যখন রেগেমেগে অস্থির কিংবা মেজাজ খারাপ তখন আমাদের ক্লাসের সবথেকে ফাজিল ছেলে বিনয় দুটো বোতাম খুলে দিয়ে বললো দেখ শালা তোরতো কেবল গোফ গজাচ্ছে আর আমি অলরেডি শেভ করা শুরু করেছি।আর তুই কিনা নিজেকে বড় মনে করে আমাদেরকে বাচ্চাকাচ্চা সমঝাচ্ছিস।

এর পর বিনয় আরো যে সব কথা বললো তা আমাদের কারো পক্ষে শোনা প্রায় অসম্ভব ছিল।সে সব কথা শুনে কারো কারো গা শিরশির করতে শুরু করলো এমনকি সেই দলে আমিও ছিলাম। আমি সবাইকে থামিয়ে বললাম বিধান ওসব বাদ দে এখন সোজাসাপ্টা বল কি করে নরেন কাকার বউকে দেখে তুই ট্যারা হলি।বিধান বললো আরে তোরা কি কখনো তার দিকে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখেছিস। একবার তাকিয়ে দেখিস দেখবি তোরাও ট্যারা হয়ে যাবি।যখন ট্যারা হবি তখন আসিস আমি তোদের ট্যারা হওয়ার কারণ কি সেটা বলবো।
সেদিন ক্লাসে অনেকের মধ্যেই জিদ চেপে গেল এবং সেই বিকেলেই স্কুল ছুটি হলে তারা চলে গেল নরেন কাকার বাড়িতে। যে করেই হোক তারা নরেন কাকার বউকে দেখবে এবং খুব ভালভাবেই দেখবে আর পরখ করে নেবে শালা বিধান ঠিক কি পরিমান গুলগাপ্পি মেরেছে।

পরদিন ক্লাসে হেডস্যার আরো পাঁচজনকে কান ধরে উঠবস করালেন ওই একই কারণে তারা নাকি স্যারের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে রেখেছে। স্যার চলে যাবার পর আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করে দেখলাম এবং সত্যি সত্যিই তারা ট্যারা হয়ে গেছে।আমরা জানতে চাইলাম কিরে তোরাওকি নরেন কাকার বউয়ের দিকে তাকিয়েছিলি? বিধান যেমনটি বলেছিল সেরকম। ওরা সবাই মুখ কাচুমাচু করে বললো হ্যারে গতকাল স্কুল ছুটির পর নরেন কাকার বাড়িতে গিয়ে নরেন কাকার বউকে দেখে আমাদের চোখ ট্যারা হয়ে গেছে।বিধানের কথাটা কেন যে বিশ্বাস করলাম না। এখন এই ট্যারা চোখ নিয়ে কিভাবে চলাফেরা করবো? ওদের মধ্যে ছিল ক্লাসের সবথেকে মেধাবী ছাত্র পরিমল।

পরিমল তখন বললো তবে যাই বলিসনা কেন আমি ট্যারা হলেও আমার কোন দুঃখ নেই।যা দেখেছি তা দেখে ট্যারা কেন অন্ধ হয়ে গেলেও দুঃখ থাকার কথা নয়।পরিমলের কথা শুনে আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ও শালা বলেকি? পাগল হয়ে গেছে নাকি আর সে কি এমন আগ্রার তাজমহল কিংবা পিসার হেলানো টাওয়ার দেখেছে যে চোখ ট্যারা কেন অন্ধ হয়ে গেলেও আর কোন দুঃখ থাকবেনা?
আসিফ কথাটা বলেই ফেললো। সে বললো শালা তুই কি এমন জিনিষ দেখেছিস যে অন্ধ হয়ে গেলেও আর তোর কোন দুঃখ নেই।দু চারটা কবিতা লিখে অলরেডি পরিমল ক্লাসে কবি বলে পরিচিতি পেয়ে গেছে। সে বললো সাতটা তাজমহল, উনিশটা পিরামিড, তেরটা পিসার হেলানো টাওয়ার আর হাজার খানেক আইফেল টাওয়ার দেখার চেয়েও মধুরকিছু দেখেছি। নিরানব্বইটা চাঁদ আর তিনশো তেরটা তারা তাদের সমস্ত আলো ঢেলে দিলে পৃথিবীটা যতটা আলোকিত হবে তার চেয়েও আলোর ভূবন আমি দেখেছি। আহ নরেন কাকাতো কোন মানুষকে বিয়ে করেনি যেন বিয়ে করেছে ডানাকাটা পরী। তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলে যে কারো চোখই ট্যারা হয়ে যাবে।

পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী কি প্রিন্সেস ডায়না?নাকি ট্রয়ের হেলেন?ওদের কেউ নয়। পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী রমনি হলো নরেন কাকার বউ। সেই সুন্দরীকে দেখলে চোখ ট্যারা না হয়ে যায়? সেই সুন্দরীকে দেখার পর আর কি কিছু দেখার স্বাধ জাগতে পারে? পারেনারে বোকা পারে না। ওর কথা শুনে পাশ থেকে বিধান তখন বললো বুঝলিতো শালারা আমি বলেছিলামনা যে তাকে দেখলে চোখ ট্যারা হবেই হবে। সে শুধু সুন্দরীই না সে অপ্সরা।তাঁর ভূবন ভোলানো হাসি দেখলে হৃদয় খুন হয়ে যায়।তোরাতো সব বাচ্চাকাচ্চা তাই তোরা ওসব বুঝবিনা। যে পাঁচজন দেখে এসে ট্যারা হয়েছে তারা সবাই বড় হয়েছে। তারা বুঝতে পারছে জিনিষটা আসলে কি!!

সেদিন স্কুল ছুটির পর নিজেদেরকে বড় প্রমানের জন্য সবাই চলে গেল নরেন কাকার বাড়িতে। কোন একটা ছুতো খুঁজে নিয়ে তারা নরেন কাকার বউকে দেখলো মন ভরে আমিও দেখলাম তবে পরদিন দেখা গেল ক্লাসে সবাই ট্যারা হয়ে গেছে শুধু আমি ছাড়া। তার মানে বিধানের সূত্র অনুসারে ক্লাসে সবাই বড় শুধু আমিই বাচ্চাকাচ্চা রয়ে গেলাম।সেদিন বাড়িতে ফিরে গোসলের সময় নিজেকে খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম এবং মনে হলো আরে ধুর আমিওতো ছোট না। আমারওতো একটা রাজত্ব আছে সেই রাজত্বে একটা বিশাল তালগাছ আছে আর সেই তালগাছের সীমানা জুড়ে আছে বিশাল এক ঝাউবন।চোখ ট্যারা হওয়া না হওয়ার সাথে বাচ্চাকাচ্চা থাকা না থাকার কোন সম্পর্ক নেই ও শালা বিধান গুলগাপ্পি মেরেছে।

গুল মারুক আর যাই করুক সেদিন থেকে প্রমানিত যে গ্রহণলাগা সুযের দিকে যেমন তাকালে চোখ নষ্ট হয়ে যায় তেমনি নরেন কাকার বউয়ের দিকে তাকালে তার রূপের আগুনে চোখ ঝলসে যেতে পারে নয়তো নিদেন পক্ষে চোখদুটো ট্যারা হয়ে যাবে।তাই ভুলেও কেউ আর তাঁর দিকে তাকানো যাবেনা।কেউ তাকাক বা না তাকাক তাতে কিন্তু আমার কিছু যায় আসেনা। অন্ধকারে থাকতে থাকতে যেমন চোখে অন্ধকার সয়ে যায় আর অন্ধকারেও বেশ ভালভাবেই দেখতে পাওয়া যায় ঠিক তেমনি আমিও একাকী একাধারে নিরবে নিভৃতে যখন খুশি দেখি নরেন কাকার বউকে।আমার চোখ ট্যারা হয়না, হয়তো কখনো ট্যারা হবেও না। অন্ধকার সয়ে যাওয়ার মতই আমার চোখেও সেই রূপের আগুন সয়ে গেছে।"

---
শিরোনামঃ......এখনো দেওয়া হয়নি...(অলিখিত উপন্যাস)
#জাজাফী
ফেসবুকে আমি

-----------------
দৈনিক ইত্তেফাকের ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত আমার নির্বাচিত উপন্যাসনা মানুষি জীবন পড়ে দেখার আমন্ত্রন রইলো

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


সোফার উপর জুতা পায়ে কোন এক বেকুব মেয়ের ছবি, হাবডু বাবডু প্লটে বাংলার হেলেনের ভেঁ ভোঁ!

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


বিবাহিত মহিলাকে স্কুলের মুরগীরা দেখতে যাওয়া কোন লেখার বিষয় হতে পারে না।

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:২০

এখওয়ানআখী বলেছেন: প্রথমে খুব ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.