নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা,উপন্যাস,দর্শন,সিনেমা ও অন্যান্য

জহিরুলহকবাপি

আমি কামনা করি মানুষের ভিতর স্বপ্নরা আসা যাওয়া করবে। মানুষ তার স্বপ্ন পূরণের জন্য যুদ্ধ করবে।

জহিরুলহকবাপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বিপ্লবী তরূনী, একজন লেখক ও কার্টৃনিস্ট

০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১:১৮

সদ্য তরুনীর কোমল স্তনে তিনি কাশফুলের কোন সন্ধান পেলেন না । দামী ফ্ল্যাটের দামী বিছানায় শ্যামলা তরুনীর দিকে তিনি আবার তাকালেন, স্পর্শের কথা মনে করলেন, না কাশ ফুলের সাথে কোন তুলনাই নেই । তিনি হঠাৎ ভাবলেনে এই রুমের দরজা, খাট, সোফা, টেবিলে যে গাছের কাঠ ব্যাবহার হয়েছে সে গাছের বয়স কেমন হবে?! তিনি মনে মনে ভাবলেন তিনি জীবনে কি কোন গাছ লাগিয়েছেন? ঠিক মনে করতে পারলেন না? তবে প্রচুর গাছ যে তিনি কেটেছেন তার স্পষ্ট মনে আছে । ট্রাক ভর্তি করে, গ্যাস বেলুন ভর্তি করে, জোনাকীর আলোয়, সূর্যের আলোয় কত সময়, কত স্টাইলে যে তিনি গাছ কেটেছেন তার হিসাব নাই । তিনি এ চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলেন, আবারও মনোযোগ দিলেন তরুনীটির দিকে । সাদামাটা আর ১০ টা মেয়ের মতই । কুকড়ে ঘুমিয়ে আছে । মানুষ যে কত কারণে এ পেশায় এসেছে! তার অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে ঘুমন্ত মেয়েটিকে মাপলেন । নাহ, এ মেয়ে বিলাসিতা করার জন্য এ পথে আসেনি । বিষয়টি বুঝতে পেরে তার মেজাজ গরম হয়ে গেল ।

মধ্য গগনে একলা সূর্য,

কোথাও কেউ নেই কোথাও কেউ নেই,

এক চক্ষু কাক খেতে চায় নিজের চক্ষু. . .

তিনি মনে মনে আশা করছিলেন ট্যাস সংস্কৃতির কাউকে পাঠাবে । এখনকার কিছু ট্যাস ড্রাগস আর বিলাসিতার জন্য এসব করে । ড্রাগস এর কথা মনে পড়ে যাওয়াতে তিনি বুঝতে পারলেন তিনি কত্ত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলেন । যে সব মেয়ে নিয়মিত ড্রাগস নেয় তাদের অনেক অসূখ থাকতে পারে । আর তার নিজেরও ড্রাগসের প্রতি একটা ভিতী আছে । হয়ত কাছের কেউকে খুব কাছের কাউকে ড্রাগস আসক্ত দেখেই তার এ ঘৃণা । এরচেয়ে গভীর, কঠিন কিছুও হতে পারে। তিনি আবার স্ব চিন্তায় ফিরে এলেন । তিনি খুব কাব্যিক ভাবে তার রচিত সাহিত্যে মেয়েদের বুকের সাথে কাশ ফুলের তুলনা করেন । কিন্তু আজ ব্যাপারটা যাচাই করতে যেয়ে দেখলেন- সব হূদাই । কোন মিলই নাই । তিনি মনে মনে একটি বিষয় চিন্তা করে খুব হাসলেন । তার সাহিত্য পড়েই অনেক পুরুষ প্রেমিকা বা স্ত্রীর স্তন স্পর্শ করে কাশফুলের স্পর্শ পায় । পাঠকের উপর তার এতই প্রভাব । তিনি তার পাঠকদের নিয়েও গর্ব অনুভব করবেন । তার বই কখনও বেস্ট সেলার হয় না । আসলে তার বই শুধূ মাত্র বোদ্ধাদের জন্য । তার সব পাঠক বোদ্ধা । অবশ্য ইদানীং হঠাৎ ধনী একটা শ্রেণী তার বই খুব কিনে, শোকেসে সাজিয়ে রাখার জন্য । নরম জাজিমের উপর তিনি একটু নড়ে চড়ে শুলেন । তিনি এখন আভিজাত্যেরও পাথিক ।

এতদূর আসার পিছনে তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা কি? তার দ্রুত শিখার ক্ষমতা । তিনি ঘড়ি দেখলেন । মাত্র রাত ১১টা । তার বাসায় জানে যে তিনি বিশেষ লিখার কাজে আজ নির্জনে অন্য স্থানে রাতে থাকবেন । এ ক্লায়েন্টটা ভালোই টাকা দিয়েছে । উপরী হিসাবে আরও কিছু মিছু ।



শফিক কেমন আছে কে জানে?! দেশে ফিরছে কিনা ঠিক জানেন না । শেষ খবর পেয়েছেন তাও ২০ বছরের কম হবেনা । শালাকে প্যাচে ফেলে তিনি তার ইচ্ছা মতই চালিয়েছিলেন । শফিক এসেছিল তার কাছে একটা চাকরীর জন্য । তিনি তখনও পুরো কর্তা হননি । তাতেও সমস্যা ছিলনা । মেজ, সেজ সব কর্তাই তার অফিসে ক্ষমতাবান । ছেলেটা কবিতা লিখে, কার্টুন টার্টুন আকে । তিনি সাহিত্যের কিছু বুঝতেন না । তারপরও শফিকের সাথে কথা বলতে বলতে তার মাথায় চমৎকার একটা আইডিয়া এসেছিল । তবে তিনি মনে করেন তিনি শফিককে ঠকাননি । শফিকের তখন অবস্থা ছিল মরমর । একটা ভালো স্যান্ডেল কিনার মতও টাকা ছিলনা । আজ শফিক হল্যান্ড-এর মত সুন্দর শহরে থাকে । ভাই, বোন, নাতি,পুতি সব একসাথে । তিনিই সব করে দিয়েছেন । শফিককে হল্যান্ডে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন । তার বিনিময়ে শফিকের লিখা কয়েকটা সাহিত্য তিনি নিজের নামে চালিয়েছিলেন । তিনি শফিককে কিছু না দিয়েই এ কাজ করাতে পারতেন । শফিককে এমন প্যাচে ফেলেছিলেন যে পারলে পুরো পরিবারই আত্নহত্যা করে । তবু তিনি শফিককে বিদেশ পাঠিয়েছেন । প্রথম বই হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত শফিক জানতো না যে বই বের হচ্ছে তার নামে শফিকের নামে নয় । পান্ডুলিপি হাতে পাওয়ার থেকে বই প্রকাশ হওয়ার ৭ দিন আগেই তিনি শফিককে ফাদে ফেলেছিলেন । এখানেও তিনি বেচে গেছেন শুধূ মাত্র দ্রুত শিখে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য । গল্পতো পথে ঘাটেই ঘুরে, তিনি আত্নস্থ করে ফেলেছিলেন শফিকের লিখার ঢং । কিছুক্ষন পরই গল্পটি ছাপা হবে । তার যা সুনাম তাতে কেউ এর বিরোধীতা করবে না । বুদাই পাবলিক, নামের পাগল, নামী লোক বাল ছাল যা বলবে তাই শুনবে । তিনি বাল ছাল শব্দ দুইটা আবার শব্দ করে দুবার উচ্চারণ করে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করলেন । তার স্থান অনুযায়ী তিনি এ সব শব্দ উচ্চারণ করতে পারেন না । তিনি যে এই শব্দ না আরও অনেক এমন শব্দ জানেন , পাবলিকের সামনে উচ্চারণ করলেও পাবলিক ভাববে তারা কানে ভুল শুনছেন । বুদাই পাবলিক, বাল ছাল পাবলিক । তার ৬৫-৭০ বছরের জীবনেতো কিছু কম দেখেন নাই । তিনি তার পাশে ঘুমানো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে এক ধরণের মমতা অনুভব করলেন । এ বয়সি একটা মেয়েকে নিয়ে একটা গল্প তার নামে প্রকাশিত হবে । গল্পটা লিখতে তার কোন কষ্টই হয়নি । রেডী গল্প নিয়ে এসেছিল ক্লায়েন্ট । তিনি শুধূ তার স্টাইলে ঘটনাগুলোকে আবার লিখেছেন । কোন এক পাগলা মেয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছে আইন করতে হবে আগামী কয়েক বছরের ভিতর কোন গাছ কাটা যাবে না । অনশন চলছেও অনেক দিন । সমস্যা হয়েছে মেয়েটার সাথে কিছু বাল-ছাল যোগ দিয়েছে । তিনি মনে মনে নিজেকে কষে দুবার গালি দিলেন মেয়েটি এবং পাবলিককে বালছাল বলার জন্য । ঐ পাগল মেয়ে আর তার সাথে যুক্ত হওয়া মূর্খগুলার জন্য তিনি শেষ বয়সেও এতগুলা টাকা পেয়েছেন । তার সন্তানদের কাছে তিনি গর্ব করতে পারেন তিনি এখনও রোজগার করতে পারেন, রোজগার করেন । গল্পটি রিরাইট ও তার নামে প্রকাশ হওয়ার বিনিময়ে যে টাকা পেয়েছেন মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না । যারা নিয়মিত গাছ কাটে এ মেয়ে তাদের শত্রু । আরে গাছ কাটা বন্ধের আইন হলে কি ভাবে হবে ? পাবলিক সেন্টিমেন্ট মেয়েটার উপর থেকে সরাতেই হবে যে কোন মুল্যে । গাছ ব্যাবসায়ীরা সব দিক থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে ।



তার পাশে শোয়া মেয়েটার দিকে আবার তাকালেন তিনি, এত ঘুমায় কেন মেয়েটা । ঘুমাক রাত জাগতে হবে । তিনি মৃদু হাসলেন । তিনি বিজ্ঞান না বুঝলেও চিকিৎসা বিজ্ঞান ভালবাসেন । মনে মনে বললেন- রাত জাগতে হবে তোমার, রাত জাগতে হবে ।

ধন্য ধান্য পুষ্প গানটা শুনে কিছটা তিনি বিরক্ত হলেন । ধূর এ সব মোবাইল টোবাইল । অসময়েও বেজে উঠে । ধন্য ধান্য গানটা তিনি রিং টোন হিসাবে দিয়েছেন, তার স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্য । বাড়ুক না একটু স্ট্যাটাস, তিনিতো সত্যি সত্যি দেশকে ভালবাসেন । না হলেতো অন্য কোন দেশে চলে যেতেন । বিদেশীকে বিয়ে করতেন । এ দেশে ভালো স্কুল কলেজ নাই, বাস যোগ্যও নাই দেশটা তাই বাধ্য হয়েছেন ছেলে মেয়েকে বিদেশ পাঠানোর । ছেলে মেয়ে যেহেতু বিদেশে তাই সেখানে টাকাও পাঠাতে হবে । সরকার কিচ্ছু বোঝেনা । তাই তিনি গোপনে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন । কয়েক বছর ধরে ঢং বের হয়েছে সাদা-টাকা আর কালো টাকা । আরে টাকা তো টাকাই । সাদা আর কালো কি? সরকারই তাকে বাধ্য করেছে লুকিয়ে টাকা পাঠাতে । তাছাড়াও এ দেশে সম্পদের কোন গ্যারেন্টি আছে? সব চোর বাটপার । বাল ছাল পাবলিক । দ্বিতীয়বার আবার মোবাইল বাজাতে তিনি মোবাইল হাতে নিলেন । তাড়াতাড়ি রিসিভ করলেন । যে পত্রিকায় তার রচিত সাহিত্য প্রকাশিত হবে তার সাহিত্য বিভাগের প্রধান ফোন করেছে ।

হ্যালো- স্যার একটাতো বড় মিসটেক হয়ে গেছে । সর্বনাশ হয়ে গেছে ।

তার বুক ধড়পড় করে উঠল - কি ক্কি হয়েছে । তিনি শত টেনশনের ভিতরও শুদ্ধ ভাষা ব্যাবহার করলেন । জনসম্মূখে কথা বলার সময় তিনি শুদ্ধ ভাষা ছাড়া আর কিছুই জানেন না ।

স্যার আপনার গল্পতো ছাপছিলাম । কিন্তু এখনতো দেখি গল্পের জায়গায় আপনার-কার্টুন । আপ-আপনার সিগনেচার করা আপনার ন্যুড কার্টুন , সাথে শ্যামলা একটা মেয়ে ।

তোমার মাথা টাথা ঠিক আছেতো? তুমি যে ড্রাগস ট্রাগস নাও তাতো জানতাম না । আরে আমি তো কার্টুনই আকতে জানি না । রাখ ! বেয়াদব ।



স্যার আমি মোটেও ড্রাগস-ফ্রাগস নেই না । পত্রিকা স্যার বিতরণ হয়ে গেছে । টিভি চ্যানেলেও পত্রিকা চলে গেছে । স্যার. . .

রাখ । বেয়াদব । নিজেরে অনেক লায়েক ভাবো না?



তিনি ফোন কেটে দিলেন । মাতালের ঘরের মাতাল । নেশাখোর । হঠাৎ তার মনে হলো ঘরের কোথাও কোন একটা পরিবর্তন হয়েছে । তিনি চারদিকে তাকাতে লাগলেন । প্রথমে বুঝতে পারলেন না । তারপর পাথর হয়ে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকলেন । তিনি নিজেওকি ড্রাগস নিয়েছেন? দেওয়াল ভর্তি কার্টুন । দেওয়াল ভর্তি টাকার কার্টুন, তার সাথে তার কার্টুন । তিনি ভালো করে খেয়াল করলেন সব কার্টুনের নিচে তার সিগনেচার । তিনি আরেক দিকের ওয়ালে তাকালেন । সেখানেও তার সিগনেচার করা কার্টুন । তবে বিষয় ভিন্ন । ঐ পাগল মেয়েটা গাছে বসা পাখি দেখাচ্ছে বাচ্চাদের । ধনী , গরীব সব বাচ্চাই আছে ।

তিনি কয়েকবার নিজের মাথা ঝাকালেন । গায়ে চিমটি কাটলেন । তিনি ঘুমাচ্ছেন না । পরিবারের সবার নাম মনে করলেন । মনে করলেন অতীতের অনেক কিছই । না তিনি পাগলও হননি । পরক্ষনেই নিজের হাতের দিকে ভালো করে তাকালেন । না কোন রং-ই লেগে নেই । মনের ভুলেও তিনি কার্টুন আকেন নি । তিনিতো কার্টুনই আকতে পারেন না । কার্টুন আকতে পারতো শফিক । তিনি শফিকের কাছ থেকে কার্টুন আকা আত্নস্থ করেন নি ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.