নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অলৌকিক মু’জিযাসমূহ : নবুওয়াতের সত্যতার জীবন্ত প্রমাণঃ

০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:০৭

ছবিঃ অন্তর্জাল।

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অলৌকিক মু’জিযাসমূহ : নবুওয়াতের সত্যতার জীবন্ত প্রমাণঃ

মুহাম্মদ আক্ষরিক অর্থেই এক জন সত্য নবী। মুহাম্মদ যে মুক্তির পথের দিশারী আমরা কখনো তা অস্বীকার করতে পারব না। তাকে শুধু অকৃতজ্ঞরাই অস্বীকার করে। -হান্স কং, সুইস ধর্মতত্ত্ববিদ

সমস্ত প্রশংসা মহামহিম আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি আমাদেরকে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত এবং অনুসারী হিসেবে এ ধরণীতে প্রেরণ করেছেন। অসংখ্য অগণিত দরূদ, সালাম, শান্তি ও রহমতের বারিধারা বর্ষিত হোক তাঁর প্রতি। জাহেলিয়াতের ঘোর আঁধারে নিমজ্জিত মানবজাতিকে হিদায়াতের আলোকবর্তিকায় আলোকিত পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং রাসূল হচ্ছেন মুহাম্মুাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। শিরক, বিদয়াত, অন্যায়, অবিচার, অশ্লীলতা ও অসভ্যতার পঙ্কিলতায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এ পৃথিবীকে নতুন আলোকে আলোকোজ্জ্বল করতে; সাম্য, শান্তি, সৌহার্দ্য আর ন্যায় ইনসাফের দিশা প্রদান করে পৃথিবীতে তাওহিদের ঝান্ডাকে উড্ডীন করার অভিপ্রায়ে আল্লাহ তাআলা তাঁকে অনন্য, অনুপম এবং অতুলনীয় আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রেরণ করেছেন। একই সাথে অবিশ্বাসী ও সংশয়বাদীদের ভ্রান্তি নিরসণে পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণের ধারাবাহিকতায় তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের অকাট্য প্রমাণস্বরূপ তাঁকেও দান করেছেন অসংখ্য মু’জিযা বা অলৌকিক নিদর্শন। এসব মু’জিযা বা অলৌকিক নিদর্শনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিয়েই আজকের আলোচনা। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের বুঝার এবং অনুধাবন করার সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করুন। আমাদের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করুন। আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করুন।

মু’জিযার পরিচিতিঃ

মু’জিযাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। তবে মূল বক্তব্য হচ্ছে, মু’জিযা নবী এবং রাসূলগণের দ্বারা সংঘটিত এমন অলৌকিক কর্ম বা ঘটনা, যা ঘটানোর ক্ষমতা ও ইচ্ছা একমাত্র আল্লাহ তাআ'লারই থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তা এমন একটি কাজ যাকে প্রকৃতির নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না। অথবা, তা এমন একটি বিষয় যা মানুষের ক্ষমতা, যোগ্যতা ও সাধ্যের উর্ধ্বে। কিংবা তা এমন একটি ঘটনা যা মানবিক কার্যকারণ ও যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না; বরং যা সরাসরি আল্লাহ প্রদত্ত। যা স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে, সাধারণভাবে ঘটমান কাজের সাথে যার তুলনা করা চলে না।

কুরআনুল কারিমে যেসব শব্দ এবং ভাষায় বর্ণিত হয়েছে মু'জিযাঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলূকাত তথা, সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে সৃজন করেছেন এবং তাদেরকে এমন বহুবিধ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, যা অন্য কোনো সৃষ্টিজীবকে প্রদান করা হয়নি। জ্ঞান-বুদ্ধি দান করে তাদেরকে বিশেষভাবে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, যাতে তারা বিশ্ব জাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান প্রতিপালককে জানতে পারে, চিনতে পারে, অনুধাবন করতে পারে এবং একমাত্র তাঁর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী সুন্দর ও সুচারুরূপে জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। তাদের দিকনির্দেশনার জন্য যুগে যুগে হেদায়েতের বার্তাসহ অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূলগণের নবুওত ও রেসালাতের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত করা এবং মানুষের নিকট তাদের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নানা রকমের নিদর্শন প্রদান করেছেন। এ সব নিদর্শনকে পবিত্র কুরআনে আয়াত, বায়্যিনা, বুরহান, সুলতান ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে।

নিদর্শন বোঝাতে কুরআনে কারীমে ‘আয়াত’ শব্দের ব্যবহার এভাবে এসেছে-

وَ اَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَیْمَانِهِمْ لَىِٕنْ جَآءَتْهُمْ اٰیَةٌ لَّیُؤْمِنُنَّ بِهَا قُلْ اِنَّمَا الْاٰیٰتُ عِنْدَ اللهِ وَ مَا یُشْعِرُكُمْ اَنَّهَاۤ اِذَا جَآءَتْ لَا یُؤْمِنُوْنَ.

আর তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের নিকট যদি কোনো নিদর্শন আসত তবে অবশ্যই তারা এতে ঈমান আনত। আপনি বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। আর তাদের নিকট নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না, তা কীভাবে তোমাদের বোধগম্য করা যাবে। -সূরা আনআম (৬) : ১০৯

নিদর্শন অর্থে ‘বায়্যিনা’ শব্দের ব্যবহার এভাবে হয়েছে-

قَدْ جَآءَتْكُمْ بَیِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ هٰذِهٖ نَاقَةُ اللهِ لَكُمْ اٰیَةً.

তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে। আল্লাহর এ উটনী তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন।’ -সূরা আ‘রাফ (৭) : ৭৩

নিদর্শন বোঝাতে ‘বুরহান’ শব্দের ব্যবহার কুরআনে কারীমে এসেছে এভাবে-

فَذٰنِكَ بُرْهَانٰنِ مِنْ رَّبِّكَ اِلٰی فِرْعَوْنَ وَ مَلَاۡىِٕهٖ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فٰسِقِیْنَ.

এ দু’টি (লাঠি সাপে পরিণত হওয়া এবং হাত বগলের নিচ থেকে শুভ্র হয়ে বের হওয়া) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রমাণ (তথা নিদর্শন) ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের জন্য। নিশ্চয় তারা ছিল সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। -সূরা কাসাস (২৮) : ৩২

নিদর্শন বোঝাতে কুরআনে কারীমে ‘সুলতান’ শব্দের ব্যবহার-

تُرِیْدُوْنَ اَنْ تَصُدُّوْنَا عَمَّا كَانَ یَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا فَاْتُوْنَا بِسُلْطٰنٍ مُّبِیْنٍ.

আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদত করতো, তোমরা তাদের ইবাদত হতে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও, অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ (তথা নিদর্শন) উপস্থিত কর। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ১০

আয়াত, বায়্যিনা, বুরহান, সুলতান ইত্যাদি শব্দ নিদর্শনের অর্থ ছাড়া অন্য অর্থেও কুরআনে কারীমে ব্যবহৃত হয়েছে। এজন্য সম্ভবত পরবর্তী উলামায়ে কেরাম নিদর্শন বা মু‘জিযা বোঝাতে ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেছেন। সুতরাং হাদীসবিশারদগণ এগুলোকে আলামাতুন নুবুওয়াহ বা দালাইলুন নুবুওয়াহ নামে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে ইলমুল আকাইদ শাস্ত্রীয়রূপ লাভ করার পর নবী-রাসূলগণের এসব নিদর্শনকে মু‘জিযা নামে অভিহিত করা শুরু হয়। কেননা, মু‘জিযা মানে এমন নিদর্শন, যা অন্য কোনো মানুষকে এরূপ বিষয় পেশ করতে অক্ষম সাব্যস্ত করে।

পূর্ববর্তী যুগের নবী-রাসূলগণের শরীয়ত যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা নয়, সম্ভবত এ কারণেই তাদের মু‘জিযাগুলো তাদের সময়কালের সাথে সম্পৃক্ত করে অস্থায়ী মু‘জিযা প্রদান করা হয়েছে। যেমন- হযরত মূসা আলাইহিস সালামের লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, সালেহ আলাইহিস সালামের উষ্ট্রী, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মু‘জিযা- মৃতকে জীবিত করা, কুষ্ঠ রোগীকে হস্তস্পর্শে সুস্থ করে তোলা, দাউদ আলাইহিস সালামের হাত দ্বারা লৌহজাত দ্রব্যাদি তৈরিকরণ ইত্যাদি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু’জিযার সংখ্যাঃ

রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু’জিযার সংখ্যা অগণিত। পূববর্তী নবী রাসূলগণের একেকজনকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা এক বা একাধিক বিশেষ মু'জিযা দান করেছিলেন কিন্তু রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করেছেন অসংখ্য মু'জিযা। আর এসব মু'জিযা দ্বারা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁর প্রিয়তম হাবিব রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মানিত করেছেন। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু'জিযা গণনা করা দুরূহ। আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী রহ. তাঁর সীরাতে মুস্তফা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু’জিযা প্রায় ১০০০ (এক হাজার)। ইমাম নববী রহ. -এর মতে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু’জিযার সংখ্যা প্রায় ১২০০। কতিপয় উলামায়ে কেরাম বলেছেন, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু’জিযার সংখ্যা প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার)। তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু’জিযাসমূহ অসংখ্য অগণিত; এবং যা গণনা করা সম্ভব নয়। তাঁর এ অসংখ্য মু’জিযাসমূহের মধ্য থেকে এখানে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কয়েকটি মু’জিযা উল্লেখ করা হলো-

জীবন্ত মু’জিযা আল-কুরআনঃ

যখন আরবজুড়ে যুগশ্রেষ্ঠ বাগ্মী, ভাষাপন্ডিত, সাহিত্যিক ও কবিদের বিচরণ ঠিক তখনই রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ হয়েছে ভাষার সর্ববিধ শ্রেষ্ঠতম অলংকরণসমৃদ্ধ ও সাহিত্যের উচ্চাঙ্গের সকল মানদন্ডের উর্ধ্বে থাকা ঐশী গ্রন্থ আল-কুরআনুল হাকিম। অথচ, একথা সর্বজনবিদিত যে, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উম্মী, তথা নিরক্ষর। তিনি কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তাছাড়া আরব উপদ্বীপের বাইরে তিনি তেমন কোথাও সফরও করেননি, যার মাধ্যমে তিনি ভাষার উপর পান্ডিত্য অর্জন করতে পারেন। তথাপি, কুরআন মাজিদের শব্দ, ভাষা, আয়াত ও সূরাসমূহ সমভাবে বিস্ময়কর, অতিব সুন্দর এবং অবর্ণনীয় হৃদয়গ্রাহী। কুরআন মাজীদের পুরোটাই উচ্চাঙ্গের কথামালা- যা অনন্য ভাষাশৈলীতা ও হৃদয়স্পর্শী উপমায় ভরপুর। কুরআনুল হাকিমের হৃদয়গ্রাহী তিলাওয়াত যতই করা হোক না কেন এতে তার স্বাদ ও মাধুর্যে বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটে না। মনে হয় যেন যতই পাঠ করবে ততই অজানা এক স্বাদে মন উত্তরোত্তর উদ্বেলিত হতেই থাকবে। হয়েই চলবে। কুরআনের ভীতি প্রদর্শনমূলক আয়াত ও কঠোর সতর্কবাণী ভালো করে অনুধাবন করলে কঠিন মানুষ তো দূরের কথা পাহাড় পর্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে কাঁপতে থাকে। আবার শান্তি এবং সুসংবাদের বাণী ও পুরস্কারের বিবরণের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে ও সেগুলো হৃদয়ঙ্গম করলে অন্ধ মনের বন্ধ দুয়ারসমূহও উন্মুক্ত হয়ে যায়, অবরুদ্ধ শ্রবণশক্তি প্রত্যাশার মধুর ধ্বনিতে প্রশান্তিতে সিক্ত হয়। আর মৃত মন ইসলামের অমিত শরবত পানের জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এমন সুন্দর রচনাশৈলী ও ভাষার স্বচ্ছন্দ গতিসম্পন্ন ৬২৩৬ মতান্তরে ৬৬৬৬ আয়াতের একটি গ্রন্থ রচনা করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। নিঃসন্দেহে সমগ্র সৃষ্টিজগত তার সমকক্ষতার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অক্ষমতার স্বীকৃতি প্রদান করতে বাধ্য। তাই তো তৎকালীন প্রথিতযশা ভাষাবিদ ও কবি-সাহিত্যিকগণ কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে ও তা থেকে ভুল উদঘাটন করতে বহু অপচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কুরআনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে নিজেদের অপারগতা ও অক্ষমতাকে স্বীকার করে অবশেষে এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছে যে, ‘এটা মানবরচিত কোনো গ্রন্থ নয়।’

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সন্দেহাতীতভাবে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এক ঐশীগ্রন্থ। যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর প্রেরিত মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিলকৃত চির অবিনশ্বর বাণী। যা তাঁর নবুওয়াতের সুউজ্জল প্রমাণ বহন করে এবং তাঁর অসংখ্য মু’জিযারাশীর মধ্য থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত মু’জিযা। যা কিয়ামত পর্যন্ত চির অক্ষত অবস্থায় থাকবে।

আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ

وَإِن يَرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ وَكَذَّبُوا وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءهُمْ وَكُلُّ أَمْرٍ مُّسْتَقِرٌّ

তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু। তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থিরীকৃত হয়। -সূরা ক্বামারঃ ২-৩

এ প্রসঙ্গে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক নবীকে তাঁর যুগের প্রয়োজন মুতাবেক কিছু কিছু মু’জিযা প্রদান করা হয়েছে। আর আমাকে যে মু’জিযা প্রদান করা হয়েছে তা হচ্ছে, আল্লাহ প্রদত্ত ওহী-আল-কুরআন। -সহিহ বুখারী:৪৯৮১, সহিহ মুসলিম: ১৫২

কুরআন আল্লাহর কালাম : এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই - ডেবোরা পটার, মার্কিন সাংবাদিকঃ

আমি যখন কোরআন কারীম পাঠ সমাপ্ত করলাম, আমাকে এমন অনুভুতি আচ্ছন্ন করল যে, কোরআনই সৃষ্টি ও অন্যান্য জিজ্ঞাসার সন্তোষজনক উত্তর দেয় এবং তা ঘটনাবলী যৌক্তিকভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে, যা অন্যান্য ধর্মীয় কিতাবে পরস্পর বিরোধীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোরআন সেসব ঘটনা আকর্ষণীয় বিন্যাসে ও অকাট্য শৈলীতে আলোচনা করেছে। এর সত্যতা এবং এটা যে আল্লাহর বাণী এসব ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। -ডেবোরা পটার, মার্কিন সাংবাদিক

কুরআনের সত্যতা সম্মন্ধে ফরাসি প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ ব্লাশির রিজাইশঃ

সুস্পষ্ট আরবী ভাষী এই মহান সূরাগুলোতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আয়াতগুলো পুনরাবৃত্তি করেছেন সেগুলো সুভাষীদের বক্তব্যকে অনেক পিছনে ফেলে রাখে। তা আমরা স্মরণ করতে পারি আমাদের কাছে আসা অনুরচিত ভাষ্যগুলো থেকে। -ব্লাশির রিজাইশ, ফরাসি প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ

পরিবর্তন, পরিমার্জন ও বিকৃতি থেকে মুক্ত হয়ে অবিকাল অবস্থায় আছে আল কুরআনঃ

আল কোরআনে অহীর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে যেসব বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিয়েছে, তা আধুনিক বিজ্ঞান বর্তমানে প্রমাণ করেছে। সে সব বিষয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের অহী প্রাপ্তির পূর্বে মানুষের জানা ছিলনা। ইহাই তার নবুয়াতের অকাট্য প্রমাণ। এমনিভাবে গর্ভস্থ সন্তান বেড়ে উঠা সম্পর্কে কোরআন যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, আধুনিক বিজ্ঞান তা আবিষ্কার করেছে। এছাড়াও সমুদ্রে মিঠা ও লবন পানির মাঝে বিদ্যমান পার্থক্যরেখা ইত্যাদি। আল কোরআন আল্লাহর নিকট থেকে প্রেরিত হওয়ার অন্যতম বড় প্রমাণ হলো, চৌদ্দশত বছরের অধিক সময় ধরে ইহা পরিবর্তন, পরিমার্জন ও বিকৃতি থেকে মুক্ত হয়ে অবিকাল অবস্থায় আছে। এতে কোন ধরণের পরিবর্তন ও বিকৃতি হয়নি। ইহা বারবার তিলাওয়াত করার পরেও তিলাওয়াতকারী বিরক্ত হয়না। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। -সূরা হিজরঃ ৯

বরং তিনি কোরআনের মাধ্যমে সহিহ আক্বীদা, পরিপূর্ণ জীবন বিধানও সংরক্ষণ করেছেন। ইহার দ্বারা তিনি একটি উত্তম জাতি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের মু’যিজা অন্যান্য নবীদের মুযিজা থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, অনেক বড়, বিশ্বব্যাপী ও স্থায়ী। কোরআনের চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান এবং কিয়ামত পর্যন্ত ইহার অনুরূপ একটি গ্রন্থ রচনা করার চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ

قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَـذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا

বলুনঃ যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। -বনী ইসরাইলঃ ৮৮

আল ইসরা বা মিরাজঃ

নবুওয়াতের দ্বাদশ বর্ষের ২৭ রজব, সোমবার রজনীতে ঘটে যায় মানব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর ঘটনা। যা বিজ্ঞানের সর্বশেষ উন্নতির চাইতেও উন্নততর বৈজ্ঞানিক ঘটনা। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রদানের উদ্দেশ্যে এক রজনীর কিয়দংশ সময়ের মধ্যে মক্কা থেকে বায়তুল মাকদাসে অতঃপর সেখান থেকে উর্ধ্বগমন- এক এক করে সপ্তাকাশ, সিদরাতুল মুনতাহা ও বায়তুল মা’মুর ভ্রমণ করান। তাঁর সাম্রাজ্য ও কর্তৃত্বের নিদর্শনসমূহ, জাহান্নামের শাস্তির স্বরূপ ও জান্নাতের অনাবিল শান্তির শোভা প্রত্যক্ষ করান। অতঃপর বিশ্ব জাহানের একচ্ছত্র অধিপতি, অনাদি অনন্ত, চির অবিনশ্বর একক উপাস্য, অদ্বিতীয় স্রষ্টা, মহাপ্রতিপালক প্রভু আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে ধন্য করিয়ে ঐ রজনীতেই আবার মক্কায় পৌঁছে দেন। যা বহু আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। -বিস্তারিত দেখুন: সূরা বনী ইসরাঈল: ০১, সূরা নাজম: ৫-১৮; সহিহ বুখারী: ১/৫০-৫১

অঙ্গুলির ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিতঃ

মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর রিসালাতের স্বপক্ষে কোনো নিদর্শন চাইলে মহান আল্লাহ তার সত্যতার প্রমাণ হিসেবে চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার মু'জিযা প্রকাশ করেন। যার বাস্তবতা অকাট্যরূপে প্রমাণিত। কিন্তু কাফেররা তা অস্বীকার করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,

اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ وَإِن يَرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ

কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা (কাফেররা.) কোনো নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাচরিত জাদু। -সূরা ক্বমার:১-২

চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনার সার-সংক্ষেপঃ

চির চেনা মক্কার পাহাড়ি উপত্যকা মিনা। উঁচু নিচু পাহাড়ি প্রান্তর। জোছনাস্নাত কোনো এক রাত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছেন মিনায়। চন্দ্রালোকোজ্জ্বল সে রাতে মুশরিকরা তাঁর কাছে নবুওয়াতের নিদর্শন চাইল। তখন আল্লাহ তাআলা নবীজির হাতের ইশারায় এই সুস্পষ্ট অলৌকিক ঘটনা দেখিয়ে দিলেন যে, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে একখন্ড পুর্বদিকে অপর খন্ড পশ্চিম দিকে চলে গেল এবং উভয় খন্ডের মাঝখানে পাহাড় অন্তরাল হয়ে গেল। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সবাইকে বললেন, দেখ এবং সাক্ষ্য দাও। সবাই যখন পরিস্কাররূপে এই মু'জিযা দেখে নিল তখন চন্দ্রের উভয়খন্ড পুনরায় একত্রিত হয়ে গেল। আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে দ্বিখন্ডিত হয়েছিল যা সবাই অবলোকন করেছিল। -বুখারী:৩৮৬৯

বিস্ময়কর এই ঘটনাটি বর্ণনা করে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে- যদি সপ্তম শতকে চাঁদ বিদীর্ণ হবার কোন ঘটনা ঘটত, তবে এ ঘটনার সাক্ষী হিসেবে পুরো বিশ্ব প্রত্যক্ষ করত। ঐতিহাসিকভাবে এ ঘটনার দলিল থাকত। কিন্তু এ ধরনের কোন দলিল প্রমাণ বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। জ্যোতির্বিদ্যার সাধারণ নীতি অনুযায়ীও এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক।

সমস্যার সমাধানে কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চন্দ্রের বিদারণ কোন সাধারণ ঘটনা ছিল না; বরং এটি ছিল নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সংঘটিত একটি মু'জিযা বা অলৌকিক ঘটনা। সাধারণ অভিজ্ঞতা, নীতি বা তত্ত্ব দ্বারা কোন অলৌকিক ঘটনাই ব্যাখ্যা করা যায় না। ডা. জাকির নায়েকের মতে, যেহেতু ঘটনাটি অতীতে সংঘটিত একটি অস্বাভাবিক ঘটনা, তাই ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই করা এত শতাব্দি পরে এসে এখন আর সম্ভবপর নয়। তবে, কোন গ্রহ বা উপগ্রহে ফাটল সৃষ্টি হওয়া এবং পরে তা জোড়া লেগে ঠিক হয়ে যাওয়া জ্যোতির্বিদ্যার নিয়ম অনুযায়ী অস্বাভাবিক হলেও কোন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এধরনের ঘটনার সম্ভাব্যতাও নাকচ করেন নি। তাই, কুরআনের চন্দ্র বিদীর্ণ হবার দাবি অবৈজ্ঞানিক হতে পারে না। অন্যান্য ঐতিহাসিক সূত্রের অভাবে এ ঘটনাকে মিথ্যে সাব্যস্ত করা অসমীচীন বলে মনে করেন মুসলিম মনীষীগণ।

ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতা তুলে ধরে ইসলামি চিন্তাবিদগণ বলেন, যখন মক্কায় চন্দ্র বিদারণের ঘটনাটি ঘটে, তখন স্থানীয় সময় ছিল রাত। বিশ্বের সর্বত্র একই সময় রাত থাকে না বলে, চন্দ্র দ্বিখণ্ডনের ঘটনা পুরো বিশ্ব কর্তৃক পর্যবেক্ষিত হওয়া সপ্তম শতকের মত সময়ে সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া বিশ্বের যেসব জায়গায় রাত ছিল, সেখান কার সবাই ই এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে-বিষয়টা তা-ও না। কারণ, ভূ-পৃষ্ঠের নির্দিষ্ট স্থান থেকে নির্দিষ্ট কোন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারার বিষয়টি বীক্ষণ কোণের উপর নির্ভর করে। বর্তমান বিশ্বেও চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হলে, বিশ্বের তাবৎ মানুষ সেই ঘটনা একই সাথে পর্যবেক্ষণ করতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, ঘটনাটি বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন সভ্যতার মানুষদের দ্বারা পর্যবেক্ষিত হলেও তা লিপিবদ্ধ হবার সম্ভাবনা কম। কেননা, তৎকালীন যুগের বিভিন্ন সভ্যতার ইতিহাস ও উল্লেখযোগ্য সব ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ আকারে পাওয়া যায় না।

তৃতীয়ত, ভারতবর্ষের কেরালা অঞ্চলের মালাবার প্রদেশের রাজা চক্রবতী ফারমা সপ্তম শতকে চন্দ্র বিদারণের এরূপ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন বলে লন্ডনকেন্দ্রিক ভারতীয় কার্যালয় পাঠাগারের এক নথিতে পাওয়া যায়। বর্ণিত আছে যে, উক্ত বিস্ময়কর ঘটনা পর্যবেক্ষণপূর্বক রাজা চক্রবতী স্বীয় পুত্রকে রাজ দায়িত্ব অর্পণ করে আরবদেশে নিজে গমণ করেন। মালাবার রাজা আরবদেশে যান, নবী মুহাম্মাদের সাথে সাক্ষাৎকারপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে নিজ দেশে যাত্রা শুরু করেন। পথিমধ্যে তার অকস্মাৎ মৃত্যু হয় এবং ইয়েমেন এর বন্দর নগরী জাফরে তাকে সমাহিত করা হয়।

ভারতবর্ষের রাজার সাথে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাতের ঘটনা ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় ধর্মশাস্ত্র হাদিসে এসেছে। -তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

আঙ্গুল মুবারক থেকে ঝর্ণাধারার প্রবাহঃ

হুদাইবিয়ার দিন লোকেরা খুব পিপাসার্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের নিকট অযু করার এবং পান করার মতো কোনো পানি ছিল না। শুধুমাত্র রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি চামড়ার পাত্র ভর্তি কিছু পানি ছিল। তিনি তা দিয়ে অযু করে নিলেন। তখন লোকেরা তাঁর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চর্মপাত্রের পানি ব্যতীত আমাদের কাছে আর কোনো পানি নেই যা থেকে আমরা অযু করতে ও পান করতে পারব। অতঃপর রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ঐ চর্মপাত্রে রাখলেন তখন সাথে সাথে তাঁর আঙ্গুলগুলো থেকে ঝর্ণাধারার মতো পানি প্রবাহিত হতে লাগল। উপস্থিত সকলে তা থেকে তৃপ্তিসহকারে পান করলেন এবং অযু করলেন। বর্ণনাকারী জাবির রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, সেদিন আমরা ১৫০০ লোক ছিলাম। আমরা যদি একলক্ষ লোকও থাকতাম তবুও এ পানি আমাদের জন্য যথেষ্ঠ হত। -বুখারী:৪১৫২

অভাবনীয় দৈহিক শক্তির অধিকারীঃ

বহিঃশত্রুর আক্রমনের হাত থেকে মদিনা এবং মদিনাবাসীকে রক্ষার জন্য রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদিনার চার পাশে খন্দক বা পরিখা খননের পরামর্শ দেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সাহাবীর পরামর্শ মোতাবেক মদিনার চতুর্দিকে খন্দক বা পরিখা খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেণ। সাহাবায়ে কেরামের সাথে নিজেও মাটি এবং পাথর কেটে খন্দক খননে অংশ নেন প্রিয়তম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। খনন কাজ পুরোদমে চলছে তখন। হঠাৎ এক স্থানে এসে থেমে গেল কাজ। দৃষ্টিগোচর হলো অত্যন্ত শক্ত একটি পাথর। সাহাবায়ে কেরাম চেষ্টা করছিলেন পাথরটিকে ভেঙ্গে ফেলতে। কিন্তু কোদাল দ্বারা আঘাত করলে সে আঘাতে পাথরটির কিছুই হচ্ছিল না, বরং কোদাল প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসতে থাকল বারংবার। বহু চেষ্টার পরেও সাহাবায়ে কেরাম সেটি ভাঙ্গতে না পেরে অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যাপারটি অবহিত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে আগমন করলেন এবং কোদাল হাতে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে পাথরটিতে আঘাত করলেন। এতে পাথরটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হলো। -বুখারী:৪১০১

সামান্য খাবারে অভাবনীয় বরকত, এমনকি আহার শেষেও পূর্বপরিমাণ বহালঃ

জাবের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, খন্দকের যুদ্ধের প্রাক্কালে আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এমন সময় একটা শক্ত পাথর দেখা দিল। তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, পরিখা খননকালে একটি শক্ত পাথর পাওয়া গেছে। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা আমি নিজেই খন্দকের মধ্যে নামব’। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন, সে সময় তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও তখন তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেতে পাইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোদাল হাতে নিয়ে পাথরটির উপর আঘাত করলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকণায় পরিণত হয়।

জাবের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, আমি আমার স্ত্রীর নিকটে এসে বললাম, ‘তোমার কাছে খাওয়ার কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখলাম’। তখন সে একটি চামড়ার পাত্র হ’তে এক ছা‘ পরিমাণ যব বের করল। আমাদের একটি মোটাতাজা বকরীর বাচ্চা ছিল। তা আমি যবেহ করলাম আর আমার স্ত্রী যব পিষল। অবশেষে আমরা হাঁড়িতে গোস্ত চড়ালাম। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে চুপে চুপে বললাম, ‘আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি। আর এক ছা‘ যব ছিল, আমার স্ত্রী তা পিষেছে। সুতরাং আপনি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে চলুন’।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চৈঃস্বরে সবাইকে বললেন, ‘হে পরিখা খননকারীগণ! এস তোমরা তাড়াতাড়ি চল, জাবের তোমাদের জন্য খাবার তৈরী করেছে’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘তুমি বাড়ী ফিরে যাও। আমি না আসা পর্যন্ত গোস্তের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও বানাবে না’। এরপর তিনি লোকজনসহ উপস্থিত হলেন। তখন আমার স্ত্রী খামিরগুলি রাসূলের সম্মুখে দিলে তিনি তাতে লালা মিশিয়ে দিয়ে বরকতের জন্য দো‘আ করলেন। অতঃপর ডেকচির নিকট অগ্রসর হয়ে তাতেও লালা মিশিয়ে বরকতের জন্য দো‘আ করলেন। এরপর বললেন, ‘তুমি আরো রুটি প্রস্তুতকারিণীদের ডাক, যারা তোমার সাথে রুটি বানাবে। আর চুলার উপর থেকে ডেকচি না নামিয়ে তুমি তা থেকে তরকারী নিয়ে বিতরন কর’।

জাবের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, ‘ছাহাবীদের সংখ্যা ছিল ১০০০ জন । আমি আল্লাহ্‌র কসম করে বলছি, সকলে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে চলে যাওয়ার পরও ডেকচি ভর্তি তরকারী ছিল এবং প্রথম অবস্থার ন্যায় আটার খামিরহ হতে রুটি প্রস্তুত হচ্ছিল’। -মুত্তাফাক্বুন আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৭৭ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়, ‘মু‘জিযা’ অনুচ্ছেদ

আবু হুরাইরার বিস্ময়কর খেজুরের থলে হারানোর ঘটনাঃ

ছোট্ট একটি খেজুরের থলে। সেখান থেকে আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নেন আর খান; এক মুঠো, দুই মুঠো, দশ মুঠো। এক কেজি, দুই কেজি, দশ কেজি; ছোট্ট সেই থলে থেকে আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নিতেই থাকেন; নিজে খান, অন্যদের খাওয়ান- তবু ফুরোয় না থলের খেজুর। দীর্ঘ বছর খেয়েছেন সেই থলের খেজুর। সের বা কেজি কেজি নয়, মনকে মন খেজুর তিনি পেয়েছেন সেই থলে থেকে। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হয়েছিল?

অসীম বিস্ময় বটে! আজিব বিষয় বটে! ছোট্ট একটি থলেতে কতটুকুই বা খেজুর থাকতে পারে? এতটুকুন থলেতে এত খেজুর কোত্থেকে আসে! কিভাবে আসতে পারে! চিন্তার বিষয় নয় কি সামান্য? অবশ্য যাদের এড়িয়ে যাবার প্রবনতা, তারা এড়িয়ে যাবেন বরাবরের মতই, তাতে আর আশ্চর্য্য হবার কি আছে!

আচ্ছা, যারা যাওয়ার তাদের যেতে দিন। জগতে বেধে রাখা কাউকেই যায় না। যাবেও না। উচিতও নয়।

প্রিয় পাঠক, চলুন- আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর মুখ থেকেই শোনা যাক বিস্ময়কর তাঁর সেই খেজুরের থলেটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা-

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, একবার আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু খেজুর নিয়ে এলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ খেজুরগুলোতে বরকতের দুআ করে দিন। নবীজী সেগুলো একত্র করে তাতে বরকতের দুআ করে দিলেন। বললেন, তুমি এগুলো এ থলেতে রেখো। যখন তোমার প্রয়োজন হবে থলের ভেতর থেকে খেজুর নিবে, কিন্তু থলের সব খেজুর ঢেলে ফেলবে না।

নবীজীর কথা মতো আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রয়োজন হলে সেই থলে থেকে খেজুর নেন। নিজে খান, অন্যদের খাওয়ান। নবীজীর দুআর বরকতে খেজুরের ছোট্ট এই থলেতে এত বরকত হল যে, আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, এ থলে থেকে আমি অনেক ওয়াসাক (বিশেষ একটি পরিমাপ- এক ওয়াসাক প্রায় পাঁচ মনের সমান) খেজুর আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি।

এভাবে অনেকদিন চলল। অনেক বছর পেরিয়ে গেল। আবু হুরাইরাও বরকতময় থলেটি সবসময় কাছে কাছে রাখেন। নিজের লুঙ্গিতে গুঁজে রাখেন, যাতে হারিয়ে না যায়। কিন্তু, অনেক সতর্কতার পরেও থলেটি ঠিকই হারিয়ে গেল একদিন। তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর শাহাদাতলাভের দিন থলেটি যেন কোথায় পড়ে গেল। আর খুঁজে পাওয়া গেল না। আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুরও আর আফসোসের সীমা রইল না। কিন্তু আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর এ থলের মাধ্যমে নবীজীর এক অনন্য মু'জিযার প্রকাশ ঘটল। নবীজীর দুআর বরকতে, আল্লাহর কুদরতে ছোট্ট একটি থলে থেকে মনকে মন খেজুর বের হল। আর এই অলৌকিক ঘটনাটির মাধ্যমে সুদৃঢ় হল বিশ্বাসীদের বিশ্বাস। -জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৩৮৩৯

আরবের বিখ্যাত পাহলোয়ান রুকানার কুস্তি লড়ার ঘটনাঃ

রুকানা। তৎকালীন আরবের সেরা মল্লবীর। শ্রেষ্ঠ কুস্তিগীর। ইবন ইসহাক বলেন, আবু ইসহাক ইবন ইয়াসার বলেছেন, রুকানা ইবন আবদ ইয়াযীদ ইবন হাশিম ইবন মুত্তালিব ইবন আবদ মানাফ ছিল কুরাইশ বংশের নাম করা মল্লযোদ্ধা ৷জীবনে কারও সাথে কুস্তিতে হেরে যাওয়ার নজির ছিল না রুকানার। এক দিন এক গিরি পথে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত হয় তার ৷ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তাওহিদের দাওয়াত দিলেন। বললেন, হে রুকানা! তুমি কি আল্লাহকে ভয় করবে না? আর, আমি তোমাকে যে দিকে আহবান করছি, তাতে কি সাড়া দেবে না?

সে বলল, আমি যদি বিশ্বাস করতাম যে, আপনি যা বলছেন তা সত্য, তাহলে আমি অবশ্যই আপনার অনুসরণ করতাম ৷

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন- আচ্ছা, বল তো, আমি যদি কুন্তিতে তোমাকে পরাজিত করতে পারি তবে কি তুমি বিশ্বাস করবে যে, আমার আনীত ধর্ম সত্য?

সে বলল, জ্বি হ্যাঁ, বিশ্বাস করব ৷

তিনি বললেন, তবে প্রস্তুত হও ৷এসো, কুস্তিতে আমি তোমাকে পরাস্ত করি!

কথামত উভয়ের মধ্যে কুন্তি শুরু হল ৷

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাটিতে ফেলে এমন জোরে চেপে ধরলেন যে, তার কিছুই করার শক্তি রইল না ৷এরপর
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছেড়ে দিলেন ৷

কিন্তু রুকানা নাছোড়বান্দা। সে বলল, পুনরায় শক্তি পরীক্ষা হোক ৷

তার কথা রক্ষার্থে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মতি জ্ঞাপন করলেন। কুন্তি শুরু হল পুনরায় ৷

কিন্তু অবস্থার সামান্য পরিবর্তন হলো না। এবারও সে পরাস্ত হল এবং প্রথমবারের মতই শোচনীয়ভাবে৷

বারংবার ধারাবাহিকভাবে পরাজিত হয়ে রুকানার বিস্ময়ের সীমা থাকলো না। কারণ, সে আরবের সেরা কুস্তিগীর। হার কি জিনিষ, তা ইতোপূর্বে তার জানা ছিল না। তাই সে দুই দুইবার পরাজিত হবার পরে আবারও উঠে দাঁড়ালো। বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম, এটা তো পরম বিস্ময়ের কথা যে, আপনি আমাকে পরাজিত করলেন!

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর, তবে আমি তোমাকে আরো অধিক বিস্ময়কর ঘটনা দেখাতে পারি ৷

সে জিজ্ঞেস করল, সেটি কি?

তিনি বললেন, ওই যে দূরে বুক্ষ দেখছ, আমি সেটিকে ডাকলে সেটি আমার নিকটে এসে পৌঁছুবে ৷

রুকানা বলল, তবে ডাকুন সেটিকে ৷

বৃক্ষটিকে ডাকলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম৷

রুকানা বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করছিলেন পুরো ঘটনা। তিনি দেখলেন, ডাকার সাথে সাথে বৃক্ষটি এগিয়ে এল এবং রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে গেল ৷

কয়েক মুহূর্ত পরে আবার তিনি সেটিকে নিজের জায়গায় ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন ৷নির্দেশ মেনে সেটি আবার স্বস্থানে ফিরে গেল ৷

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রুকানা তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বলল, হে বনু আবদ মানাফ! তোমাদের এই লোককে নিয়ে তোমরা বিশ্ববাসীকে জাদু প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ করতে পারে৷৷আল্লাহর কসম, তার চাইতে বড় জাদুকর আমি কখনো দেখিনি ৷অর্থাৎ রুকানা যা দেখেছে এবং রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন তার সবই সে তাদেরকে জানাল ৷-ইবন ইসহাক এ ঘটনা মুরসালভাবে এরূপই বর্ণনা করেছেন

ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিযী রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা আবুল হাসান আসকালানীর সনদে রুকানা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রুকানা একদিন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কুন্তি লড়েছিল ৷কুন্তি লড়াইয়ে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পরাজিত করেন। এরপর ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এটি গরীব তথা একক বর্ণনাকারীর বর্ণনা। তিনি এ-ও বলেছেন যে, এই হাদিসের বর্ণনাকারী আবুল হাসানকে আমরা চিনি না।

কিন্তু আবু বকর শাফিঈ উত্তম সনদে হযরত ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইয়াযীদ ইবন রুকানা একে একে তিনবার রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কুস্তি লড়েছিলেন এবং তিনবারই পরাস্ত হয়েছিলেন। অবশ্য প্রতিবারের পরাজয়ের জন্য ১৩ টি করে বকরী প্রদানের শর্ত ছিল।

তৃভীয়বারে পরাজিত হওয়ার পরে সে বলেছিল- হে মুহাম্মদ! আপনার পুর্বে অন্য কেউ কোন দিন আমার পিঠ মাটিতে ঠেকাতে পারেনি ৷ আর আমার নিকট আপনার চাইতে ঘৃণ্যতর ব্যক্তিও কেউ ছিল না। কিন্তু এখন আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং তার বকরীগুলাে ফেরত দিয়ে দিলেন ৷-সূত্রঃ আল বিদায়া ওয়াননিহায়া

শেষের প্রার্থনাঃ

আমরা জানি, প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন ঘনিষ্ট অলৌকিক এসব ঘটনাবলী বিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে করবে আরও মজবুত, আরও সুদৃঢ় এবং আরও স্থিতিশীল-প্রশান্ত। পক্ষান্তরে, হঠকারিতায় লিপ্ত আত্মপ্রবঞ্চিত অবিশ্বাসীদের অবিশ্বাসকে করবে আরও প্রলম্বিত, আরও ধোকাপূর্ণ-ছলনাময় এবং সন্দেহ-সংশয়ের দোলাচালে দোদুল্যমান; কুরআন অবতরণকালীন সেই বন্ধুর সময়ের মত, সেই দুর্জন শত্রুচক্রের মতই। আমরা বিশ্বাসীদের দলে আমাদেরকেও শামিল করে আমাদের বিশ্বাসের ঘরের প্রদীপকে আলোর প্রখরতায় পূর্ণ করে দেয়ার বিনীত প্রার্থনা জানাচ্ছি মহান রব্বুল আলামীনের নিকটে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: বড় লেখা। তবু পোষ্ট টা দুইবার পড়লাম।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৮

নতুন নকিব বলেছেন:



কষ্ট করে সময় ব্যয় করে দু'বার পোস্টটি পাঠের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



সময়ের ব্যাপার: অতীতে এগুলোই ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছিলো, এগুলোই ধর্মে হারিয়ে যেতে সাহায্য করছে এখন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৪১

নতুন নকিব বলেছেন:



ধর্ম সম্মন্ধে আপনার ধারণায় কিছু ভুলের মিশ্রণ রয়েছে। সেসব ভুল ধারণা নিয়েই আপনি ধর্মকে ব্যাখ্যা করে থাকেন। যার ফলে আপনার এসব কথাবার্তা হয়ে থাকে উদ্ভট এবং অর্থহীন; যা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

ধন্যবাদ।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৫৬

নতুন নকিব বলেছেন:



যার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই তার সেই বিষয়ে নিরবতা পালন করা উচিত এবং এটাই উত্তম। কিন্তু ধর্মের কোনো জ্ঞান আপনার না থাকা সত্ত্বেও ধর্ম নিয়ে টানাটানি করা বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে অবাঞ্চিত এবং ফালতু কথাবার্তা বলে বেড়ানো রীতিমত আপনার স্বভাবে পরিণত হয়েছে, যা কার্যতঃ বিরক্তিই উৎপাদন করে এবং বিভ্রান্তি ও বিভেদ সৃষ্টিরও কারণ।

দয়া করে ধর্ম নিয়ে টানাটানি পরিহার করে সকলের কল্যান কামনা করুন। আমরা সদাসর্বদা আপনার কল্যানই কামনা করি। তা আপনি ধর্ম মানলেও করি। না মানলেও করি। আপনি যে পথ ও মতের মানুষ হোন না কেন, আপনার মতামত ও আদর্শকে সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:২৬

নতুন বলেছেন: মোজেজা যদি প্রতিকী হয় বা চোখের ভেলকি হয় তবে সমস্যা থাকতো না। কিন্তু এই সব ঘটনা বাস্তব বলে দাবী করা হয়।

এই সব ঘটনা সত্য হতে হলে পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক প্রমানিত সত্যকে মিথ্যা হতে হবে।

মেরাজের ঘটনায় যদি রাসুল এতোটা ভ্রমন করে থাকেন তবে তিনি যেমন বোরাক, রফ রফের ব্যবহার করেছিলেন তেমনি যেই নবী রাসুলরা জেরুজালেমে উপস্থিত ছিলেন নামাজে তারা কিভাবে এসেছিলন?

তারা কবরে ছিলেন, তারা কিভাবে স্বসরীরে উপস্থিত ছিলেন ?

চাদ দুই টুকরা হতে হলে কতগুলি ঘটনা ঘটতে হবে একটু খেয়াল করেছেন?

একটা মশক থেকে ১৫০০ মানুষের পানি পান করাও কি সম্ভব?

এখন এই সব বিষয় গুলিই ধর্মের ভুয়াত্ত প্রমানে সাহাজ্য করবে ভবিষ্যতের মানুষের সামনে। তারা প্রতিদিন পদার্থবিজ্ঞানের সুত্রের প্রমান দেখতে পাচ্ছে এবং পরে এই সব মোজেজার কথা কিভাবে বিশ্বাস করবে?

৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৪২

আহলান বলেছেন: মুজেজা ... যা ঈমান আনতে সহায়ক ছিলো। আবার এসব দেখে যারা ঈমান আনতে অপারগ হয়েছিলো, তাদের জন্যে ছিলো দূর্দশা, হতাশা। আল্লাহু আলাম!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.