নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হারিয়ে ফেলি নিজেকে ফিরে ফিরে পাই এক চিলতে হাসিতে।
ছবি নেট ।
দোলার মোবাইল বেজেই চলছে বেজেই চলছে।
দোলা ছাদে বৃষ্টিতে ভিজে চলছে। প্রায় ঘন্টা খানেক ভিজার পর ছাদ থেকে নীচে নেমে ভিজা কাপড় চোপড় গুলি বারান্দায় মেলে দিয়ে এখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিড়ুনি চালাচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে।
দোলার পড়নে একটা মোটা পাড়ের চেক চেক সুতি কাপড় আর তারসাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। দোলাকে আজ ফ্রেশ লাগছে খুব।
নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আর নিজেই নিজের যৌবন দেখে লাজে হাসছে। দোলা নিজেকে প্রশ্ন করে এমন যৌবন কে লুটে খাবে?
এমন সময় আবার ফোন বেজে উঠলো। মোবাইল স্ক্রীনে জাহিদের ছবি ভেসে উঠছে। দোলার মুখে হাসির রেখা। জাহিদ,দোলার প্রেমিক।
কতগুলি কল করেছে ও। ইশ!মনে হয় নিশ্চিত আগুন হয়ে আছে। জাহিদের রক্ত লাল মুখটা যেন দেখতে পাচ্ছে দোলা।
জাহিদ ঃ হ্যালো ( বিরক্তির সহিত )
দোলা ঃ হ্যালো, বলছি।
জাহিদ ঃ কোথায় ছিলে? ( কিছুটা রাগের সুরে )
দোলা ঃ কি হয়েছে? অফিসে নতুন কোন ঝামেলা?
জাহিদ ঃ অফিস জাহান্নামে যাক! তুমি কোথায় ছিলে? ফোন করে পাই না কেন সাথে সাথে? ( রাগের সহিত )
দোলা ঃ আরে বাবা, ছাদে ছিলাম। বৃষ্টি জলে নাহাতে।
জাহিদ ঃ হুম, ( রাগ কিছুটা কমল ) ফোন কেটে দিয়ে ভিডিও কল দিয়ে বসল।
দোলা ঃ কি ব্যাপার?হঠাৎ সাহেব এর কি হলো? সরাসরি ভিডিও কল। ( মুচকি হাসির সহিত )
জাহিদ ঃ আশপাশ ভালো করে লক্ষ্য করে নীচু স্বরে বলল, " ভিজা চুলে তোমারে যা লাগে! " উফফ!
দোলা ঃ হুম, তা সাহেব এর নিয়ত কি?
জাহিদ ঃ নিয়ত বলো আর মানত বলো সে তো একটা তুমি, আমি বন্ধ দরজা ।
দোলা ঃ অসভ্য! মুখে কিছু ঠেকে না। এবার থেকে মুখে স্পীড ব্রেকার দিয়ে রাইখ।
জাহিদ ঃ সব জায়গায় ব্রেক দিলে বংশ বৃদ্ধি হইব ক্যামনে?
দোলা ঃ ইশ! আবার অসভ্যতা। রাখছি।
জাহিদ ঃ এই... এই... না না প্লিজ! ( কাতর কন্ঠে )
দোলা ঃ কি? কি চাই সাহেব এর?
জাহিদ ঃ আরেকবার বলো না?
দোলা ঃ কি?
জাহিদ ঃ ইশ! এইটা।
দোলা ঃ না। রাখছি।
জাহিদ ঃ প্লিজ!
দোলা ঃ না, বলছি, না। ( সামান্য রাগের সহিত )
জাহিদ জানে জোড়াজুড়ি করে লাভ নেই। জাহিদ ও জোড়াজুড়ি করা পছন্দ করে না। তার স্বভাবে এটা নাই।
জাহিদ ঃ আচ্ছা, শোন। বিকালে তোমার বাসায় আসছি। অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি।
দোলা ঃ আচ্ছা। তবে আমি এখন একটু বের হব।বৃষ্টি নেই।
জাহিদ ঃ কেন?
দোলা ঃ এই একটু নীলক্ষেত যেতে হবে কিছু বই কেনা লাগবে।
জাহিদ ঃ আমাকে বলে দাও। অফিস থেকে বের হয়ে আসার সময় নিয়ে আসব।
দোলা ঃ না, তোমার কষ্ট করে উল্টো দিকে আসার দরকার নাই। ( কিছুটা রাগের সুরে )
জাহিদ ঃ আরে এইডা কিছু হইল! তোমার জন্য হাবিয়ায় যাইতেও পারি।
দোলা ঃ ছিঃ! কি যা তা বলছ। মাথা ঠিক আছে?
জাহিদ ঃ তোমারে দেখলে মাথা ঠিক থাকে ক্যামনে?
দোলা ঃ আবার, আবার শুরু করলে। ( একটু শাসন এর সুরে )
জাহিদ ঃ ওকে, কি বই লাগবে?বলো প্লিজ! ( অনুরোধ এর সুরে )
দোলা ঃ দ্যা আলকেমিস্ট, বরফ গলা নদী জহির রায়হানের।
জাহিদ ঃ এই! আর কিছু?
দোলা ঃ না, আপাতত এই।
জাহিদ ঃ কাম সুত্র !
দোলা ঃ ইশ! এই ছেলের মাথা গেছে। রাখছি, বাই বাই, উম্মা উম্মা.... বলে ফোন কেটে দিল।
জাহিদ ঃ এই... না... না।
দোলা ফোনটা রেখে গুন গুন করে গান গাইতে লাগল। আর কাঁঠের আলমারি থেকে একটা মোটা পাড়ের সিল্ক শাড়ি আর তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ বের করল। গায়ে চপার্ড কালেকশন রোজ দো কেরোলিন মেখে নিল। বারবার জাহিদের কথা ভাবতে লাগল।
জাহিদ অফিস থেকে বেরিয়ে উবার ধরে সোজা নীল ক্ষেত এর উদ্দেশ্যে রওনা করল।
এদিকে ঘন্টা খানেক পাড় হয়ে গেছে। জাহিদ এর আসার কোন খবর নাই।
বৃষ্টি আর ধমকা হাওয়াতে গলির মোড়ে ইলেকট্রিক তার ছিঁড়ে পড়েছে। তাই বিদ্যুৎ ও নাই। দোলার মোবাইল অফ হয়ে গেছে ব্যাটারি জিরো পার্সেন্ট নিভু নিভু করতে করতে নিভে গেল।
দোলা অনেকক্ষণ জাহিদের জন্য অপেক্ষা করার পর বাসা থেকে বের হলো। গলির মোড়ের ফোনের দোকান থেকে জাহিদ কে ফোন করল। কয়েকবার রিং হবার পর ধরল কেউ কিন্ত এ জাহিদ নয়। একটা অপরিচিত গলার স্বর শুনতে পেল দোলা।
দোলা ঃ হ্যালো, জাহিদ?
অপর প্রান্ত ঃ হ্যালো, আমি পুলিশ অফিসার হারুন বলছি। আপনি উনার কি হন?
দোলা ঃ আমি, ( অজানা ভয়ে কাঁপতে লাগল ) ভাবতে লাগল জাহিদের কি হলো? পুলিশ কেন ওর মোবাইল ধরল? ইত্যাদি চিন্তা গুলি খুব দ্রুত মাথায় চলতে লাগলো।
হারুন ঃ আমি হসপিটাল থেকে বলছি। আপনি জলদি চলে আসুন।
দোলার হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল। দু চোখ ফেটে কান্না। তড়িঘড়ি করে হসপিটালের জন্য ছুটল।
দোলা এসে দেখে জাহিদ শুয়ে আছে। মুখটা রক্তে মাখামাখি। দোলা জাহিদ বলে জোরে চিতকার শুরু করে দিল আর বলতে লাগল উঠ জাহিদ! আমি দোলা! তোমার দোলা!
পুলিশ বলল, ম্যাডাম একটু শান্ত হোন।অফিসার একটু চুপ থেকে আবার শুরু করলেন বলা,
উনি তড়িঘড়ি করে রাস্তা পাড় হতে যাচ্ছিলেন। উলটো দিক থেকে আসা একটি বাস উনাকে চাপা দেয়। হাসপাতাল আসার পথে তীব্র রক্তক্ষরণে মারা যান। আমরা বাস ড্রাইভার কে আটক করতে পারিনি। তবে বাস আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
দোলার মুখে কোন শব্দ নেই। চোখ ফেটে শ্রাবণ বর্ষা।কেউ একজন এসে বলল, ম্যাডাম! এই বই গুলি উনার সাথে ছিল।
দোলা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। শরীরে এক ফোঁটা শক্তি নাই। আস্তে আস্তে সিল্কের শাড়ির আঁচল দিয়ে জাহিদ এর রক্ত মাখা মুখটা মুছে দিতে লাগল।
এমন সময় পাশ থেকে একজন বলে বসল, ইশ! কি কচি বয়সেই না চলে গেল। দোলা হাউমাউ শব্দ করে কাঁদতে শুরু করল।
বিদ্র ঃ রাস্তা পারাপার এর সময় অবশ্যই ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করুন। জীবন অনেক মূল্যবান!
১৩ ই জুন, ২০২১ ভোর ৫:২৫
স্প্যানকড বলেছেন: হা হা হা.... জীবন টা এমনই সব গোছানো গোছানো লাগছে এমন সময় দেখবেন দ্রিম! মানে শেষ। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:১৩
বিবাগী শাকিল বলেছেন: এটা কিছু হলো! এত সুন্দর রোমান্টিক আবহকে শ্বশান বানিয়ে ছাড়লো। লেখকের নাম মামলা করা হবে।
তবে শেষ মেসেজটি ভালো ছিল।