নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ১৪

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪০

ঠাকুর পাড়া মাঠের মাঝে বিশাল একটি বট গাছ, শত বছরের পুরনো। বট গাছটির অনেক ঝুরিও বড় কান্ডে পরিনত হয়েছে। মেলার সময় বট গাছের চতুর্দিকে বিভিন্ন দোকান বসে। আর মাঠের দক্ষিনে অনেকটা জায়গা জুড়ে হাউজি, ছয় গুটির ডাব্বু, রিং ঘুরানো, তিন তাসসহ বিভিন্ন রকমের জুয়ার আসর বসে। মাঠের একদম উত্তরে হিন্দুদের বড়সড় একটি মন্দির। মাঠের পুর্ব দিকে বসানো হয়েছিলো টাইগার সার্কাসের প্যান্ডেল। হাতির খাবারের বেচে যাওয়া কিছু কলা গাছ এখনো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মাঠের চতুরপার্শ্বে ঝোপঝাড়ের সাথে হিন্দুদের কিছু বাড়ি ঘরও আছে।

নানা বোরহান উদ্দিনের সাথে কথা বলা শেষ করে একটু খেয়েই মেলার মাঠে চলে এসেছে রুদ্র। সাথে ওর রুমমেট আবুল এবং কয়েক জন চাচাতো ও মামাতো ভাইও আছে। চন্দ্রকে কিডন্যাপের দিন চন্দ্রের সাথে ছিলো আরমান, রুদ্রের মামাতো ভাই। আরমান দেখিয়ে দিলো কোন জায়গাটায় ওরা চন্দ্রকে হারিয়েছিলো। জায়গাটা বট গাছের দক্ষিনে, বট গাছ আর জুয়ার আড্ডার মাঝামাঝি। খুনটা হয় জুয়ার আসর যেদিকে বসে সেদিকে। জুয়ার দিক থেকে বেশ কয়েক জনের দল চন্দ্রদের দিকে ছুটে এসে চন্দ্রকে ওর ভাইদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং দলটি চলে যায় সার্কাসের প্যান্ডেলের দিকে। রুদ্রের ধারনা- অন্যদের কাছ থেকে আড়াল করার জন্য দলটা চারদিক দিয়ে চন্দ্রকে ঘিরে ধরে এবং চন্দ্র যাতে চিৎকার করতে না পারে সে জন্য ওর মুখ চেপে ধরে মেলার মাঝেই কোন কিছুতে করে ওকে কিডন্যাপ করা হয়। মেলার বাহিরে নিয়ে যেয়ে কোন কিছুতে ওকে উঠানো হয় নি। কারন মেলার ভিড় থেকে বাহিরে নিয়ে গেলেই অন্যরা ওকে দেখে ফেলতে পারে। আর এক জন দেখলেই ওকে কিডন্যাপ করা সম্ভব নয়। কারন এক জনের চিতকারে আশপাশ থেকে শত লোক চলে আসবে। এই এলাকার লোকজন নিজের সন্তানের মতোই চন্দ্রকে স্নেহ করে। শুধু যে স্নেহ করে তাই নয়, বোরহান উদ্দিনের একমাত্র নাতনি হওয়ায় সবার কাছে ওর গুরুত্বও অনেক। তাই মেলার বাহিরে নিয়ে গিয়ে তারপর অপেক্ষমান কোন কিছুতে উঠিয়ে কিডন্যাপ করার রিস্ক কিডন্যাপাররা নিতে পারে না। মেলার ভিতরেই কোন কিছুতে ওকে উঠানো হয়। কিন্তু মেলার ভিতরে কিসের সাহায্যে ওকে লোকচক্ষুর আড়াল করে বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়? সার্কাস পার্টির মাধ্যমে? সেদিন সার্কাস পার্টির প্যান্ডেলে ওকে অজ্ঞান করে কিংবা মুখ বেধে রাখা হয়, তারপর পরদিন ট্রাকের কোন গুপ্ত চেম্বারে ভরিয়ে কিডন্যাপ করা হয়? এটা একটা উপায় হলেও রুদ্রের মন মতো হচ্ছে না। সার্কাস পার্টির কাছে একদিন রাখলে কিডন্যাপারদের চরম রিস্ক নিতে হয়। চন্দ্র হারিয়ে গেলে মেলা তন্নতন্ন করে খোজা শুরু হবে, তাতে সার্কাস পার্টির একটা সুচও বাদ যাবে না- এটা তো কিডন্যাপারদের না বোঝার কথা নয়। তারা চন্দ্রকে একমুহুর্তও এই এলাকায় রাখতে চাইবে না। দোকানের মালপত্র হিসেবে বস্তা বন্দি করে নিয়ে যাওয়াটাতেও রিস্ক আছে। বস্তা বন্দি করে কতদুর নিয়ে যাবে? মেলার বাহিরে অপেক্ষমান কোন গাড়িতে দোকানের মালপত্র হিসেবে তুললেও লোকেরা সন্দেহ করে বসবে। এই মেলায় যে সমস্ত লোক দোকান বসায় তারা ঘাড়ে করে কিংবা রিক্সা ভ্যানে মালপত্র নিয়ে আসে। এমন দোকানের মালপত্র হঠাত করে গাড়িতে তুললে লোকেরা সন্দেহের চোখে দেখবে। আর মেলার দোকানিরা সাধারনত স্থানিয়, আশপাশের গ্রামের। এদেরকে সবাই চেনে। অন্তত মেলা কমিটি তো চিনবেই। দুরের কেউ দোকান বসালেও মেলার প্রথম কয়েক দিনেই সবাই তাকে চিনে ফেলে। আবার খুন হওয়ার সাথে সাথেই কেউ দোকান গুটিয়ে দৌড় দিতে পারে না। দোকান গোটানোর সময় লাগে। দোকানের মালপত্রের সাথে চন্দ্রকে কিডন্যাপ করলে চাইলে এ সময়টুকু তো দিতেই হবে। আর এই সময়টাতে অনেক কিছুই হতে পারে। তাদের পরিকল্পনা এই সময়টুকুতেও ভেস্তে যেতে পারে। মেলার চারদিকে পুলিশ থাকে। পুলিশের সামনে সন্দেহজনক কেউ পড়লে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে পারে। প্রতি মেলাতেই মারামারি আর খুনোখুনি হওয়ায় পুলিশরা সব সময় সতর্ক থাকে। অন্যদিকে এলাকার পরিচিত দোকানদার দিয়ে এ কাজ করানো সম্ভব নয়। কাজেই এমন দোকানের মালপত্র হিসেবেও চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা রিস্ক। যারা এতো প্লান করে ওকে কিডন্যাপ করেছে তারা কি এই রিস্কটুকু নিবে? তারা চাইবে যত দ্রত সম্ভব চন্দ্রকে এলাকার বাহিরে নিয়ে যেতে। আর এ জন্য গাড়ি ব্যাবহার করার সম্ভাবনাই বেশি। তারপরেও রুদ্র নিজেকে সতর্ক করে মনে মনে বললো- দোকানের মালপত্র হিসেবে চন্দ্রকে কিডন্যাপিংয়ের বিষয়টা মন মতো না হলেও এটাও একটা সম্ভাব্য উপায়। এদিকটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

মেলার কোথায় কোন দোকান বসেছিলো সেটা আরমান দেখিয়ে দিলো। চন্দ্র যেখানে হারিয়ে গেছে সেখান থেকে সার্কাসের প্যান্ডেল পর্যন্ত চুড়ি ফিতা, বাচ্চাদের খেলনা আর কয়েকটা বাতাসা, কদমা, মুড়িমুড়কি, জিলেপির দোকান বসেছিলো। রুদ্র এই দোকানগুলোর লিস্ট তৈরি করে দোকানদারের সাথে দেখা করার জন্য আরমানকে দায়িত্ব দিলো। খুন হওয়ার সাথে সাথেই কোনো দোকানদার তার দোকান উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে কিনা কিংবা চন্দ্রকে কেউ দেখেছে কিনা বা চন্দ্রের গলা কেউ শুনেছে কিনা- দোকানদারদেরকে এটাও জিজ্ঞেস করতে বললো। এবং সেই সাথে দোকানদারদের কথা, ভাবভঙ্গি ভালো করে লক্ষ্য করতে বললো। অর্থাত কথার সাথে বডি ল্যাংগুয়েজ এবং চোখের চাহনির মধ্যে ভারসাম্য থাকে কিনা- এটা ভালো করে পর্যবেক্ষন করতে হবে। চোখ দেখেও যে মিথ্যে কথা বোঝা যায় সেটা বোঝালো। কেউ যখন বানিয়ে কথা বলতে চায় তখন অনেকেই আকাশের দিকে তাকিয়ে সময় নেয়, আবার কেউ মাথা চুলকায়- এসব টুকিটাকি বিষয়ও আরমানকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলো রুদ্র।

আবুল হঠাত করে রুদ্রকে প্রশ্ন করে বসলো- চন্দ্রকে তো টাকার জন্যও কেউ কিডন্যাপ করতে পারে। হয়তো দেখা গেলো কেউ টাকা চেয়ে বসবে।

রুদ্র বললো- টাকার জন্য ওকে কেউ কিডন্যাপ করে নি। এমন কিডন্যাপাররা কিডন্যাপিংয়ের জন্য প্লান করে খুন করে না, সার্কাস পার্টিও আনবে না। এটার জন্য যে মাষ্টার প্লানিং করা হয়েছে সে মাথা এমন কিডন্যাপারদের নেই। আর এমন কেউ কিডন্যাপ করলে এতোক্ষনে তারা ধরা পড়তো।

- তুই বিষয়টাকে যেভাবে ভাবছিস হয়তো বিষয়টা তেমন নয়। খুন এবং সার্কস পার্টি এই কিডন্যাপিংয়ের সাথে হয়তো যুক্তই নয়।

রুদ্র জোর দিয়ে বললো- খুন এবং সার্কাস পার্টি অবশ্যই এই কিডন্যাপিংয়ের সাথে যুক্ত। এটা আমার মন বলছে এবং আমার মনের বলাটা মিথ্যে হতে পারে না। এর পক্ষে যুক্তিও আছে, সেটা আগেই বলেছি।

- খুন এবং সার্কাস পার্টির সাহায্য না নিয়ে কি চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা যেতো না? মেলা ছাড়া অন্য কোন ভাবেও তো ওকে কিডন্যাপ করা যেতো! তাহলে সার্কাস পার্টি আর খুনের ঝামেলা থেকে তারা কি বাচতো না?

- তারা যে প্লান করেছে সেটা ছাড়া সত্যিই চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা যেতো না। আর করা গেলেও হাজারটা রিস্ক থাকতো। চন্দ্র যেখানেই যাক না কেন ওর সাথে কেউ না কেউ থাকেই। কেউ না থাকলেও মনে করতে হবে সব সময় ওকে কেউ না কেউ দেখছে। ও কারো চোখের আড়াল হতে পারবে না। তারপরেও যদি ধরে নেয়া যায়, কোন কারনে ও চোখের আড়াল হয়েছে তারপরেও কেউ ওকে কিডন্যাপের সাহস করবে না। কারন ভুল করে কেউ যদি দেখে ফেলে চন্দ্র সামান্যতম সমস্যায় পড়েছে তাহলে যে দেখবে সেই ছুটে আসবে। এবং তার একটা চিতকারে চতুর্দিক থেকে লোক জন ছুটে আসবে। আমাদের প্রভাবের কথা তোকে আগেই বলেছি। সাভাবিক অবস্থায় কোন ভাবেই ওকে কিডন্যাপ করা সম্ভব নয়। মেলার কম ভিড়েও ওকে কিডন্যাপ করা সম্ভব হতো না। চন্দ্র সাধারনত মেলায় যায় না। ওকে মেলাতে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং সেই সাথে মেলার ভিড় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সার্কাস পার্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর খুন করে চারদিকে দৌড়াদৌড়ির চরম অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে, যার কারনে সাময়িক ভাবে চন্দ্রের সাথে যারা ছিলো তাদেরকে অচল করে দেয়া হয়েছে। এবং এই অচল করে দেয়ার সময়টুকুর মধ্যেই চন্দ্রকে গায়েব করা হয়েছে। এটা খুবই সুক্ষ্ম একটা পরিকল্পনা। যদি চন্দ্র শেষ মেলায় না যেতো তাহলে নিশ্চয়ই তারা আবার অন্য পরিকল্পনা ধরে এগুতো।

- ঠিক আছে, তোর সব কথাই মানলাম। কিন্তু ওদেরকে ধরার সুত্র কি পাওয়া যাবে?

- নিশ্চয়ই সুত্র পাবো। সুত্র রেখে যাওয়া ছাড়া এতো বড় কাজ তারা করতে পারবে না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, সুত্র পেয়ে আমরা আবার সেটা হারিয়েও ফেলবো। কারন তারা সুত্র ছিড়ে দেয়ার কাজটাও নিশ্চয়ই করেছে।

- সুত্র না পেতেই হারিয়ে যাওয়ার কথা বলছিস!

রুদ্র আনমনা হয়ে বললো- কে বলেছে সুত্র পাই নি? একদমই যে পাই নি তা তো নয়!

আবুল অবাক হয়ে বললো- সুত্র পেয়েছিস? কি সুত্র?

এবার আবুলের দিকে তাকিয়ে রুদ্র বললো- সার্কাস পার্টিকে কেউ ফাইন্যান্স করেছে- এটা একটা সুত্র। চন্দ্রকে কিডন্যাপ করার জন্য বেশ কয়েক জনের দলকে কাজে লাগানো হয়েছে। তাদেরকে এক মাস মেলায় আসতে হয়েছে। এ জন্য তাদেরকে কোথাও না কোথাও থাকতে হয়েছে- এটাও একটা সুত্র। চন্দ্রকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন না কোন কিছু ব্যবহার করা হয়েছে। হয় কোন দোকানের মালপত্রের সাথে, নয়তো সার্কাস পার্টির সাথে, অথবা অন্য কোন উপায়ে, খুব সম্ভব কোন গাড়িতে করে- এটাও একটা সুত্র। কিডন্যাপাররা চন্দ্রের বিষয়ে অবশ্যই ভালোভাবে খোজ নিয়েছে। সার্কাসের প্রতি চন্দ্রের দুর্বলতা আছে- এটা ওরা খোজ না নিয়ে জানে নি। আর তারা যে চন্দ্রের দুর্বলতা জেনেছে তার প্রমান এই সার্কাস পার্টির আয়োজন। চন্দ্রের প্রতিটা বিষয় তারা ভালো করে জানে। কিভাবে তারা খোজ নিলো? এলাকার কাউকে জিজ্ঞেস করে নাকি স্থানিয় কেউ তাদেরকে সহযোগিতা করেছে? -এটাও একটা সুত্র। সেদিন একটা খুন হয়েছে। খুন হওয়া লোকটার পুরো পরিচয় জানতে হবে এবং খুনিকে ধরার চেষ্টা করতে হবে- এটাও একটা সুত্র। এবং সুত্র আরো বেড় হবে। কিডন্যাপাররা আসলে আমাদেরকে অনেক সুত্র দিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এ সব সুত্র ধরে বেশি দুর হয়তো এগুতে পারবো না। এই সুত্রগুলো ধরে যখন এগুবো তখন দেখবো একটা জায়গায় সুত্রগুলো ছিড়ে গেছে। কারন কিডন্যাপাররা কোন সুত্রই আস্ত রাখবে না।

রুদ্র কথা বলতে বলতে সার্কাসের প্যান্ডেল যেদিকে ছিলো সে দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। হঠাত করে এক জায়গায় একটা তুলোর টুকরো দেখতে পেলো। টুকরোটিতে শুকনো রক্ত লেগে আছে। রুদ্র তুলোটা হাতে নিয়ে চোখের সামনে ধরে আশ্চার্য হয়ে বললো- কি এটা!

আরমান রুদ্রের হাতে শুকনো রক্ত লাগা তুলোর টুকরোটা দেখে বললো- ব্লাড ডোনেশনের ক্যাম্প বসেছিলো মেলায়। কেউ রক্ত দেয়ার পরে তুলোর টুকরোটা সিরিঞ্জ ঢোকানোর জায়গায় ধরেছিলো।

রুদ্র আশ্চার্য হয়ে বললো- ব্লাড ডোনেশনের ক্যাম্প! এ মেলায় ব্লাড ডোনেশনের ক্যাম্প তো আগে বসে নি!

- এবারই প্রথম বসেছিলো। ওই যে ওখানটায়।

আরমান যে জায়গাটা দেখালো সেটা সার্কাসের প্যান্ডেলের পাশেই, দক্ষিনে। আর দক্ষিন দিক দিয়ে একটা রাস্তাও আছে। রুদ্র চিন্তিত হয়ে আরমানকে জিজ্ঞেস করলো- মেলার প্রতিদিনই ক্যাম্প বসতো?

- হ্যা।

- ওরা কিসে যাতায়াত করতো?

- একটা অ্যাম্বুলেন্সে।

- অ্যাম্বুলেন্সটা সেদিন কখন চলে গেছিলো?

- চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার সময়।

- অ্যাম্বুলেন্সটা আর ব্লাড ডোনেশনের ক্যাম্পের জন্য যারা এসেছিলো তাদের খোজ নেয়া হয়েছিলো?

- হ্যা। তারা দুই জন ছিলো। এক জন মেয়ে, আরেক জন ছেলে। মেয়েটা গাইবান্ধা হাসপাতালের নার্স আর ছেলেটা একটা ক্লিনিকের ল্যাব টেকনিশিয়ান। এরা 'জিবন' নামের একটা ব্লাড ডোনেশন ক্লাবের সদস্য। ওদেরকে স্থানিয় কয়েক জন ছেলে সাহায্য করেছিলো। পুলিশ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সন্দেহজনক কিছু পায় নি।

রুদ্র চিন্তিত হয়ে বললো- কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে করে খুব সহজেই চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা যায়, যদি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার আর জিবন ব্লাড ডোনেশন ক্লাবের দুই সদস্যকে হাতে রাখা যায়। রুদ্র ওর চাচাতো ভাই আরিফকে লক্ষ্য করে বললো- আরিফ ভাই, অ্যাম্বুলেন্সটা যে পথে শহরে গেছে সেই পথের আশপাশে যাদের বাড়ি আছে তাদেরকে বলে দেখো তারা সন্দেহজনক কিছু দেখেছে কি না? অ্যাম্বুলেন্সটা ঠিক মতো ঠিক সময়ে যেখানে পৌছানোর কথা সেখানে পৌছেছে কিনা? কোথাও দাড়িয়েছে কিনা? সবাইকে উদ্দেশ্য করে রুদ্র এবার জানতে চাইলো- সেদিন মেলায় কয়টা গাড়ি ছিলো? সার্কাসের কোন গাড়ি কি সেদিন মুভ করেছিলো?

আরমান জবাব দিলো- সার্কাসের গাড়ি সেদিন মুভ করে নি। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সেদিন পুলিশের একটা গাড়ি ছিলো, আর একটা মাইক্রো ছিলো। বগুড়া থেকে কয়েক জন জুয়া খেলার জন্য মাইক্রো নিয়ে এসেছিলো। তবে তারা চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার অনেক আগেই চলে যায়।

- মাইক্রোতে যারা এসেছিলো তাদের খোজ নেয়া হয়েছে?

- না। তারা চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার অনেক আগেই চলে যায়। তাই পুলিশের ধারনা চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার জন্য তারা দায়ি নয়।

- তাদের খোজ নেয়াও উচিত ছিলো। চন্দ্র যখন মেলায় ঢোকে তখন কি তারা ছিলো?

- এটা বলতে পারছি না। তবে সবাই বলেছে তারা চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার অনেক আগেই চলে গেছে।

- কত আগে গেছে, এটা জানতে হবে। চন্দ্র যখন মেলায় আসে তখন তারা ছিলো কিনা, এটা জানা জরুরি। এমনও হতে পারে তারা যখন দেখে চন্দ্র মেলায় এসেছে তখন বুঝতে পারে এবার চন্দ্রকে কিডন্যাপ করা হবে। আর সবাইকে ধোকা দেয়ার জন্য তারা মেলা থেকে আগেই চলে যায় কিন্তু অন্য কোথাও গিয়ে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে। আর অন্য এক গ্রুপ চন্দ্রকে কিডন্যাপ করে তাদের কাছে পৌছে দেয়। রুদ্র এবার আরেক চাচাতো ভাই ছাদেককে লক্ষ্য করে বললো- ছাদেক ভাই, তুমি এটার খোজ নাও। মাইক্রোটা চন্দ্র মেলায় ঢোকার আগেই চলে গেছে, না পরে গেছে। জানার চেষ্টা করো মাইক্রোতে কারা ছিলো? এখন তারা কে কোথায় আছে? আরিফকে লক্ষ্য করে আবার বললো- আরিফ ভাই, তুমি রাস্তার আশপাশের লোকদের কাছে অ্যাম্বুলেন্সের সাথে মাইক্রোর তথ্যও জানার চেষ্টা করো।

আরমান, আরিফ এবং ছাদেককে তাদের কাজে পাঠিয়ে দিলো রুদ্র। রুদ্রদেরকে দেখে আশপাশের বাড়ি থেকে অনেকেই চলে এসেছে। ওদের সাথেও দির্ঘক্ষন কথা বলে বিভিন্ন তথ্য নিলো রুদ্র। এরপর মেলা কমিটির সভাপতি রাজেন্দ্র ঠাকুরের বাড়ির দিকে পা বাড়ালো ও। দেখা যাক্, এবার রাজেন্দ্র ঠাকুর ওকে কি তথ্য দিতে পারে? সার্কাস পার্টির ফাইন্যান্স কে করেছে- অন্তত সেটা তো তার জানার কথা!

চলবে.....

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.