![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও উপাচার্যের বিশেষ কোটায় (মুক্তিযোদ্ধা) ভর্তি হচ্ছে শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর পিতা-মাতার নেই মুক্তিযোদ্ধা সনদ। তাদের নাম নেই সরকারি গেজেট ও ‘মুক্তিবার্তা’ (লাল বই) তালিকাতেও। তবুও তারা কেউ এক বছর, কেউ দু’বছর ধরে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে—যাদের ভর্তি করানো হয়েছে সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে। এসব ভর্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা নিজেরাই ভুয়া সনদ তৈরি করেন।
সকালের খবরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য। ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য মেধা তালিকায় থাকা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নাম কৌশলে সরিয়ে ভুয়া সনদের মাধ্যমে তাদের ভর্তি করানো হয়। ফলে ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়েও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
যেভাবে ভর্তি এবং জড়িত যারা : গত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ৪৩তম ব্যাচে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ভর্তিকৃতদের একজন শিক্ষার্থীকে ভুয়া সনদের মাধ্যমে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর পিতা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরকারি গেজেট ও ‘মুক্তিবার্তা’ (লাল বই) দেখা হয়। তবে কোনোটাতেই তার পিতার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীর স্থায়ী ঠিকানায় সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা নন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন (ঊর্ধ্বতন সহকারী) ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি করিয়েছেন। বিষয়টি প্রমাণিত। বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য এ প্রতিবেদক ওই কর্মকর্তার কাছে গত শিক্ষাবর্ষে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা চান। তিনি এ প্রতিবেদককে যে তালিকা প্রদান করেন তাতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তিকৃত ওই শিক্ষার্থীর নাম নেই। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ভিন্ন একটি মাধ্যমের কাছ থেকে পুনরায় তালিকা সংগ্রহ করা হয়। সেই তালিকায় ওই শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া যায়। স্বীকারোক্তি ছিল ওই শিক্ষার্থীরও। সে বলে, আমি অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলাম। পরে আমার পরিচিত একজনের মাধ্যমে প্রশাসনিক অফিসের এক কর্মকর্তা আমাকে ভর্তি করান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভর্তি সংক্রান্ত অধিকাংশ কাগজপত্র বিল্লাল হোসেনের মাধ্যমেই প্রস্তুত হয়। ফলে কোনো শিক্ষার্থী অপেক্ষমাণ তালিকায় থেকে ভর্তি হতে পারছে কি না তা তিনি সহজেই জানতে পারেন। যারা স্বাভাবিকভাবে ভর্তি হতে পারবে না তাদের সঙ্গে গোপনে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেন বিল্লাল হোসেন। এরপর সমঝোতা করেন। এক্ষেত্রে তিনি নিজেই বানিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের ভুয়া সনদ। তবে বিল্লাল হোসেন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, ভর্তি হওয়ার পর যারা ভর্তি বাতিল করেছে তাদের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। ভুলবশত নামটি তালিকায় নাও থাকতে পারে।
একই রকম ঘটনা ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ৪২তম ব্যাচে জার্নালিজম এবং মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে। উপাচার্যের বিশেষ কোটায় (মুক্তিযোদ্ধা) মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদের মাধ্যমে এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকারি গেজেট ও ‘মুক্তিবার্তা’ (লাল বই)-এর তালিকায় ওই শিক্ষার্থীর পিতার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রমাণ মেলেনি শিক্ষার্থীর স্থায়ী ঠিকানায় সরেজমিন পরির্দশনের পরও। ভুয়া প্রমাণিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা নন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও প্রমাণ প্রদর্শনের পর স্বীকারোক্তি দেয় সে। স্থানীয় এক নেতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা ভুয়া সনদের মাধ্যমে তাকে ভর্তি করিয়েছেন। বিনিময়ে দিতে হয়েছে এক লক্ষ টাকা। তবে তিনি তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি ।
এ প্রতিবেদকদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মো. আবদুর রহমান বাবুল অনিয়ম করে ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি করান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী পান্ধুয়ার এলাকার সেই স্থানীয় নেতা মানিক। সম্পর্কে বাবুলের আপন খালাত ভাই। ওই শিক্ষার্থীর ভর্তির সময় আবদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ বিষয়ে আবদুর রহমান বলেন, এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি পরপর দু’বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এই মিথ্যা গুজব রটিয়েছে।
এ ছাড়াও ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ৪০তম ব্যাচে দর্শন বিভাগে ভুয়া সনদের মাধ্যমে এক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে ভুয়া সনদের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ছয় মাসের মধ্যে সে ভর্তি বাতিল করে চলে যায়। ওই শিক্ষার্থীও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উপাচার্যের বিশেষ কোটায় (মুক্তিযোদ্ধা) ভুয়া সনদের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিল। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সে ভুয়া সনদের মাধ্যমে ভর্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলে, পুরনো কেচ্ছা ঘেঁটে লাভ কী। তার দাবি, প্রতিবছরই ভুয়া সনদ বানিয়ে ভর্তি করানো হয় এবং প্রশাসনের একটা বড় অংশ এ ধরনের ভর্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত। কলা অনুষদভুক্ত বিভাগুলোতেই এসব ভুয়া সনদের মাধ্যমে বেশি ভর্তি করানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা যা বলেন : গত বছরের মুক্তিযোদ্ধা সন্তানভর্তি কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ভর্তির সময় একটি সরকারি স্ট্যাম্পে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয় যে, যদি পরবর্তীতে সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়, তবে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। কেউ জড়িত থাকলে তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রগতিশীল শিক্ষকদের বক্তব্য : মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির অনিয়ম সম্পর্কে প্রগতিশীল শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন জানান, সনদ জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির ঘটনায় শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উভয়েই দোষী। এদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। তাহলেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আর ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না। কমিটিগুলোর দৃষ্টি এড়িয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এসব করে থাকেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি শিক্ষাবর্ষে মেধা তালিকার ভিত্তিতে প্রত্যেক বিভাগে চারজন এবং উপাচার্যের বিশেষ কোটায় (মুক্তিযোদ্ধা) পৃথকভাবে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ভর্তি করানো হয়। উপাচার্যের বিশেষ কোটায় কোন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবেন সেটি তিনি নিজেই নির্ধারণ করেন। তবে অন্যদিকে প্রতি বিভাগে চারজন করে ভর্তির কাজটি সম্পন্ন করে একটি নির্ধারিত কমিট
দৈনিক সকালের খবর লিংক
২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১৯
ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকাটাই বেশি জরুরি না?
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:০৭
ঢাকাবাসী বলেছেন: ছা.লী. করলেই হবে।