![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন
রুদ্র বাড়ি আসতেই সবাই ওকে ঘিরে ধরলো। আগে বাড়ি আসলে ওকে পেয়ে সবাই খুশিতে মেতে উঠতো। কিন্তু আজ সবাই যেন আড়ষ্ঠ হয়ে গেছে। কেউ কিছু বলছে না। পুরো বাড়ি শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। বাড়ির থমথমে পরিবেশ দেখেই রুদ্র বুঝে নিলো চন্দ্রকে এখনও পাওয়া যায় নি। রুদ্রর মা ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললেন। চন্দ্রের মা ওকে দেখে হাউমাউ করে কেদে উঠলেন। ওনাদের কান্না দেখে বাকি মহিলাদেরও চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু হলো। চন্দ্রকে হারানোর অসহ্য যন্ত্রণার সাথে এবার রুদ্রকে দেখে তাদের মনে রুদ্রের যন্ত্রণাও আঘাত করলো। চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার পরে এ বাড়ির মহিলারা শুধু কেদেই চলছেন। চন্দ্র সবার কাছেই আপন সন্তানের মতো। সন্তানকে না পাওয়া পর্যন্ত এ চোখের পানি যেন শেষ হওয়ার নয়। বাড়িতে একটা পুরুষ মানুষও নেই। সবাই চন্দ্রকে খোজার জন্য গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। সকাল থেকে আশপাশের সমস্ত গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু চন্দ্রের কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছে না, চন্দ্রকে কেউ দেখেই নি। ও যেন কর্পুরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
রুদ্র অতি শোকে পাথর হয়ে গেছে। ও কাদতেও পারছে না। যন্ত্রণায় বার বার বুক মোচর দিয়ে উঠছে। যন্ত্রণা যেন দলা পাকিয়ে বুক পুড়িয়ে গলায় ঠেলে উঠছে। গলার মাঝামাঝি এসে সে দলা যেন আটকে যাচ্ছে। ওর নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মামাতো ভাই ফাহিমের স্ত্রি লুবনা রুদ্রের কাছে এসে বললো- চলো, কিছু খেয়ে নাও।
- আমার ক্ষিদে নেই ভাবি। আবুলকে দেখিয়ে বলল- আমার বন্ধু আবুল, ওকে কিছু খেতে দাও।
লুবনা আবুলের দিকে তাকাতেই আবুল বললো- আমিও এখন খাবো না ভাবি। ক্ষুধা লাগলে পরে খাবো।
- অনেক দুর থেকে এসেছো। একটু খেয়ে নাও।
- ব্যস্ত হবেন না ভাবি। এখন সত্যিই খেতে ইচ্ছে করছে না।
লুবনা আর কিছু বললো না। এই পরিস্থিতিতে কার মুখেই বা খাবার ওঠে! লুবনার স্বামি ফাহিমই মেলায় চন্দ্রের হাত ধরে ছিলো। ফাহিমের হাত থেকে ফষ্কে গিয়েই চন্দ্র হারিয়ে যায়! ইশ্! ওর স্বামি যদি চন্দ্রের হাতটা আর একটু জোরে ধরতো তাহলে হয়তো সবার বুকের ধন এভাবে হারাতো না। কিন্তু ফাহিম নাকি চন্দ্রের হাত জোরেই ধরেছিলো। আচমকা কে এক জন চন্দ্র আর ফাহিমের মাঝ দিয়ে দৌড় দেয়। তখন প্রচন্ড টান লেগে ফাহিমের হাত থেকে চন্দ্রের হাত ছুটে যায়। লোকটাও নাকি মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো। তারপর চন্দ্রকে ধরার আর সুযোগই পায় নি ফাহিম। অন্য ভাইয়েরাও প্রচন্ড ঠেলাঠেলির মধ্যে কিছু করতে পারে নি। চন্দ্রের হাত ফষ্কে যাওয়ার সাথে সাথে ওদের উপর দিয়ে তখন এক দল লোক ছুটে যায়। সেই ছুটন্ত দলের স্রোতের সাথে চন্দ্রও হারিয়ে যায়। লুবনা ভাগ্যকে দোষারুপ করে মনে মনে বলে- খুনটা কি চন্দ্র যাওয়ার সময়ই হতে হয়!
রুমন রুদ্রর কাধে হাত রেখে বলে- কিছু খেয়ে নে। তুই না খেলে আবুলও খাবে না। চিন্তা করিস না ভাই, চন্দ্রকে আমরা ঠিকই খুজে বেড় করবো। তুই বাড়িতেই থাক, আমি যাচ্ছি।
চন্দ্রকে খোজার জন্য বেড়িয়ে পড়লো রুমন। রুদ্র নিজের রুমে ঢুকলো। পিছু পিছু আবুলও ঢুকলো। আবুল বললো- চল, আমরাও খুজতে বেড় হই।
রুদ্র আবুলের কথায় কিছু না বলে লুবনা ভাবিকে ডেকে কিছু খাবার দিতে বললো। আজ কারো চুলায় হাড়ি চড়ে নি। লুবনা ফলমুলসহ বেশ কিছু নাস্তা এনে দিলো। তারপর দুই বন্ধুকে একা থাকতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। রুদ্র খাটে বসে আবুলকে বললো- তুই একটু খেয়ে নে। এই পরিস্থিতিতে তোকে নিয়ে আসাটা হয়তো উচিত হয় নি। তোকে আনতে চেয়েছিলাম একটু আনন্দ করার জন্য কিন্তু হয়ে গেলো উল্টো।
- আবুল ধমক দিয়ে বললো- তুই এ সব কি বলছিস! বন্ধুত্বের সম্পর্ক কি শুধু মজা করার জন্যই? বিপদে বন্ধু কি পাশে থাকে না? বরং এখানে না এসে হোষ্টেলে থাকলে আমি অস্থির হয়ে মরতাম। তোর চন্দ্রকে খুজে না পাওয়া পর্যন্ত আমার মন আর ভালো হবে না। এ সব না বলে বরং চল চন্দ্রকে খুজি।
রুদ্র গম্ভির ভাবে বললো- আমি বেরুবো। তুই বাড়িতেই থাক। খেয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমা।
- বাজে বকিস না। আমি ঘুমানোর জন্য আসি নি। তোর সাথে আমিও যাবো।
- রুদ্র দৃঢ় স্বরে বললো- আমার সাথে তোকে আমি রাখতে পারি না।
রুদ্রের এমন সুরে পরিচিত নয় আবুল। অবাক হয়ে বললো- কেন?
- তোকে আমি বিপদের মুখে ফেলতে পারি না।
আবুল এবার আরো অবাক হয়ে গেলো। বললো- এখানে বিপদের কি আছে!
- আমার মন বলছে।
- আমরা চন্দ্রকে খুজবো, এখানে বিপদ আসবে কোত্থেকে? তুই কি ধারনা করছিস?
- চন্দ্রকে খুজে পাওয়া সহজ নয়। ওকে খুজতে হলে জিবন বাজি রেখে খুজতে হবে।
- তুই কেন এমনটা মনে করছিস?
- বললাম তো আমার মন বলছে।
- তুই কি কিছু জানিস?
- জানলে এখানে বসে থাকতাম না! কিন্তু মন বলছে বড় রকমের কিছু একটা হয়েছে। সেটা ভাইজানের কাছে শোনার পর থেকেই।
- তোর মন কেন এমনটা বলছে?
রুদ্র জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকলো। আবুল আবার বললো- ঠিক আছে, তোর মন যদি বলে জিবনের ঝুকি আছে তবে আমি সে ঝুকিও নেবো।
রুদ্র কিছুক্ষন আবুলের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। মানুষের চেহারা দেখে তার ভিতরটা বোঝার অদ্ভুদ এক ক্ষমতা আছে ওর। বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য আবুল যে হাসি মুখে জিবনও দিতে পারে সেটা ওর চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কিন্তু রুদ্র তো জেনে বুঝে ওকে বিপদে ফেলতে পারে না। আবুলকে বললো- ঠিক আছে খেয়ে নে। এক সাথেই বেড় হবো। কিন্তু একটা কথা আমি যখন চুপচাপ থাকবো তখন আমাকে একা থাকতে দিবি। কোন কথা বলবি না।
আবুল আশ্চার্য হয়ে বললো- কেন?
- যখন আমি আনমনা হয়ে থাকবো তখন মনে করবি আমি কিছু ভাবছি। কথা বলে আমার ভাবনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবি না। কারন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে আমার ভাবনা বিন্দু পরিমান এদিক ওদিক হোক সেটা আমি চাই না। আমি যা বলবো, যেটুকু বলবো শুধু সেটুকুই শুনবি বা বলবি। তার এক চুল এদিক ওদিক করবি না। আর মনে রাখ- সম্ভবত কোন সুচতুর শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়তে যাচ্ছি। আমার মন যদি ঠিক বলে থাকে তাহলে পৃথিবির সেরা সুচতুর শক্তিও সেটা হতে পারে। আর চন্দ্র হারিয়ে যায় নি, ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।
আবুল চরম ধাক্কা খেলো এবার। রুদ্র কি বলছে এ সব!
চলবে......
পর্ব - ০৮
পর্ব - ১০
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
©somewhere in net ltd.