![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কামনা করি মানুষের ভিতর স্বপ্নরা আসা যাওয়া করবে। মানুষ তার স্বপ্ন পূরণের জন্য যুদ্ধ করবে।
রাখি লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো । তার অসম্ভব মন খারাপ লাগছে । এখন কি রাত? কত রাত? রাখি কিছুই খেয়াল করতে পারলো না । তার কেন ঘুম ভাঙ্গলো, সে কোথায় আছে সে কিছুই খেয়াল করতে পারছে না , সে শুধূ বুঝতে পারছে তার অসম্ভব মান খারাপ ।
বাইরে পচন্ড বৃষ্টি । ভাব দেখে মনে হচ্ছে অমাবস্যার গভীর ডাক । অন্য দিন এ সময় শেয়ালের সম্মিলিত ডাক শুনা যেত আজ বৃষ্টির তান্ডবে সেও বন্ধ । মফস্বলের শেষ প্রান্তে বলে রাখিদের বাসা থেকে এখনও শেয়ালের ডাক শোনা যায় । তবে ইদানীং মানুষজন আবার গাছ-পালা লাগানোর প্রতি মনোযোগ দিয়েছে তাই শহরের মাঝখানেও কিছুটা গাছ দেখা যায় । কিন্তু ঐ খানে শেয়ালেরা যায় না । ঐ খানে গাড়ী-ঘোড়া বেশী, মানুষজনও বেশী কিন্তু ঐ খানে শেয়ালদের খাবার নেই । তাই তারা যায় না । শেয়ালরা মানুষ হলে যেত , কারণ মানষেরা তার খাবার না জেনেও অন্য খাবারেও মূখ বসায় । কেন বসায় তারাই জানে । রাখির বিছানার অনেকটা ভিজে গেছে, ঘরের এক কোনায় কিছুটা পানিও জমেছে । খোলা জানালা দিয়ে হুহু করে বৃষ্টির পানি ডুকছে । রাখি জানালা খুলেই ঘুমায় । এখানে তেমন একটা চোর ছ্যাচ্ছড় নেই । আর আশে পাশে সবাই শফিকদের আত্নীয় । শফিক আসতে দেরি করলেও ভয় পাবার কিছু নেই । আর মাঝে মাঝে সন্ধ্যার দিকে শফিকের আত্নীয়রা আসে । চরম বিরক্তি, ক্ষোভ নিয়ে রাখি হাসি মুখে শফিকের আত্নীয় স্বজনদের সাথে গল্প করে, আপ্যায়ন করে । নতুন বৌ-এর প্রতি এটা আত্নীয় স্বজনদের এক ধরনে দায়িত্ব । তাই তারা আসে । আর শফিকও আসে রাতের নয়টার দিকে । ততক্ষন রাখি হাসি মুখে বিষ গিলে । বিষতো গত এক দেড় মাস থেকেই গিলছে । রাখি সবার সাথে হাসি মূখে থাকার চেষ্টা করে, কাউকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না ।
কিন্তু রাখির এ মুহূর্তে কিছুই মনে পড়ছে না । তার অসম্ভব মন খারাপ, কেবলই মনে হচ্ছে কি যেন নেই, এমন কিছু যা না থাকলে রাখির চলবে না । কাছে কোথাও বাজ পড়ল, রাখির তখনও কোন বোধ নেই । হঠাৎই রাখির মনে পড়লো দুস্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙ্গেছে । কিন্তু কি দুঃস্বপ্ন দেখেছে রাখি মনে করতে পারলো না । রাখি কয়েকবার মনে মনে আউড়ালো, দুস্বপ্ন দেখে মন খারাপের কিছু নেই, স্বপ্ন স্বপ্নই । রাখি জানালার দিকে তাকালো । ঘর ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টিতে , ভিজুক । রাখির কিছুই আসে যায় না । রাখির অভ্যাসই হলো ঘুম থেকে উঠে ঘড়ি দেখা । আজ দেখেনি, বলা যায় দেখার কথা মনে নেই । অসম্ভব মন খারাপ রাখির, অসম্ভব মন খারাপ , কি যেন নেই, কি যেন নেই সব শূন্য শূন্য । কি নেই কি নেই ? বুক ভর্তি হাহাকার । রাখির মনে হলো মরে যেতে পারলে ভালো হতো । কাদতে পারলে রাখির কিছুটা ভালো লাগতো, কান্না বলে যে একটা জিনিষ আছে হয়ত এখন রাখির মনেই নেই ।
রাখির তার বাবার প্রতি আবার ঘৃণা উথলে উঠল । সব ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া বৃষ্টিরও এতো গভীরতা নেই, নিজের বাবার প্রতি রাখির এখন যতটা ঘৃণা । শফিকের দোকান থেকে রাখির বাবা পাইকারী কাপড় কিনত । শফিকের অবস্থাও ভালো অন্তত বলা যায় রাখির বাবার চেয়ে ৫০ গুন ভালো । রাখির বাবা রাখির সাথে ফয়েজের প্রেমের ব্যাপারটা কিছুটা জানতো । তেমন কিছু একটা বলে নি কখনও । ফয়েজদের একটা টেম্পু আর একটা ছোট পিক আপ আছে । ফয়েজও মাঝে মধ্যে পিকআপ চালায় , নিজের বাবার টা চালায় তাই তারে পুরাপুরি ড্রাইভারও বলা যাবে না । পড়ালিখা বেশী না হইলেও ফয়েজের তেমন কোন দুর্নাম নাই । কিন্তু ঠিক মত কাজ কাম করে না ।গ্রামে জমি ঝিরাত আছে, দুইটা গাড়ী আছে, এত পড়ালেখার দরকার কি? দুইটা মাত্র ভাই । বড় ভাই কুয়েতে, ফয়েজ কুয়েত চলে যেত শুধূ রাখির কথা ভেবেই যায় নি । শফিক একদিন তাদের বাড়ীর কাছে কি একটা কাজে এসেছিল , পথে িরাখির বাবার সাথে দেখা । পাইকারকে বাড়ীল কাছে পেয়ে জোর করে শফিককে বাড়ী নিয়ে গেলেন । পাইকারকে তুষ্ট করলে তার লাভ । তার ব্যাবসার অনেকটা নির্ভর করে শফিকের উপর । শফিক যদিও মাঝারী েমানের পাইকার, বড় পাইকারদের কাছে যাওয়ার মত ব্যাবসাও না রাখির বাবার ।
বাড়ীতে আসার তিন দিনের দিন, পাশের দোকানদারকে দিয়ে শফিক রাখির বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল । রাখির বাবা আলীর কথা জেনেও এক মুহূর্তের মধ্যেই বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছিল । বিয়ের দিন সন্ধ্যায়ও রাখি জানতো না সে দিন তার বিয়ে, যদিও বাড়ীতে কাছের আত্নীয় স্বজন কয়েকজন এসেছিল । রাখির আফসোস হয়- কেন সে বুঝতে পারেনি এতজন আত্নীয় স্বজন একসাথে আসার পিছনে ণিশ্চয় কোন কারণ আছে । রাখিকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো শফিকের সাথে । রাখির হয়ে কবুল বলে ছিল রাখির এক নানী । রাখির বাবা হালকা ভাবে আলীর ব্যাপারটা শফিকে জানিয়েছিলেন, তিনি এখন রাখির বিয়ে নিয়ে নিজেকে কিছুটা বুদ্ধিমান দাবী করেন । িসুযোগ জীবনে খুবেই কম আসে, তিনি এবারের সুযোগটা চিনতে পেরেছিলেন । শফিককে তিনি আলীর ব্যাপারটা জানিয়েছিলেন যাতে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা না হয় বা আলী কোন সমস্যা করলে শফিক তৈরী থাকে । এ সব শুনে শফিখ যদি পিছাতো তাহলে আলী ছিলই । যদিও আলীর চেয়ে শফিকের অবস্থা অনেক অনেক ভালো ।
রাখি শফিককে আলীর কথা জানিয়ে করজোড়ে অনুরোধ করে ছিল যেন তাকে যেতে দেয় । যেন তাকে নষ্ট না করে । শফিক প্রথম তিন দিন রাখির গায়ে হালকা হাত ছোয়ানোর চেষ্টা করেছিল , রাখি ঝাপটা দেওয়াতে আর আগ বাড়ায় নি । কিন্তু চতুর্থ রাতে জানোয়ারটা জোর করেই..... । এর পর থেকে প্রায় প্রতি রাতেই । প্রথম রাতেও রাখি খুব একটা বাধা দেয়নি । একসময় সে বুঝতে পেরেছিল বাধা দিয়ে লাভ নেই, আজ না হলেও কাল হবেই । যতবারই শফিক রাখির শরীরে ঝড় তুলেছে ততবারই রাখি ২ ঘন্টা ধরে গোসল করেছে । ঘষে ঘষে শরীর থেকে উঠিয়ে ফেলতে চেয়েছিল শফিকের সব স্পর্শ । রাখির একে একে বোধ ফিরে আসছে । রাখি বাইরের দিকে তাকালো সমান তেজে বৃষ্টি চলছে । আর একটু পানি জমলে ঘরে মাছ চাষ করা যাবে, রাখি দেখেও গা করলো না । মনে মনে গালি দিল কুত্তার বাচ্চা, জানোয়ারের বাচ্চা । রাখি গালি গুলো তার বাবাকে না শফিককে দিয়েছে প্রথমে ঠিক বোঝা গেলনা । রাখি মনে মনে আবার গালি দিল, এইবার বোঝা গেল সে গালি দিচ্ছে শফিককে । যদিও গত ২০/২৫ দিন শফিকের সাথে ভাল ব্যাবহার করেছে । কিছুই বুঝতে দেওয়া যাবে না । রাতের বেলা শফিখ কাছে টানলে, আগ বাড়িয়ে না গেলেও বাধা দেয় নি । কিছুই বুঝতে দেওয়া যাবেনা । কাক পক্ষী কেন ঘরে ঘুেরে বেড়ানো মশা মাছিও টের পাবে না একটু সাবধান থাকলে । রাখি পাশে রাখা মোবাইলে সময় দেখলো, শফিকের আসার সময় হয়েছে । ওল্ড হোস্টেলের রাস্তা দিয়ে এ সময় হেটে হেটে আসে । সন্ধ্যার পর এখানে রিক্সা টিক্সা পোওয়া যায় না । রাস্তা প্রচন্ড ভাঙ্গা । খাটাশটা বড় রাস্তা পর্যন্ত রিক্সায় এসে তারপর হেটে হেটে আসে । রিক্সা ভাড়া বেশী দিলে আবার না আসে? খাটাশ, জানোয়ার । রাখির মন এখনও খারাপ, এখন মনে হচ্ছে কি জেন একটা হানিয়ে যাচ্ছে । রাখিতো পেতে যাচ্ছে । আলী সব কিছ জেনেও এখনও রাখিকে বিয়ে করতে চায় । সত্যিকারের ভালবাসলেই এমন সম্ভব । কিন্তু রাখির মনের গুমোট ভাব, হাহাকার এখন অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে । রাখি মনে মনে দুবার বলল - আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও । রাখি কেন এ কথা বলল সে নিজেও জানে না । রাখি আবার মোবাইল তুলে ঘড়ি দেখল । বৃষ্টির ভিতর কি শফিক হেটে হেটে আসবে, মনে হয় বৃষ্টি থামলে আসবে । যদি বৃষ্টির ভিতরই রওনা দেয়! রাখি দ্রুত মোবাইলে আলীর নাম্বার বের করার চেষ্টা করলো । কয়েকবার চেষ্টা করেও পারলো না । হাত অসম্ভব কাপছে ।
আলীকে এখনই ফোন দিতে হবে । সময় নেই সময় নেই! কিন্তু ফোন করে কি বলবে ? নাকি এত ক্ষনে কাজ শেষ । রোখির ইচ্ছ করছে নিজের হাত পায়েল রগ সব নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলতে । আল্লাহ এখনও যেন কাজ শেষ না হয় । কিন্তু আলী যদি জিজ্ঞেস করে কেন এত দিন প্লান করার পরও আজ রাখি নিষেধ করছে । শফিখকে গাড়ী চাপা দিয়ে চলে গেলে কেউ টেরও পাবে না । মফস্বলের রাত নয়টা মানে অনেক রাত, এদিকে তো আরও বেশী রাত । তার উপর যে বৃষ্টি । রাখি আবারও নম্বর বের করার চেষ্টা করলো । কিন্তু পারছে না । আলী রাখির কথা শুনবে তো? শফিক বাসায় ফিরবেতো? আলী যদি না শুনে রাখির কথা ? কেন শুনবে, সেই বা কি বলবে ?
রাখি দ্রুত মোবাইলে আলীর নাুম্বার বের করার চেষ্টা করলো । কয়েকবার চেষ্টা করেও পারলো না । হাত অসম্ভব কাপছে । বাইরে তুমুল বৃষ্টি ।
©somewhere in net ltd.