নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোন কোন সম্পদের উপরে যাকাত দিতে হয়? এবং যাকাতযোগ্য কোন সম্পদের পরিমান কত? যাকাত বিষয়ক খুটিনাটি সকল তথ্য

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:০৮

ছবিঃ অন্তর্জাল।

কোন কোন সম্পদের উপরে যাকাত দিতে হয়? এবং যাকাতযোগ্য কোন সম্পদের পরিমান কত? যাকাত বিষয়ক খুটিনাটি সকল তথ্য

পার্থিব জীবনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে নানাবিধ সম্পদের অধিকারী করেছেন। আমাদের জীবন জীবিকার বিভিন্ন প্রয়োজনে এসব বিবিধ সম্পদ আমাদের কাজে লাগে। এসব সম্পদের মধ্যে কিছু সম্পদ এমন রয়েছে যেগুলোর জন্য বাৎসরিক হিসেবে যাকাত আদায় করা ফরজ বা অত্যাবশ্যক আর কিছু সম্পদ রয়েছে যেগুলোতে যাকাত ফরজ নয়। যাকাত যেহেতু অবশ্য পালনীয় ফরজ একটি বিধান সেহেতু আমাদের ভালোভাবে জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, কোন কোন সম্পদে যাকাত দিতে হবে। কারণ, যাকাত আদায় করার ফযিলত, গুরুত্ব এবং অশেষ সাওয়াবের বিপরীতে এই ফরজ বিধানটি অমান্য করার পরিণামও হবে অত্যন্ত নিকৃষ্টতর। যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে কুরআনুল কারিম এবং হাদিসে নববীতে।

যাকাত আদায় করার ফযিলত ও গুরুত্বঃ

যাকাত আদায়ের ফযিলত, গুরুত্ব ও ফায়দা বহুবিধ। কিছু তুলে ধরছি-

১- যাকাত আল্লাহর রহমত লাভের কারণঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন :

(وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ ) [الأعراف:156]

আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। -সূরা আল আরাফ:১৫৬

২- যাকাত প্রদান আল্লাহর সাহায্য লাভের শর্তঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠ ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ) [الحج:40-41]

আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারা এমন যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে...। -সূরা আল হাজ্জ: ৪০-৪১

৩- যাকাত প্রদান গুনাহ মাফির কারণঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সদকা গুনাহকে নিভিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুন নেভায়।’ -বর্ণনায় বুখারী

৪- ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং দ্বীনি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় যাকাতের কোন বিকল্প নেইঃ

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

‏فإن تابوا وأقاموا الصلاة وآتوا الزكاة فإخوانكم في الدين‏ (‏‏التوبة : ‏ ‏ ১১)

অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। -সূরা আততাওবাহ, ১১

৫- যাকাত আদায় করা মুমিনদের বিশেষ গুণঃ

এ ব্যাপারে আল্লাহ প্রশংসা করে বলেন,

‏ ‏والمؤمنون والمؤمنات بعضهم أولياء بعض يأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر ويقيمون الصلاة ويؤتون الزكاة ويطيعون الله ورسوله أولئك سيرحمهم الله إن الله عزيز حكيم‏ ‏ ‏‏(التوبة : ‏ ৭১‏‏)

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। -সূরা আততাওবাহ, ৭১

৬- যাকাত আদায় করা আল্লাহর ঘর আবাদকারীদের বিশেষ গুণঃ

আল্লাহ তা‘আলা কুরআন করিমে তাদের সম্পর্কে বলেন-

‏‏إنما يعمر مساجد الله من آمن بالله واليوم الآخر وأقام الصلاة وآتى الزكاة ولم يخش إلا الله (‏التوبة: ‏ ১৮‏)

নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। -সূরা আততাওবাহ, ১৮

৭- যাকাত জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসীদের গুণঃ

যাকাত ওই সব লোকের গুণ যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী হবেন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করিমে ইরশাদ করেন-

‏والذين هم للزكاة فاعلون ‏ (‏المؤمنون: ‏৪‏‏‏)

যারা যাকাত দান করে থাকে। -সূরা আল মুমিনূন, ৪

যাকাত আদায় না করার পরিণতিঃ

উপরের আলোচনা থেকে যাকাতের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা এবং এর সুফল ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সম্যক ধারণালাভ করেছি। উক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টিও অনুমানযোগ্য যে, ফরয হওয়া সত্ত্বেও যারা যাকাত আদায় করে না তারা কত বড় ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার! যাকাতের সকল সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহ তাআ'লার আদেশ অমান্য করার কারণে তাদেরকে যে মর্মন্তুদ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তা-ও কুরআন মজীদে বলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَیْرًا لَّهُمْ ؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَیُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ؕ وَ لِلّٰهِ مِیْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ۠۝۱۸۰

আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও যমীনের স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবগত। -সূরা আলইমরান : ১৮০

এক হাদিসে এসেছে- ‘যাকে আল্লাহ তাআ'লা সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার যাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ঐ ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জিভূত সম্পদ।’ -সহীহ বুখারী

যাকাতের অর্থঃ

আভিধানিক অর্থে যাকাত বৃদ্ধি পাওয়া, বর্ধিত হওয়া। আর শরয়ী পরিভাষায় যাকাত হচ্ছে- নির্দিষ্ট পরিমান সম্পদ যা সুনির্দিষ্ট সময় বিশেষ মানবগোষ্ঠিকে প্রদান করা হয়।

ইসলামে যাকাতের অবস্থানঃ

যাকাত ইসলামের ফরজকর্মসমূহের একটি এবং ইসলামের তৃতীয় রুকন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ) [النور:56]

তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো। -সূরা আন-নূর:৫৬

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত: এ সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, বাইতুল্লাহর হজ্ব করা ও রমজানের রোজা রাখা। -বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম

যাকাত ফরজ করার হিকমতঃ

যাকাত ফরজ করার পেছনে মহান আল্লাহ তাআ'লার হুকুমই হচ্ছে মূল। তবু আপাতঃদৃষ্টিতে বেশকিছু যুক্তি এবং হিকমত প্রত্যক্ষ করা যায় এই বিধানটির পেছনে। যেমন-

১- কৃপণতা, পাপ ও অন্যায় থেকে মানব-অন্তর পবিত্র করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ) [التوبة:103].

তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। -সূরা আত-তাওবা:১০৩

২- সম্পদ পবিত্র ও বৃদ্ধি করা এবং তাতে বরকত আকৃষ্ট করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সদকা কোনো সম্পদকে কমিয়ে দেয়নি। -বর্ণনায় সহিহ মুসলিম

৩- আল্লাহ তাআলার নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মানুষ আনুগত্য প্রকাশ করে কি না, আল্লাহর ভালোবাসাকে সম্পদের ভালোবাসার ওপর প্রাধান্য দেয় কি না, এ ব্যাপারে পরীক্ষা করে দেখা।

৪- দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন ও অভাবীদের প্রয়োজন পূরণ করা। এর মাধ্যমে মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে মুহাব্বত বৃদ্ধি পায় এবং মুসলিম সমাজের সদস্যদের মাঝে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামাজিক সহযোগিতা কায়েম হয়।

৫- আল্লাহ তাআলার পথে দান-খয়রাত ও সম্পদ ব্যয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা।

যেসব সম্পদের যাকাত প্রদান করা ফরযঃ

প্রধানতঃ নিম্নোক্ত পাঁচ প্রকার সম্পদের যাকাত প্রদান করা ফরয। যেমনঃ

(১) বিচরণশীল উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত পশু,
(২) স্বর্ণ রৌপ্য,
(৩) নগদ টাকা,
(৪) ব্যবসা বা বিক্রয়ের জন্য রক্ষিত দ্রব্য ও
(৫) কৃষি উৎপাদন বা ফল ও ফসল।

যেহেতু আমাদের দেশে খোলা চারণভুমিতে পশু পালনের ব্যবস্থা নেই এবং নিসাবযোগ্য পশুও কারো সাধারণতঃ থাকে না, সেহেতু ধরে নেয়া যায় যে, আমাদের দেশে গৃহপালিত পশুর যাকাত সাধারণভাবে কাউকে দিতে হয় না। এটি বাদে বাকি ৪ প্রকার সম্পদের যাকাত প্রদানের নিয়ম অত্র সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহু তাআ'লা-

২.১ স্বর্ণ: যদি কারো নিকট সাড়ে ৭ তোলা (ভরি) বা তার বেশি স্বর্ণ থাকে তবে প্রতি চান্দ্র বৎসর (৩৫৪ দিন) পূর্তিতে মোট স্বর্ণের ২.৫% যাকাত প্রদান করতে হবে। যেমন কারো যদি ১০ ভরি স্বর্ণ থাকে তবে প্রতি বৎসরে তাকে ০.২৫ ভরি স্বর্ণ বা তার দাম যাকাত হিসাবে প্রদান করতে হবে। সাড়ে ৭ ভরির কম স্বর্ণ থাকলে যাকাত ফরয হবে না।

২.২ রৌপ্য: যদি কারো কাছে সাড়ে ৫২ তোলা বা তার বেশি রূপা থাকে তবে প্রতি চান্দ্র বৎসরে মোট রূপার ২.৫% যাকাত প্রদান করতে হবে।

৩. নগদ টাকাঃ নগদ টাকার নিসাব হবে স্বর্ণ বা রৌপ্যের নিসাবে। হাদীসে মূলত রৌপ্যের নিসাবই বলা হয়েছে। এছাড়া রূপার নিসাবে আগে যাকাত ফরয হয়। এজন্য বর্তমানে কারো কাছে যদি সাড়ে ৫২ তোলা রূপার দাম (২০০৮ সালের বাজার মূল্য অনুসারে: ২৪/২৫ হাজার টাকা) এক বৎসর সঞ্চিত থাকে তবে তাকে মোট টাকার ২.৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন কারো যদি ৩০ হাজার টাকা সঞ্চিত থাকে তবে তাকে বছর শেষে ৬৫০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

৪. ব্যবসায়ের সম্পদঃ বিক্রয়ের জন্য রক্ষিত সকল সম্পদের যাকাত দিতে হবে। যদি দোকানে, গোডাউনে, বাড়িতে মাঠে বা যে কোনো স্থানে বিক্রয়ের জন্য রক্ষিত মাটি, বালি, ইট, গাড়ী, জমি, বাড়ি, ফ্লাট বা অন্য যে কোনো পণ্য থাকে এবং তার মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্যের সমান বা তার চেয়ে বেশি হয় তবে বৎসর শেষে মোট সম্পদের মূল্যের ২.৫% যাকাত দিতে হবে।

৫. ভূমিজাত ফল ও ফসলঃ ফল-ফসলের যাকাতকে “উশর” বলা হয়। ভুমি ব্যবহার করে উৎপাদিত সকল প্রকারের ফল, ফসল, মধু, লবন ইত্যাদির যাকাত দিতে হবে। ফল-ফসলের যাকাত দিতে হয় প্রতি মৌসূমে ফল-ফসল ঘরে উঠালে।

হাদীস শরীফে ফল ফসলের নিসাব বলা হয়েছে ৫ ওয়াসাক। অর্থাৎ প্রায় ২৫ মণ। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেছেন যে, কম বেশি সব ফল-ফসলেরই যাকাত দেওয়া দরকার। ফল-ফসলের যাকাতের পরিমাণ হলে ৫% বা ১০%। বৃষ্টির পানিতে বা স্বাভাবিক মাটির রসে যে সকল ফসল বা ফল হয় তা থেকে ১০% যাকাত দিতে হবে। আর সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত ফল-ফসলের ৫% যাকাত দিতে হবে। ফল বা ফসলের মূল্যও প্রদান করা যায়।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী

১ - ইসলামঃ

অতএব অমুসলিমের পক্ষ থেকে যাকাত প্রদান শুদ্ধ হবে না; কেননা আল্লাহ তাআলা অমুসলিমদের আমল কবুল করেন না।

২- স্বাধীনতাঃ

অতএব দাসের ওপর যাকাত ফরজ হবে না; কেননা দাসের সম্পদের মালিক তার মনিব।

৩- নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াঃ

নিসাব হলো সুনির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ যা অর্জিত হলে যাকাত ফরজ হয়।

নিসাবের শর্তাবলীঃ

ক. নিসাব পরিমাণ সম্পদ ব্যক্তির অবশ্য প্রয়োজনীয় সম্পদের বাইরে হতে হবে, যেমন খাদ্য, পরিধেয় পোশাক, থাকার ঘর ইত্যাদি; কেননা যাকাত ফরজ হয় গরীবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের উদ্দেশে। তাই সম্পদের মালিককে অবশ্যই অমুখাপেক্ষী হতে হবে।

খ. নিসাব পরিমাণ সম্পদ ব্যক্তিমালিকানাধীন হতে হবে, অতএব এমন সম্পদে যাকাত ফরজ হবে না যা সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন নয়, যেমন মসজিদের জন্য জমাকৃত টাকা অথবা জনস্বার্থে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা অথবা যে সম্পদ সেবামূলক সংস্থার ফান্ডে জমা রয়েছে।

৪. সম্পদের উপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়াঃ

এক বছর অর্থ হচ্ছে হিজরী বর্ষের পূর্ণ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া, অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ সম্পদ ব্যক্তির মালিকানায় চান্দ্রমাস হিসাবে বারো মাস অতিক্রান্ত হতে হবে। অবশ্য এ শর্ত সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক সম্পদ, গবাদিপশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে ফসল, ফলফলাদি, খনিজদ্রব্য ও গুপ্তধনের ক্ষেত্রে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত নয়।

যাকাত আদায় করার সময়ঃ

যাকাত প্রদানে সক্ষম ব্যক্তির যাকাত ফরজ হওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করে দেয়া ফরজ। বিশেষ কোনো সমস্যা ব্যতীত যাকাত ফরজ হওয়ার মুহূর্ত থেকে আদায়প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা বৈধ নয়, যেমন সম্পদ বিদেশে থাকা অথবা আটককৃত অবস্থায় থাকা।

এর দলিল আল্লাহ তাআলার বাণী :

(وَءَاتُواْ حَقَّهُۥ يَوۡمَ حَصَادِهِۦۖ) [الأنعام:141]

এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও। -সূরা আল আনআম: ১৪১

(وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ ) [النور:56]

আর তোমরা যাকাত আদায় করো। -সূরা আন-নূর:৫৬

এখানে আল্লাহ তাআলা অনুজ্ঞাসূচক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন, যার দাবি হলো অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করা।

যাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়ঃ

যাকাত বছরের যে কোনো মাসের যে কোনো দিন আদায় করা যায়। তবে, এর সর্বোত্তম সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। কারণ, রমজান মাসে প্রতিটি উত্তম আমলের সাওয়াবকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়।

অগ্রীম যাকাত আদায়ঃ

মুসলমানদের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে সময় আসার পূর্বেই যাকাত আদায় করে দেয়া বৈধ রয়েছে। ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উমর রাযি. কে যাকাত সংগ্রহের জন্য পাঠান, তিনি ফিরে এসে আব্বাস রযি. এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘আব্বাস আমাকে তার যাকাত প্রদান করেনি’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,‘হে উমর, আব্বাসের কাছ থেকে আমরা দু বছরের যাকাত অগ্রীম নিয়ে নিয়েছি।’ -বর্ণনায় দারাকুতনী

যাকাত বণ্টনের খাত বা স্থানঃ

আট শ্রেণির মানুষ যাকাতের উপযুক্ত। যথা:

১. ফকিরঃ যাদের সামান্য সম্পদ আছে কিন্তু তা দিয়ে তাদের প্রয়োজন পূরণ হয় না।

২. মিসকিনঃ যারা নিঃস্ব, নিজের অন্নসংস্থানও করতে পারে না। অভাবের তাড়নায় অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য হয়। কর্মক্ষম হওয়া সত্তেও কাজের অভাবে বেকার থাকতে বাধ্য এবং মানবেতর জীবন যাপন করে, তারাও মিসকিনদের মধ্যে গণ্য।

৩. যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীঃ ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত সংগ্রহ, বিতরণ, হিসাব সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজ করার জন্য যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তাদের বেতন-ভাতা যাকাত তহবিল থেকে দেয়া যাবে।

৪. মুআল্লাফাতুল কুলূবঃ অমুসলিমদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য। এ খাতটি বর্তমানে কারো কারো মতে রহিত হয়ে গেছে।

৫. রিকাব বা মুক্তিপণ ধার্যকৃত দাসঃ ক্রীতদাস তার মালিকের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দানের বিনিময়ে মুক্তি লাভের সুযোগ সৃষ্টি করলে, যাকাত ফান্ড থেকে সে অর্থ দিয়ে দাস মুক্ত করা যাবে। অথবা যাকাতের অর্থ দিয়ে দাস ক্রয় করে তাকে মুক্ত করা যাবে।

৬. গারিমিন বা ঋণগ্রস্থদের ঋণ পরিশোধ করাঃ কেউ বৈধ কোনো কাজে ঋণ করে সে ঋণ শোধ করতে সক্ষম না হলে যাকাতের অর্থ দিয়ে তাকে ঋণমুক্ত করা যাবে। অপ্রত্যাশিত কোন দূর্ঘটনা বা কোন কারণে ব্যবসায় নিঃস্ব হয়ে গেলে তাকেও যাকাত দেয়া যাবে।

৭. ফি সাবিলিল্লাহ: আল্লাহর পথে যেমনঃ জিহাদে মুজাহিদীনদের জন্য ব্যয় ও জিহাদের উপকরণ-সামগ্রী ক্রয়ের জন্য যাকাত দেয়া যাবে।

৮. ইবনুস সাবিল বা পথিকঃ মুসাফির বা প্রবাসি লোক স্বদেশে সম্পদ থাকলেও প্রবাসে যদি রিক্ত হস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তাকেও যাকাত দেয়া যাবে।

জ্ঞাতব্যঃ উত্তম হলো যে দেশে সম্পদ সে দেশবাসীর মধ্যেই যাকাত বণ্টন করে দেয়া, তবে প্রয়োজন দেখা দিলে কাছের অথবা দূরের যেকোনো দেশে যাকাতের টাকা পাঠিয়ে দেয়া চলে। উদাহরণস্বরূপ দূরবর্তী দেশ অধিক দরিদ্র অথবা দূরবর্তী দেশে যাকাত প্রদানকারীর আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, যারা যাকাত প্রদানকারীর দেশের দরিদ্রদের মতোই দরিদ্র, এমতাবস্থায় আত্মীয়-স্বজনকে প্রদান করাটা অধিক উপকারী বলে বিবেচিত হবে; কেননা এক্ষেত্রে একদিকে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা হবে, অন্যদিকে যাকাতও আদায় হয়ে যাবে।

যাকাত পাওয়ার অধিক হকদার কে?

যাকাত পাওয়ার বেশি হকদার ও অধিক প্রয়োজনগ্রস্ত কে, তা অনুসন্ধান করে বের করতে যাকাত প্রদানকারীকে শ্রম দিতে হবে। যাকাত পাওয়ার হকদারির গুণ যার মধ্যে বেশি পাওয়া যাবে তাকে যাকাত প্রদান করা অধিক উত্তম হবে, যেমন- নিকটবর্তী গরীব অথবা তালেবে ইলম, দ্বীনের প্রচারক প্রভৃতি শ্রেণির লোক।

শেষের প্রার্থনাঃ

আমাদের ভেতরে যাদের উপরে যাকাত প্রদান করা ফরজ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের যাকাতগুলোকে সঠিক পদ্ধতিতে উপযুক্ত স্থানে দান করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। তিনি আমাদের যাকাতগুলো গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের সম্পদকে পবিত্র করুন। আমাদের অন্তরকে কৃপনতা এবং সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত রাখুন। সম্পদশালী ব্যক্তিদের অন্তরে গরিব, অভাবী এবং অসহায় মানুষদের প্রতি হৃদ্যতা, আন্তরিকতা এবং ভালোবাসার এমন ভাব, অনুভব ও অনুভূতি তৈরি করে দিন যাতে তারা সহায় সম্বলহীন এবং দুস্থ এসব মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের কিসমতকে বুলন্দ করে নিতে পারেন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:১৯

কামাল১৮ বলেছেন: গরিব লোক আমাদের সওয়াবের জন্য বিরাট উপকারে আসে,নয়তো আমাদের যে কি দুর্দশাই না হতো।জাকাত নিয়ে আমরা বিরাট সমস্যায় পড়ে যেতাম।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:১০

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, সমাজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গরিব ধনশালী উভয় শ্রেণির লোকেরই প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে।

অনেক অনেক শুভকামনা।

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৫০

নীল আকাশ বলেছেন: ভাই এইধরণের একটা লেখাই খুজছিলাম। আমার নিজের সোশাল মিডিয়ার পেজে এটা শেয়ার দিচ্ছি। এখানেও লিংক দিয়ে যাচ্ছি। পারলে দেখে আসবেন।

০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:১০

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া ভাই।

ইনশাআল্লাহ দেখে আসবো।

৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০২

নীল আকাশ বলেছেন: এখানে আপনার লেখা শেয়ার দেয়া হয়েছে।

০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:১০

নতুন নকিব বলেছেন:



জাজাকুমুল্লাহ।

৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:২৩

নীল আকাশ বলেছেন: একটা প্রশ্ন এসেছেঃ
যাকাত বিষয়ে এক জায়গায় লেখা হয়েছে, এক স্থানে রুপা ও সোনা এর পিওর 100% না যেটাতে গহনা হয় 22 KDM ধরে 7.5 তোলা সোনার দামের কথা যাকাতের নিসাব বলেছেন।
আর ৫২ তোলা রূপার জন্য পিওর রুপা যাতে গহনা হবে হবে তার দাম ধর- ৫২×৮০০/১০০০ ধরে যাকাত দিতে হবে।
24kdm এ নিসাব হবে না এটা 100 % পিওর যাতে গহনা হবে না। ভেঙে যাবে।
আর পাথর এর জন্য১৮ kdm ভালো শক্ত ভাবে আটকে থাকে।

এই বিষয়ে আপনার কাছ থেকে ধর্মীয় প্রতিউত্তর আশা করছি।

০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:১৩

নতুন নকিব বলেছেন:



এই বিষয়টি যদি কষ্ট করে এই [email protected] মেইলে পাঠিয়ে দেন, দলিলসহ বেস্ট উত্তর পাওয়া যেতে পারে।

শুকরিয়া।

৫| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: কত কিছু যে জানার আছে।

০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:১৪

নতুন নকিব বলেছেন:



খুঁজে খুঁজে পেছনের পোস্টগুলোতে মন্তব্য রেখে যাওয়ায় ব্লগের প্রতি আপনার হৃদ্যতা অনুধাবন করা যাচ্ছে। সাধুবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.