![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন
মুর্তি সরে গিয়ে রুদ্র আর আবুলের সামনে যে গোপন পথ উন্মুক্ত হয়েছে তার দিকে চরম উত্তেজিত ভাবে তাকিয়ে থাকলো আবুল। ও এতোটাই উত্তেজিত হয়ে গেছে যে মুখ দিয়ে কোন কথা বেড় করতে পারছে না। এক বার শুধু অস্ফুট একটা শব্দ করে উঠলো। একটা লোহার প্রসস্থ সিড়ি ওদের সামনে চক্রাকারে ঘুরে হারিয়ে গেছে নিচের অন্ধকারে। রুদ্র সেই অন্ধকারে এবার লাইটের আলো ফেললো। লাইটের আলোয় দেখা গেলো সিড়ি অনেকটা নিচে নেমে একটা পাথুরে মেঝেতে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু ওটা কোন গুপ্ত কক্ষ নয় বরং একটা গুহা। গুহাটা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। কোথায় গেছে? আর কি আছে এই গুহার ভিতরে? আবুল কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললো- চল, নিচে নামি।
- এখন না।
- তাহলে কখন?
- সুর্য ডোবার বেশি দেরি নেই। গুহার ভিতরে কি আছে আমরা জানি না। কোন ফাদ থাকাও বিচিত্র নয়। যদি ঢুকে আটকা পড়ি তাহলে সেটা ভালো হবে না। এমনও হতে পারে আমরা জিবনে হয়তো আর বেড় হতেই পারবো না। চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ায় বাড়িতে এমনিতেই শোকের মাতম চলছে আর রাতে আমরা যদি না ফিরতে পারি তাহলে সবার অবস্থা কি হবে একটু ভেবে দেখ। এই গুহাতে ঢুকতে হলে পরিকল্পনা করে সময় নিয়ে ঢুকতে হবে। আমরা গুহায় পরে ঢুকবো।
- তুই ঠিকই বলেছিস। তাহলে আমরা এখন গুহার পথটা বন্ধ করে দেই।
কিন্তু অনেক চেষ্ঠার পরেও গুহার পথটা ওরা বন্ধ করতে পারলো না। আবার দুজন বসে পড়লো বেদির উপরে। আবুল বললো- এটা বন্ধ করার মনে হয় অন্য কোন কৌশল আছে।
- হ্যা। খোলার কৌশল আর বন্ধ করার কৌশল আলাদা।
রুদ্র কিছুক্ষন ভেবে উঠে দাড়ালো। তারপর ঝুকে লাঠিটাকে বেদির উপরে প্রায় সমান্তরালে রেখে মুর্তির এক জায়গায় এক বার আঘাত করতেই মুর্তিটা সরে আগের জায়গায় চলে গেলো। এবার মুর্তিটা যেখানে থাকলে শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যের কোন ত্রুটি থাকে না ঠিক সেখানেই দাড়িয়ে গেলো। আবুল বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বললো- কিভাবে কৌশলটা ধরে ফেললি!
- খোলা আর বন্ধ করা দুটো বিপরিত বিষয়। খোলার সময় মুর্তি আর বেদির ডানের সংযোগ স্থলে বেদি হতে আশি থেকে পচাশি ডিগ্রি কোণে আঘাত করতে হয়। আর বন্ধ করার সময় উল্টোটা করতে হবে। মুর্তি আর বেদির বাম পাশের কোনার সংযোগ স্থলে আঘাত করতে হবে। তবে সেটা বেদি হতে আশি থেকে পচাশি ডিগ্রিতে আঘাত করলে হবে না। বেদির সাথে মুর্তি নব্বই ডিগ্রি কোনে দাড়িয়ে আছে। নব্বই ডিগ্রি হতে আশি বা পচাশি ডিগ্রি বাদ দিলে থাকে পাচ থেকে দশ ডিগ্রি। তাই আঘাত করার সময় বেদির সমতল পৃষ্ঠ থেকে লাঠির দুরত্ব হতে হবে পাচ থেকে দশ ডিগ্রি।
- তোর বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়।
- এবার চল আমরা বেড়িয়ে পড়ি।
মন্দিরের দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে পড়লো ওরা। সুর্য এই মাত্র ডুবে গেছে। মেঠো পথ দিয়ে ফেরার সময় আবুল জানতে চাইলো- তুই কিভাবে বুঝলি চন্দ্রকে কেউ কিডন্যাপ করেছে?
- এটা বোঝাতে গেলে তোকে অনেক কিছুই বলতে হবে।
- আমি সবই জানতে চাই।
- আমার নানাকে দেখলে তুই প্রথমে সাধারন লোক ভাববি। কিন্তু তার চোখের দিকে যদি ভালো করে তাকাস এবং যদি তোর বোঝার মতো ক্ষমতা থাকে তাহলে তুই ধরে ফেলতে পারবি উনি সাধারন কেউ নন। ওনার ক্ষমতা প্রচন্ড। কতোটা প্রচন্ড সেটা আমি জানি না। তবে এটুকু বুঝতে পারি এই এলাকায় তো বটেই, পুরো দেশেই ওনার রাজত্য চলে। এমপি, মন্ত্রি, সরকারি বড় বড় কর্মকর্তারাও ওনাকে যথেষ্ঠ সমিহ করে চলে। হয়তো ভয়ও করে। আমি নিজেও জানি না ওনার এই শক্তির উৎস কি? হয়তো আমাদের বংশের দুই এক জন জানতে পারে, আবার নাও জানতে পারে। ওনার শক্তির উৎস না জানলেও শক্তিটা যে প্রচন্ড সেটাতে আমার বিন্দু মাত্রও সন্দেহ নেই। আমাদের কোন লাঠিয়াল বাহিনি নেই। কিন্তু মনে করতে পারিস আমাদের গ্রামসহ আশপাশের অনেকগুলো গ্রামের প্রতিটা লোকই নানার জন্য জিবন দিতে পারে। এর কারনও আছে। আমাদের বংশের সবাই লোকদের উপকার করে। আমরা জানি অন্যের উপকার করার জন্যই আমাদের জন্ম হয়। আমাদের বংশের সবাই কোন না কোন ব্যবসার সাথে যুক্ত। আর ব্যবসায় যা লাভ হয় তার বড় একটা অংশ অপেক্ষাকৃত গরিব লোকদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়। যদি কখনো ব্যবসায় কারো বড় ধরনের লস হয় তবে গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত টাকায় হাত না দিয়ে বরং কয়েক বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সেটা পুষিয়ে নেয়া হয়। আমাদের এলাকায় কোন গরিব লোক নেই। যখনই কেউ বিপদে পড়ে তখনই আমাদের বংশের কেউ না কেউ তাকে সে বিপদ থেকে উদ্ধার করে। এটা শুধু এখন না, আমাদের বংশ পরম্পরার মাধ্যমে এটা চলে আসছে। মনে করতে পারিস এটা আমাদের বংশের ঐতিহ্য। আমাদের প্রতিটা জেনারেশনেই এক জন লিডার থাকে। সেই লিডারের দায়িত্ব হচ্ছে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা। আর নানার যে প্রচন্ড শক্তির কথা বললাম সেটা বংশ পরম্পরায় এই লিডারের হাতে থাকে, অন্যরা এটা জানে না। বর্তমানে আমাদের বংশের লিডার হচ্ছে নানা। তাই আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের প্রতিটি লোকই নানার কথায় ওঠে বসে। সবাই জানে নানার কথার অবাধ্য হওয়া মানে চরম শাস্তি পাওয়া, যদিও নানার এই শক্তির উৎস কেউ জানে না। আমাদের এখানে কোন অপরাধ হয় না। এক মাত্র বৈশাখি মেলার জুয়া খেলা আর খুন খারাপি ছাড়া। নানা ও মেলায় হস্তক্ষেপ করে না। কারন বৈশাখি মেলা হলেও ওটা হিন্দুদের মন্দিরকে কেন্দ্র করে হয়। আর বংশের অন্যান্য লিডারের মতো নানাও হিন্দুদের অনুষ্ঠান থেকে দুরে থাকে। আমরা মুসলমান। নানা যদি ওই মেলায় হস্তক্ষেপ করে তাহলে হিন্দুরা হয়তো ভাবতে পারে তাদেরকে ধর্ম পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে, তাদেরকে আনন্দ করতে দেয়া হচ্ছে না। জুয়া খেলা, মদ খাওয়া আমাদের ধর্মে নিষেধ থাকলেও হিন্দুদের সেটাতেই আনন্দ। আর এ সব যেখানে থাকবে সেখানে মারামরি খুন খারাপি হবেই। তাই কেউ খুন হলেও নানা ওটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। আর যারা খুন হয় তারা সবাই মদারু জুয়ারু। তবে ভালো লোক যদি কখনো খুন হয় তবে আমার বিশ্বাস সেদিন নানা ও মেলাতেও হস্তক্ষেপ করবে। শুধু ওই মেলা ছাড়া আমাদের এখানে নানার ভয়ে আর কোন অপরাধ হয় না। ধর এক জন লোক চুরি করলো। কয়েক দিনের মধ্যে দেখা গেলো ঘুমের মধ্যে রুমের ভিতরে কেউ তার হাত কেটে দিয়ে চলে গেছে। কে কেটেছে সেটা কেউ জানতে পারে না। তবে সবাই ধরে নেয় এটাতে নানার হাত আছে। নানা কোন বিচার শালিসে যায় না। কিন্তু যারা বিচারের দায়িত্বে থাকে তারা রায় দেয়ার আগে চিন্তা করে তাদের ভুল রায়ে নানা যেন ক্ষুব্ধ না হন। যদি কখনো তারা ভুল রায় দেন তাহলে নানা বাদি এবং বিবাদিকে ডেকে শুধু তার রায় জানিয়ে দেন। তিনি কোন রায় জানালে সেটা উপেক্ষা করার সাধ্য কারো নেই। আর যারা ভুল রায় দিয়েছিলেন সেদিন থেকে তারা কোন বিচার শালিসে আর ডাক পান না। এক কথায় বললে বলা যায় নানা সাধারনত কারো কোন কিছুতে হস্তক্ষেপ করেন না কিন্তু যদি করেন তাহলে সেটাকে এড়িয়ে চলার সাধ্য এ এলাকার কারো নেই। নানাকে এ এলাকার লোক দেবতার চেয়ে কোন অংশে কম মনে করেন না। নানা একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে বিন্দুমাত্রও ভয় করেন না। তোকে নানার বিষয়ে এতো কিছু বললাম তারপরেও আমি জানি কিছুই বলা হয় নি। আসলে আমিও তেমন কিছু জানি না। শুধু অনুভব করতে পারি। আর এটাও অনুভব করতে পারি তার প্রানপ্রিয় নাতনিকে একটা টোকা দেয়ার সাহস কারো নেই, সে যতো বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন। চন্দ্র যদি এমনিতেই হারিয়ে যেতো তবে সেটা মানা যেতো। কিন্তু ও হারানোর মতো নয়। ও এবার ক্লাস ফাইভে পড়ে। ওই মেলায় অসংখ্য বার গেছে ও। আমাদের বাড়ি থেকে মেলা দেখা যায়। আমরা মেলার মাঠে মাঝে মাঝে খেলতে যেতাম। কখনো কখনো ওকে ফাকি দিয়ে যেতাম। ও ঠিক খুজে খুজে হাজির হতো। যে ক্লাস ফাইভে পড়ে এবং অসংখ্য বার নিজেই পথ চিনে যেখানে হাজির হয়েছে সে সেই জায়গায় কি করে হারিয়ে যায়! হাত ফষ্কে ভিড়ের মাঝে সাময়িক হারিয়ে গেলেও ও তো পরে ঠিকই ফিরে আসতো! আর যদি ধরে নেয়া যায় ভিরের মাঝে কোন আঘাতে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পথ ভুল করেছে। তবুও ও হারিয়ে যেতে পারে না। ওর মত সুন্দর চেহারা আমি দিতিয়টি দেখি নি। আমার বিশ্বাস শুধু আমি নই, অন্য কেউও দেখে নি। ওকে একবার যে দেখবে সে জিবনে ওর চেহারা ভুলবে না। আশপাশের গ্রামের এমন কেউ নেই, যে ওকে দেখি নি। আর নানার প্রিয় নাতনিকে কেউ চিনবে না এমনটা হতেই পারে না। আমাকে কেউ না চিনলেও ওকে সবাই চেনে, চিনবেই। আমাদের জেনারেশনের এই বংশের এক মাত্র মেয়ে ও। ওকে সবার চিনতেই হবে। ও পথ না চিনলেও অন্যরা ওকে বাড়ি পৌছে দিয়ে যাবে। তাই স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে হারিয়ে যাওয়ারও কোন সুযোগ ওর নেই। ও যদি কোন কারনে মারাও যেতো তবে পরদিন সকালে নিশ্চিত ভাবেই ওর লাশ পাওয়া যেতো। আমি নিশ্চিত ওর হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনে প্রতিটি মানুষ নিজের বেডের নিচেও পরিক্ষা করে দেখেছে। প্রতিটি ঝোপ ঝার, পুকুরসহ আশপাশের বহু গ্রামের প্রতিটি ইঞ্চি সকালেই পরিক্ষা করা শেষ হয়ে গেছে। হয়তো এই জঙ্গলেরও বিভিন্ন জায়গায় লোক ঢুকেছে। কিন্তু ওকে তো মেলা থেকে বেড় হতেই কেউ দেখে নি। যদি ও মেলা থেকে বেড় হতে পারতো তাহলে ওর হারিয়ে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব হতো না। আর মেলার ভিতরে থাকলেও সেটা সম্ভব নয়। কারন একটাই রাতে আকাশে চাদ উঠলে সবাই যেমন সেটা দেখতে পায় তেমনি চন্দ্র যেখানেই যাক না কেন ও চাদের মতোই ফুটে ওঠে। ওকে খোজার কোন দরকারই নেই। কোন যুক্তিতেই ওর হারিয়ে যাওয়া বা মরে যাওয়াকে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তাহলে আর একটা অপশনই বাকি থাকে। সেটা হচ্ছে- কেউ ওকে মেলার ভিতর থেকেই কিডন্যাপ করেছে এবং সাথে সাথেই লোকচক্ষুর আড়াল করে ওকে অনেক দুরে সরিয়ে ফেলেছে। কারন ওকে আশপাশের গ্রামে বেশিক্ষন লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আর নানার একমাত্র নাতনিকে যে বা যারা কিডন্যাপ করেছে তাদের দুঃসাহস নিঃসন্দেহে সিমাহিন। এরা সাধারন কিডন্যাপার নয়। আমার বিশ্বাস মেলায় সেদিন যে খুনটা করা হয়েছে সেটা চন্দ্রকে কিডন্যাপের পরিবেশ তৈরি করার জন্যই করার হয়েছে। আমার যে ভাইয়েরা চন্দ্রকে ঘিরে রেখেছিল তাদেরকে যারা বিচ্ছিন্ন করেছে তারাও চন্দ্রকে কিডন্যাপের সংগে যুক্ত। যেভাবে ছক কষে নানার মতো প্রচন্ড শক্তির নাতনিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তাতে যারা এর সংগে যুক্ত তারা সুচতুর না হয়ে পারেই না। আমার মন বলছে সে বা তারা পৃথিবির শ্রেষ্ঠ কৌশুলিই হতে পারে। দুর্ধর্ষ তো বটেই।
আবুল নির্বাক হয়ে রুদ্রর কথা শুনছিলো। যতো শুনছিলো ততোই ও ঘোরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছিলো। আবুল নিশ্চুপ হয়ে থাকায় রুদ্র বললো- এবার কি বুঝতে পেরেছিস আমি কেন মনে করছি চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা হয়েছে?
আবুল তখনও সব কথা হজম করতে পারে নি। তাই ছোট্ট করে জবাব দিলো- হু।
রুদ্র আবার বললো- আমার মন বলছে, চন্দ্রকে খুজে পাওয়াটা সহজ হবে না। কারন চন্দ্রকে কিডন্যাপ করার পিছনে যে বা যারা লুকিয়ে আছে তারা প্রচন্ড ধুর্ত। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে নামলে আমার জিবনও যেতে পারে। তাই আমি এমন একটা জায়গার কথা ভাবছিলাম যেখানে আমি লুকিয়ে থাকতে পারি। কিংবা কাউকে কিডন্যাপের প্রয়োজন পড়লে তাকে দির্ঘ দিন লুকিয়ে রাখতে পারি। আর এটা ভাবতেই এই মন্দিরের কথাটাই আমার প্রথম মনে পড়ে। কারন আমার মনে হচ্ছিলো এই মন্দিরে কোন গুপ্ত কক্ষ থাকতে পারে। যে জঙ্গলটা আজ দেখছিস বহুদিন আগে এখানে এক অত্যাচারি জমিদারের রাজবাড়ি ছিলো। যে মন্দিরটাতে আজ গিয়েছিলি সেখানে কালির উদ্দেশ্যে নর বলি দেয়া হতো। কোন এক কারনে, হতে পারে সেটা ভুমিকম্প কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই রাজবাড়ি অত্যাচার জমিদার এবং তার পরিবারসহ মাটির নিচে চলে যায় কিন্তু আশ্চার্য জনকভাবে মন্দিরটা অক্ষত থেকে যায়। অভিশপ্ত ভেবে ঐ মন্দিরের দিকে আর কেউ পা বাড়ায় নি। তারপর বহু বছর জায়গাটা অব্যবহৃত থাকায় ধিরে ধিরে এখানে এই জঙ্গলের সৃষ্টি হয়। যে সুরঙ্গ আজ দেখলি সেটা খুব সম্ভব রাজবাড়ির সাথে সংযুক্ত হয়েছে কিংবা নদির কোথাও উন্মুক্ত হয়েছে। তবে সে পথটা আজ আর অক্ষত না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
আবুল এবার ঢোক গিলে বললো- অনেক কিছুই বুঝলাম। কিন্তু তুই যে শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে চাচ্ছিস তাকে খুজে বের করবি কি ভাবে?
- আমার যে ভাইয়েরা চন্দ্রকে নিয়ে মেলায় গিয়েছিলো প্রথমে তাদের সাথে কথা বলবো। চন্দ্রকে হারানোর মুহুর্তে ঠিক কি হয়েছিলো সেটা আমাকে জানতে হবে। নানার সাথেও কথা বলবো। তার কোন শত্রু আছে কিনা সেটাও জানতে হবে। তাকে ফাদে ফেলার জন্যই চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা হয়ে থাকতে পারে। নানারা কেউ বাড়িতে ছিলো না জন্যই আমি মন্দিরে এসেছিলাম। কারন আমি জানি চন্দ্রকে বিক্ষিপ্ত ভাবে খুজে লাভ নেই। ওকে খোজার জন্য সুত্র প্রয়োজন। নানারা রাতের আগে বাড়ি ফিরবে না। আর তাই এই সময়টা আমি মন্দিরে গুপ্ত কক্ষ খোজার পিছনে ব্যয় করলাম। কাল যে মাঠে মেলা হচ্ছে সেই ঠাকুর পাড়ার মাঠেও যাবো আমি। চন্দ্রকে যেদিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেদিকে কি কি ছিলো সেটা জানতে হবে। আশপাশে কাদের দোকান ছিলো সেটার লিস্ট তৈরি করতে হবে, তাদের সাথে কথা বলতে হবে। মেলার বাহিরে সেদিকে যাদের বাড়ি আছে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। সেদিকে যে পথ আছে সেই পথের পাশে যাদের বাড়ি আছে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। পুলিশ কত দুর এগুলো সেটাও জানতে হবে। সবাই যে এতো খোজাখুজি করছে তারা কিছু জানতে পেলো কিনা সেটাও শুনতে হবে। কোন গুজব ছড়িয়েছে কিনা সেটা জানার চেষ্ঠা করতে হবে। মেলার ভিতর থেকেই যে চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা হয়েছে সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে কিভাবে ওকে মেলা থেকে বেড় করা হলো সে বিষয়ে ধারনা করতে হবে। খুনের ঘটনা ছাড়া আরো কোনো বিশেষ ঘটনা সেদিন ঘটেছিলো কিনা সেটা জানতে হবে। মেলা কমিটির সাথে কথা বলবো। তারা কিছু জানে কি না সেটা জানতে হবে। সে দিন কে খুন হয়েছে তার পরিচয় জানতে হবে। তাকে কে খুন করেছে সেটার ধারনা করতে হবে। এ সব কিছু জানার পরে যদি কোন সুত্র পাওয়া যায় তাহলে ঠিক সেই সুত্র ধরে এগুতে হবে। ছোটখাটো সুত্র পেলে সেগুলোকে সমন্বয় করে দেখতে হবে।
আবুল কথার মাঝে বলে উঠলো- এক দিনে এতো গুলো কাজ কিভাবে করবি!
- আমি একা করবো না। কাজ ভাগ করে দিবো। যেখানে নিজেকে থাকার প্রয়োজন মনে করবো শুধু সেখানেই আমি থাকবো।
আবুল কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করে বললো- যদি কোন সুত্রই পাওয়া না যায়?
রুদ্র দৃঢ়ভাবে বললো- একটা ঘটনা ঘটেছে আর সেটার সুত্র পাওয়া যাবে না! আর এটা মোটেও ছোট খাটো কোন ঘটনা নয়। এই ঘটনার জন্য সামনে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটবে, যেটা আমরা এখন চিন্তাও করতে পারছি না। হয়তো অনেক খুনও হবে। এমন ঘটনা যেহেতু ঘটেছে সেহেতু সেটার সুত্রও থাকবে। এবং আমি সেটা অবশ্যই পাবো। চন্দ্র আমার স্ত্রি। ওকে আমার জিবন থেকে এভাবে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। পৃথিবির যে শক্তি যে প্রান্তেই ওকে লুকিয়ে রাখুক না কেন আমি ওকে খুজে বের করবোই। প্রয়োজনে পুরো দুনিয়া ওলট পালট করে ছাড়বো আমি।
আবুল রুদ্রর দৃঢ় স্বর শুনে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। চাদের আলোয় দেখতে পেলো ওর চোখ জলজল করে জলছে। ওর চোখে কি হিংস্রতা ফুটে উঠেছে!
চলবে.......
পর্ব - ১০
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
©somewhere in net ltd.