নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
এটা এমনই একটি বিষয় যার অনেকগুলি দিক আছে। যারা দেশ পরিচালনা করেন তাদের সব দিক বিবেচনায় নিয়েই এক একটি কাজ সম্পাদন করতে হয়। সাদা চোখে অনেক সময় সঠিক হয়নি বলে মণে হলেও পরবর্তীতে এক সময় দেখা যায় গৃহীত সিদ্ধান্তটিই সঠিক ছিল। আর তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্যও অনেক। আজ যা অবিবেচনা প্রসূত বলে মণে হচ্ছে, হয়ত ঐতিহাসিক বিচারে সেটাই এক সময় সঠিক বলে প্রমাণিত হবে। কাজেই দেলোয়ার হোসেন সাঈদির এই রায়টি সম্বন্ধে এখনি পুরোপুরি নেতিবাচক সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়ে একে ইতিহাসের কাছে সোপর্দ করাই শ্রেয় বলে মণে করি। ইতিহাসই বিচার করবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রায়টি কতটা সঠিক হয়েছে।
দীর্ঘ চল্লিশটি বছর পেড়িয়ে এসে, এ দেশের মানুষ যখন মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দ্বিতীয়বার সুযোগটি পেল। তখন বিপুল উৎসাহে তা লুফে নিলো। যার ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি বলে বিবেচিত আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আরোহণ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু। এই প্রাথমিক সাফল্যই দেশবাসীর প্রত্যাশাকে গগনচুম্বী করে তোলে। সরকার এই বিচারকে এগিয়ে নিতে গিয়ে ভেতর-বাইরে যতটা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেছে তাঁর কতটুকুই বা প্রকাশ পেয়েছে? আর যতটা প্রকাশ পেয়েছে তাতেই জনমনে চরম সন্দেহের উদ্রেক করেছিল যে শেষ পর্যন্ত সরকার আদৌ এই বিচার কাজটি সুসম্পন্ন করতে পারবে কিনা।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত সরকার স্বীকার করুক বা নাই করুক। এটাই সত্য যে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে তারাও প্রমাদ গুনতে শুরু করেছিল। আর সে কারণেই কাদের মোল্লার রায় নিয়ে তরুণ প্রজন্ম বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তখনকার সরকার তাদের সাদরে গ্রহণ করে নেয়। এমনকি আশাতীত পৃষ্ঠপোষকতাও দান করে। ক্ষমতাসীন সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে অবস্থা এমন দাড়ায় যে শাহবাগ হয়ে উঠল জন দাবী আদায়ের এক মুক্ত মঞ্চ। সাধারণ মানুষ ইতিহাসের অংশ হতেই ছুটে যেতে থাকল শাহবাগে। প্রাণীর দাবী আদায়ে নিজের অংশগ্রহণের এই সুযোগ কেউই হাতছাড়া করতে চাননি। তখন লক্ষ মানুষের এই শক্তিই ভার মুক্ত করেছিল সরকারকে। অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল পরবর্তী পদক্ষেপগুলি নিতে। যার ফলশ্রুতিতেই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ও তার কার্যকর হওয়া।
মানবতা বিরোধী অপরাধ আইনের সংস্কার এবং কাদের মোল্লার ফাঁসি এর কোনটাই সরকারকে চাপে ফেলে আদায় করা হয়েছে বলে মণে হয়নি। বরং অবস্থাদৃষ্টে মণে হয়েছে সরকার মনেপ্রাণে এটাই চাইছিল যে, জনগণ এগিয়ে আসুক। তাদের সহযোগিতা করুক। যাতে তারা অভীষ্ট লক্ষ অর্জনে সক্ষম হয়। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। সমস্যা তৈরি হল তখন থেকে যখন সরকার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সহযোগী শক্তি বলে মণে না করে উৎপাত বলে মণে করতে লাগল। তারা খামোখাই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ছায়া শত্রু বানিয়ে নিয়েছে। অথচ এই শক্তিটিকেই তারা অনেকদিন ধরে কাজে লাগাতে পারতেন। ব্যবহার করতে পারতেন নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে। তবে তা করতে হলে যতটা সততা এবং মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের সরকার বাহাদুর তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এরপরে এরা যদি কখনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। কিংবা অন্য কোন অনিয়মকে যদি তারা আন্দোলনের এজেন্ডা হিসেবে সামনে নিয়ে আসে হয়ত এই ভয়েই সরকার নিজেদের প্রয়োজন শেষে গণজাগরণ মঞ্চের উপর খড়গহস্ত হতে দ্বিধা করেনি। আজ এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যদি কোন দিন গণজাগরণ মঞ্চ রাজনৈতিক দলের রূপ পরিগ্রহ করে তাহলে এই আওয়ামী লীগই তাদের প্রধানতম শত্রু বলে পরিগণিত করবে। কেননা একদিকে তারুণ্যের এই শক্তি যেমন তারা দেখেছে তেমনি আদর্শগত ভাবেও তারা কাছাকাছি। আর তা ছাড়া দেশে আর একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান যে তারা কোনভাবেই মেনে নিতে প্রস্তুত নন তারতো ঢেঁড় উদাহরণ রয়েছে। অথচ এটা একেবারেই একটি অমুলক ধারনা কেননা গনজাগরন মঞ্চে অংশগ্রহন কারীদের প্রায় সবাই রাজনৈতিক সচেতন এবং কোন না কোন দলের সমর্থক আর তা ছারা এখানে যারা নেতৃস্থানীয় আছেন সংগঠক হিসেবে তারাও যে এ পর্যন্ত খুব একটা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তা তো নয়।উপরন্ত তাদের বেশ কিছু কর্মকান্ডই প্রশ্নবিদ্ধ। সেখানেও গায়ে মানে না আপনি মোড়ল গোছের কর্ত্রিত্বের লড়াই। যে সব কারনে আজ আর শাহবাগে মানুষের সেই ঢল নেই। শাহবাগ আজ ভাঙ্গা হাট! কাজেই এদেরকে দিয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির চিন্তা করাই বাহুল্য।
অথচ এই নির্বিষদের সামান্য প্রতিবাদটুকুও সরকারের সহ্য হল না! হঠাত করেই শুরু হল পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছোড়া এবং গরম পানি নিক্ষেপ। যার কোন প্রয়োজনই ছিল না।
এখন কথা হচ্ছে এই যে সিদ্ধান্তগুলি নেয়া হচ্ছে। সেটা কেন? কাদের পরামর্শে এসব করা হচ্ছে? তারা কি আদৌ এ সরকারের পক্ষে কাজগুলি করছে না কি বিপক্ষে? মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর জল কামান ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, যুদ্ধাপরাধের রায় নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও সড়ক আটকে বিক্ষোভ করা যাবে না।(কালের কণ্ঠ ১৭/৯/১৪) সেই তিনিই আবার যখন বলেন, জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশে হরতাল দিতেই পারে। (বাংলানিউজ২৪ডটকম ১৭/৯/১৪) তখন তাকে আওয়ামীলীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলে ভাবতে কষ্ট হয় বৈকি?
সাইদির রায়ের পরে সাধারণের মণে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হল, সাঈদি কি সত্যিই আমৃত্যু সাজা ভোগ করবে নাকি কোন মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুকম্পায় ছাড়া পেয়ে যাবে। কারণ আমরা জানি এই বিচারের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রকাশ্য অবস্থানের কথা। আমরা এও জানি জামাত কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেমেছে তাদের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের মুক্ত করতে। তাহলে এই যে বিচার-রায় এ সবই কি বিফলে যাবে? নাকি তাদের মৃত্যু অবধি আমাদের আওয়ামী লিগকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে যেতে হবে(!) যাতে তারা ছাড়া না পেয়ে যায়।
তবে বর্তমান সরকার খুব সহজেই এই সন্দেহের নিরসন করতে পারে। যদি তারা আরেকবার সংবিধান সংশোধন করে এমন একটি বিধান করেন যাতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বীয় ক্ষমতাবলে যে কোন দণ্ডপ্রাপ্তকে অনুকম্পা প্রদর্শন করতে পারলেও দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সাজা রোহিত বা মৌকুফ করতে পারবেন না। কিংবা শাস্তি কমাতে পারবেন না।
আওয়ামী লিগ সরকারের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের উপযুক্ত সাজা প্রদানের এই যে মহতী কার্যক্রম যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে নানা কারনে ইতিমধ্যেই অনেকের মনে কম বেশী সন্দেহের উদ্রেক করেছে তা নিরসনের এবং স্বীয় ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করার এই সুযোগটি কি তারা হাতছাড়া করবেন?
মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার করাটা যে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যে নয় বরং এটা তাদের আদর্শিক লড়াই তা প্রমাণ করার দায়িত্বও তাদের। আমরা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের সঠিক বিচার কামনা করি সেইসাথে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হোক সেটাও চাই। যদি এর অন্যথা হয় তাহলে তার জন্য দায়ীদেরও একদিন নিশ্চয়ই জবাবদিহি করতে হবে।
[email protected]
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: সময় যেন নেতিবাচক কিছু না বলে।
২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৬
নক্শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: সাঈদী কে বের হতে হলে বিরাট ঝামেলা পোহাতে হবে। আওয়ামীলিগ ক্ষমতায় থাকলেতো ছাড়বেইনা। বিএনপি এসে ইচ্ছা থাকলেও ছাড়তে পারবেনা, স্বাধীনতা বিরোধীর সিল খেয়ে যাবে তাহলে। একমাত্র জামাত ক্ষমতায় আসলে সাঈদীকে ছেড়ে দিবে। ফাঁসী যে দিচ্ছেনা আপাতত তাতেই খুশি থাকা উচিৎ সাঈদীর, খুব শিঘ্রই তার ছাড়া পাবার আশা নেই, ছাড়া পেলেও সেটা অনেক দিন পর মানবিক বিবেচনায় পেতে পারে।
৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: তাঁর মানে ছাড়া পাবার সম্ভাবনা থেকেই গেল!
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৩
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ছাড়া পাবার সম্ভাবনা একটা কিন্তু থেকেই যায়!
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮
zazafee বলেছেন: আমাদের দেশে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এই হলো তো এই গেলো। কী হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।