নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ১৮

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:০২

চন্দ্রকে কিডন্যাপের কথা বাড়ির মেয়েরাও জেনে গেছে। তাদের শোক আরো ভারি হয়ে উঠেছে। কমবেশি সবাই শারিরিক এবং মানুষিকভাবে ভিষন দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারপরেও তারা বাড়ির পুরুষদের জন্য রান্না করছেন, জোর করে খাওয়াচ্ছেন। চন্দ্রের মা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। রুদ্রের মার অবস্থাও এক। ডাক্তার করিম শেখ শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে চন্দ্রের মা এবং রুদ্রের মাকে স্যালাইন দিয়েছেন।

আবুলকে সাথে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলো রুদ্র। খেতে ইচ্ছা না হলেও এখন থেকে জোর করে নিয়মিত খেতে হবে ওকে। না খেয়ে শরির ভেঙ্গে ফেললে চলবে না। এমনিতেই মনের প্রচন্ড যন্ত্রণা দেহেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে, আবার যদি খাওয়াটা নিয়মিত না খায় তাহলে খুব দ্রুতই ওকে বিছানা নিতে হবে। কিন্তু অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলে ওর চলবে না। ওকে সুস্থ থাকতে হবে, স্ত্রি চন্দ্রকে খোজার জন্য শরিরটাকে ঠিক রাখতে হবে। রুদ্রের কথা মতো যারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য বেড়িয়ে পড়েছিলো তারা অনেক রাতে এক এক করে ফিরে এলো। আজও বোরহান উদ্দিন রাতে ফিরবেন না। গভির রাতে সবাইকে নিয়ে কাচারি ঘরে বসলো রুদ্র। ফাহিমেরা ছাড়া মোটামুটি সবাই উপস্থিত হয়েছে। ফাহিমেরা আজ আসতে পারে নি, কারন সার্কাস পার্টির সবার সাথে ওদের কথা বলা সম্ভব হয় নি। সার্কাস পার্টির সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়া মেয়েটা এবং দুই জন পুরুষ সদস্য বাড়ি গিয়েছে, তারা কাল আসবে। তাই ওরা আজ দিনাজপুরেই রয়ে গেছে। রুদ্র আরমানের দিকে তাকিয়ে বললো- আরমান ভাই, তুমি দোকানদারদের সাথে কথা বলে কি জানতে পারলে? কয়জনের সাথে কথা বলতে পেরেছো?

- সবার সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নি। চন্দ্র যেখান থেকে হারিয়ে যায় সেখান থেকে সার্কাস পার্টির প্যান্ডেল পর্যন্ত দুই সারিতে মোট পনেরোটি দোকান ছিলো। এক সারিতে সাতটি, আরেক সারিতে আটটি। এ দোকানগুলো ছিলো চুরিফিতা, বাচ্চাদের খেলনা আর খাবারের দোকান। এরা সারাদিন গ্রামে গ্রামে ফেরি করে নিজেদের পন্য বিক্রি করে। দিনে এদেরকে বাড়িতে পাওয়া যায় না। আর এদের বাড়িও এক জায়গায় নয়, বিভিন্ন গ্রামে। আমি সাত জনের বাড়িতে যেতে পেরেছি। তাদের মধ্যে চার জনের সাথে দেখা হয় নি। তাদের বাড়িতে বলে এসেছি তারা কাল সকালে যেনো আমাদের এখানে চলে আসে। রাতে তিন জনের দেখা পেয়েছি। তাদের মধ্যে এক জনের দোকান ছিলো চন্দ্র যেখানে হারিয়ে যায় তার কাছেই। সে একটা মেয়ের চিতকার শুনেছে কিন্তু মেয়েটিকে দেখতে পারে নি। তার দোকানের পাশ দিয়ে সবাই দৌড়াদৌড়ি করায় সে দোকান সামলাতে ব্যস্ত ছিলো। বাকি দুইজনের দোকান ছিলো সার্কাস পার্টির প্যান্ডেলের কাছাকাছি। তারা সবার চিতকার চেচামেচির মধ্যে মেয়ে গলার চিতকার আলাদা ভাবে শোনে নি। চন্দ্রের চেহারার বর্ননা তাদেরকে দিয়েছি কিন্তু তারা তেমন কাউকে দেখে নি।

- এই তিন জনের আচড়নে বা কথায় সন্দেহজনক কিছু পেয়েছো?

- না।

- কাল সকালে চারজন দোকানদার আমাদের এখানে এলে তাদের সাথে কথা বলতে পারছো, কিন্তু আরো বাকি থাকছে আটজন। তাদের সবার সাথে কাল কথা বলতে পারবে?

- কালকে সবার সাথে কথা বলা সম্ভব নয়। তারা জানেই না তাদেরকে আমরা খুজছি। দিনে তাদেরকে পাবো না। রাতে খুব বেশি হলে তিন থেকে চারজনের সাথে কথা বলতে পারবো। বাকিদের পরশু দিন এখানে আসতে বলতে হবে।

- তুমি একটা কাজ করো, আরেক জনকে লাগিয়ে দাও। ঠিকানা দিয়ে তাদেরকে বাকি দোকানদারদের বাড়িতে পাঠিয়ে দাও। সে বলে আসুক তারা যেনো পরশু দিন সকালে তোমার সাথে দেখা করে। তুমি আরেকটা কাজ করো, আমাদের জেলার প্রতিটি গ্রামে কয়েক জন করে বিশ্বস্ত লোকের লিস্ট তৈরি করো। তাদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে তাদের এলাকায় চন্দ্রকে কিডন্যাপের সাথে যুক্ত ছড়িয়ে পড়া সমস্ত খবর আমরা চাই। সেই সাথে চন্দ্রের খবর জানার জন্য অতি উৎসাহি কিংবা আমাদের সম্পর্কে নেগেটিভ চিন্তাধারার লোকদের খবরও তারা আমাদেরকে দিবে।

- ঠিক আছে।

এবার চাচাতো ভাই আরিফের কাছে জানতে চাইলো রুদ্র- আরিফ ভাই, অ্যাম্বুলেন্স আর মাইক্রোর বিষয়ে তুমি কি জানতে পারলে?

- মেলা থেকে শহর পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তায় আশপাশে যাদের বাড়ি ছিলো এবং দোকান ছিলো তাদের প্রায় সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি। তাদের অনেকেই অ্যাম্বুলেন্স এবং মাইক্রোটাকে দেখেছে। যারা দেখেছে তারা সবাই বলেছে মাইক্রোটা অ্যাম্বুলেন্সের প্রায় দুই ঘন্টা আগে গেছে। কেউ রাস্তায় দাড়ায় নি। মাইক্রোটা শহরেও কোথাও থামে নি। আর অ্যাম্বুলেন্সটা জিবন ব্লাড ডোনেশন ক্লাবে গিয়ে থেমেছে। সেখানে তাদের সংগ্রহকৃত রক্ত রেখে যে যার বাড়ি চলে গেছে। অ্যাম্বুলেন্সটা একটা প্রাইভেট ক্লিনিকের, রিদয় ক্লিনিক। ক্লিনিকের মালিক জব্বার শেখ ক্লাবটার সাধারন সম্পাদক। অ্যাম্বুলেন্সটা সে ফ্রিতে দিয়েছিলো।

- ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে যে মেয়ে আর ছেলে দুটো এসেছিলো তাদের বিষয়ে কিছু জানতে পারো নি?

- মেয়েটা সরকারি হাসপাতালের নার্স, । আর ছেলেটা রিদয় ক্লিনিকের ল্যাব টেকনিশিয়ান। ওদের সাথে দেখা করার সময় পাই নি।

- ঠিক আছে। কাল ওদের সাথে দেখা করো। আর মেলায় ওদেরকে স্থানিয় যারা সহযোগিতা করেছিলো তাদের সাথেও কথা বলো। সেই সাথে অ্যাম্বুলেন্সটা রাস্তার কোথাও সত্যিই থেমেছে কিনা সেটা আরো ভালো করে খোজ নাও। মাইক্রোটা যদি অ্যাম্বুলেন্সের দুই ঘন্টা আগে শহর ছেড়ে যায় আর অ্যাম্বুলেন্সটা যদি শহরের বাহিরে না যায় তাহলে মাইক্রোটার খোজ নেয়ার দরকার নেই। কারন সেক্ষেত্রে চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার অনেক আগেই তারা শহর ছেড়েছে। তবে মাইক্রোটা কোথাও থেমেছে কি না, সেটা যতো অল্প সময়ের জন্যই হোক না কেন জানা দরকার। হয়তো মাইক্রোটা কিছু সময়ের জন্য কোথাও থেমেছে কিন্তু তুমি যাদের সাথে কথা বলেছো তারা কেউ দেখে নি অথবা যে দেখেছে তার সাথে তুমি কথাই বলতে পারো নি। তুমি কয়েক দিন এটার পিছনে সময় দাও। তোমার সাথে আরো কয়েক জনকে নাও।

এবার চাচাতো ভাই ছাদেকের দিকে ফিরলো রুদ্র- মাইক্রোতে যারা এসেছিলো তাদের বিষয়ে কি জানলে ছাদেক ভাই?

- ওদেরকে এখানকার কেউ চেনে না। ওরা তিন জন ছিলো। একজন বেটে কালো, দিতিয়জন লম্বা রোগা, তৃতিয় জন মাঝারি মোটা। কেউ নাম বলতে পারে নি। তবে ওরা যে বগুড়া থেকে এসেছে সেটা অনেকে বলতে পেরেছে। ওরা মাঝে মাঝেই মেলাতে জুয়া খেলতে আসতো। পুলিশ ওদেরকে সন্দেহ করে নি। কারন চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার অনেক আগেই ওরা মেলা থেকে চলে যায়।

এরপর রুদ্রের মামাতো ভাই আরশাদ জানালো, রাজেন্দ্র ঠাকুর ছাড়া মেলা কমিটিতে আরো আট জন সদস্য আছে। তাদের মধ্যে পাচ জনের সাথে ওর কথা হয়েছে। রাজেদ্র ঠাকুরের কথার সাথে তাদের মিল আছে। কারো কথায় নতুন কোন তথ্য বা সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় নি। বাকি তিন জনের সাথে কাল কথা বলবে।
.
চাচাতো ভাই আজমল জানালো, কালো বাদুর বিষয়ে কেউ তেমন কিছু জানে না। তবে অধিকাংশেরই ধারনা কালো বাদুর আছে। কয়েক জন বলেছে ফুলছড়ি ঘাট থেকে চিলমারি বন্দরের যমুনা বা ব্রহ্মপুত্র নদের কোন একটি চরে তারা লুকিয়ে আছে।

রুদ্র জানতে চাইলো- ফুলছড়ি ঘাট থেকে চিলমারি বন্দর পর্যন্ত কতোগুলো চর আছে?

- ছোট বড় মিলিয়ে তা তো দুইশর মতো হবে।

- আর কিছু জানা গেছে? কেউ দেখেছে কালো বাদুরদেরকে?

- কেউ কেউ নাকি কালো কাপড় পড়া মানুষকে গভির রাতে চরে ঘুরতে দেখেছে। কিন্তু কে দেখেছে বা কোন চরে দেখেছে সেটা কেউ বলতে পারে নি।

- গত বছর যে দুই জন ছেলে মেয়ে হারিয়ে গেছে তাদের বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছো? তাদের পরিবারের সাথে কথা বলতে পেরেছো?

- হ্যা, তাদের বাবা মার সাথে কথা বলেছি। ছেলেটার নাম জামাল, বয়স ১৭। হাডুডু খেলে বাড়ি ফেরার সময় হারিয়ে গেছে। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছিলো। যাদের সাথে ও হাডুডু খেলেছে তাদের সাথেও কথা বলেছি। তারা বলেছে, সেদিন ওর বাড়ির আশপাশের কেউ খেলতে যায় নি। তাই ওকে একাই বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দিতে হয়েছে। খেলার মাঠ থেকে বাড়ির দুরত্ব আধা মাইলের মতো, পথটা নির্জন। আশপাশে বাড়ি নেই। বাড়ি ফেরার এই পথটুকুর মধ্যেই ও হারিয়ে গেছে। এটুকু ছাড়া আর কোন তথ্য জানা যায় নি। মেয়েটার নাম হেমানি, হিন্দু। বয়স ১৬। পাশের একটা বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলো। রাত হলেও বাড়ির দুরত্ব খুব বেশি না হওয়ায় একাই বাড়ি ফিরছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারে নি। সবার ধারনা এদেরকে কালো বাদুরেরা অপহরন করেছে।

এবার মামাতো ভাই আহমাদের দিকে তাকিয়ে বললো রুদ্র- আহমদ ভাই, পুলিশের সাথে কথা বলে তুমি কি জানলে? কালো বাদুর সম্পর্কে তারা কি জানে? চন্দ্রের কেসটা নিয়ে তারা কতদুর এগিয়েছে?

- আজমল যেমনটা বলেছে পুলিশেরও ধারনা তেমনটাই। কালো বাদুর চরেই লুকিয়ে আছে। বিভিন্ন চরে তারা লোক লাগিয়ে রেখেছে। প্রত্যেকটা চরে তারা অভিযানও চালিয়েছে। কিন্তু কালো বাদুরকে ধরতে পারে নি। হেড কোয়ার্টার থেকে তাদের উপরে নির্দেশ এসেছে, চন্দ্রকে খোজাটা তাদেরকে টপ প্রায়োরিটি দিতে হবে এবং তিন দিনের মধ্যে ওকে খুজে বেড় করতে হবে। তারা তাদের সমস্ত চরকে একটিভ করেছে। পুরো জেলায় ধরপাকড় শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ছোট বড় অপরাধিকে থানায় ধরে এনে পিটানো হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোন তথ্য দিতে পারছে না- না চন্দ্রের বিষয়ে, না কালো বাদুরের বিষয়ে। সরকারের উপর মহলেও এটা নিয়ে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।

- মেলায় যে খুন হয়েছে এবং খুনির বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছে?

- না। খুন হওয়া লোকটার পরিচয় ছাড়া আর কিছুই তারা জানতে পারে নি। লোকটা যেখানে খুন হয় সেখানে যারা জুয়া বসিয়েছিলো এবং যারা জুয়া খেলেছিলো তাদের প্রায় সবাইকে ধরা হয়েছে। কিন্তু কে খুন করেছে সেটা কেউ দেখে নি। খুনের সময় যে কয়েক জন অপরিচিত সেখানে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে তাদেরকে ওরা কেউ চিনতে পারে নি, তবে তাদের চেহারা মনে আছে। অপরিচিতদের স্কেচ আকার জন্য ঢাকা থেকে এক জন স্কেচ শিল্পিকে ডাকা হয়েছে। কালকে সে এসে যাবে। চন্দ্রকে কিডন্যাপের বিষয়টা নিয়ে পুলিশও চরম অসস্তিতে পড়ে গেছে। উপর থেকে তাদের উপরে প্রচন্ড চাপ আসছে। তারা নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে। চন্দ্রের ছবি তারা দেশের প্রতিটি থানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।

আজমলের দিকে তাকিয়ে রুদ্র এবার বললো- ফুলছড়ি থেকে চিলমারি পর্যন্ত যতো নতুন পুরাতন চর আছে সবগুলোর লিস্ট আমি চাই আজমল ভাই। শুধু চরের লিস্ট হলেই চলবে না, সবগুলো চরের খুটিনাটি বর্ননাও দরকার আমার। চরের দৈর্ঘপ্রস্ত, কি কি উৎপাদন হয়, কতোগুলো লোক বাস করে, কে পাগল, কার অবস্থা কেমন, কবে চরটা সৃষ্টি হয়েছে, চরে ঝোপঝার কেমন, যাতায়াত ব্যবস্থা কেমন, বাহির থেকে কারা কারা বেড়াতে যায়, অসামঞ্জস্য কোন কিছু আছে কিনা, চরে আমাদের পরিচিত কেউ আছে কিনা কিংবা পরিচিত কারো আত্মিয়- সব, সব আমার চাই। সেই সাথে যমুনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের গতিবিধিও দরকার আমার। এই নদি দুটি কোন্ কোন্ শাখা নদির সাথে মিশেছে এবং কোন্ কোন্ জেলার সাথে নদি দুটির সংযোগ আছে সেটাও। ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে ভারত এবং চিনেরও সংযোগ আছে। সে পথটাও জানা দরকার। তুমি দশপনেরো জনের বড়সড় একটা টিম তৈরি করে নাও।

- ঠিক আছে। কয়েক দিনের মধ্যে সব তথ্য তুমি পেয়ে যাবে।

এবার বড় ভাই রুমনের দিকে তাকিয়ে রুদ্র বললো- ভাইজান, তোকে কিছু কাজ দিবো। তুই আমাদের জেলার সব চেয়ে বড় চোরকে খুজে বেড় করবি।

রুমন অবাক হয়ে বললো- চোরকে দিয়ে কি করবি!

- আমার কিছু কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষন দরকার। স্বল্প সময়ে পুরো প্রশিক্ষন নেয়া সম্ভব নয় তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে ভালো। সেরা পকেটমারেরও দরকার আমার। শহরের রেলওয়ে স্টেশন বা বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে সেটা পেয়ে যাবি। সেই সাথে দরকার সেরা মেকআপ ম্যানের, সেরা তালাচাবির মেকার, সেরা অভিনয় প্রশিক্ষক, সেরা কুস্তি প্রশিক্ষক। যদি ফাইট প্রশিক্ষক পাস তবে সেটারও দরকার। আর দরকার এমন কাউকে যে বিভিন্ন গলায় কথা বলতে পারে।

রুমন আগের চেয়ে আরো অবাক হয়ে বললো- এতো প্রশিক্ষন নিয়ে তুই কি করবি!

- চন্দ্রকে খোজার জন্য এবং নিজেকে বাচানোর জন্য এ সবের দরকার পড়বে আমার। আমাদের বংশের ছেলেরা সবাই আমরা কুস্তি এবং লড়াইটা ছোট বেলা থেকেই শিখি। ওটা আমার কিছুটা শেখাও আছে। যদি জানতাম এমন দিন আসবে তাহলে মনপ্রান ঢেলে দিয়ে শিখতাম ওটা। এবার লড়াইটা আমাকে অন্যকে মারার এবং নিজেকে বাচানোর জন্য শিখতে হবে।

আজমল বললো- লড়াই তো তুই ভালোই পারিস। তোর সাথে আমরা কেউ পারি না। মন দিয়ে আরেকটু শিখলেই তুই ওটাতে সেরা হয়ে যাবি।

রুমন আতংকিত হয়ে বললো- তুই যে কি বিপদে জড়িয়ে পড়তে চাচ্ছিস, আমি ঠিক বুঝছি না। একদিকে চন্দ্র হারিয়ে গেছে, আরেক দিকে তোর কিছু হলে কি হবে? এভাবে নিজেকে বিপদে জড়াস না। নানু চন্দ্রকে ঠিকই খুজে বেড় করবে।

- চন্দ্র যখন হারিয়ে গেছে তখনই আমি বিপদে জড়িয়ে গেছি ভাইজান। চন্দ্র আমাদের জেনারেশনের এক মাত্র মেয়ে। ওকে উদ্ধার করা আমাদের সবার জন্য ফরয। আর ও আমার স্ত্রি। আমি বিপদের ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারি না। ওর জন্য প্রয়োজনে জিবন দিয়ে দিবো। তোরা যদি আমাকে সাহায্য না করিস তবে আমি একাই লড়বো।

- তোকে আমরা একা ছাড়বো না, এটা ভালো করেই জানিস। আমরা সবাই চন্দ্রকে উদ্ধারের চেষ্ঠা করছি।

- তাহলে তোমরা আমাকে বিপদের কথা না বলে সাহস দাও। পরামর্শ দাও। বিপদের কথা বললে আমি মানবো না। আর মাবাবা, মামামামি, চাচাচাচিদেরকে এ সব বলার দরকার নেই। তারা আমাদেরকে বিপদে জড়াতে দিবে না। নানুকেও সব জানানোর দরকার নেই। তাকে যেটুকু জানানোর সেটা আমি জানাবো। আর তোমরা সবাই আমার কথা ভালো করে জেনে রাখো, চন্দ্রকে খুজতে তোমাদের কারনে আমি যদি বাড়ির কারো কাছ থেকে বিন্দু মাত্র বাধা পাই তাহলে তোমাদের কাছ থেকে আমি পুরোপুরি গায়েব হয়ে যাবো। যতদিন চন্দ্রকে খুজে না পাবো ততোদিন তোমাদের সামনে আর আসবো না। তোমরাও আমাকে খুজে পাবে না। তাই তোমরা কাকে কতোটা বলবে সেটা তোমরা ঠিক করে নিয়ো।

রুদ্রের মামাতো ভাই আরশাদ বললো- তুই আসার আগে আমরা পাগলের মতো এদিক ওদিক হন্যে হয়ে চন্দ্রকে খুজেছি। তুই আসার পরে আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে এভাবে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে যদি চন্দ্রকে খুজি তাহলে খুব দ্রুতই ওকে পেয়ে যাবো। পুলিশ কতোটা করতে পারবে সেটা আমার জানা নেই, তবে আমার মনে হচ্ছে আমরা পারবো। তুই আমাদের কাছ থেকে একা হয়ে আলাদা ভাবে খোজার চেষ্ঠা করিস না। তাহলে হয়তো তুইও ব্যর্থ হবি, আমরাও হবো। আমাদের এখন লক্ষ্য একটাই- চন্দ্রকে দ্রুত খুজে বেড় করা। চন্দ্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনে মৃত্যুকুপেও ঝাপ দিবো। আমাদের বংশের মানইজ্জতের সাথে চন্দ্র জড়িয়ে আছে। ওকে খুজে না পেলে আমাদের বংশের গৌরব ধুলিস্যাত হয়ে যাবে। আমরা যদি আমাদের বোনকে খুজে বেড় করতে না পারি, দোষিদেরকে চরম সাজা দিতে না পারি তাহলে আমাদের উপর থেকে সবার আস্থা উঠে যাবে। সেটা আমরা হতে দিতে পারি না। কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থেকে বংশের মানইজ্জত আমরা ডুবতে দিতে পারি না। আমরা কোন কিছুতেই তোকে আর বাধা দিচ্ছি না। আমরা সবাই তোর সাথে আছি।

- ধন্যবাদ আরশাদ ভাই। আমিও চন্দ্রকে একা খুজতে চাই না। তোমাদেরকে আমার ভিষন প্রয়োজন।

রুমন বললো- ঠিক আছে তুই যেভাবে চাচ্ছিস সেভাবেই হবে। চন্দ্রকে আমরা খুজে বেড় করবোই। এর জন্য যে বিপদেই আসুক না কেন আমরা সবাই সেটার মোকাবেলা করবো। তুই যাদের কাছে প্রশিক্ষন নিতে চাইছিস তাদেরকে কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাবি। শুধু তুই না তাদের কাছ থেকে আমরাও প্রশিক্ষন নিবো।

রুদ্র আরো কিছুক্ষন সবার সাথে কথা বললো। কার কি দায়িত্ব সেটা আরেকবার ভালো করে বুঝিয়ে দিলো। তারপর সবাইকে বিদায় দিয়ে আবুলের দিকে তাকিয়ে বললো- তুই কিছু বলবি?

- দুইশো চরের মধ্যে কি করে কালো বাদুরকে খুজে বেড় করবি? এটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

- চরের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্যই তো প্রত্যেকটা চরের খুটিনাটি সমস্ত তথ্যের দরকার আমার। তথ্যগুলো বিশ্লেষন করে কালো বাদুরদের থাকার মতো চরগুলোকে বেছে নিতে হবে?

- ভারত এবং চিনের সাথে ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগ আছে। তোর কি মনে হয় নদি পথে চন্দ্রকে ভারত বা চিনে নিয়ে যেতে পারে।

- সম্ভাবনা আছে। চন্দ্রকে দেশে রাখার চেয়ে চিন বা ভারতে রাখাই কি নিরাপদ নয়? চন্দ্র অপহরন হলে সরকারের উচু মহলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হবে, সমস্ত দেশের পুলিশ ওকে উদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে, এটা যদি কিডন্যাপারেরা বুঝতে পারে তাহলে নানুর শক্তিটাও তারা ভালো করেই জানে। সেক্ষেত্রে ওকে দেশের বাহিরে রাখাটাই তাদের কাছে সব চেয়ে নিরাপদ মনে হবে।

- যদি ওকে চিন বা ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে কি করবি? ওখানেও যাবি?

- যেতে হবে। রুদ্রের কন্ঠ দৃঢ় হয়ে ওঠে।

রুদ্র এবার চোখ বন্ধ করে ভাবনার জগতে তলিয়ে গেলো। যেভাবেই হোক চন্দ্রকে ওর উদ্ধার করতেই হবে। মেলা থেকে কিভাবে কালো বাদুর চন্দ্রকে বাহিরে নিয়ে গেলো সেটার সুত্র পেতে এতো সময় লাগছে কেন ওর? নাকি যারা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলো তারা কোথাও ভুল করেছে? নাহ্! কালকে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের মেয়ে আর ছেলেটার সাথে ওর নিজেকেই কথা বলতে হবে।

চলবে.......

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.