নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন সাধাসিধে মানুষ। ভালোবাসি লিখতে, তাই লিখে যাই, মনের খোরাক বলা যায়। ভালোবাসি সহজ, সরল প্রানবন্ত মানুষগুলো, প্রকৃতিতে খুঁজে পাই বাঁচার নতুন আশা। লেখকের অনুমতি ব্যতিত কোন কবিতা যেকোন কোথাও কপিপেস্ট করা যাবে না।

সন্জয় চক্রবর্তী

মহাকালের সন্ধানে, অমৃতের আঘ্রাণে ছুটে চলা নিরন্তর

সন্জয় চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চীরনিদ্রা

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৮


বয়স তখন কত হবে? উনিশ কিংবা কুড়ি
বধূ হয়ে এসেছিলাম এই ঘরে, বাপের বাড়ি ছাড়ি।
পরনে ছিল রঙীন শাড়ি, হাতে কাঁকন, পায়ে রুপোর নূপুর
ঠোটে ছিল লাজুক হাসি, আর সিঁথীতে? লাল রঙা সিঁদুর।

বুঝলি দাদু (নাতি), বলছি আমি, আমার বিয়ের কথা
এখনো সেদিন মনে হলে, ভূলে যাই বিয়োগ ব্যাথা।
বিকেল হলেই, পাড়া-পড়শি, আসতো যে সদল-বলে
দেখতো তারা নববধূকে, লাজুক ঘোমটা টেনে।

নতুন বাড়ি, নতুন জন, নতুন যে ঘরখানা
নতুন সুঁতোয় বাঁধতে জীবন, আহ্লাদে আটখানা।
ভোর হলেই, দোর খুলেই, যেতাম পুকুর পাড়ে
স্নানটি সেরে, আসতাম ফিরে, সোজা ঠাকুর ঘরে।
শঙ্খ, ঘন্টা আর উলুধ্বনিতে, চারিদিক মাতোয়ারা
বর্ষিতো হতো যেন, নিরব পরশ, তার-ই করুনাধারা।

তোর দাদু, মানে আমার স্বামী, উনার রাগ যে ছিল ভারী
তিল থেকে তাল হলেই তবে, মাথায় উঠতো বাড়ি।
রাগ হলে কি হবে, উনার মন যে ছিল, সহজ, সরল আর নির্মল
আদর মাখা ভালোবাসায়, যেন ফোটায় নীলোৎপল।
চলতে চলতে কখন যে দিলাম, বছর ত্রিশকে পাড়ি
ভাবতে পারিনি, জীবন যুদ্ধ এতটা হবে ভারী।
ছেলে, মেয়ে মানুষ করেছি, অনেক সাধন করে
থাকে যেন ওরা সুখে, আমার মরণ পরে।

বউ, ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনী ঘর হয়েছে পূরণ
ভাবি বসে একদিন যাব ছেড়ে, সব মায়ার বাঁধন
দিন যায়, মাস যায়, চোখের কোণে ক্লান্তি ঘনায়
দিনের শেষে সূর্য্য যেমন, উল্টো দিকে পাড়ি জমায়
ইচ্ছে হচ্ছে ভীষণ!
আবার যদি ফিরে পেতাম, সেই সুদিনের চেতন।

চলছিল ভালোই, উনার আমার জীবন নামের তরী
আচমকা যেন, অজানা বিপদে বাতাস হলো ভারী।
পায়ে তার বিধলো কাঁটা, শরীর ব্যাথায় বিষোময়
ডাক্তার বললো, ওষুধ দিয়েছি দেখা যাক কি হয়?
গেলেন শহরে চেতন দেহে, আসলেন অচেতনে
আমারে রাখিয়া চলে গেলেন তিনি, নিভৃতে নির্জনে।

চোখের কোনে জলে ছলছল, হ্রদয় পুড়িয়া অঙ্গার
দাবানল হলো বুকের ভেতর, একি সর্ব্বনাশ হলো আজ আমার।
নিভে গেলো তার জীবন প্রদীপ, পাড়ি দিলেন দূর অজানায়
কি দোষে? বলো এমনতর শাস্তি, আজ দিয়ে গেলে তুমি আমায়।
বুঝলি দাদু
সেদিন থেকেই মনে মনে করেছি, ভীষণ রকম পণ
রাখবো না আর নশ্বর দেহ, করব না আর স্মৃতিচারণ।
সুখের দেখা পেলাম-ই না, তবুও হলো ছাড়াছাড়ি
স্বপন মাঝে এসে বলেন, ওগো চলে এসো, আর যে সয় না দেরী।

তারপর কেটে গেলো এক বছর, এখন শুধুই স্মৃতি
আমি এখন (নাতি), বিরসো বদনে, বিরহের মালা গাঁথী।
এ ঘর, ও ঘর, খুঁজি ফিরি আমি, ডেকে পাই না সাড়া
অস্ফুট স্বরে, বলে যে এ-মন, তুই হস না পাগলপারা।
পরপারে তারা বেধেছেন এক শান্তির নিকেতন
যুগলডোরে বাধিয়ে রবে, দুটি দেহে এক মন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ লিখেছেন, গ্রেট

২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: খুব ভালো লাগলো, কবিতায় পাঠে মুগ্ধতা রেখে গেলাম।

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:১৯

সন্জয় চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.