নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ০৮

২১ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১২

বড় ভাই রুমনের কাছে চন্দ্রের হারিয়ে যাওয়ার খবরটা রুদ্রকে প্রচন্ড আঘাত দেয়। ওর সামনের পুরো পৃথিবি হঠাত করেই যেন ঝাকি দিয়ে উঠে। এমন একটা খবরের জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। রুমনের কাছে জানলো- গতকাল ছিলো বৈশাখি মেলা। বিকালের দিকে চন্দ্রকে সাথে করে ওরা বেশ কয়েক জন ঠাকুর পাড়ার সেই বৈশাখি মেলায় যায়। এই মেলা সপ্তাহে দুই দিন করে পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে লোক আসে। মেলায় সব সময় প্রচন্ড ভির লেগেই থাকে। আর প্রতিবারই এই মেলায় আধিপত্য এবং জুয়াকে কেন্দ্র করে খুন হয়। ছোট খাটো মারামারি সব সময় প্রায় লেগেই থাকে। ওরা মেলায় যাওয়ার পরে গতকালও একজন খুন হয়। খুনের পরে লোকজন যে যেদিকে পারে দৌড় দেয়। দৌড়াদৌড়ি শুরু হলে ওরা সবাই চন্দ্রকে ঘিরে ধরে মেলা থেকে বের হতে থাকে। এমন সময় বেশ কয়েক জনের দৌড়ের ধাক্কায় ওরা ছিটকে পড়ে। চন্দ্রের চাচাতো ভাই ফাহিম চন্দ্রের হাত ধরে ছিলো। কিন্তু ফাহিমের হাত থেকে চন্দ্রের হাত ছুটে যায়। চন্দ্র ভয়ে কয়েক বার চিতকার করে ওঠে। তারপর প্রচন্ড শোরগোলের মধ্যে চন্দ্রের চিতকার হারিয়ে যায়। এরপর চন্দ্রকে পুরো মেলায় তন্নতন্ন করে খুজেও আর পাওয়া যায় নি। মেলার মাইক থেকে মাইকিং করা হয়, পুলিশে জানানো হয় কিন্তু সবই বৃথা হয়ে যায়। সারা রাত পুরো এলাকা খোজা হয়, গ্রামে গ্রামে মাইকিং করা হয়। কিন্তু রুমন সকালে বাড়ি থেকে বেড় হওয়া পর্যন্ত চন্দ্রকে আর পাওয়া যায় নি।

রুমনের কাছে সব শোনার পর রুদ্র স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। একি শুনছে ও! চন্দ্র হারিয়ে গেছে এটা ও বিশ্বাস করতে পারছে না। চন্দ্রকে ছাড়া কিভাবে বাচবে ও!

চন্দ্র যখন দ্বিতিয় শ্রেনিতে পড়ে তখন রুদ্রর সাথে ওর বিয়ে হয়। রুদ্র সে সময় ষষ্ঠ শ্রেনিতে পড়তো। সে সময় ভালোবাসা কি সেটা ও বুঝতো না। তবে ওর নানি বিয়ের পরে ওকে বলেছিলো- আজ থেকে চন্দ্র তোর স্ত্রি। ওকে কখনো মারবি না, কখনো কোন দুঃখ দিবি না। এখন থেকে তুই ওর সব। আমি আর তোর নানা যেমন সংসার করছি, তোর মা আর তোর বাবা যেমন সংসার করছে তেমনি বড় হলে চন্দ্র আর তুইও এক সাথে সংসার করবি। স্ত্রিকে কখনো দুঃখ দিতে নেই। স্ত্রিকে সব সময় ভালোবাসতে হয়। এখন এ সব বুঝবি না, যখন বড় হবি তখন সব বুঝবি।

তখন ভালোবাসা পুরোপুরি না বুঝলেও নানির কথা ওর মনে দাগ কেটে দিয়েছিলো। এতটুকু অন্তত বুঝেছিলো- চন্দ্র সেদিন থেকে ওর, ওকে আর কষ্ট দেয়া যাবে না, ওকে দেখে শুনে রাখতে হবে। সেদিন থেকে চন্দ্রকে দেখলেই ওর মনটা ভরে যেতো। চন্দ্র যখন খেলতো ও তখন অবাক হয়ে চন্দ্রকে দেখতো। চন্দ্র যা করতো সবই ওর অনেক ভালো লাগতো। তারপর যখন ও সপ্তম শ্রেনিতে উঠলো তখন একটু একটু করে বুঝলো চন্দ্রের প্রতি ওর যে টান সেটাই ভালোবাসা। অষ্টম শ্রেনিতে ওকে লক্ষিপুর স্কুলে পাঠানো হলো। এখানে এসে সবার সাথে মিশে বুঝতে পারলো নারি পুরুষের প্রতি যে টান সেটাই ভালোবাসা। তারপর শয়নে স্বপনে শুধু চন্দ্রকেই ভাবতে লাগলো ও। চন্দ্রকে নিয়ে ওর মনে আলাদা একটা জগত তৈরি হলো। সে জগতে চন্দ্র রানির আসনে অধিষ্ঠিত হলো। চন্দ্রকে একটু দেখার জন্য ওর মন সব সময় অস্থির হয়ে থাকতো। আর এই অস্থিরতা চন্দ্রের প্রতি ওর ভালোবাসাকে দিন দিন এক সময় দুর্বার করে তুললো।

অন্যদিকে ভালোবাসা বোঝার বয়স এখনও চন্দ্রের হয় নি। বিয়ের পরেও রুদ্রকে ও ছোট ভাইয়া বলে ডাকতো। একদিন ওর মা বলে দিলো- রুদ্রকে আর ছোট ভাইয়া ডাকতে নেই।

মায়ের কথা শুনে চন্দ্র এমন ভাব দেখালো যেন ওর মা বড্ড বোকা। বললো- ছোট ভাইয়াকে তো ছোট ভাইয়াই বলতে হয়। তুমি জানো না?

মা ফারিয়া খাতুন মুখ টিপে হেসে বললেন- ওরে আমার পাগলি মেয়ে! ও আর এখন তোর ছোট ভাইয়া নেই।

চন্দ্র অবাক হয়ে বললো- তাহলে কি?

- ও এখন তোর স্বামি। স্বামিকে ভাই বলতে নেই।

- স্বামি কি?

- সেটা তোর এখন না বুঝলেও চলবে। বড় হলে বুঝবি।

- তাহলে কি বলে ডাকবো?

ফারহানা বেগম একটু ভেবে বললেন- তুই ওর নাম ধরেই ডাকিস।

- নাম ধরে তো বড়রা ডাকে!

ফারহানা বেগম অবুঝ মেয়ের প্রশ্নে ক্লান্ত হয়ে গেলেন। বললেন- এখন থেকে ভাবিস তুই ওর বড়। তবুও ভাই বলে আর ডাকিস না।

চন্দ্র মাথা নেড়ে 'আচ্ছা' বললো। ও এবার যেনো একটা মজার খেলা পেয়ে গেলো। রুদ্রকে দেখলেই ভাব নিয়ে বলতে লাগলো- এই রুদ্র এদিকে আয়, এই রুদ্র এটা কর, এই রুদ্র ওটা কর, এখন থেকে আমার কথা শুনবি, বড়দের কথা শুনতে হয় ইত্যাদি।

চন্দ্রের এমন কথা শুনে বড়রা মুখ টিপে হাসতো। আর রুদ্র মনে মনে বলতো- আগে বড় হ, তারপর তোর ভাব নেয়া দেখাচ্ছি।

তবে চন্দ্র এখনও ভালোবাসার কিছু না বুঝলেও ওর প্রতি রুদ্রর আকর্ষন দিন দিন তিব্র থেকে তিব্রতর হয়ে গেলো। অবস্থা এমন হলো যে, চন্দ্রকে ছাড়া কোন কিছু কল্পনা করা ওর পক্ষে আর সম্ভব নয়। চন্দ্রকে ছাড়া ও আর কখনোই পরিপুর্ন নয়। ও অপেক্ষা করে আছে চন্দ্রের বড় হওয়ার, অপেক্ষা করে আছে চন্দ্রকে নিয়ে পৃথিবির বুকে এক টুকরো সর্গ রচনার। সেই চন্দ্রের হারিয়ে যাওয়াটা কিভাবে মানতে পারে ও!

রুমনের মটর বাইকের পিছনে বসে রুম মেট আবুলকে সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রুদ্র। আল্লাহকে মনে মনে বার বার বলতে লাগলো- আল্লাহ তুমি আমার স্ত্রিকে ফিরিয়ে দাও। ওকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না। বাচতে পারবো না।

মটর বাইকের মাঝে বসেছে রুদ্র, পিছনে আবুল। আবুল চন্দ্রের কথা জানতো, আর চন্দ্রের প্রতি রুদ্রের ভালোবাসার তিব্রতাও বুঝতো। পিছন থেকে রুদ্রর ঘারে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বললো- টেনশন করিস না রুদ্র। হয়তো বাড়ি গিয়ে দেখবো চন্দ্রকে খুজে পাওয়া গেছে।

রুদ্র কিছু বলতে পারলো না। তিব্র যন্ত্রণায় ওর গলা আটকে গেছে। মনে মনে আশা করলো আবুলের কথাই যেন ঠিক হয়। কিন্তু ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এবং মন অন্য কথা বলছে কেন!

চলবে......

পর্ব - ০৭
পর্ব - ০৯
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.